১৯৬৭ সালে, দেশ-এর পুজোসংখ্যায় বেরল ‘ঘুণপোকা’ – লেখক শীর্ষেন্দুর প্রথম উপন্যাস। ‘ঘুণপোকা’ নিয়ে নাকি সে’রকম কোনো শোরগোল ওঠেনি তৎকালীন বঙ্গীয় পাঠকসমাজে; শীর্ষেন্দুর নিজের ভাষায়, “….কোনো বিস্ফোরণ তো দূরের কথা, একটা কালীপটকার আওয়াজও হলনা….” – অথচ, ‘ঘুণপোকা’র মতন জটিল মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে খুব বেশী নেই। “নদীর কোনো ভান নেই; শীর্ষেন্দুর ঔপন্যাসিক সত্তারও কোনো ভণিতা নেই। শীর্ষেন্দু তাঁর সমগ্র সাহিত্যজীবনে অনেক সম্মান-পুরস্কার পেয়েছেন। শীর্ষেন্দু নামটি রেখেছিলেন তার বাবা।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখালেখির পঞ্চাশ বছর হয়েছে। এ দীর্ঘ সময়ে তার লেখায়ও ঘটেছে পালাবদল, অনেক বাঁক। যার লেখা আমাকে সব সময় আলোড়িত করে তিনি হচ্ছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।
শীর্ষেন্দুর জন্ম দোসরা নভেম্বর, ১৯৩৫, ময়মনসিংহে। বাবা রেলের চাকুরে হওয়ার দরুণ তাঁর শৈশব কেটেছে নানা জায়গায়, বলা যেতে পারে এক যাযাবরের জীবন।
শীর্ষেন্দু লিখেছেন প্রচুর, এবং এখনও লিখছেন, অতএব তাঁর সমগ্র সাহিত্যসৃষ্টি নিয়ে আলোচনা করার জন্য যে পরিসর দরকার, সেটা এককথায় বৃহৎ। বাবা-মা-আত্মীয়স্বজন-বাড়ি ছেড়ে শীর্ষেন্দু দূরে থেকেছেন প্রচুর, এবং সেই ব্যাপারটা তাঁর লেখার মধ্যেও প্রকাশ পেয়েছে। ‘মানবজমিন’ উপন্যাসের জন্য ১৯৮৯ সালে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান তিনি। নতুন লেখকের প্রতি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কী পরামর্শ? প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। পৃথিবীতে সব গল্পই লেখা হয়ে গেছে, কিছুই বাকি নেই।
কেবল পুরনোকেই নতুন করে উপস্থাপন করা। একজন যখন লেখালেখি করতে আসবে পৃথিবীর তাবৎ লেখক তখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী। সকলের সঙ্গে তাকে পাঞ্জা লড়তে হবে।
‘পার্থিব’ শীর্ষেন্দুর লেখা এ’যাবৎ বৃহত্তম আকারের উপন্যাস। অজস্র চরিত্র, নানান ঘটনাবলী, মানুষের জীবনের নানা টানাপোড়েন, উত্থানপতন, ঘাত-প্রতিঘাত ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি এখানে, এবং যেভাবে সবাইকে একজায়গায় জড়ো করে এক স্রোতে মিলিয়েছেন, সেটা এককথায় অতুলনীয়।
এ যেন শত নদী গিয়ে একই সাগরে মেশার মত অনেকটা – সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং স্বতঃস্ফূর্ত। "ঘৃনা আর ভালবাসার দুরত্ব বুঝি বেশী নয়। মানুষের মনে তারা পাশাপাশি দুটি পাখির মত বাস করে। একজনকে ডাক দিলে অন্যজনও ডেকে ওঠে। " - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (ফেরা)।
বাংলাদেশের সাহিত্য এবং বাংলাদেশ নিয়ে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বললেন, এখানকার গদ্যে নিজস্ব স্টাইল এসেছে। গদ্যসাহিত্যের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। আর এটা সত্যি যে ওপার বাংলার চেয়ে এখানে আমার পাঠক বেশি। এখানকার মানুষের কাছে যে ভালোবাসা পেয়েছি, এতটা কখনো ওখানেও পাইনি।
পার্থিব জগতের জল, বায়ু, আহার্যের স্বাদ নিয়ে আমরা জীবজগতের সকলেই পার্থিব জগতে বেঁচে আছি।
জগতের রূপ-রস-গন্ধ আমাদের মনকে ভরিয়ে তুলে, আনন্দ জোগায়। আমাদের ভালো-মন্দ-সুস্থতা-অসুস্থতা সবকিছুই এই পার্থিব জগতকে কেন্দ্র করে। কোনো না কোনোভাবে এই বস্তুজগতকে কেন্দ্র করে আমাদের যাবতীয় চিন্তা-ভাবনার পরিধি। পার্থিব জগতের জ্ঞানী-গুণী-বিজ্ঞানী-দার্শনিকেরা বলেন-অতিপ্রাকৃত-অপার্থিব-অলৌকিক বলতে কিছুই নেই। এই পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়।
পরলৌকিক জীবনই তো প্রকৃত জীবন। (সূরা আল-আনকাবূতঃ ৬৪। নন্দিত ঔপন্যাসিক শীষেন্দু মুখোপাধ্যায়েল পৈতৃক নিবাস মুন্সীগঞ্জে। অনন্য গদ্যশৈলী ও বিষয় বৈত্রিচের কারণে বর্তমানে বাংলা সাহিত্যে তার অবস্থান অনেক উচুতে।
ঢাকায় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বুড়িগঙ্গা দেখতে গিয়েছিলেন।
দুঃখ করে বললেন, চোখে জল এল। একেবারে মরে গেছে। এখনো হয়তো উদ্যোগ নিলে একে বাঁচানো সম্ভব। নদীর সাথে সভ্যতার সম্পর্ক। নদী সংস্কার না হলে সভ্যতা বাঁচে না।
কলকাতায় গঙ্গাও দূষিত কিন্তু বুড়িগঙ্গার মতো এতটা না। শীর্ষেন্দু প্রথম চাকরি নেন স্কুল শিক্ষক হিসাবে। বর্তমানে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকার সাথে জড়িত। এছাড়া তিনি দেশ পত্রিকাতেও লিখে থাকেন। বাংলা সাহিত্যের বিরল লেখকদের অন্যতম শীর্ষেন্দুর প্রধান শক্তি তাঁর আস্তিক্যবোধ।
জীবনের সকল সংশয়ের মধ্যেও তিনি এক অসংশায়িত উত্তরণের কথা উচ্চারণ করেন অপার সাহসে।
"মাটি থেকে ইট হয়--ইট থেকে বাসা হয়--বাসা পুরাতন হয়ে ভেংগে যায়--ইট আবার মাটি হয়ে যায়"। শীর্ষেন্দু বললেন, তিনি ঈশ্বরকে খুঁজছেন না। তাঁর লক্ষ্য, কীভাবে জীবন যাপন করব, তা জানা। ঈশ্বর খোঁজার কোনো প্রয়োজন তাঁর নেই।
কারণ, ঈশ্বর যখন তাঁকে সৃষ্টি করেছেন, একসময় সে ঈশ্বরেই তিনি লীন হবেন। ‘কিন্তু আমার সংকট এই জীবন নিয়ে, আই হ্যাভ প্রবলেমস উইথ দিস লাইফ। পরকালে কী হবে, তা নিয়ে আমার কোনো চিন্তা নেই। পদে পদে এই জীবনটাকে আমি কীভাবে যাপন করব, আমি সেটাই জানতে চাই। ’
পার্থিব উপন্যাসের প্রথম লাইন হচ্ছে- "বাদামতলায় রামজীবনের পাকা ঘর উঠছে ওই ।
" আর শেষ লাইন হচ্ছে- "এসো আমার সঙ্গে তুমিও কাঁদো, এসো কান্নায় একাকার হয়ে যাই। একাকার হয়ে যাই । " এই উপন্যাসে শহর গ্রাম মিশে একাকার হয়ে গিয়েছে- কখনও লন্ডন-আমেরিকা । বুড়ো বিষ্ণুপদর তিন ছেলে ও দুই মেয়ে । এক মেয়ে নিখোঁজ।
বড়ো ছেলে কৃষ্ণজীবন একজন বিজ্ঞানী । মেজ ছেলে রামজীবন- একজন ডাকাত । আর কন্যা বীনাপানি-যাত্রাপালা অভিনয় করে এবং তার সাধু স্বামী নিমাই । অ্ন্য দিকে হেমাঙ্গ - হেমাঙ্গ খুব সৌ্খিন এক যুবক। রশ্মি রায় ।
হেমাঙ্গর চাচাতো বোন চারুশীলা । চয়ন- মৃগী রোগী । কিন্তু ছাত্রদের পড়ায় ভালো । ঝুমকি-, ঝুমকির বোন অনু- মনীশ, রিয়া এবং আরও অনেক চরিত্র । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।