আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছেলেমানুষি

২২ তারিখ, ২০১২ । এখন সময় ১টা ২৭ মিনিট । গত কয়েকদিনের মতো আজও ঘুমাতে পারলাম না । আমি জানিনা আমার কি হয়েছে, কেন এই মুখরতা মনের মধ্যে?? মৌনতা যেন মৃদু কষ্টে আমাকে ঠেলে দেয় তোমার অবাধ দূরত্বে । সারাদিন আমাকে নানান প্রয়োজন নিয়ে বেস্ত থাকতে হয়, নিজেকে তখন লাগে একটা রোবটের মতো ।

যেন সব ঠিকই আছে কিন্তু প্রাণ নেই! এখন আর ভার্সিটি, ক্লাস নেওয়া, খাওয়া, গোসল কোন কিছুই ভাল লাগে না! শূন্যতা কিসের যেন! কাছের মানুষ গুলো বলছে আমি কয়েদিন যাবত একদম কেয়ারলেস হয়ে গেছি । আর আমার মনে হচ্ছে আমার প্রাণ টা আমার সাথে নাই, আছে হয়তো কোন পাথারে অথবা গেছে হারিয়ে । আমি আকাশে নির্বাক তাকিয়ে থাকি, সিগারেট ধরিয়ে টানতে ভুলে যাই আর অমনি ধোঁয়া গুলো আমাকে জড়িয়ে ধরে মনে করিয়ে দেয় সিগারেট শেষের পথে । নিজের এই পরিবর্তন দেখে হতবাক লাগছে না, ছন্নছাড়াও লাগছে না । তবে কি অনুভূতির মৃত্যু হল? অনেক ভাবার পরে পেলাম ‘নিশীথ’ আমার কাছ থেকে অনেক দূরে ।

এই মানুষটা আমাকে কারণে অকারনে যাতনা দিচ্ছে চোখের জলে । টেবিলের সামনে বসে থেকে কখন ঘুমিয়ে যাই টেরও পাইনা । সকালে উঠে দেখি সূর্যের আলো চোখে পরছে, মানুষের আনাগোনার শব্দ হচ্ছে । তখন নিজেকে খোঁজে পাই চেয়ারের মধ্যে একলা উদাস বেসে । সন্ধ্যে বেলায় পড়ানোর ফাঁকি দিয়ে যাই লেকের কোন নির্জন জায়গায় ।

চাঁদ দেখতে থাকি, তাঁরা গুনি আর কয়েকটা গান রেনদমলি শুনতে থাকি । অনেক কিছুই অবিরাম মনে পড়তে থাকে তোমার । সাঁঝ সকালে কথা বলা, রাত জেগে টেক্সট চ্যাট করা, তোমার জোড় করা, নিষেধাজ্ঞা, স্বপ্নের কথা, কোমল স্পর্শ এসব । আমি যেন আগের মতো হয়ে গেছি, হাঁসতে পারিনা, কারো সাথে মিশতে পারিনা, খালি চেয়ে দেখি আর শুনি । আমি জানিনা তোমার কি একবারও আমার কথা মনে পড়ছে কিনা? নাকি ভুলে গেছ মেঘের ভেলার মতো আমাকে না উড়িয়ে নিতে কি জানি ।

আমি কখনো কারো দুর্বলতা নিয়ে মজা করিনা, তথাপি আমার দুর্বলতা কারো কাছে প্রকাশ করি না । এতে নিজেকে অনেক ছোট করা হয় । কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করে যে আপনি কি কখনো কেঁদেছেন? তবে আমি বলে দেই, আমি কাঁদতে জানিনা । তবে এই সত্য টা জানে বাথরুমের ঐ আয়না টা । আমি শব্দ করে যেমন হাঁসি না তেমনি কাঁদিও না ।

এখন একটা গান মনে পড়ছে রবীন্দ্র সঙ্গীত “দিবস রজনী আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি...” । এখন মধ্য রাত তুমি হয়তো ঘুমাচ্ছ অথবা ঘুম ঘোরে স্বপ্ন দেখছ অন্য কাউকে নিয়ে । জানো, আমি সুযোগ পেলেই তোমার ছবি দেখি চুপিচুপি । তোমার স্পর্শ খুঁজি আমার হাতের মুঠোয় । যখন প্রায় ভোঁর হয় তখন অযথা চেষ্টা করি ঘুমানোর ঐ বিছানার শরীরে নিজের পিঠ ঠেকিয়ে ।

শূন্য দুহাতে নিজেকে জড়িয়ে ধরি আর মন কে অবুঝ সান্ত্বনা দেই তুই কাঁদিস না, সে শিগ্রই ফিরে আসবে । জানিনা তুমি বিশ্বাস করবে কিনা, আমি না বুজেই দিনের বেলা ঘুমিয়ে যাই তোমার কথা ভাবতে ভাবতে । লোকে আমাকে যদি পাগলও বলে তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না । বুকের ঠিক বাম পাশটায় কিসের যেন শূন্যতা তোমাকে ছাড়া । আমি কিছু আর ভাবতে পারছিনা তোমাকে ছাড়া! আমি জানিনা তুমি কি করে থাকতে পারছ আমাকে ছাড়া, কোন যোগাযোগ ছাড়া ।

অবশ্য তুমি তো মজার মধ্যেই আছো, আমিও চাই তাই থাকো সবসময়য় । আমি এখন চিন্তা করছি, আমি বিদেশ মাস্টার্স করতে গেলে কীভাবে থাকব তোমাকে ছেড়ে । আমার কাছে ভালবাসার একটা মিনিং আছে সেটা কি জানো, “নিজে ভাল থেকে ভালবাসার মানুষটি কে ভাল রাখাই হচ্ছে ভালবাসা”। আমি চাই তুমি সবসময়য় ভাল থাকো নিশীথ । যখন একটা সম্পর্কে শুধুমাত্র “আবেগ, মোহ, ঝগড়া” এই তিনটি জিনিস কাজ করে তখন তা আর ভাল সম্পর্ক থাকে না ।

একটা ভাল সম্পর্ক মানে হল “পরস্পর কে বুঝা, নিজেকে উৎসর্গ করা এবং বিশ্বাস করা” । প্রতিটি মানুষের এই ছয়টি ব্যাপার সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা থাকা উচিত যদি সুখী হতে চায় । যাইহোক, আমি এখন ভার্সিটির শেষ লেভেলের ছাত্র, প্রায় গ্র্যাজুয়েট । ভাবতেই অবাক লাগে যে আমি এই অবস্থানে এসেও একটা মানুষ কে ভালবেসে এতোটা দেবদাস হয়ে গেছি । জানো, আমি যে মুহূর্তে তোমার সাথে কথা বলা শুরু করি ঠিক ঐ মুহূর্তে আমার হাতে সাত টা অপশন ছিল ।

আমি বলতে চাচ্ছি যে সাত জনের মধ্যে যে কোন একজন কে বেছে নেয়া যেত । যাদের কয়েকজন কে তুমি চিনো, নাম শুনেছ । সত্যি বলতে তোমার মাঝে আমি শুভ্রতা খোঁজে পেয়েছি যা আর কারো মাঝে পাইনি । আর আমার মনে হয়েছে তুমি আমাকে যতটুকু ভালবাসবে তা আর কেউ পারবে না । এছাড়া তোমার এখন শেখার বয়স সুতরাং তোমাকে আমার পছন্দ মতো আমি গড়ে নিতে পারব ।

আমি এও জানি তুমি আমার কথা যত গুরুত্ব দিয়ে শুনবে তা আর কেউ শুনবে না । জানো, আমি তোমাকে অনেক বিশ্বাস করি । আমি চাই তোমার মধ্যে খারাপ প্রভাব গুলো যাতে কম পড়ে । তুমি বিশ্বাস করতে শেখ, তুমি ভাবতে শেখ, তুমি তোমার রাজত্বে নিজেকে আলাদা ভাবে তৈরি করো । নিজেকে কখনো ছোট ভাব্বে না, একা ভাব্বে না ।

আমি যদি রেগে যাই কখনো তাহলে ঐ মুহূর্তে তুমি ধৈর্য ধরবে, প্রতিবাদ করবে না, আর পরে প্রধান কারণ টা বুঝিয়ে বলবে। তাহলে দেখবে সম্পর্ক কখনো খারাপ হবে না । যেকোনো স্থানে দমিনেট করার চেষ্টা করবে, নিজেকে গুছিয়ে রাখবে, প্রত্যয়ী হবে । নেতিবাচক জিনিস গুলো কে বেশি প্রাধান্য দিবে না । আমার কথা গুলো বুঝতে পেরেছ? খুব ঘন ঘন দীর্ঘশ্বাস ফেলছি ।

মনের মধ্যে যেন অনেক কষ্টের প্রতাপ বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে । তোমার চোখ গুলো অনেক সুন্দর নিশীথ । তোমার চেহারা টা মায়াবী বটে । আমি চাই তোমার জীবনটা অনেক সুন্দর হোক । যদি তুমি আমাকে কোনদিন দূরে চলে যেতে বল তোমার কাছ থেকে, তবে আমি তোমাকে আর কোন প্রশ্ন করব না কেন? বুঝে নিও_আমি শুধুমাত্র তোমাকেই জীবন সঙ্গী হিসেবে চেয়েছি ।

আমার কাছে কখনো সত্য গোপন করো না । ভোঁর হয়ে এলো প্রায়, অনেক তো ছেলেমানুষি করলাম এবার না হয় থাক । এমন শত রাতও যদি বিসর্জন দিয়ে তোমাকে লিখি তবুও কথা ফুরাবে না । ভাল থেকো । এখন যেই গান টা শুনছি____ এক মুহূর্তে চলে যাওয়া এক মুহূর্তে ফেরা এক মুহূর্তে নীরব ঠিকই পরক্ষণেই জেরা।

এক মুহূর্তে ঘুমাও তুমি এক মুহূর্তে জাগো এক মুহূর্তে শক্ত তুমি এক মুহূর্তে রাগো। এক মুহূর্তে দূরে সরাও আবার কাছে ডাকো তোমার এমন এক মুহূর্ত হাজার থেকে লাখো! এক মুহূর্তে জলে ভাসো এক মুহূর্তে খরা, এক মুহূর্তে উদার তুমি পরক্ষণেই কড়া। এক মুহূর্তে অবুঝ তুমি এক মুহূর্তে বোঝ- এক মুহূর্তে হারাতে দাও এক মুহূর্তে খোঁজো। এক মুহূর্তে ফিরিয়ে দাও আবার সাথে রাখো তোমার এমন এক মুহূর্ত হাজার থেকে লাখো! আকাশ যেমন দিনে রাতে রোদ আর মেঘে রং বদলায়, তেমনি তোমার মনের খবর কাছে থেকেও পাওয়া না যায়। এক মুহূর্তে মন ভালো নেই আবার দেখি ভালো এক মুহূর্তে আনন্দ দাও আবার ব্যথা ঢালো।

এক মুহূর্তে ভালো লাগা এক মুহূর্তে মন্দ এক মুহূর্তে সরল সবই আবার দ্বিধা দ্বন্দ্ব! এক মুহূর্তে স্বপ্ন দেখাও এক মুহূর্তে ভাঙো এক মুহূর্তে সাদা-কালো পরক্ষণেই রাঙো। এক মুহূর্তে উড়িয়ে দাও আবার কাছে ডাকো তোমার এমন এক মুহূর্ত হাজার থেকে লাখো!... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.