আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লুটের দামী মাল নেয় সাঈদী-দশম সাক্ষী

মানিক পসারির বাড়ীর লুট ও অগ্নিসংযোগ করতে দেখেছি। সেখানে ইব্রাহিম কুট্টি ও মফিজকে রশি দিয়ে বাধতে দেখেছি। লুটের দামী মাল সাঈদী নিয়েছে। রাজাকার ও পাঞ্জাবীরা ইব্রাহীম কুট্টিকে ঘাটে নিয়ে গিয়ে গুলি করে লাশ পানিতে ফেলে দেয়। রাজাকাররা আমার বাড়ি সহ অন্য হিন্দুদের বাড়িঘরেও আগুন লাগিয়ে দেয়।

৮ জানুয়ারি রোববার সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে আসা দশম সাক্ষী বাসুদেব মিস্ত্রি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ কথা বলেন। সকাল ১০ টা বেজে ৪০ মিনিটে ট্রাইব্যুনাল বসলে সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে আসেন সাক্ষী বাসুদেব মিস্ত্রি। সাক্ষীর সাথে আদালতের পরিচয় করিয়ে দেন রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী মোখলেসুর রহমান বাদল। সাক্ষী তার বর্তমান বয়স ৫৫ হবে উল্লেখ করেন। যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি তার পিতার সাথে কাজ করতেন।

পিতা যেখানে যেতেন সেখানে তিনিও যেতেন। এভাবে ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় মানিক পসারির বাড়িতে কাজ করতেন বাসুদেব ও তার বাবা। সাক্ষীর পরিচয় আসামী পক্ষের আইনজীবীদের সময়মত জানানো হয়নি। এ কারণে আসামী পক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষীর সাক্ষ্যের ওপর জেরা করতে আপত্তি প্রকাশ করে। অসুস্থ শরীর নিয়ে সাক্ষী বাসুদেব মিস্ত্রি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে আসেন।

সাক্ষী নিজের নাম পরিচয় দেন। সাক্ষীর বক্তব্য হতে জানা যায় তিনি পিরোজপুর জেলার চিথলিয়া গ্রামের বাসিন্দা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ১২-১৩ বছর ছিলো। ১৯৭১ সালে পশ্চিমারা (পাক বাহিনী) পাড়ের হাট এলাকায় ক্যাম্প করে। ক্যাম্প করার পর পাকবাহিনী সেখানে টহল দিতো।

তারপর সেখানে শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী গঠন হয়। দেলু দেলোয়ার শিকদার , সেকান্দার শিকদার, দানেশ আলী মোল্লা, মোসেলম মাওলানা, হাকিম কারী,মহসিন, রুহুল আমিন এরা সকলে মিলে রাজাকার বাহিনী গঠন করে। মে মাসের ৮ তারিখে রাজাকাররা মানিক পসারির বাড়িতে যায়। রাজাকাররা মানিক পসারির বাড়িতে ইব্রাহীম কুট্টি ও মফিজকেপায়। তাদের পাওয়া মাত্র বাড়ির মধ্যেই মফিজ ও ইব্রাহীম কুট্টিকে রশি দিয়ে বেধে ফেলে।

তাদের বেধে ফেলার পর দেলু শিকদার, মোসলেম মওলানা, মহসিন, রহুলআমিন মানিক পসারির ঘরে লুট পাট চালায়। লুট পাট শেষ হলে লুটের দামী মাল দেলু শিকদার রেখে বাকী সব অন্য সহযোগী রাজাকারদের মাঝে বণ্টন করা হয়। পরে মানিক পসারির বাড়ী ঘরে আগুন জ্বালিয়ে পোড়ানো হয়। এরপর ওই রাজাকাররা ইব্রাহীম কুট্টির রশি খুলে তাকে ঘাটে নিয়ে গুলি করে লাশ পানিতে ফেলে দেয়। অন্যদিকে মফিজকে ওরফে মফিজউদ্দিন পসারিকে রাজাকারেরা ক্যাম্পে নিয়ে যায়।

এ সমস্ত ঘটনা সাক্ষী বাসুদেব মিস্ত্রি লুকিয়ে ঝোপের আড়াল থেকে দেখেছেন বলে তার জবানবন্দীতে বলেন। পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে সাক্ষী আরো বলেন, রাজাকাররা তার বাড়ি সহ অন্য হিন্দুদের ঘর বাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামীর পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম জেরা শুরু করেন। জেরায় তিনি রাজাকার রুহুল আমীন সম্পর্কে তথ্য নেন। রাজাকার রুহুল আমীন বর্তমানে জীবিত আছেন।

আইন পেশায় জড়িত। পিরোজপুরের গাজীপুর গ্রামে তার বাসা বলে সাক্ষী বাসুদেব বলেন। ১৯৭১ সালে রুহুল আমিন আল বদরে ছিলো বলে তিনি জানান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বে এই ব্যক্তি কি করতেন তা তিনি জানেন না বলে জানান। পরে জেরায় মানিক পসারি ঘর আগুন দেওয়া নিয়ে সাক্ষী বাসুদেব কে জিজ্ঞাসা করা হয়।

জেরার উত্তরে সাক্ষী বাসুদেব বলেন, মানিক পসারি বাড়িতে রাজাকাররা পায়ে হেটে আসে। সেদিন ছিলো ৮ মে। পাঞ্জাবী ও রাজাকারদের মানিক পসারির বাড়ির দিকে আসতে দেখে মানিক পসারির ঘরের লোকজন সবাই সেদিন সকাল ৮-টা কি ৯ টা বাজে পালিয়ে যান। বাড়িতে থাকেন শুধু মানিক পসারির কাজের লোক ইব্রাহীম কুট্টি ও মফিজ। এদের মধ্যে ইব্রাহীম কুট্টিকে রাজাকাররা গুলি করে মেরে ফেলে।

দুপুরের দিকে মানিক পসারির বাড়িটি আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়। খবরের সূত্র এই লিংকে  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.