আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফিজিওথেরাপি; কি, কেন, কিভাবে ......?

ফিজিওথেরাপি; কি, কেন, কিভাবে ......? ফিজিওথেরাপি : ফিজিও (শারিরীক) এবং থেরাপি (চিকিৎসা) শব্দ দুটি মিলে ফিজিওথেরাপি বা শারিরীক চিকিৎসার সৃস্টি। ফিজিওথেরাপি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক অন্যতম এবং অপরিহার্য শাখা। একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক স্বাধীনভাবে রোগীর বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা (প্রধানত বাত-ব্যথা, আঘাত জনিত ব্যথা, প্যারালাইসিস ইত্যাদি) নির্ণয় সহকারে পরিপূর্ন চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকেন। ফিজিওথেরাপি'র সূচনা: ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নতুন কোন চিকিৎসা পদ্বতি নয়। প্রাচীন গ্রীসে হিপোক্রেটাস ম্যাসেজ ও ম্যানুয়াল থেরাপি দ্বারা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার সূচনা করেছিলেন।

খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০ সালে হেক্টর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার একটি শাখা ব্যবহার করতেন যাকে বর্তমানে হাইড্রোথেরাপী বলা হয়। তথ্য-উপাত্ত অনুসারে ১৮৯৪ সালে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার বর্তমান ধারা অর্থাৎ ম্যানুয়াল থেরাপি, ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি, এঙ্ারসাইজ থেরাপি, হাইড্রোথেরাপি, ইলেক্ট্রোথেরাপি ইত্যাদি প্রবর্তন করা হয়। নিউজিল্যান্ডে ১৯১৩ এবং আমেরিকাতে ১৯১৪ সালে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শুরু হয়। বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি: যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য ১৯৭২ সালে বিদেশী ফিজিওথেরাপিষ্ট দ্বারা স্বাধীন বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার সূচনা হয়। ফিজিওথেরাপী চিকিৎসার গুরুত্ব ও অনুধাবন করে ১৯৭৩ সালে আরআইএইচডি (বর্তমানে নিটোর) ফিজিওথেরাপী চিকিৎসার উপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের (এমবিবিএস ও বিডিএস একই অনুষদের অধিভুক্ত) অধিনে স্মাতক ডিগ্রি চালু করা হয় ।

বর্তমানে নিটোর, সিআরপি, পিপলস্‌ ইউনিভার্সিটি, গণবিশ্ববিদ্যালয়, স্টেট্‌ কলেজ অব হেলথ্‌ সায়েন্স সহ ৭টি ইনষ্টিটিউটে ফিজিওথেরাপী গ্রাজুয়েশন কোর্স চালু রয়েছে। কেন এই ফিজিওথেরাপি : আমরা যদি আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগের কথা চিন্তা করি তাহলে দেখতে পাব যে, শুধুমাত্র ঔষধ সব রোগের পরিপুর্ণ সুস্থতা দিতে পারে না। বিশেষ করে যে সব রোগের উৎস বিভিন্ন মেকানিক্যাল সমস্যা সেসব ক্ষেত্রে ঔষধের ভূমিকা তুলনামূলকভাবে কম। যেমন: বাত - ব্যথা, স্পোর্টস ইনজুরি, হাড় ক্ষয় জনিত রোগ, জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া, স্ট্রোক, প্যারালাইসিস ইত্যাদি। তাহলে এসব রোগ হতে পরিপুর্ণ সুস্থতা লাভের উপায় কি? মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিম: বর্তমানে উন্নত বিশ্বে সব ধরনের শারিরীক সমস্যার পরিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক নতুন ধারার প্রবর্তন হয়েছে।

যাকে বলা হয় মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিম। এই টিমে থাকেন সার্জন, মেডিসিন স্পেশালিষ্ট, জেনারেল ফিজিশিয়ান, ফিজিওথেরাপিষ্ট, অকুপেশনাল থেরাপিষ্ট, নার্স, সোশ্যাল ওয়ার্কার। রোগীর শারিরীক সমস্যা দুর করে কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপিষ্টের ভূমিকা অপরিসীম। ফিজিওথেরাপিষ্ট কে : ফিজিওথেরাপিতে শুধুমাত্র ব্যাচেলর অথবা পোষ্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রিধারীকেই ফিজিওথেরাপিষ্ট বলা যাবে। বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন মানের ফিজিওথেরাপিষ্ট আছেন।

কোয়ালিফাইড ফিজিওথেরাপিষ্ট : যিনি কমপক্ষে ফিজিওথেরাপি ব্যচেলর ডিগ্রি (৪ বছর কোর্স + ১ বছর ইর্ন্টানশীপ সম্পন্ন) নিয়েছেন। একজন কোয়ালিফাইড ফিজিওথেরাপিষ্ট রোগীর রোগ নির্ণয় সহকারে চিকিৎসা সেবা দিতে পারবেন। ডিপ্লোমা ফিজিওথেরাপিষ্ট: যিনি ফিজিওথেরাপি ডিপ্লোমা (৩ বছর কোর্স ) ডিগ্রি নিয়েছেন। একজন কোয়ালিফাইড ফিজিওথেরাপিষ্টের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা সেবা দিতে পারবেন। ফিজিওথেরাপি এসিস্ট্যান্ট যিনি এসিস্ট্যান্ট ফিজিওথেরাপি (১বছর) কোর্স করেছেন।

একজন কোয়ালিফাইড ফিজিওথেরাপিষ্টের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা সেবায় সহায়ককারী হিসেবে কাজ করতে পারবেন। *এছাড়াও অন্যান্য কিছু চিকিৎসক ফিজিথেরাপী চিকিৎসার কিছু পরামর্শ দেয়ার চেষ্টা করে থাকেন। এক্ষেত্রে কোয়ালিফাইড ফিজিওথেরাপিষ্ট হতে চিকিৎসা ও পরামর্শ নেয়াই উত্তম। যে সব ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অত্যাবশ্যক:  বাত-ব্যথা  কোমড় ব্যথা  ঘাড় ব্যথা  হাঁটু অথবা গোড়ালীর ব্যথা  আঘাত জনিত ব্যথা  হাড় ক্ষয় জনিত রোগ  জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া  স্ট্রোক  প্যারালাইসিস জনিত সমস্যায়  মুখ বেঁকে যাওয়া বা ফেসিয়াল পালসি  বিভিন্ন ধরনের অপারেশন পরবর্তী সমস্যায়  আইসিইউ (ওঈট) তে অবস্থানকারী রোগীর জন্য  পা বাঁকা (ক্লাবফিট)  গাইনোকলজিক্যাল সমস্যায়  সেরিব্রাল পলসি (প্রতিবন্ধী শিশু)  বার্ধক্যজনিত সমস্যা ইত্যাদি চিকিৎসার ক্ষেত্রে ও পুনর্বাসন সেবায় ফিজিওথেরাপির ভূমিকা অপরিসীম। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতি: একজন ফিজিওথেরাপিষ্ট রোগীর রোগ বর্ণনা, ফিজিক্যাল টেষ্ট, ফিজিওথেরাপিউটিক স্পেশাল টেষ্ট, প্রয়োজন সাপেক্ষে বিভিন্ন রেডিওলজিক্যাল টেষ্ট এবং প্যাথলজিক্যাল টেষ্ট এর মাধ্যমে রোগ নির্ণয় বা ডায়াগ্‌নোসিস করে থাকেন।

অত:পর রোগীর সমস্যানুযায়ী চিকিৎসার পরিকল্পনা অথবা ট্রিটমেন্ট প্লান করেন এবং সেই অনুযায়ী নিন্মোক্ত পদ্ধতিতে ফিজিওথেরাপি সেবা প্রদান করে থাকেন। -ম্যানুয়াল থেরাপি -ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি -মোবিলাইজেশন -মুভমেন্ট উইথ মোবিলাইজেশন -থেরাপিউটিক এঙ্ারসাইজ -ইনফিলট্রেশন বা জয়েণ্ট ইনজেকশন -পশ্চারাল এডুকেশন -আরগোনমিক্যাল কনসালটেন্সী -হাইড্রোথেরাপি -ইলেকট্রোথেরাপি বা অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে চিকিৎসা (যেমন: TENS, IRR, Traction ইত্যাদি)। তবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাতে মেশিনের ব্যবহার খুবই নগন্য। -কিছু কিছু ক্ষেত্রে ড্রাগ্‌স বা ঔষধ কোথায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাবে: বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এর মধ্যে শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পায়না এবং অপচিকিৎসার স্বীকার হন।

(বিপিএ-২০০৯)  সিআরপি এর শাখাসমূহ: ঢাকা: সাভার, মিরপুর-১৪, নবাবগঞ্জ, সিলেট: মৌলভিবাজার, চট্টগ্রাম: কালুরঘাট।  এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারী বিভিন্ন হাসপাতালে (যেমন: স্কয়ার হসপিটাল, এপোলো হসপিটাল, ইউনাইটেড হসপিটাল ইত্যাদি), প্রাইভেট ক্লিনিক ও চেম্বারে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়।  তবে মানসম্পন্ন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সেবার জন্য সিআরপি অন্যতম। পূনশ্চ: ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা একটি বিজ্ঞানসম্মত ও সুপ্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা পদ্ধতি যা আর্ন্ত্মজাতিকভাবে সুপরিচিত। আমাদের দেশসহ বিভিন্ন দেশে ফিজিওথেরাপিষ্টগণ ফার্স্ট কন্ট্যাক প্রাকটিশনার হিসেবে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন।

তবে আমারদের দেশে এই চিকিৎসা সেবাটি বিভিন্ন মহলের অপপ্রচার (ব্যায়াম ও স্যাক) ও অপব্যবহার (কোয়ালিফাইড ফিজিওথেরাপিষ্ট ছাড়া অন্য কোন চিকিৎসক কর্র্তৃক ফিজিওথেরাপি পরামর্শ দেয়া) এর কারনে সাধারণ মানুষ সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে আশার ব্যপার হলো মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন, তাই তারা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও পরামর্শ নেয়ার জন্য সিআরপি এর কোয়ালিফাইড ফিজিওথেরাপিষ্ট এবং সিআরপিকেই বেছে নিচ্ছেন। ডাঃ মাহমুদুল হাসান আল ইমাম ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপিষ্ট, অর্থোপেডিক বিভাগ, সি. আর. পি. সাভার, ঢাকা। ই-মেইল: ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.