আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খোলা চিঠি দিলাম তোমায় কমরেড কিম

কমরেড কিম জং ইল তোমাকে লাল সালাম। তোমার মৃত্যু যেমন তোমার দেশের মানুষকে শোকাহত করেছে তেমনি আমাদেরও অনেককে করেছে। তোমার সাম্রাজ্জবাদ-বিরধী অনমনীয়তা আমাদের অনুপ্রেরনা। তাই আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি। যদিও তোমার মৃত্যুতে বিশ্বের অনেক দেশের মত আমাদের ছোট্র বাংলাদেশেও তোমার অনেক রহস্যের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে ।

তোমার জন্ম-রহস্য থেকে শুরু করে তোমার সম্পদ অর্জন মানে আত্মসাতের রহস্য। জানি তুমি কিছু মনে করনি। তোমার জীবদ্দশায় নিজ দেশে প্রিয় আখ্যায়িত হলেও বহির্বিশ্বে তুমি বদ্মেজাজি-খামখেয়ালি বলে ঘৃণিত। স্তালিন যেমন পুজিপতিদের প্রশংসা ভয় পেতেন আমার বিশ্বাস করতে ভাল লাগে যে তুমিও তাই পাও। তাই বলে, তোমার সমস্ত কর্মকাণ্ডকে বিনা বাক্যে আমরা মেনে নিই তা ভাবলে ভুল করবে।

যারা আন্তরজাতিকতাবাদে বিশ্বাস করে তারা তোমাদের অর্জিত অভিজ্ঞতার ভাগীদার হতে চায়। কিন্তু বঞ্চিত হয়। তোমাদের বিচ্ছিন্নতায় তারা উতকণ্ঠিত । একটি বিশেষ শাষণ কাঠামোর সাথে যুক্ত থাকার কারনে তার অন্তর্নিহিত জ্যান্ত সমস্যা বা সম্ভবনা সম্পরকে হয়ত তোমরাই ভাল বুঝতে পারবে। কিন্তু প্রায়োগিগ দিকের বাইরে তাত্তিক একটি দিকও আছে।

এবং সেটাই মূল। সেখানে তোমরা ভুলও করতে পার। যারা সমাজতান্ত্রিক আদর্শ লালন করে গোটা বিশ্বের মেহনতি মানুষকে সকল প্রকার শোষণ-নিপিড়ণ থেকে মুক্ত করার স্বপ্ন নিয়ে আপষহীন লড়াইয়ে অবতীর্ণ ,তারা আন্তরিকভাবে তোমাদের সহযোগী হতে পারে। শুধু চাই প্রবেশাধীকার। তোমরা সেখানে ব্যর্থ হয়েছ।

বঞ্চিত হয়েছ। বঞ্চিত করেছ। তোমাকে একটা উদাহরণ দিই, কমরেড। সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া যখন সাম্যবাদে পৌছার কাছাকাছি বলে তৃপ্ত বোধ করত ঠিক সে সময় তারা ব্যক্তিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নামে স্তালিনকে গুরুবাদী প্রবণতার দোষে দুষ্ট করে প্রকারন্তরে তার সকল অর্জনকেই মুছে ফেলা শুরু করলো। আম্লাতন্ত্রের সাথেই স্তালিন উচ্চারিত হল।

মারক্সবাদে যে অথরিটির ধারনা সেটাকে লঙ্ঘন করা শুরু হল। তৎকালীন রাশিয়ার নেতৃবর্গ উপর্যুক্ত সমস্যা সমাধাঙ্কল্পে যে বিপদজনক সমাধানের পথে গেল সেটাকে ঠিক মনে করেননি ভারতের এস ইউ সি আই পার্টির সাধারণ সম্পাদক শিবদাস ঘোষ। তিনি একটি খোলা চিঠি লেখেন। স্তালিনবিরোধি পদক্ষেপ প্রসঙ্গে শিরনাম-যুক্ত খোলা চিঠিতে উক্ত সমস্যাসমূহের কারণ ও সমাধান তুলে ধরেণ। যা আজকে অনেকের কাছে গৃহীত।

কিন্তু সেদিন তারা একটি অখ্যাত পার্টির অখ্যাত ব্যাক্তির মতামত মনে করে মূল্য দিতে পারেনি। চরম মূল্য দিতে হয়েছে গোটা সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে। বিশ্বের মানচিত্রে কোরিয়া ভাস্বর হয়ে থাক। এমনটা যারা চায়-আপনাদের নেতা নির্বাচন পদ্ধতি তাদেরকে অস্বস্তিতে ফেলে। আপনার বাবার পরে আপনি সে দেশের নেতা হয়েছেন।

হতেই পারেন। আপনার বাবার মৃত্যুর অনেক আগে থেকেই পার্টির সাথে যুক্ত থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছিলেন। তার- ই ধারাবাহিকতায় হয়ত যোগ্যতার মাপকাঠিতেই সেখানে এসেছেন। কিন্তু আপনার মৃত্যুর পর যখন আপনার ছেলে সে জায়গায় আসীন হলেন তখন আমাদের চিন্তার কোন কানাগলি দিয়ে সন্দেহের একটা বাতাস বয়ে গেল। তবে, আপনারা কি গনতান্ত্রিক-কেন্দ্রিকতা থেকে সরে গিয়ে কেন্দ্রিকতা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছেন? আপনারা জানেন, বিংশ শতাব্দির শুরুতে লেনিন,রোজা লুক্সেম্বার্গ ,গ্রামসি প্রমুখ একমত হয়েছিলেন যে সমাজতান্ত্রিক গনতন্ত্র বুর্জোয়া গনতন্ত্রের চেয়েও উন্নত হবে।

মাক্সবাদি-লেনিনবাদিরা এগুলো অস্বীকার করতে পারে না। কি অদ্ভুত! তুমি থেকে কখন আপনি হয়ে গেলেন। মনে কিছু করবেন না। দূরত্ব যখন তৈরি হয়েই গেল, আলোচনাটা সেভাবেই এগিয়ে নেয়া যাক। গনতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতাহীন ধরে নিয়ে মাঝে মাঝে ভাবি আপনার দেশের মানুষগুলি বোধহয় গুমোট,হাসে না ,কাঁদে না।

নাহ্ !তারা আমাদের কল্পনাকে হার মানায়। আশ্বস্ত হই। অবশ্য সেটা বুঝতে হয় আপনাদেরই শুভাকাঙ্খি কোন চিত্র পরিচালকের সিনেমা দেখে। সিনেমার নাম DPRK:A DAY IN THE LIFE(2006)। মারক্সবাদি মাত্রই বুঝা উচিত হুবহু নকল করে বিপ্লব কিংবা বিনির্মাণ কোনটাই সম্ভব না।

তাই আপনার বাবা জুসে(juche) নামক একটি ধারনার জন্ম দিতে পেরেছেন। যার অর্থ আত্ম নিরভরশীলতা। এটি ৩ টি মৌলিক নীতির উপর প্রতিস্থিত- ১. রাজনৈতিক স্বাধীনতা (Chaju) 2.অর্থনৈতিক আত্ম নিয়ন্ত্রন(Charip) 3. সামাজিক আত্ম নিরভরশীলতা(Chaw) আপনি নিজে ১৯৯৬ সালে সনগুন(Songun) মানে সামরিক অগ্রাধিকার নীতি সংযোজন করেন। কিন্তু বিপাকে পরে যাই,ভীত হই যখন শুনি(নিজে দেখিনি) মারক্সবাদ-লেনিনবাদ শব্দের পরিবর্তে জুসে শব্দটাই ব্যবহার করতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। শব্দ ব্যবহারে আমাদের খুব একটা মাথা ব্যথা না থাকলেও মাঝে মাঝে এর পরিনাম নিয়ে ভাবতে গেলে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।

ভাবি-আপনাদের অজান্তেই কি মানব সভ্যতার মুক্তির দিশারি মতবাদ ,মারক্সবাদ-লেনিনবাদকে অস্বিকার করে বসবেন? আমাদের আশংকার ডালপালা গজাতে থাকে। যখন দেখি- ১.২০০২ সালে সেপ্টেম্বরে আপনারা সিনুইজুতে international financial zone গঠন করেছিলেন। মনে আছে? এই মুক্ত বাজারকে কোরিয়ার হংকং বলা হত। ২.একই বছরের জুলাই মাসে বিদ্যুৎ এবং খাদ্যে রেশনিং তুলে দেয়া হয় এবং শ্রমিকদের কাজে উতসাহিত করার জন্য রাস্ত্র-নিয়ন্ত্রিত মূল্যকে বাজারের কাছে ছেরে দেয়া হয়। ব্যক্তি উদ্যোগকে আরো ছার দেয়া হয় এবং কৃষকদের মুনাফায় উৎসাহিত করা হয়।

৩.২০০২ সালের শেষের দিকে বাজারকে উন্মুক্ত করা হয়। তথ্যসূত্রঃhttp://www.marxist.com/where-is-north-korea-going101006.htm ফলাফল, আপনার দেশের মানুষ দীর্ঘকাল পরে দর কষাকষির আনন্দ পাচ্ছেন। চৈনিক বনিকেরা পিলপিল করে আপনাদের বাজারে ধুকছে। উপজাত হিসাবে আরেকটা সম্ভবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। একটি প্রতিবেদনের দিকে চোখ রাখা যাক- China’s non-financial direct investment in North Korea was about US$14.9 million in 2005 and $14.1 million in 2004, jumping from $ 1.1 million in 2003, according to statistics from the Chinese Commerce Ministry. Bilateral trade reached almost $1.4 billion in 2004, and further jumped to about $1.6 billion in 2005, while the first five months of 2006 hit $61 million.”Asia Times,August 8,2006 কমরেড কিম,আস।

আমরা একটু দূরত্ব কমিয়ে আনি। খোলামেলা আলোচনা করি। আমরা বিশ্বাস করি তোমরা আদর্শ থেকে এখনও বিচ্যুত হওনি। তবে ,কিছু মৌলিক ঘাটতি তৈরি হয়ে গেছে। তৈরি হও ।

শুদ্ধ করে নাও। পুজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের ভিত নড়ে গেছে। আগামিদিনের ভবিষ্যত-সমাজতান্ত্রিক ভবিষ্যত। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।