আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পোস্টটি আপত্তিকর



ফেইসবুক থেকে আমি প্রথম জানি সামু ব্লগের নাম। অনেকে অনেক মজার মজার লিঙ্ক দিত সেগুলো পড়ে অনেক মজা পেতাম। সেইখান থেকে শুরু। সে যাই হোক। এবার এই বেকুবের সামু ব্লগ এর অভিজ্ঞতার বর্ননা শুনুন- একেবারে প্রথম দিকে খুজে খুজে মজার লেখা গুলো পড়তাম।

সবার সাথে শেয়ার করতাম। আমার মজাই লাগত। কারন আমি সদস্য না হয়েও লেখা পড়তে পারছি। আর কি লাগে? কিছুদইন পর শুরু হল সমস্যা। আমি ১০ বছর বয়স থেকেই বাড়ির বাইরে মানুষ।

তাই একটু তরল স্বভাবের। মানে কখন খালার বাসায়,কখনবা মেসে,কখন নাম না জানা মানুষের বাসায় সাব লেট থেকে পড়াশোনা করেছি। তাই নিজস্ব কোনো মতামত দিতে শিখিনি :`> । যে যা বলত তাই মেনে নিতাম। ক্যাচালে যেতাম না।

পড়াশোনার বাইরে কিছুই বুঝতাম না। বই এ যা লেখা থাকত সেটাই বিনা বাক্য ব্যয় করে মেনে নিতাম। কিন্তু সামুতে এসেই বুঝলাম এর বাইরেও একটা জগত আছে। নিজ়ে এত কম জানি বলে লজ্জা পাওয়া শুরু করলাম। :``>> সমস্যার শুরু হল কিছু পোস্ট পড়ে।

মানে সবাই বুঝতে পারছেন আশা করি। আস্তিক নাস্তিক পোস্টের র কথাই বলছি। আস্তিক দের পোস্ট পড়ে একবার আস্তিক হয়ে যাই তো নাস্তিক দের পোস্ট পড়ে নিজেকে একবারে হালাল গরু মনে হয়। একবার এক সকালে এক আস্তিক ভাই এর পোস্ট পড়ে যখন আমার একেবারে কান্নাকাটির অবস্থা,মানে নামায কালাম করা শুরু করে দিবো এসময় সেখানে এক জনের কমেন্ট পড়ে আমি আবার বুকে বল পাই। মনে হয় ঠিক ই তো বলসেন।

আমি কোন হরিদাস পাল। কিন্তু এই দুই গ্রপের মাঝে যেকোন একজন তো ঠিক। সবাই তো আর ঠিক হতে পারে না। আমার আবাল মন যখন স্বীধান্ত নেয়া প্রায় কম্পলিট করে ফেলসে। তখন আমি আরও মহা জ্ঞানী একটা পোস্ট পড়ে আমি বুঝলাম এই দুই গ্রুপ ই ভুয়া।

আসলে আমাকে হতে হবে আহলে সুন্নার ওয়াল জামাতের অনুসারি। তার জ্ঞানগর্ভ লেখা পড়ে যখন নিজের মধ্যে জিহাদী জোশ চলে আসছে তখন আমি আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কার টা করলাম। আমি জানলাম উনি রাজারবাগ পীরের অনুসারী। এভাবে তিন দিক থেকে ধর্ষিত হয়ে আমার মন বিদ্রোহ ঘোষনা করল। আমি আগে যা ছিলাম তাই থাকলাম।

মানে উপরে দিয়ে মুসলমান বাট life style পুরাই নাস্তিক দের মত। এরপরে শুরু করলাম রাজনৈতিক পোস্ট পড়া। বুঝতে পারলাম সবাই খারাপ। যেহেতু ভোট দেয়ার সৌভাগ্য পাই নাই,তার আগেই দেশ ছাড়সি তাই কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ নাই। সামু র বদৌলতে এখন আরো নাই।

এরপরে আস্তে আস্তে ব্লগার দের সাথে পরিচিত হতে থাকলাম। মানে কে কত বিখ্যাত কি কারনে বিখ্যাত। সেই সাথে ব্লগীয় পরিভাষার সাথেও পরিচিত হলাম। এভাবে ৬ মাস কেটে গেল। তখন আমি সদস্য হই নাই।

কিন্তু মাঝে মাঝে প্লাস মাইনাস আর মন্তব্য করতে খুব ইচ্ছা করত। সেই সুবাদে সদস্য হওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু যখনি আমি বাংলা নিক নেয়ার চেষ্টা করি বাংলা আর লিখতে পারি না। শেষ পর্যন্ত বন্ধুদের পরামর্শে অভ্র ইন্সটল করে সদস্য হলাম। (তাদের কাছেও আমি আবাল হিসাবে পরিচিত) :``>> আমার লেখক সত্ত্বা জেগে উঠল।

অনেক কাটাকুটি করেও কিছু বের হয় না। যাই লিখি মনে হয় এই জিনিশ মানুষ পড়বে না। রাতে ঘুম হয়না। আর অনেক অনেক পোস্ট পড়ার কারনে নিজেকেও এখন আর হেলাফেলার মনে করিনা। আমার ধর্ষিত মন এখন পুরাই পরিপক্ক।

কেউ কিছু বললে সাথে সাথে পালটা যুক্তি উত্থাপন করি। একেবারে রেফেরেন্স সহ সামু র পোস্ট হাজির করি। অনেক অনেক ভাবনা চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত একটা অরাজনৈতিক অধর্মীয় লেখা প্রসব করলাম। রান্না বান্না নিয়ে মারাত্ত্বক পোস্ট। পোস্ট টা লেখা শেষ করে মনে মনে বললাম হু হু যে লেখা লিখেছি কম করে হলেও ৫০টা প্লাস আর ১০০টা কমেন্ট পাব।

পোস্ট পাব্লিশ করে প্রথম পাতায় যেয়ে দেখি সেটা নাই। মানে কি আমার সাথে ফাযলামি নাকি?( এরকম যুগান্তকারী পোস্ট কে কবে লিখেছে?তারপর দেখলাম আমার ব্লগ এ লেখা এই পোস্ট ২৪ ঘন্টা রিভিউ করে তারপর ছাড়া হবে। আমি তো মনে মনে উল্লাসিত। হু হু এমন লেখা লিখসি যে মডারেটর পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা টাইম নিতাসে। এই আনন্দে রাতে ঘুমাতে গেলাম।

পরেরদিন সারাক্ষন মাথায় খালি আমার লেখার চিন্তা। নেট এ বার বার ঢুকি। কিন্তু লেখা আর প্রথম পাতায় নাই। কি আর করা?এরিমধ্যে আমার থিসিস টীচার আমাকে বলা শুরু করসে কি ব্যাপার কাজে মন নাই কেন?তোমার গার্লফ্রেন্ড কি ব্রেকআপ চায়?ও কি তোমার শারীরিক চাহিদা পুরন করতে পারছে না নাকি তোমার সাথে চীট করছে?মেজাজ পুরা খারাপ। বাংলায় বললাম লাথি মারি তোর থীসিসের।

বলে চলে আসলাম। কিন্তু যাহা ৫২ তাহাই ৫৩। লেখা আর প্রথম পাতায় নাই। দুইদিন পরেও দেখি প্রথম পাতায় নাই। এর মধ্যে হাসান মাহবুব ভাই কমেন্ট করে দিয়ে গেসেন।

প্রথম পাতায় পোস্ট নাই তাহলে কমেন্ট করল কেমন করে?এ প্রশ্নের উত্তর আজও আমার অজানা। যাই হোক আমার পোস্ট কেউ দেখতে না পারুক আমি তো অন্যদের টা দেখতে পারি! লে বাবা এবার দ্যাখ কমেন্ট করা কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি?প্রথমেই গেলাম একটা আস্তিক নাস্তিক পোস্টে কারন এই ধরনের পোস্টের কোন অভাব নাই। সবার নিচে গেলাম কমেন্ট করতে?কিন্তু হায় হায় একি?এখানেও বাধা। আমি নাকি কমেন্টও করতে পারব না। ( ( মনের দুঃখে আমি আরেকবার ধর্ষিত হলাম।

বেচারা মন চারিদিক থেকে ধর্ষিত হচ্ছে ( । যাই হক মন কে বোঝালাম কমেন্ট করে কে কবে সাহিত্যিক হয়েছে। রবীন্দ্র নাথ কবে কোন ব্লগে কমেন্ট করছে। আমার স্বান্তনাতে মন যখন তার ধর্ষনের বাথ্যা প্রায় ভুলে গেসে। তখন আবার আরেক প্রস্থ ধর্ষন।

আমি প্লাস মাইনাস কিছুই দিতে পারব না। এর জন্য অনেক যোগ্যতা লাগে যা আমার নাই। এভাবে আরও ১০ দিন গেল। একদিন ইউনিতে গিয়ে ব্লগ খুলে দেখলাম একটা সুসংবাদ। আমি প্লাস মাইনাস দিতে না পারলেও একটা জিনিশ বলতে পারব “পোস্টটা আপত্তিকর”।

এখন পর্যন্ত এই নিয়েই সন্তুষ্ট আসি। যদিও এখন পর্যন্ত একবারই ওটা ব্যবহার করতে গেসিলাম। তাও আবার কার পোস্টে শুনবেন?আরিল সাহেবের পোস্টে । বিদেশি মানুষ দেশি ব্লগ এ কি করে তাও আবার ইংরেজীতে লিখে?এই বঙ্গীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দিলাম টিপে পোস্টটি আপত্তিকর। কিন্তু আমার এমন ই পোড়া কপাল যে কি বলব?টিপে দেয়ার পর আসল সতর্কবার্তা।

যদি এই পোস্ট আপত্তিকর না হয় তাহলে আমার খবর আসে। আমি আস্তে করে উইন্ডো ক্লোজ করে দিলাম । এখন তাও আমার একখানা “পোস্টটি আপত্তিকর ” বাটন আসে। পরে যদি তাও কেড়ে নেয়......... ( ( (

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.