লেখার চেয়ে পড়ায় আগ্রহী। ধার্মিক, পরমতসহিষ্ণু। আপত্তিকর ফিল্ম ও প্রতিক্রিয়ার ধরন
বরাবরই মুহাম্মদ সা.-কে নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকার সীমাহীন গাত্রদাহ, বিশেষত এন্টি- ইসলামিক/এন্টি-মুসলিম গ্রুপগুলোর। তারা শিল্পের নামে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে সেমিটিক ধর্মের এই সর্বশেষ শাখাটির ওপর হামলে পড়ছে বারবার। তাদের এ-প্রবণতা যদিও অনেক পুরনো, কিন্তু হামলে পড়ার কৌশল ও মাধ্যম নিরন্তর উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে।
তবে আক্রান্ত ধর্মের অনুসারীদের প্রতিক্রিয়াটা সবসময় সনাতনই রয়ে যাচ্ছে। আর তাই এর সমালোচনা হচ্ছে তীব্রভাবে, এমনকি খোদ মুসলিমবিশ্বেও।
ইতিহাস ও জীবনচরিত-নির্ভর শিল্পচর্চা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলতে যা বোঝায়, এখানে কি আদতে তাই হচ্ছে? এ-কি সত্যিই নিখাদ ইতিহাস ও জীবনচরিত-নির্ভর কোনো শিল্প, নাকি মনগড়া ইতিহাস ও জীবনকাহিনি-নির্ভর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথাকথিত শিল্প? আর তা-ই যদি না হবে, তাহলে আধুনিকতা ও রেঁনেসাসের নামে ইউরোপ পৃথিবীর সকল বিষয়ের, ইতিহাসের মূল তথ্য-উপাত্ত ঘেটে-ঘেটে যাচাই করতে পারল, সত্যনিরূপণের উদ্যোগ নিতে পারল, শুধু ইসলামের প্রবর্তক মুহাম্মদ সা. এর বেলায় তা পারল না কেন? আর এজন্যই দেখি মিশরীয় লেখক, ঔপন্যাসিক হুসাইন হায়কল ‘লাইফ অব মুহাম্মদ’ গ্রন্থের ভূমিকায় রেঁনেসাস-জাত ও আধুনিকতা-উদ্ভূত তথাকথিত সত্যনিষ্ঠা ও তথ্যানুসন্ধানকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছেন।
তারা ইতিহাসের যে অংশগুলো নিয়ে বারবার একই রকম নেতিবাচক কাজগুলো করছে, করে যাচ্ছে, এর নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ ও সমাধান কিন্তু ইতিহাসের পাতায়ই রয়েছে। কিন্তু ‘বন্য শুকর খুঁজে পাবে শুধু কাদা’, তাই এরাও শুধু কাদা-ই পায়।
এপাশ-ওপাশ ঘেটে, মন্থন করে মধু বা ক্ষিরটুকু উদ্ঘাটনে এরা আগ্রহী নয়। জলকাদা নেড়ে অন্যকে সিক্ত করাসহ উত্যক্ত করাতেই এদের তুমুল আনন্দ। এরা বোঝে না বা বুঝতে চায় না যে, একটি জীবনের বিচার তৎকালীন সমাজ-ব্যবস্থার নিরিখেই হয়ে থাকে, পরবর্তী জীবন-ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নয়। আর সমকালীন সমাজ-ব্যবস্থার নিরিখে যাচাই-বাছাইয়ের এই গিনিপিগ শুধু একজন ব্যক্তিই বারবার হচ্ছেন কেন? সেমিটিক ধর্মের অপরাপর যে-সব নবি-রাসুল ছিলেন, যাদের জীবনের অনেক ঘটনাই এখন অযৌক্তিক মনে হবে, তাদের এ-সব কাহিনি নিয়ে শিল্পচর্চা ও মতপ্রকাশের প্রবণতা নেই কেন? কথাটা বলায় আমি দুঃখিত। কারণ, মুসলিমদের কাছে সম্মানিত সে-সব নবি-রাসুলদের জীবন-কাহিনি নিয়ে খেলা করে বেয়াদবির পাল্লা ভারি করার পক্ষে আমি নই।
শুধু তর্কের খাতিরে এবং প্রেক্ষাপট বোঝানোর উদ্দেশ্যেই বলা।
তাহলে শুধু নবি মুহাম্মদ সা. এর পেছনে এমনভাবে লাগা কেন? কারণ, তার অনুসারীর সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকায় এর প্রসার সে-সব মানুষদের মনে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে, যারা স্বেচ্ছাচারিতা এবং প্রবৃত্তির একান্ত পূজারী। যারা পৃথিবীব্যাপী অন্যায্যভাবে নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে চায়। এই তো কিছু দিন আগে নরওয়েতে ব্রেইভিকের পাগলামো হত্যাকা- হয়ে গেল শুধু এই অসৎ উদ্দেশ্যে ও চিন্তায়।
এভাবে সে এবং তার অনুসারীরা ইসলামের জয়যাত্রা থামিয়ে দিতে চায়। কিন্তু তা কি সম্ভব?
আবেগপ্রবণ মুসলিমদের মনে রাখা উচিত এবং দৃঢ় বিশ্বাসও যে, ইউরোপে-আমেরিকায় যে-হারে ইসলামের প্রসার হচ্ছে, তাতে সেখানকার যারা ইসলাম-বিরোধী, তাদের ক্ষেপারই কথা। কিন্তু এ জন্য প্রাচ্যের প্রতিক্রিয়া-প্রকাশে যে সহিংসতার ধারা দৃশ্যমান, তা কিন্তু ইসলামের মহিমা বাড়াচ্ছে না, বরং প্রাচ্যবাসী মানুষদের ধর্মবোধকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
তাহলে ধর্ম বা ধর্ম-প্রবর্তক কোনোভাবে আক্রান্ত হলে এর ভক্ত-সমর্থকদের কী করা উচিত? বোধকরি, ধর্মের মূল বাণী, ইতিহাস, বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপট সামনে রাখলেই এর উত্তর বেরিয়ে আসবে। ধর্মের মূল প্রবণতা-বৈশিষ্ট্য, পূর্বাপর ইতিহাস এবং আগামী দিনের প্রেক্ষাপটকে ভুলে গিয়ে, আবেগান্ধ হয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলে তাতে সঙ্কট বাড়ে বৈ কমে না।
যদিও এটা নিশ্চিত যে, ক্রমপ্রসারমান ইসলামের সামনে কোনো সঙ্কটই দীর্ঘস্থায়ী হবে না। কারণ, ইসলাম এগিয়ে যায় বা যাচ্ছে নিজ মহিমায়; কারো বদান্যতা বা হঠকারিতায় নয়।
ইসলাম এগিয়ে যাবে। শত্রুরা ক্রুদ্ধ হবে; অযৌক্তিক, অশালীন ও মারমুখো আচরণ করবে। জীবিতাবস্থায় যে-ভাবে ইসলামের প্রবর্তকের গায়ে আবর্জনা, নাড়িভুরি নিক্ষেপ করত, এখনও সে-ভাবেই করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।
কিন্তু মুসলিমরা এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে উলঙ্গ হয়ে যাবে? তাতে আখেরে তাদেরই মানহানি হয়। আর তা কখনোই, কোনোভাবেই উচিত হবে না। প্রতিবাদ হবে এবং করতেই হবে নিজের সম্মান-সম্ভ্রম বাঁচিয়ে, নিরাপদ রেখে। এভাবেই নবি-প্রেম ও সুস্থ-বিবেকের প্রকাশ ঘটবে, বিকাশ হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।