বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুর্নীতিবাজদেরকে অপসারন করুন ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। স্বাদে অতুলনীয় এ মাছ বাঙালির রসনাতৃপ্তির এক মস্ত বড় উপাদান। এখন বর্ষাকাল। ইলিশ আহরণের ভরা মওসুম। অথচ বাজারে ইলিশসঙ্কট।
দিনে দিনে দুর্লভ হয়ে পড়েছে আমাদের চিরচেনা এই ইলিশ। এমন একদিন ছিল, মওসুমে বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ পাওয়া যেত। মধ্যবিত্তও এই মাছ কিনে সবাই হাতে হাতে বাড়ি ফিরতেন। মাছে-ভাতে বাঙালি হিসেবে খাদ্যতালিকায় সে সময় বিভিন্ন মাছের মধ্যে বিশেষ স্থান ছিল এই ইলিশের। বাংলাদেশের মাৎস্য প্রোটিনের ১৬.৪ শতাংশ পূরণ হতো এই ইলিশ থেকে।
ইলিশ আমাদের জন্য অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ একটি বড় সম্পদ। জানা গেছে, পৃথিবীতে বছরে যত ইলিশ উৎপাদিত হয়, তার ৬২-৭০ শতাংশ হয় বাংলাদেশে। বাকিটুকু পাওয়া যায় মিয়ানমার ও ভারতে। বাংলাদেশের জিডিপির ১৫ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে। এ ছাড়া আমাদের দেশের দুই থেকে আড়াই মিলিয়ন জনগোষ্ঠী ইলিশ উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত।
ইলিশ সামুদ্রিক মাছ হলেও ডিম দেয় বড় নদীতে। ডিম ছাড়ার ছয় থেকে ১০ সপ্তাহের মধ্যে ১২-২০ সেন্টিমিটার লম্বা হয় এবং ‘জাটকা’র রূপ নেয়। আরো বড় হয়ে এরা ভাটিতে নামতে থাকে। একসময় সাগরে চলে যায়। সেখানে আহরণ করা হয় অসংখ্য ইলিশ।
তবে সাগরের চেয়ে নদীর ইলিশের স্বাদ বেশি। সমুদ্রের নোনাজল থেকে ইলিশ যত উজানে যেতে থাকে এবং যত বেশি মিঠাপানিতে থাকতে পারবে, তত বেশি তার দেহ থেকে আয়োডিন, লবণ, খনিজ প্রভৃতি ঝরতে থাকে। মাৎস্যবিজ্ঞানীদের মতে, ইলিশ বেশির ভাগ সময় সাগরে থাকলেও বংশ বিস্তারের জন্য উজানের নদীগুলোতে পাড়ি জমায়।
আমাদের দেশের ইলিশমাছের প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র পদ্মা। অন্যান্য নদী বা মোহনার তুলনায় এর স্বাদ বেশি বলে চাহিদাও অনেক।
বর্তমান বাজারে পদ্মার নামে আকাশচুম্বী দামে যে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, তা প্রকৃত অর্থে পদ্মার নয়, সাগর জলে ধরা মিয়ানমারের এক ধরনের ইলিশ। এ মাছে নেই ঐতিহ্যবাহী রাজকীয় স্বাদ।
মাৎস্য গবেষকদের মতে, দুই দশক ধরে ইলিশের ঝাঁক বংশবিস্তারের জন্য বাংলাদেশের নদীপথকে পছন্দ করছে না। কারণ পদ্মাসহ উজানের নদীগুলোর নাব্যতা অতি মাত্রায় কমে গেছে। ইলিশের চলার পথ অন্তত চল্লিশ ফুট গভীর হতে হবে।
পলি জমে ভরাট হয়ে এসব নদীর পানিপ্রবাহ আর আগের মতো নেই। ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ইলিশের স্বাভাবিক বিচরণ। তাই বংশবিস্তারের জন্য এরা আর উজানে উঠছে না। নদী মোহনাতেই ডিম ছাড়ছে, যা প্রজননের স্বাভাবিক নিয়মের পরিপন্থী। এসব কারণেই ইলিশের উৎপাদন দ্রুত কমে যাচ্ছে।
যে পদ্মা ইলিশের প্রধান বিচারণ ক্ষেত্র, সেই পদ্মাই আজ প্রায় মৃত। শুধু বর্ষার চার মাস ছাড়া এ নদীতে সারা বছর পানি থাকে একেবারেই অপ্রতুল।
ভারতের ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মাসহ কয়েকটি নদীর আজ শীর্ণদশা। অথচ ইলিশের মতো এত প্রিয় মাছটির চাহিদা শুধু বাংলাদেশেই নয়, ভারতেও। কাজেই ইলিশের উন্নয়ন ও সংরক্ষণের জন্য ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থা এমনই যে, ভারতের কার্যকর সহযোগিতা ছাড়া ইলিশের উন্নয়ন ও সংরক্ষণ সম্ভব নয়। পদ্মাসহ ভারত ও বাংলাদেশের কিছু অভিন্ন নদী রয়েছে। প্রথমেই এসব নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। বছরের বিশেষ সময়ে জাটকাসহ সব ধরনের ইলিশ শিকার বন্ধ করতে হবে। এসব করতে পারলেই ইলিশের সুদিন আবার ফিরে আসবে।
এ বিষয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার জন্য দুই দেশের যৌথ পদক্ষেপ এবং তবে যথাযথ বাস্তবায়নের প্রত্যাশা করছি।
॥ সৌরভ সোহরাব ॥ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।