আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার ধারণা ভুল, 'ম'-তে নয় গণ্ডগোল

বি চ্যাম্পিয়ন! মাহমুদুর, মশিউল, মতিউর আর আজকে নতুন যুক্ত হলো মহিউদ্দিন। চার জনেরই নামের আদ্যাক্ষর 'ম'। প্রথম দুইটা 'ম' হুবহু একই ক্ষুর দিয়ে দাঁড়ি না কামালেও উভয়ের ক্ষুর একই ব্র্যান্ডের। তৃতীয়টা কোন ক্ষুর দিয়ে দাঁড়ি কামায়, সেটা এখনো ক্লিয়ার না। আর নতুনটা সম্পর্কে পরে বলছি।

আমার দ্বেষের মাহমুদুর রহমান কী করেছেন আর কী করেননি তা কাকপক্ষীটি পর্যন্ত জানে। কলাম লেখক মশিউল আলমের মুখোশ উন্মোচিত হলো গত মঙ্গল ও বুধবার প্রথম আলোর 'খোলা কলম'-এ মাহমুদুরের সাফাই গেয়ে তার বিতর্কিত লেখাটির মাধ্যমে। অনলাইনে পত্রিকা তেমন একটা পড়ি না। সকালে ঘুম থেকে উঠে গরম গরম কাগজে খবর পড়ার যে মজা, সেটা অনলাইনে পড়ে পাওয়া যায় না। এজন্য আপডেট খবর আগেভাগে জানার ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে একটু পিছিয়ে থাকি হয়ত।

কিন্তু সেটাকে আমলে নেই না। বাসায় এখন একটা পত্রিকাই রাখা হয়—প্রথম আলো। আজকের প্রথম পৃষ্ঠায় যথারীতি নির্বাচনের খবরাখবর। সযত্নে এড়িয়ে গেলাম। এবার উল্টাদিক থেকে শুরু করলাম।

খেলার পাতা দুইটায় একটু চোখ বুলিয়ে আর দু-একটা বিজ্ঞাপন এক নজর দেখে নিয়ে দ্রুত চলে এলাম সম্পাদকীয় পাতায়। 'খোলা কলম' পৃষ্ঠায় আবারও চমকপ্রদ শিরোনাম—'আমার দেশ' ও মাহমুদুর রহমানের সাংবাদিকতা। চোখ আটকে যাওয়াটা স্বাভাবিক, আটকাল। তবে চোখটা কুঁচকে গেল কলাম লেখকের নামটা দেখে—মহিউদ্দিন আহমদ। এনারও নামের আদ্যাক্ষর 'ম'! ব্লা ব্লা ব্লা... সেদিন যখন মশিউল আলমের লেখাটার ১ম কিস্তিটা পড়লাম তখনই বুঝে গেছি দোষটা আর কিছুর নয়, দোষটা সম্পূর্ণ 'ম' এর।

তাই মশিউল আলম—সমালোচকরা যেখানে তার মুণ্ডুপাত করছেন, আমি সেখানে তার প্রতি, তার নামের প্রতি করুণা অনুভব করলাম। ধারণাটা বদ্ধমূল হয়ে গেল—'ম' আদ্যাক্ষরের যে কয়টা বুদ্ধিজীবী আছে, তাদের সবকয়টাই আসলে বুদ্ধিবেশ্যা। আজকের লেখাটা পড়ার আগে মহিউদ্দিনকেও একই লাইনের ভেবেছিলাম। তবে আজকের 'খোলা কলমে' মহিউদ্দিন আহমদ যা লিখেছেন, তাতে তিনি 'ম' এর গজিয়ে উঠা নতুন ঐতিহ্যকে চরমভাবে অবমাননা করেছেন। নিজের নামে 'ম' পেয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন তিনি, যা ক্ষমার অযোগ্য।

মহিউদ্দিনকে ধিক্কার জানানোর মতো কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না আমি। জানি, অনেকেই বলবেন এটা প্রথম আলোর একটা চাল, যেটা এই পত্রিকা নিয়মিতই খেলতে অভ্যস্থ। উদাহরণ হিসেবেও তারা তুলে ধরবেন গণজাগরণ মঞ্চকে নিয়ে হাসনাত আবদুল হাইএর গল্পটির কথা। আমি ঐ ক্যাঁচালের মধ্যে যাব না। সেটা প্রথম আলোর চাল কিনা ডাল সেটা সময়ই বলে দিবে।

আপাদত একটা বাহবা পাওয়ার যোগ্য মহিউদ্দিন আহমদ। আর হ্যাঁ, এ-ও জানি, আমার এ লেখাটার জবাবে এমন অনেক মন্তব্য পাব— 'প্রথম আলোকে এখনো চেননি গো বাছা', কিংবা ' এ তো দেখা যায় প্রথম আলোর দালাল' টাইপ। এরকম দু-একটা কমেন্ট না করলে ক্যাঁচাল জমে না, তাই ক্যাঁচাল জমাতে চাইলে এরূপ কমেন্ট আবশ্যক। সেদিনের লেখায় মশিউল আলমের বক্তব্যের বিরোধিতাই শুধু করেননি আজকের মহিউদ্দিন, পরোক্ষভাবে মশিউলের স্বল্প জ্ঞান আর চিন্তা-চেতনা নিয়ে সন্দেহও প্রকাশ করেছেন তিনি। সরাসরিই তিনি মশিউল আলমকে অসহিষ্ণু বলে উল্লেখ করেছেন, যা মহিউদ্দিন আহমদের সাহসিকতারই পরিচয় বহন করে বলে আমি মনে করি।

মাহমুদুর রহমানকে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক দু-দুবার দণ্ড দেওয়ার পরও যে মাহমুদুর মাহমুদুরই রয়ে গেছে, মহিউদ্দিনের লেখায় তারও স্পষ্টোল্লেখ লেখাটার ওজন যথেষ্ট বৃদ্ধি করেছে। সেদিন আমার ব্লগে আরিফ জেবতিক তাঁর একটা লেখায় উসকানির কী ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে আর উসকানিদাতার বিচারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল কেমন কঠোর হতে পারে সেটা তুলে ধরেছিলেন, যা আজকের মহিউদ্দিনের লেখারও একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে। একইসাথে রেডিও রুয়ান্ডা আর কাংগুরার বিষয়টাও তুলে ধরতে ভুল করেননি মহিউদ্দিন। কিন্তু একটা বিষয়ে মহিউদ্দিন আহমদ সাহসিকতা দেখাতে পারেন নি—মাহমুদুর রহমান আর তার আমার দ্বেষকে সরাসরি অপরাধীর তালিকায় উঠানো। মাহমুদুরের মুক্তি চাওয়া যে বাকস্বাধীনতা নয় কিংবা মাহমুদুরকে গ্রেফতার যে বাকস্বাধীনতার উপর আক্রমণ নয়, সেটা তিনি ইনডাইরেক্টলি বললেও সরাসরি ১৫ সম্পাদকের বিবৃতি দেওয়াকে ভিত্তিহীন বলার সাহস পান নি।

তবে সে কথা বললে লেখটা 'খোলা কলম'-এ জায়গা পেত কি না তা সন্দেহ। লেখাটিতে যে আরও রসালো কিছু ছিল না কিংবা লেখকের মূল লেখাকে কোনরকম কাটা-ছেঁড়া ছাড়াই ছাপানো হয়েছে—এ নিশ্চয়তাই বা কে দিবে? তবে হ্যাঁ, প্রশ্ন থেকেই যায়। মাত্র দুদিন আগেই একটা মতকে সাপোর্ট করে সম্পাদকীয় পাতায় কলাম লিখলেন একজন, আজ আবার তার বিরোধী মতকে পোষণ করে কলাম লিখলেন আরেকজন; একই পত্রিকায়, একই পাতায়—বিষয়টা সত্যিই ক্যাঁচালযোগ্য। এর পেছনে প্রথম আলোর অন্য কোন অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে কি না, সেটা এ মুহূর্তে আমার ক্লিয়ার হচ্ছে না, সেটা ক্লিয়ার করার দায়িত্ব সময়ের হাতেই ছেড়ে দিলাম। তবে আমার সেই 'ম'-বিষয়ক ধারণার বদ্ধমূলে যে আঘাত দিয়েছেন মহিউদ্দিন, এজন্য কিঞ্চিত কষ্ট ভোগ করছি; যার দায়ভার মহিউদ্দিনকেই নিতে হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.