আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইনোসেন্স অফ ইসলাম, (শান্তির ধর্ম ইসলাম) “শান্তিপূর্ণ ”প্রতিবাদ ও কিছু কৌশলগত দিক

Sometimes distance is required to feel the person more intensely.. কয়েকদিন আগে ১৫ তারিখে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম যখন ইনোসেন্স অফ মুসলিমস ছবি টা নিয়ে মুসলিম বিশ্বে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে মাত্র। আমি একজন মুসলমান। কিন্তু ধর্মান্ধ নই। আমি যথেষ্ট ব্যথিত এবং একই সাথে ক্ষুদ্ধ। আমি এর প্রতিবাদ জানাই।

তবে একটা কথা স্পষ্ট ভাবে জানা উচিত যে ইসলাম কখনোই সন্ত্রাস, সহিংসতা, অযৌক্তিকতা, উগ্রতা সমর্থন করে না। এইচএসসি পর্যন্ত আমার এডুকেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড মাদরাসা হওয়ার কারণে ইসলাম ও এর ভাষা সম্পর্কে দু’এক লাইন জানার সুযোগ হয়েছে। কয়েকদিন আগে রাগিব স্যারের একটি পোস্ট পড়লাম এবং এটাতে আমার মনের কথার প্রতিফলন ঘটেছে। মূলত: মুসলমানদের ইগো টা একটু বেশী। আর এটাকে ব্যবহার করে এখন পর্যন্ত অনেক বার সাপ মারা হয়েছে কিন্তু লাঠি ভাঙ্গেনি।

একটু খেয়াল করলে দেখা যায় এর সহিংস প্রতিবাদ সবই হচ্ছে মুসলিম দেশ গুলোতে। কাদের উপর নির্যাতন চলছে? -> নিজের দেশের মানুষের উপর কাদের টাকায় কেনা গাড়ী জ্বলছে? -> নিজের দেশের মানুষের শ্রম অর্জিত টাকায় কাদের রাস্তা-ঘাট ভাঙছে? -> নিজেদের কাদের অর্থ নষ্ট হচ্ছে? -> নিজেদের কাদের প্রোডাক্টিভ সময় নষ্ট হচ্ছে? -> নিজেদের অর্থাৎ, যত কিছুই করছি সব কিছুতেই ক্ষতি হচ্ছে নিজেদের। কিন্তু এটা কি হওয়ার কথা ছিল? যেখানে আক্রমণ এলে প্রতি আক্রমণ হওয়ার কথা সেখানে বস্তুগত আক্রমণ আসার আগেই মুসলমানদের জান-মালের ক্ষতি হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা এর মাধ্যমে আন্ত:মুসলিম সংঘর্ষ হচ্ছে, কোন কোন দেশে গৃহ যুদ্ধ পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা প্রতিবাদ টা আসলে কার বিরুদ্ধে করছি? কিংবা কার বিরুদ্ধে হওয়া উচিত? তার আগে একটু দেখে নেই ট্রেইলার বের হবার পর কি অবস্থা হচ্ছে বিশ্বে? ১. ট্রেইলার বের হলো।

২. এর প্রতিবাদ শুরু হলো। ৩. লিবিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত কে হত্যা করা হলো ৩. কোন কোন দেশ এর নৈতিক প্রতিবাদস্বরূপ ইউটিউব বন্ধ করে দিলো। ৪. ইউটিউবকে বলা হলো এই ট্রেইলারটি সরিয়ে ফেলতে। ৫. ইউটিউব তা সরালোনা। ৬. যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হলো এই ইস্যুতে যেন ইউটিউবকে তারা চাপ প্রয়োগ করে।

৭. তার‍া ফিরতি রিএক্ট করলো “বাক প্রকাশের স্বাধীনতা সবার ই আছে”। ৮. অতঃপর সহিংসতা বেড়ে গেল সারা বিশ্বে। ৯. এরপর আবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ঘোষণা আসলো “এই ইস্যুতে যারা সহিংসতা সৃষ্টি করছে তাদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না”। অর্থাৎ, তারা আবার ও মুসলিম বিশ্বের উপর তাদের নগ্ন হামলা চালানোর একটা সুযোগ পেয়ে গেলো। কিন্তু আমরা কি অসহিংসভাবে ভাবে এর প্রতিবাদ করতে পারতাম না? আমি কোন সাজেশন দিবো না কিভাবে আমরা অসহিংস ভাবে প্রতিবাদ করতে পারতাম।

তবে আমি মুসলমানদের কোন কৌশলগত পদক্ষেপ দেখলাম না। এখন পর্যন্ত কোন মুসলিম দেশকে দেখলাম না হলিউড শিল্প অথবা ইংরেজি সিনেমাকে তাদের দেশে নিষিদ্ধ করতে। অথবা কোন মুসলিম দেশ বলেনি আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করবো। আমার জানামতে কোন মুসলমান দেশ কোন ধরণের লৈখিক প্রতিবাদ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে জানায়নি। এখন পর্যন্ত কোন মুসলিম দেশ বলেনি যে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সাহায্য গ্রহণ করবোনা।

এখন পর্যন্ত কোন ধরণের এমবারগো আরোপ করা হয়নি। আরো অনেক কিছুই হয়নি। কিন্তু কথা হচ্ছে কয়েকদিন পর পর এরকম কার্টুন বের করা কিংবা এখন মুভি তৈরী করার মূল মোটিভ টা কি? একটা কার্টুন আঁকতে লাগে ১ ঘন্টা। কিন্তু এটার মাধ্যমে মাসের পর মাস মুসলিম বিশ্ব অস্থিতিশীল থাকে। আসুন দেখি এর পিছনে কি কারণ থাকতে পারে।

১. ইহুদী - খ্রিস্টান দের সামপ্রদায়িক ঘৃণা-বিদ্বেষের ফলে এমনটা হতে পারে। ২. এই ধরণের কার্টুন/মুভি যদি প্রকাশিত হয় তবে ‘ধর্মভীরু’ ও ‘মুত্তাকী’ ‘মুমিন’ রা সাথে সাথে এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামবে। বিভিন্ন ধরণের অরাজকতা সৃষ্টি করবে। তাতে দেশে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। দেশের আর্থিক ক্ষতি হবে অনেক।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা চিন্তা করলে পুঁজিবাদী দেশ গুলোর এতে অনেক লাভ হবে। ৩. এই ইস্যুতে ‘ধর্মভীরু’ ও ‘মুত্তাকী’ ‘মুমিন’ দের প্রতিবাদের ভাষা অবশেষে রূপ নেবে সংঘর্ষে। হাজার হাজার গাড়ী ভাঙবে, আগুন জ্বলবে, মারদাঙ্গা হবে। এরপর তাদের ব্যাপারে সবাই নিশ্চিত হয়ে যাবে ‘মুসলমান’ মাত্রই জঙ্গি, প্রতিক্রিয়াশীল, অস্থির, উগ্র, সাম্প্রদায়িক ইত্যাদি। পৃথিবীর বুকে শান্তিপ্রিয় মুসলমানদের নতুন পরিচয় প্রকাশ পাবে।

৪. এই ইস্যুতে অবশ্যই বিশেষ কোন দেশের দূতাবাস ও অন্য ধর্মীয় লোকদের উপর হামলা হবে। আর এর মাধ্যমেই তৈরী হয়ে যাবে আন্ত:রাষ্ট্রীয় কিংবা আন্ত:ধর্মীয নতুন সংঘাতের প্লাটফর্ম। ৫. তারা একটা কার্টুন বানায় ১,২ ঘন্টা সময় ব্যয় করে। কিন্তু এর পরবর্তী ফলস্বরূপ মুসলমানরা মাসের পর মাস ‘ঈমানী দায়িত্ব’ হিসেবে মাঠে-ঘাটে থেকে ‘আন্দোলন’ করে। অপচয় হয় কোটি কোটি ঘন্টা।

অথচ এই সময়টা তারা ক্রিয়েটিভ কাজে ব্যয় করতে পারতো। তাতে মুসলমানদের জন্য আরো বেশী সুফল বয়ে আনত। অথচ মুসলমানদের ‘বুদ্ধিমত্তা’ ও ‘ঈমানী দায়িত্বে’র কারণে এই সময় গুলো নিমেষেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর এর ফলে শান্তির ধর্ম ইসলামের ক্ষতি হচ্ছে তার চেয়ে কোটি গুন বেশী যতটা একটা কার্টুন কিংবা মুভি করতে পারে। ৬. তারা মুসলমানদের জন্য একটার পর একটা নতুন ইস্যু তৈরী করছে মুসলমানদের আবেগকে পুঁজি করে।

আর এই ফাঁদে মুসলমানরা অনায়াসে পা দিয়ে খাদে পড়ে যাচ্ছে অথচ বুঝতেও পারছেনা। মূলত: আমাদের বোঝা উচিত এখানে আসলে কি হচ্ছে? আমাদের প্রতিবাদটা কোনভাবে হওয়ার কথা ছিল? এই প্রসঙ্গে আমি রাসূল সা: এর একটি ঘটনা উল্লেখ করতে চাই। রাসূল সা: যখন কাফেররা গালি দিত তখন তিনি তার একজন সাহাবীকে নিযুক্ত করেছিলেন এর জবাব দেয়ার জন্য। কিন্তু দেখা গেল একটার জবাব একটা দিলে তারা দশটা গালি দেয়। তখন তার জবাব দশটা দেয়ার জন্য দশটা গালি দরকার হয়।

এতে দেখা যায় সময় ও নষ্ট আবার মুখ ও নষ্ট হয় । পরে রাসূল সা: বললেন তারা যদি এ ধরণের কোন অপমান করে তবে সেদিকে নজর না দিলেই হল। আর রাসূল সা: এর সম্মান মহা সাগরের চেয়েও বিশাল। সেখানে কেউ যদি কয়েক বালতি ময়লা পানি ঢেলে দেয় তবে সেখানে কোন ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হবে না। তবে রাসূল সা: কে কটাক্ষ করা মানে সমগ্র বিশ্বের মুসলমানকে কটাক্ষ করা।

মানবাধিকারের চরমতম লংঘন। তাই এর প্রতিবাদ অবশ্যই হতে হবে। এবং সেটার প্রতিবাদ করা ঈমানী দায়িত্ব। তবে প্রতিবাদের ভাষা হতে হবে ট্যাক্টফুল। মনে রাখতে হবে এটা একটা দাবা খেলা।

এখানে চাল দিতে হবে খুব ভেবে চিন্তে। কিন্তু বর্তমান বিশ্বের ‘মুসলমান’দের প্রতিবাদের ভাষা দেখে মনে হচ্ছে তারা প্রজ্ঞা ও মেধাহীন ভাবে শুধূ উপরের দিকেই থুথু ছিটাচ্ছে। কিন্তু এর পর যে তা নিজেদের গায়েই পড়ছে এবং এক সময় যে পুরো শরীর নোংরা হয়ে যাবে তা বুঝতে পারছেনা। যারা আন্দোলন করছেন তাদের আবেগের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা রেখেই বলছি “আবেগের সাথে সাথে নিজেদের যুক্তিবোধকে ধারালো করার চেষ্টা করুন, আর না হলে নিজের অজান্তেই নিজের পায়ে কুড়াল মারবেন। কূটনীতি অনেক জটিল একটি জিনিস।

এটা বোঝার জন্য মেধা ও প্রজ্ঞার প্রয়োজন হয়। আপনাদের কর্মকাণ্ড শুধু ইসলামকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছেনা সেই সাথে মুসলমানদের মানসিক বিকাশ ও পরিপক্কতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তাই আবেগী মুসলমান হওয়ার সাথে সাথে যুক্তিমনা মুসলমান হওয়ার চেষ্ট করুন। ইসলাম শান্তির ধর্ম এমনিতেই প্রমাণিত হয়ে যাবে। আর যদি না পারেন তবে আজীবন ই ‘সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদের ধর্ম ইসলাম’ থেকে যাবে।

===> আমি ব্লগে খুবই কম লিখি। ব্লগ পড়তে ভালবাসি। আর লেখার যোগ্যতাও আমার অনেক কম। তাই এই লেখা হয়তো অজস্র ভুল থেকে যাবে। নিজ গুণে ক্ষমা করবেন পাঠকেরা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.