আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরকীয়ার যাঁতাকলে পিষ্ট বিবেক ও সংসার।

জীবনকে ভালোবাসি, তার চেয়েও বেশী ভালোবাসি মেয়েকে। গতকাল রাতে ১০ মিনিটের জন্য সামুতে অফলাইন থেকে ঢুকলাম, ঢুকে একটা পোস্টের মাধ্যমে শওকত আলি ইমনের ঘটনাটা জানতে পারলাম। পুরো ঘটনা পড়ে হতবাক হয়ে গেলাম বারবার শুধু বিজরী আর তার মেয়েটার কথা মনে হচ্ছিলো, যদিও বিজরীর সাথে তার আগেই ডিভোর্স হয়ে গিয়েছিলো এই ঘটনাও কারো জানা ছিলো না, তবুও বিজরীর নিশ্চয়ই তখন বা এই ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর কম কষ্ট হয়নি। মেয়েটার কথা ভেবে বেশী খারাপ লাগছে, কারন যেকোন পরিবারেই বাবা মেয়ের সম্পর্কটা খুব মধুর হয় সাধারণত। একটা মেয়ের কাছে তার বাবা তার প্রথম আদর্শ, ছোটবেলা থেকেই একটা মেয়ে মায়ের চাইতে বাবার সাথে বেশী অন্তরঙ্গ হয় বা সহজ কথায় বলতে গেলে বাবার বেশী ন্যাওটা হয়।

আমার মেয়ের বেলাতেই দেখেছি (ওর বয়স মাত্র ১ বছর ৮ মাস, এই সময়ের মধ্যেই সে মাশাআল্লাহ অনেক কথা বলে) ওকে যতবারই জিজ্ঞেস করার হয় সে কার বেবি, সে ততবারই বলে বাবাইয়ার (বাবার) বেবি। এখন আমার এই মেয়ে যখন বুঝতে শিখবে যখন সমাজে তার পরিচিত একটা সার্কেল থাকবে (আল্লাহ না করুক) তখন যদি সে জানতে পারে তার প্রিয় বাবা অন্য কোন মহিলার সম্পর্ক বজায় রাখছে তখন তার পৃথিবীটা কি উলট পালট হয়ে যাবেনা? এমন কোন ঘটনার সাথে তার বাবা সম্পৃক্ত হওয়ার ঘটনা প্রকাশিত হলে তার সামাজিক অবস্থান টা কি নড়বড়ে হয়ে যাবেনা? জানি মিডিয়াতে এসব ঘটনা এখন হরহামেশাই ঘটছে কিন্তু তাই বলে কি এসব ঘটনায় ঐ পরিবারটি কম কষ্ট পাচ্ছে বা সামাজিকভাবে কম হেয় হচ্ছে? কয়েকটি পরিবারের এমন ঘটনা আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি, তেমন কিছু ঘটনা আমি আজ শেয়ার করছি। ঘটনা ১ - এই পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন, স্বামী, স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে, বড় মেয়ে ও ছেলে প্রাপ্ত বয়স্ক ও বিবাহযোগ্য। সুতরাং তাদের বাবার বয়স আনুমানিক ৪৫+ ধরা যায়। বৈবাহিক জীবনের ১৫/২০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর মহিলা লোকটির বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্কের কথা জানতে পারে।

তখন প্রচন্ড শোকে এই মহিলার মধ্যে মানসিক রোগের সূত্রপাত দেখা যায়, ডাক্তারি ভাষায় যাকে বলে Mood Disorder,এই রোগে আক্রান্ত রোগির মধ্যে Depression ও Mania নামক দুইটি অবস্থা চক্রাকারে চলতে থাকে। (যাদের বুঝতে সমস্যা হচ্ছে বা আরো বিস্তারিত জানতে চান দয়া করে গুগলের সাহায্য নিতে পারেন। ) Depression অবস্থায় থাকাকালীন সময়ে এই মহিলা সবাইকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখেন, সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন, খাওয়া দাওয়া ঠিকমত করেননা, ঠিকমত ঘুমাতেও পারেন না, যখন তখন কারনে অকারনে কান্নাকাটি করেন। Mania আক্রান্ত অবস্থায় এই মহিলা অকারনে হাসেন, যেকোন খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে তাচ্ছিল্য করেন, যখন তখন বাইরে চলে যান, কাউকে তোয়াক্কা করেন না, এই সময়েও তার খাওয়া দাওয়া ও ঘুম অনিয়মিত হয়ে থাকে। মায়ের এই অবস্থা সরাসরি দেখা বা তাকে সামলানো এই সময়টা পার করা তার সন্তানদের জন্য কতটা কষ্টসাধ্য হয়েছিলো একবার ভাবুন।

এর সাথে যুক্ত হয়েছিলো তাদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হওয়ার ভয় আর আতংক। সব মিলিয়ে মা ও তার সন্তনদের কি দূরহ সময় পার করতে হয়েছে এটা যারা তাদের পাশে থেকেছেন বা যারা এসব ঘটনা দেখেছেন তারাই ভালো বুঝতে পারবেন। অথচ যার জন্য এতোগুলো মানুষ কষ্ট ভোগ করলো সে অর্থাৎ ঐ সন্তানদের বাবা সে কিন্তু বহাল তবিয়তেই ছিলো, সন্তান ও সংসারের কোন অবস্থা তাকে বিচলিত করেনি। সে তার মতো করে ঐ বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্ক বজায় রেখে গিয়েছেন। ঘটনা ২ - এই ঘটনার পরিবারটির সদস্য সংখ্যা ৪ জন, মা বাবা, এক ছেলে ও এক মেয়ে।

লোকটির বয়স ৩৫+ হবে, তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ফুটফুটে সুন্দর বাচ্চা দুটো তার। সে তার ছাত্রীদের সাথে অনেতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে তাদের নানারকম প্রস্তাব ও প্রলোভন দেয়। এসব ক্ষেত্রে অনেক মেয়েই এসব ঘটনা কাউকে না জানিয়ে নিজেই হয়তো বুদ্ধিমতির মতো এমন পুরুষকে এড়িয়ে চলে, কিন্তু যারা সুবিধাবাদী তারা হয়তো সেই শিক্ষকের প্রস্তাবে সাড়া দিতেও পারে। এখন এই লোকটি তার সুবিধা অনুযায়ী তার ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারে দিনের পর দিন।

কিন্তু তার এই আচরণের বিরুদ্ধে এক ছাত্রী সাহসী হয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করে, ফলে ঘটনা জানাজানি হয়, ঐ লোকটি দোষী প্রমানিত হওয়ায় তাকে একাডেমিক সকল কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়, এবং তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। এখন এই ঘটনার পর এই লোকটির স্ত্রীর মানসিক অবস্থা বা সামাজিক ভাবে তার মান সম্মানের যে অবস্থা হয়েছিলো তাতে তিনি কারো সামনে যাওয়া বা কারো সাথে সম্পর্ক রাখা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। তার বাচ্চারা ছোট ছিলো তবুও তাদের বাবা একটা ঘৃণ্য কাজ করেছেন এটা বোঝার মত বোধ তাদের হয়েছিলো, তাদের মধ্যে যে হীণমন্যতা সৃষ্টি হয়েছিলো তা কোন সময়ে কাটবে কিনা কে জানে? এর দায়ভার যে বাবার তার এসব ভাবার কোন প্রয়োজন কি ছিলো না এমন অপরাধ করার আগে? ঘটনা ৩ - এবার এক বিখ্যাত সংগীত শীল্পির ঘটনা শেয়ার করি, নাম উল্লেখ করছিনা সংগত কারনেই। এই মেয়ে শীল্পি খুব অল্পদিনেই সবার কাছে বেশ পরিচিত হয়ে উঠে, বিভিন্ন চ্যানেলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যায়। অল্প সময়ে এতো বিখ্যাত হওয়ার নেপথ্যে যে কারন ছিলো তা ছিলো এই পরকীয়া।

এক বিখ্যাত অনুষ্ঠান নির্মাতার সাথে তার পরকীয়া চলছিলো যদিও ঐ মহিলা ভালো করেই জানতো যে তিনি বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক। প্রেম ও টাকা ও ক্যাতির লোভে সব জেনে শুনেও ঐ মহিলা ঐ অনুষ্ঠান নির্মাতার সংগে সম্পর্ক চালিয়ে যায়। একটা পর্যায়ে এসে মেয়েটি ঐ লোককে তাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে থাকে, কিন্তু লোকটি তাকে বিয়ে করতে রাজী হয়না। কারন ঐ লোকটির একটা সামাজিক মর্যাদা আছে, সংসার আছে, ৪ বছর বয়সী ফুটফুটে এক মেয়ে আছে আর সে তার মেয়েকে অনেক ভালোবাসে, তাই সে মেয়েকে সমাজের কাছে হেয় করে এমন একটা সম্পর্ককে সামাজিক স্বীকৃতি দিতে পারবেনা। মেয়েটা পরবর্তীতে আত্মহত্যার চেষ্টা করে কিন্তু সফল হতে পারেনা।

বর্তমানে সে সত্যটা মেনে নিয়েছে, আর এভাবেই জীবন যাপণ করছে। পরকীয়া তাকে কি জীবন উপহার দিলো তা সে হয়তো এখন অনুধাবণ করতে পারছে। ঘটনা ৪ - এই ঘটনাটা আমার পরিচিত এক মেয়ের। পরিবারে তারা তিনজন মানুষ, সে তার স্বামি আর তার ৪ বছর বয়সের একটা মেয়ে, মেয়ের প্রতি তার স্বামীর অঢেল ভালোবাসা ও আদর যার পুরোটাই সে দেখাতে চায় মেয়ের জন্য দামী দামী খেলনা কিনে বা মেয়ের পেছনে অযাচিত টাকা ব্যয় করে। কিন্তু তাকে সময় দেয়ার বা তার সাথে বাবা হিসেবে বন্ধুর মতো করে সময় কাটানোর মতো সময় তার নেই।

প্রিন্ট মিডিয়াতে কাজ করার সুবাদে তার নিত্য নতুন মেয়েদের সাথে পরিচয় হয় এবং এই পরিচয়ের মাধ্যমে এদের অনেকের সাথে তার সম্পর্ক গভীর হয়। কিন্তু মেয়েটি যখন প্রমান সহ তাকে এর ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করে তখন লোকটি সব কিছু অস্বীকার করে। মেয়েটি তার প্রতি তার স্বামীর অবহেলা ও অন্যান্য উদসীণ আচরণ দেখে তার ভেতরের সত্যটা উপলব্ধি করতে পারে, এখন সব মেনে নিয়েই মুখ বুজে তাকে সংসার করে যেতে হচ্ছে। সবগুলো ঘটনার শেষ পরিণতি কিছু নিরপরাধ মানুষের সীমাহীন কষ্ট আজীবন ভোগ করে যাওয়া। কিন্তু ঘটনাগুলোর জন্য যারা দায়ী তারা একটু সচেতন হলেই এসব ঘটনা ঘটতে পারেনা, এই লোকগুলো কোন অপরাধ করার আগে যদি তার প্রিয় মানুষগুলোর মুখ একটু মনে করে তাদের প্রতি যদি সত্যিই এতোটুকু ভালোবাসাও থাকে আর তার বিবেককে যদি জাগ্রত রাখে তাহলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কমে যাবে।

ইদানিং আরেকটা কথা প্রায়ই শুনি যা শুনে আরো বেশী আতংকিত হই, এখনকার টিনএজ পার হওয়া বা ১৮ থেকে ২০/২২ বছরের মেয়েরা নাকি সম্পর্ক করার ক্ষেত্রে বিবাহিত ছেলেদের বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকে, তাদের যুক্তি থাকে যে এমন ছেলেরা প্রতিষ্ঠিত, টাকা পয়সার অভাব থাকেনা, মেয়ে বান্ধবীর পেচনে টাকা খরচ করতে পারে, বেশী কেয়ারিং হয় ইত্যাদি, ইত্যাদি। জানি সবাই এভাবে ভাবেনা, তবুও এদের কথা ভেবে শিউরে উঠি, ভাবি এদের ভবিষ্যৎ কি? পরকীয়ার যাঁতাকল থেকে মুক্ত থাকার কোন কার্যকরী উপায় জানা নেই আমার, কারন ঐ মূহুর্তে বা ঐ মানসিক পরিস্থিতিতে কি চিন্তা নিয়ে একটা মানুষ এমন অবৈধ বা অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তা আমার জানা নেই, আমি মনে করি মানুষ যদি তার নীতিবোধ,বিবেক আর সামাজিক মর্যাদাকে সবসময় প্রাধান্য দেয় তাহলে তার এমন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার অবকাশ থাকেনা। পাঠকরা হয়তো আরো ভালো সমাধান দিতে পারবেন, অপেক্ষায় থাকলাম। সবাই ভালো থাকুন। * কিছু বানান ভুল থাকতে পারে, অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য দুঃখিত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.