আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমরা আমরাই তো

লেখা স্ব মূর্তিতে ফিরে এসেছে লীগ জুনিয়র রা। সেই পুরনো গল্প। টেন্ডার। তা পেতে আগ্রহী দুই রাজপুত্র। সমাধানের জন্য শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ।

এবং একজন শিশুর মৃত্যু দিয়ে ঘটনার যবনিকা। কাজটা এই প্রথম না। জুনিয়র লীগ এর আগেও শিশু হত্যা করেছে। এবং বেশ পারদর্শীতার সঙ্গেই কাজটা করেছিল এর আগে। স্থান ছিল ময়মনসিংহ।

ফর্মুলা সব সময় এক ছিল না। কখনও নিজেদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। কখনও সরকারী কর্মকর্তাকে ধাওয়া। দু একজন ক্যাডার ও মারা যায়, এবারটা যেমন হয়েছে, তবে সেটা খুব আকর্ষণীয় কিছু না। জুনিয়র লীগের কর্মকাণ্ডের মূল আকর্ষণ থাকে এই শিশু মৃত্যু।

আগে এসব কর্মকাণ্ডের পরে অবধারিত ভাবে যে বক্তব্য আসতো তা ছিল, ‘এরা ছাত্রলীগের কেউ না। অনুপ্রবেশকারী। ‘ এরপরে পত্রিকা ওয়ালাদের কাজ হত বিভিন্ন মিছিলে এদের উপস্থিতির ছবি প্রকাশ করা। একসময় ঘটনাটা প্রথম পাতা ছেকে ছিটকে যেত। এবং এদের আর কোন সমস্যা হত না।

ময়মনসিংহের ঘটনার আর কোন রিপোর্ট দেখতে পান পত্রিকায়? কেউ কি জানেন কেস টা এখন কোন পর্যায়ে? সেই গুণধররা এখন জেলে না জামিনে বেরিয়ে পুনরায় শুভকাজে মন দিয়েছে? সেই শিশুটির মা আর আদৌ কেস চালাতে আগ্রহী কি না? আমি নিজেও এই নিয়ে খুব একটা আগ্রহী না। নেহাত নির্বাচন কাছে এসে গেছে। আর ওদিকে চার সিটিতে হেরেছে। নইলে এইবারও কেউ গ্রেফতার হত না। আর হলেও কিছুদিনের ভেতরই জামিন পেয়ে যেত।

আর ‘অনুপ্রবেশকারী’ ফর্মুলা নিয়ে স্বয়ং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হাজির হতেন। এবারও হয়তো কিছু হবে না। এই সোনার ছেলেরা না থাকলে নির্বাচনে কাজ কে করবে? তাই আপাততঃ কিছুদিন শ্রীঘরে বিস্রাম দিয়ে কিছুদিন পরে তাঁদের সসম্মানে জামিন দেয়া হবে। সিনিয়ররা অনেকদিন পরে কাজ পেয়েছেন। এতদিন বিরোধী দল সংসদে আসতো না।

তাই তেমন কোন কাজ ছিল না। নেত্রীর স্তুতি, বঙ্গবন্ধুর অবদান নিয়ে নাতিদীর্ঘ বক্তব্য, এই দিয়েই সাড়ে চার বছর পার করে দিয়েছেন। এবার বিরোধী দলের শখ হয়েছে সংসদে থাকবার। বর্জন ব্যাপারটায় বোধহয় একঘেয়েমি এসে গেছে। হতে পারে এটাই শেষ অধিবেশন।

উল্লেখযোগ্য কিছু একটা করার শখও হয়তো মনের কোনে ছিল। নতুনত্ব আনার শখ সরকারী দলেও হয়তো ছিল। আর সমাধান হিসেবে দুদলেরই পছন্দ হল ‘গালিগালাজ’। কাজটা দারুণ মার্কেট পেল। প্রায় প্রতিটি পত্রিকায় শিরোনাম।

‘টক শো’ ব্লগ আর ফেসবুকে এখন আলোচনার বিষয় একটাই। লাইম লাইটে থাকতে আপাতত তাই সবাই ব্যস্ত গালাগালি নিয়ে। নেতা নেত্রীকে তো দিচ্ছেই, সঙ্গে তাঁদের পুত্র কন্যাদেরও। কার বিয়ে কোথায় হয়েছে, কার জন্ম কার ঔরসে, এমন দারুণ সব ঐতিহাসিক তথ্যের ছড়াছড়ি চলছে এখন সংসদে। অধিবেশনটা যে ‘বাজেট অধিবেশন’ তা অনেকেরই মনে নেই।

অনেকে আবার বেরসিকের মত এই ‘গালিগালাজ’ নিরুৎসাহিত করছে? জরিমানা করার জন্য আবদার করেছে। গালি গালাজে দেশী বিদেশী অনেক সেলিব্রিটিকেও টার্গেট করা হচ্ছে। ইউনুস সাহেবকে তো কটাক্ষ করা হচ্ছিলই এখন আবার আইএমএফ এর কর্তা ব্যক্তিদেরও বাদ দেয়া হচ্ছে না। কার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চলছে, কে যৌন কেলেঙ্কারিতে ফেসেছেন এসব বলে বোঝানো হচ্ছে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের লোণ না নিয়ে ভালোই করেছি। কি দরকার এমন ‘দুর্নীতিবাজ’ দের কাছ থেকে লোণ নিয়ে।

এদের কাছে লোণ চাইতে যাওয়াটাই ঠিক হয় নি। কেন যে এদের কথা শুনে, শুধু শুধু একজন দেশ প্রেমিক মন্ত্রীর চাকরী ‘নট’ করলাম! গ্রামীন ব্যাংক নিয়েও খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছে বলে মনে হচ্ছে না। প্রতিদিনই ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে, গ্রামীন ব্যাংকের জন্য এই সরকার কত কি উপকার করেছে। ‘উনিশ টুকরা’ নিয়ে সমালোচনা হওয়াতে একটু পিছুটান দিয়েছে। এখন টুকরো করার ইচ্ছে থেমে গেছে।

আপাততঃ ‘ইউনুস’ ‘সুদখোর’ এসব লাইনে যুদ্ধ চালাচ্ছে। বিএনপি সুযোগটা বেশ ভালভাবেই নিয়েছে। উদ্দেশ্য হয়তো ‘গ্রামীন ভোট ব্যাংক’। এমন কিছু সত্যিই আছে কি না তা কেউই নিশ্চিত না। তবে যদি সত্যিই থেকে থাকে, চেষ্টা করতে দোষ কি? যদি সত্যিই কিছু ভোট জুটে যায়, মন্দ কি? ওদিকে সিটি কর্পোরেশানে জিতে বিরোধী শিবিরেও এখন দারুণ রকমের চাঙ্গা ভাব।

তত্ত্বাবধায়ক প্রশ্নে এখন আর কোন সমঝোতা করবে বলে মনে হচ্ছে না। ওদিকে সরকারও আপ্রাণ চেষ্টা করছে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করার। ‘জুনিয়র লীগ’ কে তাই ধরেছে। বিচার হচ্ছে এমন একটা ইম্প্রেশান দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। ওদিকে পদ্মা সেতু নিয়ে নিজেদের ইমেজের যা ক্ষতি হয়েছে তা উদ্ধারের আপ্রাণ চেষ্টা হচ্ছে।

লোক দেখানো ‘টেন্ডার’ আহ্বান এর কাজটা সেরে ফেলেছে। ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ নিয়ে মৃদু বচসা ছাড়া পুরো ঘটনায় তেমন উল্লেখযোগ্য কোন প্রাপ্তি নেই। এতসব করেও কি শেষ রক্ষা হবে? জুনিয়র আর সিনিয়র লীগ এর এই মহান কীর্তি গুলো কি মানুষ এতো সহজে ভুলে যাবে? দেশপ্রেমিক মন্ত্রীর পদত্যাগ, কালো বিড়ালের কাণ্ড, শেয়ার বাজার। নতুন ফর্মুলা হিসেবে তাই এখন ভালো কাজগুলোর উদাহরণ টেনে এসব ভোলানোর আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। ‘কিছু খারাপ কাজ করেছি ঠিক ই তবে ভালো কাজও করেছি’।

সঙ্গে আরও একটা কথা বোঝানোর চেষ্টা চলছে, ‘বিএনপি এলেও একই কাজই করবে। এভাবেই দুর্নীতি করবে। তখন টেন্ডার বাজি করবে যুব দল আর ছাত্র দল’। রাজনীতিবিদদের কাছে যত প্রত্যাশা করেনই না কোন লাভ নেই, ‘আমরা আমরাই তো’। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।