মুভি ক্রিটিক ব্লগ (প্রথম বাংলা মুভি ব্লগ) ★★★★★ © ২০০৭ - ২০১৩ ওয়েবসাইট: www.saifsamir.com
সেদিন অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পরলাম। ব্রিটিশ কাউন্সিলে যেতে হবে। বই ও ডিভিডি ফেরত দিতে হবে। পরদিন গেলে গুণতে হবে জরিমানা। জলদি করতে গিয়ে, অফিস থেকে বের হওয়ার আগে ওয়াশরুমে যাওয়া হয়নি।
কাজটা যে ঠিক হলো না, মাঝ পথে টের পেলাম। কি আর করা, ড্রাইভারকে তাড়া দিলাম জলদি করতে।
দীর্ঘ এক যুগ পরে যখন প্রবর্তক মোড়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলে পৌঁছলাম, ঘড়িতে তখন পাঁচটা বাজে বাজে অবস্থা। আর আমার অবস্থা ১২টার কাছাকাছি। সিঁড়ি বেয়ে দুতলায় উঠে, 'রিটার্ন' উচ্চারণ করে বই-ডিভিডি কাউন্টারে ঝেড়ে, লাইব্রেরিয়ানকে অতি অমায়িকভাবে জিজ্ঞেস করলাম: ভাইজান, ওয়াশরুমটা কোনদিকে? ভদ্রলোক দেখি সিকিউরিটিকে ডাক দিলেন! কী ব্যাপার, ওয়াশরুমের খবর জানতে চাওয়াটা অপরাধ নাকি? তিনি সিকিউরিটিওয়ালাকে বললেন, 'ওনাকে ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দাও।
' - ও আচ্ছা, এই ব্যাপার!
সিকিউরিটিওয়ালা বললো, আসেন। আমি বললাম, চলেন, শুভ কাজে দেরি করতে নাই! ব্রিটিশ কাউন্সিলের রিসোর্স সেন্টারটা প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির একটি ভবনের দুতলায় অবস্থিত। নিরাপত্তাওয়ালার পিছু পিছু তিন তলায় উঠলাম। শুনশান ক্লাসরুমের সামনের করিডর ধরে এগিয়ে যাচ্ছি। নিরাপত্তাওয়ালা করিডরের ও মাথায় গিয়ে হাতের বাম পাশে পর্দা দেয়া একটি গমনপথ দেখিয়ে বললেন, ওয়াশরুম।
আহা, কী মধুর শব্দ! আমি তাকে বললাম, ধন্যবাদ। নিরাপত্তাওয়ালা চলে যাওয়ার আগে বললো, 'আপনি আসতে পারবেন তো?' - কী বলেন, হেসে-খেলে!
অতঃপর আমি জরুরী কর্ম সম্পাদানের নিমিত্তে, সভ্য মানবজাতির সবচেয়ে অপরিহার্য নিলয়ে প্রবেশ করিলাম...
দুই-এক মিনিট গত হইবার পর যখন আমার নির্গমনের সময় আসন্ন হইলো, তখন আচমকা কোলাহলের শব্দে অবাক হইলাম! হাঁ ভাই, ফাঁকা ভবনে এতো ধুপধাপ, ছেলে-মেয়ের আওয়াজ শোনা যায় ক্যামনে? করিডরের শেষ মাথায়, ওয়াশরুমের পাশেই দেখেছিলাম সিঁড়িটা। মনে হচ্ছে, সিঁড়ি ধরে উপর থেকে ছেলে-মেয়ের দল ক্লাস শেষে নামছে। মূহূর্ত পরেই ওয়াশরুমে শুনছি এক দল মেয়ের কলকাকলি! কি কলি কালে আইসা পড়লামরে বাবা! মেয়েগুলো জেন্টস রুমে কী করে? বেনসন সেবনকারী হঠাৎ গোল্ড লিফে টান দিলে মাথায় যে ঝাঁকুনিটা লাগে, সেটা অনুভব করলাম! ওরে কে আছিস, আমাকে বাঁচা!! একি, একি, এতো নারীদের খাঁচা!! স্যাম, তুই কিনা শেষ পর্যন্ত লেডিস টয়লেটে বন্দি হইলি! মান-ইজ্জত তো আর থাকলো না রে! কেমনে বাইর হবি? দরজা খুললেই তো এক ঝাঁক মেয়ে তোরে দেইখা রাম চিৎকার দিবো! বাইরে পালাইতে গেলেই করিডরে থাকা ছেলেগুলা তোরে ধইরা ফেলবো! তোর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠবো ইভটিজিংয়ের! গোপনে ক্যামেরায় ছবি তোলার! এমনকি ধর্ষণের সুযোগ সন্ধানে বাথরুমে লুকিয়ে থাকার অভিযোগও উঠতে পারে! তুই তো শ্যাষ! তোর চাকরি জীবন শ্যাষ, তোর লেখক জীবন শ্যাষ! জননন্দিত হওয়ার বদলে তুই হইবি জননিন্দিত! ওরে নিরাপত্তাওয়ালা ভাই, তুই ক্যান আমার নিরাপত্তা বিপন্ন করলি? তোর কি বাপ-ভাই নাই???
ইহজনমে আমি এমন বিব্রতকর বিপদে আর কখনো পরি নাই। এ এমন বিপদ, বন্ধুরা শুনলে হাসবে, নিন্দুকেরা শুনলে লাফাবে! কি করি আমি, কি করি??
নার্ভ শান্ত করলাম।
মনে পড়লো আমি এমন ছেলে, যে খুন করলেও শান্ত থাকতে পারবে। ফ্লাশ আনলোড করলাম।
দরজার কাছে এসে দাঁড়ালাম। দরজা খুললাম না। জানি এ বিপদ সাময়িক।
আমাকে শুধু একটা কাজই করতে হবে, সেটা হলো কিছুই করতে হবে না। চুপচাপ অপেক্ষা কর, সব পাখি ঘরে ফিরবেই! সমস্যা হলো, এই ওয়াশরুমে মাত্র দুইটা টয়লেট। কাজেই অনেকক্ষণ বন্ধ থাকলে, এই টয়লেটের দরজায় ঘা পরতে পারে। সে ক্ষেত্রে কি করব? চুপ থাকবো। চুপ থাকার মাধ্যমে ঘোষণা দিব, এই টয়লেটটি আউট অফ সার্ভিস! এর মধ্যে আমার পাশের টয়লেটটি একাধিকবার ব্যবহার হয়ে গেছে, ফ্লাশের শব্দ শুনে যা বুঝলাম।
একবার মনে হলো, দুজন এক সঙ্গে ঢুকলো! কিছু 'মেয়েলি টেকনিকাল' কথাবার্তা শোনা গেল! ভাবলাম আমার লজ্জা পাওয়া উচিত, পেয়েছিলাম! ওয়াশরুমে হাত-মুখ ধোয়ার জন্য বেসিনও ছিল, ওটার সামনে মেয়েদের উপস্থিতি টের পাচ্ছিলাম। একবার শুনলাম, একজন আরেকজনকে পরামর্শ দিচ্ছে, কিভাবে ব্রণ দূর করা যায়!
প্রতিটি মূহূর্ত দীর্ঘ একেকটি যুগ মনে হচ্ছিল। প্রথমদিককার যে শোরগোল, মিনিট দশেক পর সেটা কমতে থাকে। পনের মিনিট পর মনে হলো, এই ঘরে কেউ নেই, কেউ নেই। এবার নিরাপদ প্রস্থানের পালা।
দরজা খুলে বের হয়ে গেলাম। ওয়াশরুমের বাইরে পা ফেলে, শরীর ঘুরিয়ে পর্দা ঢাকা বড়সড় সদরের দিকে ভালো করে তাকালাম। দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে দেখলাম, ইংরেজিতে কম্পিউটার কম্পোজে লেখা - Female। ধরণী, শান্তিনিলয়ে প্রবেশপূর্বে এই লেখা আমার চোখের কোণে ধরা দিল না কেন? বিব্রত আমি শূন্য করিডর ধরে এগিয়ে ফিরে এলাম BC-তে। সিকিউরিটিওয়ালাকে বললাম, মামা এটা কি করলি? সিকিউরিটিওয়ালা: 'কি হইছে সার?' - তুই আমারে লেডিস টয়লেটে পাঠাইলি ক্যান? ওর সরল জবাব, আমরা সবাই (BC-র লোকেরা) তো ওটাই ব্যবহার করি।
বুঝলাম, ওয়াশরুমটা যখন ফাঁকা থাকে, বিসির লোকেরা তখন সেটা ব্যবহার করে! যত্তোসব ক্লীবের দল! ব্রিটিশ কাউন্সিল চিটাগংয়ের বর্তমান রিসোর্স সেন্টারের এই হলো অবস্থা! অথচ কয়েক বছর আগে সেন্টারটি যখন নাসিরাবাদে ছিল, কি চমৎকার ছিল তখনকার পরিবেশ। ইংল্যান্ডে চ্যারিটি সংস্থা হিসেবে তালিকাভুক্ত ব্রিটিশ কাউন্সিল, বাংলাদেশে এখন তীব্র ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। চট্টগ্রামে ব্রিটিশ কাউন্সিল তার পূর্ব অবস্থান ২ নাম্বার গেট (নাসিরাবাদ) থেকে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়েছে। সবচেয়ে লাভজনক ব্রিটিশ কাউন্সিল এডুকেশন সেন্টারটি নিয়ে গেছে বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদে, বাণিজ্য বাড়াতে। অন্যদিকে কম লাভজনক রিসোর্স সেন্টার বা লাইব্রেরিটাকে দায়সারাভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির সঙ্গে, যেটি চলছে চরম অবহেলিতভাবে।
বারোটা বেজে গেছে ওটার!
প্রতিটি অভিজ্ঞতা অর্জনের পর আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি, এ থেকে কি শিখলাম? লেডিস টয়লেটে বিব্রতকর ১৫ মিনিটে আমি কি শিখলাম? আমি দেখলাম, শিখলাম, অবাক হলাম, একবারও আমার দরজায় ঘা পড়লো না! জেন্টস টয়লেটে থাকলে অনেক আগেই দুষ্ট পোলাপাইন দরজা ভেঙ্গে ফেলতো! কি, ফেলতো না??
যা হোক, মানির মান যে আল্লা রাখে, তা আরেকবার প্রমাণিত হলো!
★ এই লেখাটির সংক্ষিপ্ত লিংক: tinyurl.com/ladiestoilet
_______
☛ বিব্রত কবিতা
☛ বাসর রাতের ডিউটি!
☛ নিষিদ্ধ কবিতা
☛ এই মেয়ে! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।