আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফিজিওথেরাপি

প্রবাসী

ফিজিওথেরাপী ফিজিও কথাটি এসেছে ফিজিক্যাল বা ভৌতিক থেকে আর থেরাপী কথাটার অর্থ হল চিকিৎসা, সে হিসেবে ফিজিওথেরাপী মানে হল ভৌতিক শক্তি বা পদার্থ প্রয়োগ করে রোগের চিকিৎসা। আমেরিকাতে আবার বিষয়টি ফিজিক্যাল থেরাপী হিসেবে বেশি পরিচিত। যারা এই চিকিৎসা পদ্ধতি দিয়ে চিকিৎসা করে থাকেন তারা হলেন ফিজিওথেরাপিস্ট বা ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট। চিকিৎসায় ভৌতিক পদার্থের প্রচলন চলে আসছে বহু বছর। ফিজিওথেরাপীর শুরু চিকিতসা বিজ্ঞানের শুরু থেকেই।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিপোক্রাটিস(Hippocrates)(খৃষ্ট পূর্বাব্দ ৪৬০ সাল) মালিশ ,ব্যায়াম, ঠান্ডা্,গরম ইত্যাদি দিয়ে চিকিৎসা করতেন। গ্রীস দেশে হিপোক্রাটিস এর সমসাময়িক হেক্টর( Hector) পানি দিয়ে চিকিৎসা পদ্ধতির প্রচলন করেন করেন যাকে বলা হত হাইড্রোথেরাপী এবং আজ ও তা আছে। ১৮৯৪ সালে বৃটেনে চার্টার্ড সোসাইটি অফ ফিজিওথেরাপী , ১৯১৩ সালে নিউজিল্যান্ডে এবং ১৯১৪ সালে আমেরিকাতে ফিজিওথেরাপী প্রোগ্রাম চালু হয়। ১৯২১ সালে আমেরিকান এসোসিয়েশান অফ ফিজিওথেরাপী চালু হয়। ঐ সময়কার সিস্টার কেনী( Sister Kenny) পোলিও রোগিদের চিকিৎসায় সবিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন।

নতুন নতুন যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলশ্রুতিতে ফিজিওথে্রাপী এবং এর পরিধি বাড়তে থাকে। আজ ফিজিওথেরাপীতে রয়েছে অনেক বিশেষায়িত শাখা। বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপী তে বি এস সি কোর্স চালু আছে এবং প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফিজিওথেরাপী ডিগ্রী লাভ করছেন। ফিজিওথেরাপিস্টরা পরিপূর্ন চিকিৎসক নন সহযোগী প্যরামেডিক্যাল মাত্র। যে সমস্ত চিকিৎসক ফিজিওথেরাপী প্রাক্টিস করতেন তাদেরকে বলা হত ফিজিক্যাল থেরাপী ফিজিশিয়ান এবং পরবর্তিতে ৩০ এর দশকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই শাখা ফিজিক্যাল মেডিসিন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং আরো পরে তা হয় ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেসান।

দুঃখের ব্যাপার হোলেও সত্যি আজ অনেক ফিজিওথেরাপিস্ট নিজেদের ডাক্তার পরিচয়ে প্রাকটিস করছেন। এটা সম্পূর্ন অনৈতিক এবং প্রতারনার শামিল। ফিজিক্যাল থেরাপীঃ- তাপঃ- এ গুলোর মধ্যে আছে শরীরের বাইরের অংশে তাপ দেওয়ার যন্ত্র বা উপায়ঃ-ইনফ্রা রেড রেডিয়েশান(Infra Red Radiation), ওয়াক্স বাথ(wax Bath), বরফ(Ice), গরম বা ঠান্ডার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্যাক(Hot and Cold packs),হাইড্রোথেরাপী(Hydrotherapy), বিভিন্ন ধরনের স্প্রে যেমন ইথাইল ক্লোরাইড স্প্রে(Ethyl chloride Spray)। শরীরের গভিরে তাপ দেওয়ার জন্যঃ- শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি (Short Wave Diathermy SWD), মাইক্রো ওয়েভ ডায়াথার্মি(Micro Wave Diathermy), এবং আল্ট্রা সাউন্ড থেরাপী(Ultrasound therapy) শব্দঃ- আল্ট্রা সাউন্ড থেরাপী( Ultrasound therapy) বিদুৎঃ- ইলেক্ট্রিক্যাল স্টিমুলেশান থেরাপী(Electrical Stimulation Therapy EST) বিভিন্ন ধরনের গ্যালভানিক বা ফ্যারাডিক কারেন্ট(Faradic Galvanic Current যা প্রধানতঃ কৃত্রিম ভাবে মাংশপেশীর শক্তি বাড়াতে, ব্যায়াম করাতে ব্যবহার করা হয়। ব্যাথা নিরাময়ের জন্য রয়েছেঃ-ট্রান্স কিউটেনিয়াস ইলেক্ট্রিক নার্ভ স্টিমুলেশান(Transcutaneous Electric Nerve Stimulation TENS) ইন্টারফারেন্সিয়াল ইলেক্ট্রোথেরাপী( Interferential Electrotherapy) ম্যানুয়াল থেরাপীঃ- কথাটি এসেছে হাত থেকে।

ফিজিওথেরাপিস্ট নিজ হাতে প্রয়োগ করে থাকেন বলে এই নাম। এর মধ্যে আছে মালিশ(Massage), ব্যায়াম(Exercises), ম্যানিপুলেশান(manipulation), কাইরোপ্রাক্টিক টেকনিক(Chiropractic Techniques) ইত্যাদি। অভিজ্ঞ ফিজিওথেরপিস্টের হাতে এ গুলো বিশেষ উপকারী। ম্যাসাজ বা মালিশঃ-মাংশপেশীর ব্যাথা বা বিভিন্ন স্থানের ব্যাথা যেমন ঘাড় বা কোমর ব্যাথা,ফাইব্রোমায়ালজিয়া ইত্যাদিতে মালিশ বিশেষ উপকারী। ম্যাসাজ বা মালিশ যন্ত্রের সাহায্যে অথবা ফিজিওথেরাপিস্ট নিজ হাতে ম্যাসাজ করে থাকেন।

উন্নত দেশে মালিশের উপর কোর্স রয়েছে যা থেরাপিউটিক ম্যাসাজ (Massage therapy)হিসেবে পরিচিত। ব্যায়াম এবং ট্রেনিং- বিভিন্ন ভাবে ব্যায়ামকে ভাগ করা হয়ে থাকে। রোগী যখন নিজে ব্যায়াম করেন তা হল একটিভ এক্সারসাইজ(Active exercises), যখন ফিজিওথেরাপিস্ট বা অন্যে করিয়ে দেন তা হল প্যাসিভ এক্সারসাইজ(Passive exercises) এবং যখন কিছুটা রোগি করেন এবং ফিজিওথেরাপিস্ট সাহায্য করেন তা হল এক্টিভ এসিস্টেড এক্সারসাইজ(Active Assisted)। জমে যাওয়া জয়েন্ট(Stiff Joint) বা গিঠের গতি ফিরিয়ে আনার ব্যায়াম হল মোবিলাইজিং এক্সারসাইজ(Mobilising Exercises), মাংশপেশীর শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম হল স্ট্রেংথেনিং এক্সারসাইজ(Strengthening Exercises), ভারসাম্য রক্ষা বা ফিরিয়ে আনার ব্যায়াম হল ব্যালান্সিংএক্সারসাইজ(Balancing Exercises),যখন গতিসীমার মধ্যে ব্যায়াম করানো হয় তা হল রেনজ় অফ মোসান এক্সারসাইজ (Range Of Motion ROM)ইত্যাদি। ব্যায়াম এবং ট্রেনিং মাংশপেশীর দুর্বলতা বা প্যারালিসিসে এবং ব্যাথা নিরাময়ে সবিশেষ উপকারী।

স্নায়ু রোগ যেমন স্ট্রোক(Stroke), নার্ভ ইঞ্জুরি(Nerve Injury), কোমর ব্যাথা, ঘাড় ব্যাথা, ইত্যাদিতে ব্যায়াম যথেস্ট সহায়ক। রোগীর নিজে করা ব্যায়াম অন্যে করিয়ে দেওয়া ব্যায়ামের চেয়ে অনেক বেশী । ব্যায়ামের বিভিন্ন দিক যেমন কি ব্যায়াম, কতক্ষন ব্যায়াম, কত জোরে ব্যায়াম,কত দিন ব্যায়াম, ইত্যাদি রোগ ও চিকিৎসার উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে। এ ব্যাপারে ফিজিওথেরাপিস্ট বা ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সাহায্য করতে পারেন। ব্রেস,(Brace) স্পিলিন্ট(Splint) সাপোর্ট(Support) এবং এপ্ল্যা্যেন্সে(Appliances)- এ গুলোর মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের কলার(Collar), করসেট(Corset), জয়েন্ট সাপোর্ট(Joint Support), অর্থোসিস(Orthosis) এবং প্রসথেসিস(Prosthesis)।

যে সমস্ত রোগে ফিজিওথেরাপী উপকারিঃ- স্নায়ুরোগঃ- স্ট্রোক(Stroke), স্পাইনাল কর্ড এ আঘাত(Spinal chord Injury), মস্তিষ্কে আঘাত(Traumatic Brain Injury TBI) মাল্টিপল স্কেলেরোসিস(Multiple Sclerosis), পারকিন্সন’স ডিজিজ(Perkinson’s Disease),ইত্যাদি অর্থোপেডিক রোগঃ-অর্থোপেডিক অপারেশানের পর(Post Operative), ফ্রাকচার(Fracture), খেলাধূলার আঘাত(Sports Injury), আর্থ্রাইটিস(Arthritis), স্প্রেন(Sprain), স্ট্রেন(Strain), কোমর ব্যাথা(Low Back Pain) ঘাড় ব্যাথা(neck Pain ,মেরুদন্ডের রোগ(Spinal Disorders), এবং হাত পা হারানোর পর(Amputation)। হৃদরোগ এবং স্বাশতন্ত্রের রোগঃ- হার্ট এটাক বা তার অপারেশানের পর(Myo Cardial Infarction),অবস্ট্রাকটিভ পালমনারী ডিজিজ(Obstructive Pulmonary Diseases)। বৃদ্ধকালের রোগঃ-ভারসাম্যহীনতা(Imbalance), অস্টিওপোরোসিস(Osteoporosis), গিঠ প্রতিস্থাপন(Joint Replacement) প্রস্রাব বা পায়খানা ধরে রাখার অসুবিধা(Incontinence), ইত্যাদি শিশূ কালের রোগ;- সেরেব্রাল পালসি(Cerebral Palsy),পোলিও(Polio), জন্মগত রোগ(Congenital Diseases) যেমন স্পাইনা বাইফিডা(Spina Bifida) ইত্যাnদি উপসঙ্গহারঃ- ফিজিওথেরাপী অনেক রোগে উপকারী হলেও ধন্বন্তরী নয়। ফিজিওথেরাপীর মুল উদ্দেশ্য ও তা নয়। উপরের রোগ গূলোর অধিকাংশ নিরাময় যোগ্য নয়।

ফিজিওথেরাপীতে রোগের নিরাময় নেই, আছে পুনর্বাসন। রোগির কর্মক্ষমতা যথা সম্ভব স্বাভাবিকে ফিরিয়ে এনে তাকে স্বভাবিক জীবন যাপনে সহায়তা করাই হল এর প্রধান লক্ষ্য। সুতরাং কার ও দাবী যদি হয় দু সপ্তাহ থেরাপী দিন ভাল হয়ে যাবেন, এটা অত্যন্ত অযৌক্তিক এবং অনেক থেরাপীর বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও যথেষ্ট সবল নয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.