আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রামাদান ম্যানুয়েল-১

যার যার ভবনা তার তার কাছে সবাইকে সালাম। আশা করি সবাই ভালো আছেন। মাহে রমযান চলছে। তাই রমযান বিষয়ক কিছু নিয়ম-নীতি সবারই জানা প্রয়োজন। তাই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।

ভূল হলে অবশ্যই জানাবেন। রোযার বিধান ১- ‘সিয়াম’ বা রোযা : ফজরের শুরু হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযা ভঙ্গের কারণ থেকে বিরত হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইবাদত পালন করা। ২- রমযানের সিয়াম : রমাযানের সিয়াম ইসলামের পাঁচটি রুকনের অন্যতম একটি রুকন বা ভিত। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেন: ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর স্থাপিতঃ (১) সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল (২) রীতি মত নামায আদায় করা (৩) যাকাত দেয়া (৪) রমযানের রোযা পালন করা (৫) বায়তুল্লাহ হজ্জ করা। (বুখারী ও মুসলিম) সিয়াম পালনের ক্ষেত্রে মানুষের শ্রেণিভেদ সিয়াম প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স, বিবেক সম্পন্ন, সামর্থ্যবান ও নিজ বাসস্থানে অবস্থানকারী মুসলিম ব্যক্তির উপর ফরয।

যে সব লোকের প্রতি সিয়াম ফরয নয়: ১- কাফের : ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কাফেরের উপর সিয়াম ফরয নয় এবং তার জন্য ইসলাম গ্রহণের পর কাযা করাও জরুরি নয়। ২- অপ্রাপ্ত বয়স : অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ের উপর সিয়াম ফরজ নয় কিন্তু অভ্যাস গড়ার জন্য রোযা পালনের আদেশ করা যাবে। ৩- পাগল : প্রাপ্ত বয়স্ক পাগলের উপর সিয়াম ফরয নয় এবং তার জন্য রোযা করিয়ে নেয়ারও প্রয়োজন নেই, অনুরূপ বিধান যার জ্ঞান লোপ পেয়েছে এবং যার অতি মাত্রায় মতিভ্রম হওয়ার কারণে ভাল-মন্দ তারতম্য করতে পারে না। ৪- অপারগ : স্থায়ী সামর্থ্যহীন যেমন অতিশয় বৃদ্ধ বা এমন রোগে আক্রান্ত যার আরোগ্য লাভের আর আশা নেই, এরূপ ব্যক্তির প্রতি সিয়াম ফরয নয়। তবে রমযানের প্রত্যেক দিনের জন্য একজন মিসকিনকে খাবার দিতে হবে।

৫- অসুস্থ : অস্থায়ী ভাবে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে রোযা রাখা কঠিন হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত রোযা রাখবে না, কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর কাযা করবে। ৬- গর্ভবতী বা দুধ পান করায় এমন মহিলা : গর্ভ-ধারণ বা দুধপান করানোর কারণে যদি তাদের প্রতি রোযা রাখা কঠিন হয়, বা স্বীয় সন্তানের অনিষ্টের আশঙ্কা করে তবে রোযা না রেখে যখন আশঙ্কা মুক্ত হবে তখন সুবিধা মত সময়ে কাযা করে নিবে। ৭- মাসিক ঋতু স্রাব অথবা সন্তান প্রসব জনিত স্রাব হলে উক্ত অবস্থায় রোযা না রেখে, তা দূর হলে পরে কাযা করে নেবে। ৮- নিরুপায় : এমন ব্যক্তি যে রোযা ছেড়ে দিতে বাধ্য, যেমন কোন ছোট বাচ্চা পানিতে ডুবে গেছে অথবা আগুনে পুড়ে যাচ্ছে তাকে মুক্ত করার জন্য রোযা ছেড়ে দিতে হলে দেবে কিন্তু পরবর্তীতে কাযা করে নেবে। ৯- মুসাফির : মুসাফিরের জন্য সফরে রোযা রাখা, না রাখার স্বাধীনতা রয়েছে, তবে যদি না রাখে পরে কাযা করে নেবে।

উল্লেখ্য, মুসাফির ইচ্ছা করলে যতদিন সফরে থাকবে, (উক্ত সফর স্বল্পস্থায়ী হোক বা স্থায়ী) ততদিন রোযা ছাড়তে পারবে। রোযা ভঙ্গের কারণ রোযাদার যদি ভুলক্রমে বা নাজেনে বা বাধ্য হয়ে কিছু খেয়ে পেলে, তবে রোযা নষ্ট হবে না, আল্লাহ বলেন: رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا “হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা ভুল করে অথবা অজ্ঞাতসারে দোষে লিপ্ত হই তবে আমাদেরকে পাকড়াও কর না। ” (সূরা আল-বাকারা : ২৮৬) আল্লাহ তাআলা বলেন : إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ “তবে তার জন্য মহা শাস্তি নয় যাকে কুফরী করতে বাধ্য করা হয়েছে কিন্তু তার অন্তর ঈমানে অবিচল। ” সূরা আন - নাহাল : ১০৬ আল্লাহ তাআলা বলেন: وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ “যা তোমরা অজ্ঞাতসারে ভুল করেছ তাতে তোমাদের কোন অপরাধ নেই কিন্তু তা তোমাদের সংকল্প থাকলে অপরাধ হবে। ” সূরা আল-আহ্যাব : ৫ * অতএব, রোযাদার যদি ভুলবশত: পানাহার করে তবে ভুলের কারণে তার রোযা নষ্ট হবে না।

* আর কেউ যদি সূর্য ডুবে গেছে অথবা ফজর এখনও হয়নি এরূপ মনে করে পানাহার করে তবে তার অজ্ঞতার কারণে রোযা নষ্ট হবে না। * যদি কুলি করা অবস্থায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও গলায় পানি চলে যায় তবে রোযা নষ্ট হবে না। * স্বপ্নদোষ হলেও এতে তার কোন ইচ্ছা না থাকায় রোযা ভঙ্গ হবে না। রোযা ভঙ্গের কারণ ৮ টি ১- স্ত্রী সহবাস : রোযাদার যদি রমাযানের দিনে স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয় তবে উক্ত রোযা কাযা আদায়সহ জটিল কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। আর তা হলো : একটি গোলাম আজাদ করা, যদি সামর্থ্য না থাকে তবে ধারাবাহিক দুই মাস (মাঝে বিরতি ছাড়া) রোযা রাখতে হবে আর যদি তার সামর্থ্য না থাকে তবে ৬০ জন মিসকীনকে খাওয়াতে হবে।

২- বীর্যপাত : জাগ্রতাবস্থায় হস্ত মৈথুন, স্ত্রীর সাথে মেলা মেশা করা, চুমো দেয়া, স্পর্শ করা অথবা অন্য কোন কারণে বীর্যপাত হলে রোযা বিনষ্ট হয়ে যাবে। ৩- পানাহার : উপকারী বা ক্ষতি কারক (যেমন ধূমপান) কোন কিছু পানাহারে রোযা ভেঙে যায়। ৪- ইনজেকশন যোগে খাদ্যের সম্পূরক খাদ্য জাতীয় কোন কিছু প্রয়োগ করলে। কিন্তু তা যদি খাদ্যের সম্পূরক না হয় তবে শরীরের যেখানেই প্রয়োগ করা হোক যদিও তার স্বাদ গলায় অনুভূত হয় রোযা নষ্ট হবে না। ৫- ইনজেকশন যোগে রক্ত প্রয়োগ : যেমন রোযাদারের যদি রক্ত শূন্যতা দেখা দেয় আর তার ফলে ইন্জেকশন প্রয়োগে রক্ত প্রবেশ করান হয় তবে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।

৬- মাসিক ঋতু স্রাব ও সন্তান প্রসব জনিত স্রাব। ৭- শিংগা বা এ জাতীয় কিছু লাগিয়ে রক্ত বের করা, তবে যদি রক্ত স্বাভাবিকভাবে যেমন নাক থেকে রক্তক্ষরণ বা দাঁত উঠানোর ফলে বা এ ধরনের অন্য কারণে বের হয় তবে রোযা বিনষ্ট হবে না। ৮- বমি করলে : ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে রোযা নষ্ট হবে কিন্তু অনিচ্ছায় বমি করলে রোযা নষ্ট হবে না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.