আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল আমার মাথায় ঢুকে না হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে ব্যাঙ্গ করার হীন চেষ্টায় নির্মিত ছবিটি নিয়ে এত লাফা-লাফির কি আছে! বিটিভিতে একসময় আলিফ লায়লার সিরিয়াল প্রচার করা হতো। তাতে কখনও দেখা যেত, পটভূমিতে উত্তাল সমুদ্র আর তার উপর দোদুল্যমান নৌকা। নৌকায় এক বিপদগ্রস্ত নাবিক। দেখলেই স্পষ্ট বোঝা যায় পেছনের সমুদ্র, নাবিক আর নৌকার চিত্রায়িত দৃশ্য এক সময়ের না। সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে নৌকার দুলুনি মেলে না! নৌকার দুলুনির সাথে নাবিকের দুলুনি মেলে না।
নৌকা নড়ে বামে, নাবিক অতি অভিনয় করে লাফায় ডানে। নাবিকের অভিব্যক্তি একরকম, তার কণ্ঠস্বরে প্রতিক্রিয়া আরেক রকম। স্পষ্ট বোঝা যেত ঐ নৌকা আর তাতে চড়ে থাকা নাবিকটারে অন্য কোন খান থেকে কেটে এনে সমুদ্রের ভিডিওটাতে বসিয়েছে। অতি নিম্নমানের এডিটিং।
সেই আলিফ লায়লার সস্তা সেট’গুলোর, নিম্নমানের এডিটিঙের কথা মনে করিয়ে দেয় হজরত মুহাম্মদ (সঃ) কে ব্যাঙ্গ করে (করার চেষ্টায়) তৈরি করা ছবি "ইনোসেন্স অব মুসলিমস"।
পটভূমিতে মরুভূমির ওয়াল পেপার টাঙ্গিয়ে, আনাড়ি অভিনেতাদের দিয়ে, তাদের রীতিমত প্রতারিত করে এই ছবি তৈরি করেছে ছদ্ম নামের এক আউল ফাউল পরিচালক। ছবি দেখলে পরিষ্কার বোঝা যায় অভিনেতা অভিনেত্রীরা জানে না তারা কি নিয়ে ছবিটা করছে। কারণ যখনই কোন চরিত্র রসুল মুহাম্মদ (সঃ)'এর বা আয়েশা (রা'এর নাম বলে তখন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের উচ্চারণ ভঙ্গির, তাদের ঠোঁটের নড়াচড়ার সাথে সংলাপ মেলে না। অভিনেতা অভিনেত্রীরাও দাবি করেছে যে পরিচালক তাদের বলেছিল যে মরুভূমির এক অভিযান নিয়ে হচ্ছে ছবিটি।
এরকম একটা হীন উদ্দেশ্যে নির্মিত সস্তা মানের ছবি দিয়ে এত সহজে পুরো পৃথিবীকে এইরকম আলোড়িত করা যায়! অদ্ভুত, অবিশ্বাস্য।
আমিতো বলব যৎসামান্য অর্থ ও অকিঞ্চিৎকর মেধার বিনিয়োগে দারুণভাবে সফল হয়েছে নির্মাণকারী ও অর্জিত হয়েছে ছবির একমাত্র উদ্দেশ্য। মুসলমানদের এত সহজে ক্ষুদ্ধ-বিক্ষুব্ধ করা যায়, এত সহজে তাঁদের বিশ্বাসে আঘাত করা যায়! আর তা করতে পারে যে কেউ? যে কোনভাবে! একটা ফালতু লোক যা ইচ্ছা গালগালি, কদর্যতায় ভরে দিয়ে কিছু একটা তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড করে দিলেই হয়ে গেল ইসলামের অপমান! এই পরিচালক’কে চরম ভাবে সফল করছে স্বয়ং মুসলমানরাই। ছদ্মবেশের অন্তরালে বিজাতীয় এক তৃপ্তির হাসি হাসছে সে এখন। সে কি এই’ই চায়নি?
বিশ্বাস খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর ভক্তি, শ্রদ্ধা, অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বাস, শ্রদ্ধা থাকবে হৃদয়ে অতি উচ্চ অবস্থানে গভীরভাবে প্রথিত। সামান্য বেলচা, দুই ইঞ্চির হাতুড়ী নিয়ে এর ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে যদি কেউ নামে, হাসির দমকেই তার উড়ে যাওয়া উচিৎ। অথবা উপেক্ষা হতে পারে এইরকম প্রচেষ্টার বিপরীতে আত্মবিশ্বাসী আক্রান্তের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রতিক্রিয়া। আমার আত্মাভিমানকে আঘাত করার যোগ্যতা অর্জন এত সহজ হওয়া উচিৎ নয়।
ছোটকালের একটা সময়ের কথা মনে পরে।
আমি যে এলাকায় বাস করতাম তার সীমানা ঘেঁষে গড়ে উঠেছিল একটা বিশাল বস্তি। নাম ছিল বাস্তুহারা বস্তি; সবাই মুখে বলত “বাস্তয়ারা”।
তো আমাদের কলোনির খেলার মাঠে প্রায়ই ঐ বস্তির ভাগ্যহত, দৃশ্যত নোংরা ছেলে-পেলেগুলো আসত। ভদ্রলোকের ছেলেপেলের সচ্ছল জীবন, পোশাকআশাক আর এই দিকে নিজেদের করুন, কষ্টের জীবনের ভয়াবহতার মাঝের চরম অসমতা দেখে তাঁদের মধ্যে আমাদের নিয়ে এক অদ্ভুত উপহাসের জন্ম নিত বোধ করি। তাই এরা প্রায়শই আমাদের দেখলেই অকারণেই গালাগালি করত।
এই গালি কি সেই গালি? জঘন্য, অকথ্য! মান বাঁচাতে তাদের ধরে ঠেঙাতে গেলে যেত পালিয়ে। পুনরায় ধীরে ধীরে ফিরে এসে দূর থেকে গালাগালি অব্যাহত রাখত। ধরতেও পারতাম না, সহ্যও করতে পারতাম না। এই দেখে দারুণ মজা লুটত ছেলেগুলি। পরে আমরা যা করতাম তা হল উপেক্ষা।
এইভাবে একদিন তারা উৎসাহ হারাল। এই ভাগ্যহত বস্তির ছেলেগুলোর সাথে ঐ পরিচালকের তুলনা দিয়ে তাঁদের ছোট করা আমার উদ্দেশ্য নয়। এই উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে চাইলাম যে উপেক্ষার চেয়ে ভাল অস্ত্র আর কিছুই হতে পারে না। যখন কেউ অকারণে অপমান করার হীন চেষ্টা করে, তবে তা যেন ব্যর্থ চেষ্টা হয়। ঐ পরিচালকও পালিয়ে আছে এখন।
বাজি ধরে বলতে পারি এই ছবি’ই তার শেষ ছবি নয়। এই সফলতা তাকে আরও গালাগালি করার অভিসন্ধি করতে উৎসাহিত করল। বরং আরও অনেক’কেই। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায় যৌক্তিক, সুস্থ, ও উন্নাসিক উপেক্ষার প্রতিরক্ষাই দুর্ভেদ্য। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।