স্বাধীনতা প্রিয় ১ জন মানুষ। শুধুই স্বাধীনতা চাই। https://www.facebook.com/md.z.bablu "সকাল থেকেই একটা গল্প মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। গল্পের শেষে নায়ক কে মেরে ফেলব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর মারবই না বা কেন?এত কষ্টের আবরন দিয়ে নায়ক কে সাজাবো যে,শেষে মৃত্যু ভিন্ন অন্য কোন উপায়ে তার আত্মার শান্তি দেওয়া সম্ভব নয়।
"
এসব ভাবতে ভাবতে কিশোরের মাথার উপরেরভাগ গরম হয়ে উঠে। একটা টিনসেট রুম এ ব্যাচলর থাকে কিশোর। গরমকালে টিনের চাল আর চুলার আগুনের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না। সিলিং ফ্যান টা টিনের এ উত্তাপ কে পৌঁছে দিচ্ছে কিশোরের মাথায়। তাও মাথার ভিতরের ভাগ গরম হয় না।
একজন মধ্যবিত্ত্ব ব্যাচলরের মাথার ভিতরের ভাগ গরম হওয়া মানায় না।
কিশোর অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। এ অফিসকে গরীবরা কর্মক্ষেত্র বলে আর মধ্যবিত্ত্বরা অফিস বলে। এর বাইরে বেতনে তেমন কোন পার্থক্য থাকে না তাদের মধ্যে। বাবুদের অফিস আলাদা।
গন্তব্য গমনে কিশোর ৩ নং বাসে উঠে। মধ্যবিত্ত্বের বাস অন্যরকম। গরীবের সাথে একসাথে ঘামতে হয়। ভাড়া এক-দুই টাকা বাড়তি নিলে গরীবরা গালাগালী করলেও মধ্যবিত্ত্বরা করতে পারে না। গরীবরা দামী মোবাইল দেখলে পকেট মারে আর মধ্যবিত্ত্বরা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভদ্রতার খাতিরে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
অফিসে পৌঁছে। তার জন্য নির্দষ্ট জায়গাটি এসির আওতার বাইরে। মোবাইল টেবিল উপর রাখতে গিয়ে দেখে মায়ের কল। বাস এর ভীরে খেয়াল করে নি। গাধার মত খাটুনি এখন তার।
পরে ব্যাক করবে ভেবে রেখে দেয় মোবাইল। কিশোর জানে এটা মাসের শুরু। মায়ের ঔষধ শেষ। বোনের স্কুল বেতনের জন্য চাপ দিচ্ছে স্কুলে। নিজের বেতনের ঠিক ঠিকানা নেই।
কর্তারা দিন ক্ষন ঠিক করে যেদিন বেতন দেওয়ার কথা মাথায় আনবেন,সেদিন ছাড়া গতি নেই। খাবার এর বক্স টেবিল এর নিচে রেখে বেরিয়ে পরে কাজে লেগে যায় কিশোর।
খোলা জায়গায় ট্রাক এসে এসে থামে। কিশোর এর কাজ সব কিছু হিসাব লিখে রাখা। হিসাবে ত্রুটিতে নিজের পকেট থেকে গচ্ছা যায়।
তাই এত রোদের মধ্যেও ঘাম মুছার সময় নেই। আকাশের অন্য প্রান্তে টিটকারীর মেঘ ও দেখা যাচ্ছে।
গরমে যখন সবাই হাঁসফাঁস,তখন বৃষ্টি বয়ে নিয়ে আসে এই টিটকারীর মেঘ। কিশোরের ভাষায় কাকফুটা রোদের পর কাকভিজা বৃষ্টিতে ভিজছে সবাই। কাকাফুটা রোদে পোড়ার পর কাকাভেজা বৃষ্টির স্বাদ এসির বাতাসের বাবুরা পায় না।
ফোরকান মিয়াঁ ডাকছে সবাইকে। এম.ডি সাহেবের পায়ের পৃষ্ঠলেহনকারী সে। জরুরী ঘোষনা!সবাই জটলা হয়ে শুনছে। এম.ডি সাহেব অফিসের কাজে এক সপ্তাহর জন্য দেশের বাইরে যাবেন। সবার বেতন আগামী মাসে দেওয়া হবে।
কিশোর টু শব্দটি করতে পারে নি। কিশোর জানে তার মত হিসাবরক্ষক অলিতে গলিতে থাকে। চাচার রিকুয়েস্ট চাকরীটা পায়। চাচা এখানকার অনেক পুরানো মানুষ। কিছু বললে চাকরীটাও থাকতো না।
মধ্যরাত। রুম এ ফেরা হয় নি কিশোরের। ব্রীজ এর উপর হাঁটছে। নিচে বহমান নদী। বাতাসের কারনে সিগারেট ধরাতে কষ্ট হচ্ছে।
সিগারেট ধরিয়ে ব্রীজ এর দেয়াল ঘেঁষে দাড়াঁয় কিশোর। বৃষ্টির পর থেমে থেমে দমকা হওয়া হচ্ছে। নদীর পানির দিকে তাকালে চাঁদটা ভেসে যাচ্ছে বলে মনে হয়। চাঁদের সাথে ভেসে যাবে বলে একটু সামনে ঝুঁকে কিশোর।
মনে পড়ে মায়ের ঔষধ শেষ।
বোনের স্কুল বেতন বাকি। কল ব্যাক করা হয় নি। গল্পের নায়কের কথা মনে পড়ে...
নায়ক কে না হয় সে কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে মৃত্যুর পথ বেছে দেয়। তার কষ্টের মুক্তির পথ কে দিবে?
নদীর পানিতে চাঁদের জায়গায় মা আর বোনের মুখ দুটো ভেসে উঠে। তার পৃথিবীতে চাঁদ এই দুটোই।
কিশোরকে ছাড়া তারাও অসহায়। ব্রীজ এর দেওয়াল ছেড়ে চলে আসে সে। আবার যাত্রা করে ঘরের উদ্দ্যেশ্যে।
রাস্তায় কোন প্রাণের চিন্হ নেই। তবুও সে চোখ লুকায়।
মধ্যবিত্ত্বদের আবার কাঁদতে নেই। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।