আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিবাদ নয় আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচাই সম অধিকার

ব্শ্বি নারী দিবস অনেক সভা, মিছিল, কনফারেন্স, আলোচনা, শুভেচ্ছা বিনিময় চলছে পৃথিবী জুড়ে। পৃথিবী জুড়ে প্রগতির অনেক বোলচাল শুনে ঘনীভূত হচ্ছে বাতাস মাথার উপরে। নারী স্বাধীনতা, নারীবাদি, ফেমেনিস্ট। কারো ঘৃণার চোখ, কারো সহানুভূতি, কারো বাঁকা চোখের মুচকি হাসি গড়িয়ে যায় তাদের প্রতি। এক শ্রেণীর নারীরা ভাবছেন আহা আজ আমাদের দিন।

আরেক শ্রেনীর নারীরা প্রগতির কথা বলে ফেনা তুলছেন মুখে। দিবস শেষ, কথার ফুলঝুরি শেষ কথার তুবড়ি ছুটানো মহিলা ক্লান্ত অবসাদে এলিয়ে আছেন বিছানায়। আর আমাদের দিন ভাবা মহিলারা সেই একই ঘূর্ণিচক্রে ফিরে যাচ্ছেন দিন শেষে। নারীদের অধিকার চাওয়া সারাদিনের ব্যস্ত পুরুষটি নারীকে অবমাননা করছেন ঘরের ভিতর। এই যদি আমাদের অবস্থা হয় তবে কেন এত আয়োজন ঘনঘটা ? পিছনের কথা, ১৮৫৭ দিকে পশ্চিমা বিশ্বের নারীরা কারখানায় সম-মজুরি, কর্ম ঘণ্টা, কার্যক্ষেত্রের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা।

অধিকার নিয়ে প্রথম আন্দোলন শুরু হয় মিছিলে দমন পীড়ন চলে যথারীতি। তারা বোঝাতে চান। সমান কাজ করছেন, সমান সময় ব্যয় করছেন অথচ নারী বলে তাদের আর্থিক ভাবে কম অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। অসুস্থ পরিবেশে কাজ করতে হচ্ছে। গুটিকয় নারীর সচেতনতা তাদের সমান অধিকারের দাবি সোচ্চার হয়ে বিপ্লব ঘটায়।

শুরুতে বিশ্ব নারী কর্মী দিবস নামে এই দিবস চালু হয়। ১৯০৮ সালে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রথম নারী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়ে। এর পর সতেরটি দেশের একশ নারী প্রতিনিধি যোগ দেন ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে। এই সম্মেলনে ৮ র্মাচকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে পালন করার প্রস্তাব দেন।

১৯১১খৃঃ থেকে নারী সম অধিকার দিবস হিসাবে এই আট মার্চ পালিত হতে শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা দিবসটি পালনে এগিয়ে আসেন। স্বাধীনতার আগে থেকেই বাংলাদেশেও এই দিবসটি পালন হতে থাকে। একশত বছর আগের দাবি পশ্চিমা বিশ্বে যথেষ্ট মর্যাদার সাথে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যার ফলে নারীরা সমান তালে পুরুষের সমকক্ষ হয়েই কাজ করে যেতে পারছেন।

পাচ্ছেন অন্যান্য সকল সুযোগ সুবিধা। অনুন্নত দেশের নারীরাও যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছেন। পারিবারিক সামাজিক, ধর্মীয় শৃঙ্খল ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসছেন। পালন করছেন আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সময় অনেক বদলে গেছে।

আগের ধ্যানধারনা অনেক কিছুই পাল্টে গেছে দেশে দেশে। একশ বছর আগে যে প্রয়োজনে রাস্তায় আন্দোলন করেছিলেন নারীরা আর আজ যারা তা উপভোগ করছেন তাদের মনন চিন্তায় রয়েছে অসম্ভব ফারাক। তাই বাঁধাহীন বেরিয়ে পরার সুযোগ অনেক উচ্ছৃঙ্খল জীবনে নিয়ে যাচ্ছে নারীদের। যে নারীরা সুযোগ নিচ্ছেন বা পাচ্ছেন সম অধিকারের আর নারী স্বাধীনতার নামে নিজেকে খুলে দিচ্ছেন বিপননের সামনে। নারীর সৌন্দর্যের ফায়দা লুটে মুনাফা তুলছে সুযোগ সন্ধানীরা।

আর ইচ্ছাকৃত ভাবে তার যোগান দিচ্ছেন সেই নারীরা। এই অসেচতন নারীরা কি সচেতন হবেন? পোষাক, গহনা,কসমেটিকস, ভোগ্য পণ্যের অঙ্গ ভঙ্গিমায় নারী বিক্রি হয়ে যাচ্ছে পণ্য হিসাবে। আমার কাছে মনে হয় সচেতনতার কথা বলে নারী নিজেরাই নিজেদের ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অন্য ভাবে একশ বছর আগের জায়গায়্। ৮ মার্চের বিশ্ব নারী দিবসের কি মর্যাদা তারা রাখছে আমার বোধগম্য নয়। বোধ, সচেতনাতার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে একটা অবস্থানে আসা আর তৈরী কিছু পাওয়ার, চেতনা, মূল্যবোধের পার্থক্য হয়ে উঠে আকাশ পাতাল।

প্রকৃত গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য প্রয়োজন শিক্ষা, সচেতনতা। আমাদের দেশে একসময় মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা চালু ছিল। নারীদের বেধে দেয়া নিয়মেই পুরুষ চলত। এখনও এই ব্যবস্থা আদিবাসী কিছু জাতির মধ্যে বিদ্যমান। নারীদের কোন আন্দোলন করতে হয়না সে সমাজে তারা অধিকার সহকারে সুখেই আছে।

আফ্রিকার একটি দেশে নারীরা পবিবারে নির্যাতিত হলে তারা চলে যায় এক শহরে যেটাকে নারীস্থান বলা যায়। সেখানে কোন পুরুষ নাই। সব মহিলা মিলেই তাদের জীবন জীবিকা চলার ব্যবস্থা করে। নারীরা সেখানে সুখী, আনন্দময়ী। যদি কোন পুরুষ ভুল বুঝতে পেরে নিজের নারীটিকে ফিরিয়ে নিতে আসে তবে আর কোন নির্যতন হবে না।

এই দাসখত লিখে দিয়েই নিয়ে যেতে পারে। দ্বিতীয়বার সমস্যার পুনরাবৃত্তি করলে কখনই আর ফিরে পাবে না সে তার নারীকে। পশ্চিমা বিশ্বে সম অধিকারের সকল সুযোগ থাকার পরও দেখি, পূবের নারীরা নির্যাতিত হন গৃহ অভ্যন্তরে। আপন গরিমায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেন না। কর্মক্ষেত্রের অধিকার যখন ছড়িয়ে পরে বিশ্বে, নারীর একদিনের সুখভোগের দিবসে।

নারী একদিন আলাদা মর্যাদা পান পরিবারে, উপহার, কাজ থেকে ছুটি ইত্যকার নানান কিছুর মাঝে যন্ত্রনার পোটলা বুকে বেঁধে, গোমড়া মুখে মনের অন্তহীন অন্ধকার নিয়ে গৃহ সাজান নিপুন হাতে। এই ভাড়ামি বড় বাজে এই বুকে। এইসব ম্লান, মূঢ় মুখে ভাষা কবে জাগবে? । সব দিকেই সচেতনতার প্রয়োজন। ভীত জানার প্রয়োজন।

সত্যিকারের উপলব্ধি প্রয়োজন দিবসটি পালনের জন্য। মানুষ আচমকা হেসে উঠো মনে হয় অমানবিক বা পৈশাচিক খরখরে চোখে আতঙ্ক নিয়ে তাকায় সবাই তোমার দিকে অশরীরী কোন প্রভাব নাকি অতিরিক্ত পান! দ্বিধান্বিত মানুষ ভাবতে চেষ্টা করে। তুমি হাসো আপন মনে শতভাগ নিশ্চিত সুস্থতায় তুমি ভাবছো- নারী এ শুধু তোমার অবমাননা নয় এ শক্তির খেলা, বুদ্ধিমান ও হেরে যায় র্নিবোধ পুরুষের কাছে- আর তুমি তো নিতান্তই অবলা মায়াবতী, স্নেহময়ী, দুগ্ধধারায় বাঁচাও প্রজন্ম, জরায়ু চিরে উৎপাদন করো ফসল আবাদের খামার আগলে রাখো দশভুজা র্দূগা। করুণায় সিক্ত তোমার দুনয়ন নদীর বহমানতা চুলেরধারা- ঝর্ণা সৌন্দর্য ছড়ায়, তোমার দেহ সৌষ্ঠব পাহাড়ি বাঁক আদিম উত্তাপ যেমন তুমি তৈরী হয়েছো ফুলের মতন সুন্দর। তুমি সাবধান থাকো তবু লকলকে লোলুপ জ্বীব ছোঁয়ে যায় তোমাকে অজান্তে দগ্ধতায় পুড়ায়; দেহ মন ঘৃণায় এজন্য কী তুমি দায়ী নারী! তুমি দায়ী? অট্টহাসিতে ভাঙ্গ তুমি আপন ভাবনায় রমণী তুমি নম্র এবং সহজ অবদমিত হওয়ার জন্য ।

জোয়ান অব আর্ক, খনা বা ফিদা র্কালো, দীপ্ত আলোর ইশারায় জ্বলে ছিল যাদের চোখ বেগম রোকেয়া, ইলামিত্র বা জাহানারা ইমাম কে পেয়েছে মুক্তি সহজ গতিময়তায় আপন মহিমায়? অথচ র্নিবোধ পুরুষ ভেঙ্গে দিল ট্রয়নগরী হেলেনের সৌন্দর্যে আপন আনন্দে। আপনমনে হাসো মানবী তুমি ওরা তো ছাড়ে না সত্যদ্রষ্টা পুরুষকেও- সক্রেটিস বা গালিলিও অতি সচেতন, সত্য আবিষ্কারের জন্য মৃত্যুবরণ দুর্দান্ত অত্যাচারে- হেমলক বিষ পান করতে হলো যেমন ওরা তবে মানুষ ছিল, তোমার মতন নারী বা পুরুষ নয়। তুমি নিজেকে ভাবতে পারো যিশু ক্রশ বিদ্ধ হয়ে আছো গৃহে নেমে আসবে আসমান থেকে সুসময় ডাক দিলে অপেক্ষায় থাকো নারী। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.