আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিবাদ

সময়ের সতর্কবাণী অবহেলা না করাই বুদ্ধিমানে কাজ।

(প্রথম পর্ব) এখনকার দিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিষয় বোধহয় ধর্ম। মানুষ এখন রাজনীতি, দেশের উন্নয়নসংক্রান্ত বিষয়াদি ছাড়িয়া ধর্ম বিষয়ে ভাবিতেছে। কারণ চারিদিকে এখন আস্তিক-নাস্তিক বিরোধ চলিতেছে। এই বিরোধের কারণে সেই পুরানো হিন্দু-মুসলমান, মুসলমান-খ্রিষ্টান, খ্রিষ্টান-হিন্দু বিরোধগুলো বর্তমানে আর নাই বলিলেই চলে।

(একটা বিষয় কেহ লক্ষ্য করিয়াছেন কি যে বৌদ্ধদের সাথে কখনো কোন ধর্মের বিরোধ লাগে না? এর কারণ নানাবিধ। প্রথমত, আপনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ না করিলে কেহ আপনার মুণ্ডুপাত করিবে না। দ্বিতীয়ত, আপনি অবৌদ্ধ হইলেও কোন বৌদ্ধভিক্ষু আপনাকে জ্বালাতন করিবেন না। তৃতীয়ত, আপনি যদি কোন বৌদ্ধকে বলেন, "আপনার ধর্ম ভুলে ভরা", তখন তিনি খড়গহস্ত না হইয়া কেবল একথাই বলিবেন, "নিশ্চয়ই ঈশ্বর মনুষ্যজাতিকে সঠিক পথ দেখাইবেন। " 'বড় যদি হতে চাও ছোট হও তবে' - এধারণা তাহাদের মজ্জাগত।

চতুর্থত, তারা 'ত্রিপিটক একটি অলৌকিক গ্রন্থ', কিংবা কোন আবিষ্কারকে 'উহা তো ত্রিপিটকে আগেই ছিল' বলে বলিয়া আমি কোনদিন শুনি নাই। এছাড়া আরও কারণ রইয়াছে। ) চারিদিকে এখন ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়া আলোচনা। 'ঈশ্বর কোথা থেকে এল' বলিয়া নাস্তিক আত্মরক্ষা করে তো আস্তিকও নিজের যুক্তিকে সমর্থন করে প্রশ্ন করে 'তুমিই বল এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কিরূপে সৃষ্টি হইল'; আস্তিক পুষ্প দেখাইয়া বলে ঈশ্বর শান্তি আনিয়াছে, নাস্তিকও কম যায় না, সে পত্রিকা দেখাইয়া মৃদু হাস্যে বলে 'তা তো দেখিতেই পারিতেছি'; জাকির নায়েকেরা ধর্ম প্রচার করে তো ধর্মপচারকেরা ধর্ম প্রহার করে। এক দল জাকির নায়েকদের জিকির নায়ক বলিয়া উল্লাস করে, অপর দল তাহাদিগকে জোকার নালায়েক বলিয়া উপহাস করে।

কিন্তু কিছু বিষয় দুই দলেই বিদ্যমান। তাহারা তাদের বক্তব্য সত্য বলিয়া বিশ্বাস করে, যখন কোন যুক্তি পাওয়া যায় না তখন দুই দলই 'কোনভাবে হইয়াছে' বলিয়া বক্তব্য করে। এবং দুই দলেই বেশ কিছু আহাম্মক আছে যাহারা গায়ের জোরে যুক্তি প্রতিষ্ঠা করিতে চায়; তাদের যুক্তি শুনিলে বিতর্কের ইচ্ছাই উবিয়া যায়, আর যুক্তিপ্রদানকারী 'আমার জয় হইয়াছে' ভাবিয়া গর্ব করে। মনে করুন, পৃথিবীতে মাত্র একজন সঙ্গীতস্রষ্টা আছেন। তিনি তার অপূর্ব সঙ্গীত দ্বারা পুরো বিশ্বকে মোহিত করিয়া রাখিয়াছেন।

তিনি কাহারো কাছে সুর শিখেন নাই, তিনিই বিস্তর গবেষণা করিয়া সুর সৃষ্টি করিয়াছেন। তাহার দুইজন শিষ্য। তাহাদের মধ্যে একজন একটু অন্যরকম একটা সুর তৈরির চেষ্টা চালাইল, কিন্তু পুরো বিশ্ব গুরুর অনুসারী বলিয়া সে তেমন একটা সুবিধা করতে পারল না। গুরু তাহাকে শুধরাইয়া দিলেন। একদিন একজন লোকের নাম বিশ্ব জানতে পারল, যিনিও অনেক গবেষণা করিয়া সুর সৃষ্টি করিয়াছেন।

এই সুর সম্পূর্ণভাবে নতুনধর্মী। একদিন প্রথমজন বলিলেন দ্বিতীয়জনকে, "আমার এক শিষ্যও এইরকম সুরের ধর্মের বিপরীত করার চেষ্টা চালাইয়াছিল, তাহাকে আমি শুধরাইয়া দিয়াছি। " উত্তরে দ্বিতীয়জন বলিলেন, "সেই দুইজন আপনার কাছে সুরশিক্ষা করিতে আসিয়াছে, তাই আপনার অধিকার রয়েছে তাহাদের শুধরানোর; কিন্তু আমাকে নয়। আর তাছাড়া আপনি যা সৃষ্টি করিয়াছেন, আপনার কাছে তাহা বাদে সব সুরই ভুল মনে হইবে। আপনার শিষ্যদের দুইজনই আপনার মতালম্বী; একজন আপনার প্রশংসার লোভে, অপরজন আপনার শাস্তির ভয়ে।

তাহারা লতামাত্র। আপনাকে অবলম্বন করিয়া তাহারা বাড়িয়া উঠিয়াছে। " "আপনি কাহাকেও অবলম্বন করেন নাই, আপনি নুইয়া পড়িবেন। " "আমি আপনার কিংবা কাহারও শিষ্য নই, আমি কাহারও কাছে সুরশিক্ষা করি নাই। আপনি কে আমি বৃক্ষ না লতা নির্ণয় করিবার?" তর্ক চলিতেই থাকে।

সমগ্র বিশ্ববাসী তিনটি দলে বিভক্ত হইয়া পড়িল। একদল প্রথম জনের পক্ষে, দ্বিতীয় দল দ্বিতীয় জনের পক্ষে, এবং তৃতীয় দল নিরপেক্ষ। প্রথম দলে আবার তিনটি উপদল দেখা দিল। প্রথম উপদল 'প্রথম জনের সুরই শ্রেষ্ঠ' এই বিশ্বাসকে আঁকড়াইয়া ধরিল, দ্বিতীয় উপদল প্রথম জনকে সমর্থন করিল কারণ তাহারা বিশ্বাস করে যাহা কিছু পুরাতন তাহাই সূর্যসম। তৃতীয় উপদল উভয় সুর শুনিয়া প্রথমজনের সুরকে পছন্দ করিল।

দ্বিতীয় দলও তিনটি উপদলে বিভক্ত হইল। প্রথম উপদল দ্বিতীয়জনকে সমর্থন করিল কারণ তাহাদের বিশ্বাস, যাহা কিছু নূতন, তাহার সবই উত্তম। দ্বিতীয় উপদল তাহাকে সমর্থন করিল সম্পুর্ণ ঈর্ষাবশতঃ; তাহারা নিজেরা কিছু করিবার ক্ষমতা রাখিত না, কিন্তু প্রথমজন একচেটিয়াভাবে জিতিবে, ইহা তাহাদের সহ্য হইতেছিল না। এক্ষেত্রেও তৃতীয় উপদল যাচাই করিয়া দ্বিতীয়জনের সুরকে পছন্দ করিল। নিরপেক্ষ দলেও আবার তিনটি উপদল দেখা দিল।

প্রথম উপদল দুইজনকেই সমর্থন দিল, দ্বিতীয়উপদল কাহাকেও সমর্থন দিল না, ভাবখানা এই- 'সুরই কি জীবনের সব?', তৃতীয় দল একজনকে সমর্থন করিতে চাইল, কিন্তু কাহাকে যে সমর্থন করিবে তাহা বুঝিয়া উঠিতে পারিল না। উপরোক্ত কাল্পনিক কাহিনীতে প্রথমজনের সৃষ্টি করা সুর হইল আস্তিক্যবাদ, এবং পরেরজনের সৃষ্টি করা সুর হইল নাস্তিক্যবাদ। (চলিবে)


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.