আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘শিক্ষা দিবস’ : ১৯৬২ থেকে ২০১২

শহীদের খুন লেগে, কিশোর তোমার দুই হাতে দুই, সূর্য উঠেছে জেগে। -------হাসান হাফিজ ‘শিক্ষা দিবস’ : ১৯৬২ থেকে ২০১২ আজ ১৭ সেপ্টেম্বর ‘শিক্ষা দিবস’। স্বাধীনতার এক চল্লিশ বছর পার হতে চলেছে। কিন্তু এখনো দেশের অর্ধেক অথবা তার কাছাকাছি মানুষ নিরক্ষর। অথবা বললাম এজন্য যে, সাক্ষরতার হার নিয়ে সরকারের ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য পরিসংখ্যানের মধ্যে মিল যেমন নেই, সাক্ষরতা এখন আর আগের মতো শুধু সই করতে জানাও বুঝায় না।

পড়তে ও লিখতে পারার সঙ্গে, মোটামুটি হিসাব-নিকাশ করতে জানা বুঝায়। বর্তমানে আবার কম্পিউটার সাক্ষরতা কথারও প্রচলন হয়েছে। অর্থাৎ কম্পিউটার ব্যবহার করতে জানাও সাক্ষরতার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে এখন অনেকে মনে করেন। অন্যদিকে সাক্ষরতার সেকেলে ধারণা মেনে নিলেও যে গতিতে তা চলছে তাতে ২০১৪ সালের মধ্যে শতভাগ অর্জিত হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট : ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর পর থেকে পূর্ব পাকিস্তানে শিক্ষার হার দ্রুত কমে যায়।

খুব বেশি পরিমাণে ছাত্ররা বিদ্যালয় পরিত্যাগ করে। বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৪৭-৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল- ২৯,৬৩৩। ১৯৫৪-৫৫ সালে তা ২৬,০০০-এ নেমে আসে। পশ্চিম পাকিস্তানে চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।

সেখানে শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছিল, ড্রপআউটের সংখ্যাও ছিল পূর্ব পাকিস্তানের তুলনায় কম। শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয়ও ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে বেশি। যদিও জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশই বাস করতো পূর্ব পাকিস্তানে। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারির মাধ্যমে আইয়ুব খান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হয়ে ৩০ ডিসেম্বর ১৯৫৮ তারিখে শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য একটি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। ১৯৫৯ সালের ৫ জানুযারি কমিশনের কার্যক্রম উদ্বোধন হয়।

পশ্চিম পাকিস্তান শিক্ষা বিভাগের সচিব ও আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে আইয়ুবের প্রাক্তন শিক্ষক এস এম শরীফকে চেয়ারম্যান করে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ৬ জন ও পূর্ব পাকিস্তান থেকে ৪ জনকে সদস্য করা হয়। ১৯৫৯ সালের ২৬ আগস্ট কমিশন অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন পেশ করে। তা গ্রন্থাকারে মুদ্রিত হয়ে প্রকাশিত হয় ১৯৬২ সালে। শরীফ কমিশনের সুপারিশ : ১. ‘উর্দুকে মুষ্টিমেয় লোকের পরিবর্তে জনগণের ভাষায় পরিণত করিতে হইবে’ (শরীফ কমিশন প্রতিবেদন, পৃষ্ঠা ৩৪৯)। ২. ‘পাকিস্তানের জাতীয় ভাষার জন্য যদি একটি সাধারণ বর্ণমালা প্রবর্তন করিতেই হয় তাহা হইলে আরবির দাবি কিছুতেই উপেক্ষা করা যায় না।

’ (পৃষ্ঠা ৩৭০)। ৩. ‘শিল্পে মূলধন বিনিয়োগকে আমরা যে নজরে দেখি সেই নজরে শিক্ষা বাবদ অর্থ ব্যয়ের যৌক্তিকতা প্রতীয়মান হয়’ (পৃষ্ঠা ৩৯৫)। ‘শিক্ষা সস্তায় পাওয়া সম্ভব নয়’ (পৃষ্ঠা ৩৯৬)। ৪. ‘শিক্ষার জন্য জনসাধারণের নিকট হইতে খুব সামান্যই অর্থ সাহায্য পাওয়া গিয়াছে। প্রাথমিক স্কুল ও নামমাত্র বেতনের মাধ্যমিক স্কুল স্থাপনের জন্য সরকারের উপর নির্ভর করাই জনসাধারণের রীতি।

তাহাদিগকে উপলব্ধি করিতে হইবে যে, অবৈতনিক শিক্ষার ধারণা বস্তুত অবাস্তব কল্পনা মাত্র’ (পৃষ্ঠা ৩৯৮)। ৫. ‘ষষ্ঠ শ্রেণী হইতে ডিগ্রি পর্যন্ত ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করিতে হইবে’ (পৃষ্ঠা ৩৪৯)। ৬. শরীফ কমিশনের যে সুপারিশটি তাৎক্ষণিক কারণ হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনমুখী করে তোলে তা হলো : ‘বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার মান উন্নত করিবার উদ্দেশ্যে আমরা অতীব জোরের সহিত সুপারিশ করিতেছি যে, স্নাতক ডিগ্রি কোর্সকে স¤প্রসারণ করিয়া তিন বছর মেয়াদি করা উচিত হইবে’ (পৃষ্ঠা ২৪)। শরীফ কমিশন বিরোধী আন্দোলন : ছাত্র সমাজ শরীফ কমিশনের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন গড়ে তোলে। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয পর্যন্ত সকল স্তরের শিক্ষার্থীরা এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।

তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রি পাস কোর্সের বিপক্ষে ঢাকা কলেজের ডিগ্রির প্রতিবন্ধী ছাত্র এম আই চৌধুরী আন্দোলনের সূচনা করেন। ঢাকা কলেজের ডিগ্রির ছাত্রদের সঙ্গে বিভিন্ন কলেজের ডিগ্রির ছাত্রছাত্রী এবং উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ইংরেজিকে অতিরিক্ত বোঝা মনে করে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর পরীক্ষার্থীরাও এতে যোগ দেন। বিচ্ছিন্নভাবে জুলাই পর্যন্ত আন্দোলন চলে। এতোদিন ‘ডিগ্রি স্টুডেন্টস ফোরাম’ আন্দোলন পরিচালনা করে আসছিল। এ সময় ‘ডিগ্রি স্টুডেন্টস ফোরাম’ এর পরিধি স¤প্রসারণ ও নাম পরিবর্তন করে ‘ইস্ট পাকিস্তান স্টুডেন্টস ফোরাম’ গঠন করা হয়।

‘বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস’ গ্রন্থে ড. মোহাম্মদ হাননান লিখেছেন : ‘তবে আন্দোলনের গুণগত পরির্তন ঘটে ১০ আগস্ট (১৯৬২)। এদিন বিকালে ঢাকা কলেজ ক্যান্টিনে স্নাতক ও উচ্চ মাধ্যমিক উভয় শ্রেণীর ছাত্ররা এক সমাবেশে মিলিত হন। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা কাজী ফারুক আহমেদ। তিনি তার বক্তৃতায় উপস্থিত ছাত্রদের একথা বুঝাতে সক্ষম হন যে শিক্ষার আন্দোলন ও গণতন্ত্রের আন্দোলন এক সূত্রে গাঁথা। এই সভার পূর্ব পর্যন্ত ছাত্র সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কমিশন বিরোধী আন্দোলনের কোনো যোগসূত্র ছিল না।

কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করতেন, শুধুমাত্র শিক্ষা সংক্রান্ত দাবি-দাওয়া নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলা অসম্ভব’। ১০ আগস্টের এই সভায় ১৫ আগস্ট সমগ্র প্রদেশে সাধারণ ধর্মঘট পালন এবং আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ের সামনে ছাত্রদের অবস্থান ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ১৫ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর সময়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমতলায় বেশ কয়েকটি ছাত্রসভা ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিদিন ব্যাপক সংখ্যায় এতে অংশগ্রহণ করে। ১০ সেপ্টেম্বরের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এক সভায় মিলিত হন।

এতে যোগদান করেন ডাকসুর পক্ষে এনায়েতুর রহমান, জামাল আনোয়ার বাসু, ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক কাজী ফারুক, জগন্নাথ কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ ওয়ারেস ইমাম, ইডেন কলেজ সংসদের সহ-সভানেত্রী মতিয়া চৌধুরী, নাজমা বেগম, কায়দে আযম কলেজ সংসদের সহ-সভাপতি নূরুল আরেফীন খান, তোলারাম কলেজ (নারায়ণগঞ্জ) সংসদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ বাগমার প্রমুখ। কাজী ফারুক (ছাত্র ইউনিয়ন) ও আব্দুল্লাহ ওয়ারেস ইমাম (ছাত্রলীগ) ইস্ট পাকিস্তানের স্টুডেন্টস্ ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু এতোদিন ছিল স্কুল কলেজগুলো। এখন তা চলে আসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের দোরগোড়ায়। পূর্ব পাকিস্তান সরকার এক প্রেসনোটে ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ের অবস্থান ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়।

অন্যথায় পরিস্থিতি মারাত্মক হবে বলে হুমকি দেয়। কৌশলগত কারণে ১০ সেপ্টেম্বর কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হলেও ছাত্ররা ১৭ সেপ্টেম্বর হরতালের ডাক দেন। ১৭ সেপ্টেম্বরের ঘটনা : ১৭ সেপ্টেম্বর খুব ভোর থেকেই ছাত্ররা পিকেটিং শুরু করেন। পিকেটিংয়ের আওতায় পড়ে মোনায়েম মন্ত্রিসভার সদস্য হাসান আসকারীর মার্সিডিজ গাড়ি ভস্মীভূত হয়। একই সঙ্গে জ্বলতে থাকে দুতিনটি জিপও।

ছাত্রদের সঙ্গে বিভিন্ন স্তরের মানুষও বিক্ষোভে যোগ দেন। সার্জেন্ট হাফিজের নেতৃত্বে একদল পুলিশ নবাবপুর রেলক্রসিং থেকে সদরঘাট পর্যন্ত বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া ও গ্রেপ্তার করেও সামাল দিতে পারছিলেন না। সকাল ৯টা না বাজতেই সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এমন সময় খবর আসে নবাবপুরে গুলি হয়েছে এবং কয়েকজন তাতে শহীদও হয়েছেন। তৎক্ষণাৎ ছাত্র-জনতার সমাবেশে এক অগ্নিশিখার ঢেউ বয়ে যায়।

সিরাজুল ইসলাম খান, মহিউদ্দীন আহমেদ, হায়দার আকবর খান রনো, রাশেদ খান মেনন, আইযুব রেজা চৌধুরী, রেজা আলী চৌধুরী প্রমুখের নেতৃত্বে বের হয় জঙ্গি মিছিল। মিছিল যখন হাইকোর্ট পার হয়ে আব্দুল গণি রোডে প্রবেশ করছিল তখন পেছন থেকে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। নিহত হয় বাবুল এবং গোলাম মোস্তফা। আহত হয় ওয়াজিউল্লাহ। সে হাসপাতালে পরের দিন মৃত্যুবরণ করে।

অনেকে আহত হয়। রথখোলার সামনে মিছিল পৌঁছলে দেখা যায় কয়েক হাজার পুলিশ ঐ মিছিলের ওপর ব্যারিকেড সৃষ্টি করেছে। ব্যারিকেডের অপর পাশে জগন্নাথ কলেজের দিক থেকে অপর একটি বিরাট মিছিল। দুটি মিছিল যাতে মিলতে না পারে সে জন্য এই ব্যবস্থা। ব্যারিকেড ভাঙার জন্য একপর্যায়ে চললো ইষ্টক বৃষ্টি।

সামান্য হটে যেতে বাধ্য হলো সেনাবাহিনী ও পুলিশ। পরো এলোপাতাড়ি গুলি ও টিয়ার গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে বিক্ষোভকারীরা হটে যেতে বাধ্য হন। আহত হয় অসংখ্য। এ দিনের বিক্ষোভ মিছিলে বুড়িগঙ্গার ওপার থেকে নৌকার মাঝিরাও বৈঠা হাতে মিছিল নিয়ে আসেন। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর করাচি থেকে ঢাকায় এসে গভর্নর গোলাম ফারুকের সঙ্গে সাক্ষাতের পর শরীফ শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বাস্তবায়ন স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হলে এক পর্যায়ে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে আসে।

শিক্ষানীতি ২০১০ : আশা ও হতাশার চিত্র : জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর আলোকে ইতোমধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সরকার থেকে বিনামূল্যে কয়েক কোটি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। দেশব্যাপী প্রাথমিক পরবর্তী পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার সরবরাহ ও ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান, সিলেবাস যুগোপযোগীকরণের উদ্যোগ, টেলিভিশনে মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান প্রচার ও স্কুলের রুটিনের সঙ্গে সমন্বয়ের মতো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক স্তরে প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী ভর্তি সম্ভব হয়েছে, যেখানে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। যদিও মাধ্যমিক স্তরে যাওয়ার আগেই ঝরে পড়ার ধারা অব্যাহত আছে।

ধীরগতিতে হলেও কর্মসংস্থান, আত্মকর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণে সক্ষম বৃত্তিমূলক ও টেকনিক্যাল শিক্ষা ইতোমধ্যেই উচ্চ শিক্ষাঙ্গনেও জায়গা করে নিতে শুরু করেছে। দেশে ইতোমধ্যেই টেক্সটাইল ও ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মাদ্রাসায় পড়ুয়াদের শিক্ষার মূলধারায় যুক্ত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগের সঙ্গে প্রতি উপজেলায় কারিগরি স্কুল স্থাপনের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। তবে শিক্ষাক্ষেত্রে এসব ইতিবাচক অর্জন ও নতুন নতুন সম্ভাবনা সত্ত্বেও শিক্ষার মান নিয়ে পুরাতন বিতর্ক অব্যাহত আছে। শিক্ষকদের একটি অংশের নৈতিক স্খলন, পাঠদানে অদক্ষতা, শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তিদান, শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অব্যবস্থাপনার অভিযোগও আছে।

সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান প্রধানের শূন্যপদ, ইংরেজি শিক্ষকের সংকট, পেশাগত প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে এর মাত্রা অনেক বেশি। তারা এখন জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্টের ঘোষিত ৮ দফা দাবি ও ৭ সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করছেন। ৮ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে : ১. শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে স্থায়ী শিক্ষা কমিশন ও বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের জন্য স্বতন্ত্র কমিশন গঠন এবং সর্বস্তরের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রবর্তন। ২. প্রায় দুই যুগ আগের স্কেলের (১৯৯১) পরিবর্তে বর্তমান জাতীয় স্কেলে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের চিকিৎসা ভাতা, বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রদান।

৩. অমর্যাদাকর ১০০ টাকা বাড়ি ভাড়ার পরিবর্তে সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুরূপ বাড়ি ভাড়া অথবা সম্মানজনক আবাসন সুবিধা প্রবর্তন। ৪. চারদলীয় জোট সরকারের আমলে প্রদত্ত খ-িতের পরিবর্তে সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুরূপ পূর্ণ উৎসব ভাতা ও পূর্ণ পেনশন, পদোন্নতি, টাইম স্কেল চালু। ৫. যোগ্যতার সকল শর্তপূরণ করেও বছরের পর বছর এমপিও বঞ্চিত প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক-কর্মচারীদের নতুন এমপিও, অনার্স-মাস্টার্স পাঠদানকারী বেসরকারি কলেজের শিক্ষক ও ডিগ্রি কেেলজে বিভিন্ন বিষয়ে তৃতীয় শিক্ষকদের জন্য এমপিও। প্রতিষ্ঠানের স্তর পরিবর্তন সংক্রান্ত কোড সংশোধন না হওয়ার অজুহাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বন্ধকৃত বেতন অবিলম্বে চালু। ৬. মাধ্যমিক স্তরে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ ও বেসরকারি প্রধান শিক্ষকদের জন্য সরকারি প্রধান শিক্ষকদের অনুরূপ বেতন স্কেল প্রবর্তন।

৭. পার্বত্য এলাকায় কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য ৩০% পাহাড়ি ভাতা চালু। ৮. বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরের বয়স ৬৫ বছরে উন্নীতকরণ, শিক্ষকদের চাকরিবিধি সংশোধন ও কর্মচারীদের চাকরিবিধি প্রবর্তন। শিক্ষার উন্নয়নে ৭ সুপারিশে আছে : ১. শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকদের পাঠদান উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির সংস্কার। ২. শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রম ও শিক্ষকদের শিক্ষণক্রম প্রণয়ন, প্রাক-পেশা ও পেশাকালীন অব্যাহত প্রশিক্ষণ। ৩. কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার স¤প্রসারণে ক্রমান্বয়ে বরাদ্দ বৃদ্ধি।

সাচিবিক বিদ্যা ও অফিস ব্যবস্থাপনা সিলেবাস যুগোপযোগীকরণ। ৪. প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধে দুপুরবেলা তাদের জন্য বিদ্যালয়ে বিস্কুটের পরিবর্তে গরম খাবারের ব্যবস্থা। ৫. কাগজ, পেন্সিলসহ শিক্ষা উপকরণ এবং শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ড্রেসের মূল্য হ্রাসের ব্যবস্থা গ্রহণ। ৬. প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা, পর্যায়ক্রমে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীতকরণের লক্ষ্যে এবং বয়স্ক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ও ব্যবস্থা। ৭. শিক্ষায় মেয়ে শিশু ও নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সূচিত ইতিবাচক ধারা জোরদারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও বাহিরে মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, কমনরুম, টয়লেট সুবিধা ইত্যাদি নিশ্চিতকরণ এবং প্রতি জেলা ও উপজেলা সদরে যৌথ নারী নিবাস স্থাপন।

শিক্ষা সকলের প্রিয় : একথা স্বীকার করতে হবে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকুক না থাকুক, শিক্ষা সকলের কাছে একটি প্রিয় বিষয়। কোনো নির্র্দিষ্ট প্রসঙ্গে একজনের মত হয়তো পক্ষে, আরেক জনের বিপক্ষে থাকতে পারে। আমি নিজে অর্থনীতিতে ও শিক্ষায় মধ্যবিত্তের পুনরুত্থান ও বিকাশের সমর্থক। প্রচলিত লক্ষ্যহীন, কর্মসংস্থানের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর পক্ষে। আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের প্রয়োজন এমন শিক্ষা ব্যবস্থা যা কর্মসংস্থান/আত্মকর্মসংস্থান নিশ্চিত করে, মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশাকে ধারণ ও আত্মশক্তিতে বলীয়ান করে।

অপরের মত ও বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সংবলিত উচ্চ নৈতিকতা নিশ্চিত করে। এক্ষেত্রে গতানুগতিকতার স্থান নেই। এ প্রেক্ষিতে অনুকরণ সর্বস্বতা ও পুরাতনকে আঁকড়ে থাকার প্রবণতার বিপরীতে, বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিক্ষাকে ভিত্তি করে সকল সম্পদ ও সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার দ্বারা ব্যক্তি, পরিবার ও জাতীয় জীবনে নতুন নতুন সাফল্য অর্জনের প্রত্যাশাই হোক এবারের শিক্ষা দিবসে আমাদের সকলের ভাবনা। গত বছর শিক্ষা দিবসের আলোচনায় শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ, ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পেশাজীবী সকলে দিনটিকে ‘জাতীয় শিক্ষা দিবস’ ঘোষণার দাবি জানান। বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে আমি ঐ দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাই।

সূত্র: দৈনিক ভোরের কাগজ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.