আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরকীয়ার কুটিল ফাঁদে পড়ে চার মাস কারাগারে নিরপরাধ জিসান

মানবতার গান গেঁয়ে যায়-তারুণ্যের প্রেরণায় পরকীয়া যে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা ও পরিবার প্রথাকে কিভাবে তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে তার একটি জ্বলত্ব প্রমান এ ঘটনা। দৈনিক কালের কন্ঠের প্রকাশিত সেই ঘটনা নিন্মরুপঃ- পরকীয়া প্রেমের ফাঁদে পড়ে চার মাস কারাগারে থাকতে হয়েছে নিরপরাধ শামসুল আলম জিসানকে। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পূর্বধলই গ্রামের এই যুবককে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় নির্যাতনও করা হয়েছিল। পরে হাটহাজারী সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার বাবুল আকতার প্রকৃত রহস্য উন্মোচন করেন। জামিনে ছাড়া পান জিসান।

এই পুলিশ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পরকীয়া প্রেমের এমন নিষ্ঠুর ফাঁদ আর কখনো দেখিনি। কৌশল ছিল প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেনমোহরের সাত লাখ টাকা আদায়। পরে প্রেমিক তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাবেন এবং তাঁরা বিয়ে করবেন। ভয়ংকর বিষয় ছিল, এ ফাঁকে কথিত অপহরণের দায়ে কারাগারে থাকবেন নির্দোষ জিসান। ' এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, 'তদন্তে এ সত্য উদ্ঘাটিত না হলে জিসান কারাগারে থাকতেন, সেটা হতো চরম অন্যায় ও অমানবিক।

' এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, কথিত অপহরণের মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে। গত ১৮ মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। আদালত জিসানকে জামিন দিয়েছেন গত ২৮ মে। মামলার নথিপত্র, জিসান ও তাঁর বন্ধু মোহাম্মদ এনামুল হক সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ জানুয়ারি হাটহাজারীর পেশকারহাট এলাকার এক গৃহবধূ তাঁর মেয়েকে অপহরণের অভিযোগে হাটহাজারী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়, তিন বছর আগে তাঁর মেয়ের সঙ্গে ফরহাদাবাদ গ্রামের এক ব্যক্তির বিয়ে হয়।

আট মাস আগে মেয়ের স্বামী চাকরি নিয়ে বিদেশে চলে যান। বাদী এজাহারে বলেন, তাঁর মেয়ে নাজিরহাট কলেজে পড়ে। স্থানীয় একটি কোচিং সেন্টারের ছাত্রীও। কোটিং সেন্টারে আসা-যাওয়ার পথে জিসান তাঁর মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতেন এবং ঘটনার দিন কোচিং সেন্টার থেকে আসার পথে অপহরণ করে। মামলাটি নথিভুক্ত হওয়ার পর পরই জিসানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পরে তাঁকে আদালতে সোপর্দ করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের হেফাজতে নেয়। সে সময় 'সত্য' উদ্ঘাটনের জন্য জিসানকে বেধড়ক পিটুনিও দেয় পুলিশ। অন্যদিকে কথিত অপহরণের দুই দিন পর বাড়িতে ফিরে আসেন ওই মেয়ে। বাড়িতে এসে জানতে পারেন তাঁকে অপহরণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় জিসান গ্রেপ্তার হয়েছেন। কিন্তু পরিবারের চাপে এবং প্রেমিককে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে মিথ্যার আশ্রয় নেন ওই মেয়ে।

আদালতে ২২ ধারার জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ঘটনার দিন কোচিং করে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে একদল লোক তাঁকে অজ্ঞান করে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশায় করে তুলে নিয়ে যায়। জ্ঞান ফেরার পর তিনি দেখেন, তাঁকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে জিসান ছিলেন। চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এমন জবানবন্দি দেওয়ার পর জিসান ফেঁসে যান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জিসান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এএসপি বাবুল স্যার এবং ধলই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ মনছুর এগিয়ে না এলে আমি কারাগারে বন্দি থাকতাম।

আমি গরিবের সন্তান। স্থানীয় বাজারে একটি জুতার দোকানে চাকরি করি। ' জানা যায়, দোকানে কেনাকাটা করতে যাওয়ার সূত্রে ওই মেয়ের সঙ্গে জিসানের পরিচয়। সেটা মামলার বাদী অর্থাৎ ওই মেয়ের মা জানতেন। মেয়েকে না পেয়ে তিনি অপহরণ ভেবে ওই মামলা দায়ের করেন, যাতে সন্দেহভাজন হিসেবে জিসানের নাম আসে।

জিসানকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর বন্ধু এনামুল ও স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এএসপি বাবুল আকতার বিষয়টি আমলে নিয়ে ঘটনাটি তদন্তের উদ্যোগ নেন। এএসপি বাবুল আকতার জানান, তদন্তে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসে। কথিত অপহৃত ওই মেয়ে তাঁর কাছে আসল ঘটনা বলেছেন। জবানবন্দিটি রেকর্ড করা হয়েছে। ওই রেকর্ড থেকে জানা যায়, ওই মেয়ের সঙ্গে একই উপজেলার ডাবুয়া হাসানখিল গ্রামের বাসিন্দা মো. সাইফুল আলমের সঙ্গে প্রায় চার বছর আগে মোবাইল ফোনে পরিচয় হয়।

পরিচয়সূত্র ধরে তাঁরা মোবাইল ফোনে আলাপ করতেন। বিয়ের পর স্বামী প্রবাসে চলে যাওয়ায় সাইফুলের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। শেষে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে করবেন। এর জন্য তাঁরা কৌশলের আশ্রয় নেন। মেয়েটি পালিয়ে গিয়ে সাইফুলের সঙ্গে দুই দিন বাইরে থাকবেন।

ঘটনাটি শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানলে স্বামীও জানবেন। 'দুই রাত বাইরে থাকার' অভিযোগে স্বামী তাঁকে তালাক দেবেন। এতে দেনমোহরের সাত লাখ টাকা পাওয়া যাবে। অন্যদিকে সাইফুলও তাঁর স্ত্রীকে তালাক দেবেন। মেয়েটি দেনমোহরের যে টাকা পাবেন, সেটা থেকে সাইফুল তাঁর তালাক দেওয়া স্ত্রীকে দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করবেন।

পরে সাইফুলের সঙ্গে মেয়েটি নতুন সংসার করবেন। সেই পরিকল্পনা থেকেই গত ১৫ জানুয়ারি তিনি সাইফুলের সঙ্গে কক্সবাজার চলে যান। সেখানে হোটেল সিগালে দুই রাত স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে অবস্থান করেন। ফিরে আসার পর যখন শুনলেন তাঁর মা অপহরণ মামলা করেছেন, তখনই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। উল্টো পরিবারের চাপে সংসার রক্ষা এবং প্রেমিককে বাঁচাতে আদালতে মিথ্যা জবানবন্দি দেন তিনি।

এএসপি বাবুল আকতার বলেন, ওই মেয়েটি তাঁকে বলেছেন, 'আমি এখনো বিশ্বাস করি সাইফুল আমাকে বিয়ে করবে। এ ছাড়া আমি যেহেতু সাইফুলের সঙ্গে বাইরে ছিলাম, তাই স্বামী আমাকে আর ফিরিয়ে নেবে না। ' তাঁর দেড় ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং একটি নকিয়া মোবাইল ফোন সেট সাইফুলের কাছে থাকার বিষয়টিও জানান মেয়েটি। পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আকতার জানান, প্রলোভন দিয়ে কক্সবাজার নিয়ে যাওয়া এবং দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগে গত ১৬ মার্চ সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই মামলায় সাইফুল এখন কারাগারে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কারণে নিরপরাধ জিসান মুক্তি পেয়েছেন। এ ঘটনা আমাদের দেশে বিষাক্ত পরকীয়ার ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত সমাজ ব্যবস্থার করুণ চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। পরকীয়ার কারণে আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী পরিবার প্রথা আজ হুমকির সম্মুখিন। এছাড়া আত্মহত্যা,খুন,শিশুহত্যা ইত্যাদীতো রয়েছেই। তাই ভয়ংকর এ পরকীয়াকে দমনের জন্য সঠিক আইন প্রনয়ের প্রয়োজন।

বিয়ের পরে দীর্ঘদিন স্বামীর পরবাস নিষিদ্ধ করা, স্ত্রীকে সাথে নিয়ে যাওয়া সহ কঠোর আইন প্রনয়ের মাধ্যমে পরকীয়ার মুলোৎপাঠন প্রয়োজন। তবে বিয়ের পর স্বামীর দীর্ঘদিন বিদেশ পরবাস ঠেকানো না গেলে পরকীয়া দমন সম্ভব নয়। তাই এ বিষয়ে একনই নজর দেয়া প্রয়োজন, তাহলে এ সম্পর্কিত খুন,জেল জরিমানা,আত্মহত্যা সহ সামাজিক নানা অপরাধ কমে আসবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.