সেই কখন থেকে পা ডুবিয়ে বসে আছো ! ঠাণ্ডা লেগে যাবে তো !
যাক , তোর কি ?
আমার কি মানে ? বলেই গম্ভীর হয়ে গেল অর্ণব । চোখের পানি এসে যায় অর্ণবের । ভাগ্যিস আজ চশমা পরেছে ! এই আড়ালটুকুই ওকে রক্ষা করে । এই এক অবাক কাণ্ড হয় সবসময় ! অর্ণব এমনিতে অনেক শক্ত । কিন্তু অদিতার কাছে আসলেই কেমন ছেলেমানুষ হয়ে যায় সে ।
এই নিয়ে কম লজ্জা দেয়নি অদিতা । হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে । বলে , খোকাবাবু ! বলেই আবার সেই ভুবন ভোলানো হাসি । এত হাসতে পারে মেয়েটি ! কথায় কথায় এত কেউ হাসতে পারে ওকে না দেখলে অর্ণব বিশ্বাস করতো না । অর্ণব অনেক সময় রাগ হয়েছে ।
তখন আরও বেশি হাসে অদিতা । বলে রাগলে নাকি অর্ণব কে মামদো ভূতের মত লাগে ।
চলো তো , সন্ধ্যা হয়ে এলো । বাসায় যাবে না ? তাড়া দেয় অর্ণব ।
অদিতা নির্বিকার ।
এক মনে পা দুলিয়ে যাচ্ছে পানির দিকে তাকিয়ে । নদীর এই অংশটা খুব প্রিয় ওদের দুজনেরই । সুযোগ পেলেই এসে বসে থাকে দুজন । অদিতার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হল একটা নৌকা কিনে তার ভেতর সংসার পাতবে সে । এত পাগলী কেন মেয়েটা ! হেসে ফেলে অর্ণব ।
আরে , আরে । মামদো দেখি হাসে ! বলেই কি হাসি অদিতার ! অর্ণব মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ভাবে সব মেয়ের চোখ কি এমন হাসে ? ও কোনদিন জানতে দেবে না এই মুগ্ধতা । অনেক বার চেষ্টা করে এখন হাল ছেড়ে দিয়েছে । ভীষণ লজ্জা করে ওর । তিন বছর হতে চলল এখনো সহজ হতে পারেনি অর্ণব ।
খুব ভালো বন্ধু ওরা । কিন্তু এর মাঝেও যে একটা কিছু বেশি হয়ে গেছে তা অর্ণব ভালই টের পাচ্ছে । সারাক্ষণ দেখতে ইচ্ছে করে , ছুঁয়ে থাকতে ইচ্ছে করে । যাহ ! ভেবেই লজ্জা পেল । অদিতা জানলে আর রক্ষা নেই ।
সবাইকে বলে দেবে ।
অর্ণবের খুব ভালো করেই মনে আছে সেই দিনটির কথা । ২০ মে , রবিবার , । ঠিক ১০.৪৬ বাজে । ভার্সিটির প্রথম দিন ।
ডিপার্টমেন্ট এর সামনে কি নিয়ে কয়েকটা মেয়ে খুব হাসছিল । ওখানেই প্রথম দেখেছিল অদিতা কে । কি যেন বলছিলো আর হাসছিলো । অর্ণব মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েছিল । সেই মুগ্ধতা কাটেনি বরং বেড়েই চলেছে দিন দিন ।
কেউ জানে না । অনেকে দুষ্টুমি করে জিজ্ঞেস করেছে । কিন্তু অর্ণবের গম্ভীর মুখ দেখে আর আগ্রহ দেখায়নি কেউ । কানাঘুষা যে হয় না তা নয় , ভাগ্যিস অদিতা কিছু খেয়াল করেনি ।
অর্ণব বরাবরই শান্ত ।
তুখোড় ছাত্র । এই নিয়ে কম হাসেনি অদিতা । বলে , এত পড়ে হবেটা কি ?
একমাত্র গাধারাই নাকি সারাদিন পড়ে । প্রথম প্রথম অনেক লজ্জা পেত অর্ণব । মেয়েটা কি ইচ্ছে করেই অপমান করছে ? আস্তে আস্তে বুঝতে পারলো ও এমনই ।
যা মনে আসে বলে ফেলে । কারো গোপন কথাই পেটে রাখতে পারে না । বলে দিয়ে লজ্জায় জিভ কামড়ে বলবে , ইশ ! তারপর হি হি হি করে হাসবে । এতো ভালো লাগে অর্ণবের !
বন্ধুরা রাগ হয় । বলে ,আর কোনদিন তোকে কিছু বলবো না ।
অর্ণব জানে তারপরও ওকে সবাই অনেক ভালোবাসে । অমন মেয়েকে ভালো না বেসে থাকা যায় না ।
সবাই বলে , তোর কোন দুঃখ নেই ?
ও মাথা দুলিয়ে হাসে । বলে , আমার কাছে একটা যাদুর কাঠি আছে । সেইটা ছোঁয়ালে সব কষ্ট দূর হয়ে যায় ।
আস্ত পাগলী ! ওকে দেখে মাঝে মধ্যে খুব হিংসা হয় অর্ণবের । একটা মানুষ কি করে এতো সুখে থাকে ! থাক ও অনেক সুখে । আর একটা গোপন ইচ্ছে আছে অর্ণবের । খুব বেশি গোপন । অদিতার ওই সুখের ঘরে একটা ছোট জায়গা তার চাই ।
হোক সে নদীর ওই নৌকায় বসবাস । তাতেও কোন আপত্তি নেই । একটা দীর্ঘশ্বাস লুকোয় অর্ণব । ভালোবাসার কথা কবে বলতে পারবে জানে না সে ।
হুট করে উঠে দাঁড়ায় অদিতা , চল ।
অর্ণব কথা না বাড়িয়ে এগিয়ে যায় , রিকশা ডাকতে হবে । এখান থেকে অদিতাদের বাড়ি বেশ দূর । কিন্তু ও রিকশায় যেতে চায় । অদিতার এই ইচ্ছে পূরণ করতে অর্ণবের ভালই লাগে । সারাটা পথ অদিতা এক নাগাড়ে কথা বলে যায় ।
আবোল-তাবোল । নিজেই বলে নিজেই হাসে ।
কিছুক্ষণ পর পর বলে , এই ভূত , এমন মুখ কুঁচকে আছিস কেন ? হাসতে পারিস না ?
রিকশাওয়ালা ওর হাসির আওয়াজে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় । সেও হাসে । এই মুহূর্তগুলো অর্ণব খুব উপভোগ করে ।
শায়লা আর শাহেদের একমাত্র মেয়ে অদিতা । কোন ভাই বোন নেই ,এই নিয়ে অদিতার মাঝে মধ্যে খারাপ লাগে ,তবে একা লাগে না । বাবা মা দুজনেই ওর ভালো বন্ধু । বাবা বাসায় না থাকলে মায়ের সাথে টুকটুক করে অনেক কথা বলে অদিতা । বাবা থাকলে তো আরও মজা হয় ।
তিন জন মিলে কঠিন আড্ডা ! মা কাজে ব্যস্ত থাকলে অদিতা অনেক জোরে গান বাজিয়ে বারান্দার দোলনাটায় বসে থাকে ।
গানের আওয়াজে শায়লা কিচেন থেকে ডাকতে থাকে , অদিতা , এই অদিতা । একটু আওয়াজ টা কমিয়ে দে । মাইক বাজাচ্ছিস কেন ?
আরে মা !আমি একা একা গান শুনলে সবাই ভাববে তোমার মেয়েটা এতো হিন্সুট কেন ? তাই সবাইকে নিয়েই শুনি । হি হি হি ।
শায়লা মুগ্ধ হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে । কি সুন্দর হচ্ছে মেয়েটা ! এই সেই দিন মেয়েটা ঝুঁটি দুলিয়ে ছোট ছোট পা ফেলে সারা বাড়ি হেঁটে বেড়াতো ! আর সারাক্ষণ এক মনে পুট পুট করে কি সব বলতো !
জানতে চাইলে বলতো , মা আমি গল্প করি ।
কার সাথে গল্প করিস রে মা ?
মেয়ের গম্ভীর মুখ করে বলতো , পরীর সাথে ।
চোখে পানি এসে যায় শায়লার । অন্য দিকে চোখ ফিরিয়ে নেয় ।
বাবা মায়ের নজর নাকি বেশি লাগে ।
কাঁধে আলতো স্পর্শ পেয়ে শায়লা ঘুরে তাকায় । শাহেদ । দরজা খোলা ছিল নাকি ? অনেকক্ষণ দুজন কোন কথা বলে না । মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেয়ের দিকে ।
অদিতার এদিকে কোন খেয়াল নেই । নিজের মনে গানের সুরে চোখ বন্ধ করে মাথা দোলাচ্ছে ।
একটু বাদে শায়লা নিজের কাজে যায় । শাহেদ মেয়ের কাছে এসে দাঁড়ায় ।
কি রে বুড়ি , কি করিস একা ?
বাবা ! চেঁচিয়ে ওঠে অদিতা ।
কখন এলে ? কলিং বেল এর আওয়াজ তো পেলাম না । এই বাবা , আমার কয়েকটা গানের সিডি লাগবে । এনে দেবে ?
আচ্ছা আচ্ছা । লিখে দিস নামগুলো । কাল নিয়ে আসবো ।
বাবা , তুমি চেঞ্জ করে এসো তো । আমি কফি রেডি করি ।
শাহেদ হাসে । আচ্ছা আম্মাজান , যাচ্ছি ।
এই বাবাই , আমার চকলেট কই ?
শাহেদ হাসতে হাসতে বলে , কিসের চকলেট ?
বাবাটা , প্লিজ দাও না ।
দেখি তোমার পকেট দেখি ?
আরে ভুলে গেছি তো ।
ইশ ! বললেই হলো । আমি জানি তুমি এনেছো ।
শাহেদ হাসিমুখে পকেট থেকে চকলেট বের করে । তুই বড় হবি না ? এখনো বেলুন আর চকলেট লাগবেই ?
ধুর বাবা , কি বলো না বলো ! বড় হতে যাবো কোন দুঃখে ? আমি সারাজীবন এমন ছোটই থাকবো ।
বুড়ো বয়সে নাতিপুতির চকলেট চুরি করে খাবো । ওদের হাত থেকে বেলুন নিয়ে আকাশে উড়িয়ে দেবো । হিহিহি ।
যাও তো । সময় নষ্ট করো না ।
আমি কফি রেডি করি ।
শাহেদের সব কিছু অদিতার ইচ্ছেতেই হয় । দিনে কয় কাপ কফি খাবে , কি ড্রেস পরে অফিস যাবে , রাতের ওষুধ সব মেয়েই দেখাশোনা করে ।
শাহেদ হাসতে হাসতে শায়লা কে বলে , তুমি এখন রাগ করে বাপের বাড়ি যেতে পারো । আমার মা আছে , কিচ্ছু চিন্তা নেই ।
শায়লা কপট রাগ দেখায় । বলি , মেয়েতো রাঁধতে জানে না । বাপ ও গুণের ঢেঁকি । খাবে কি ?
ফুচকা খাবো , গ্রিল , আর চটপটি । হিহিহিহি ।
অদিতা হাসতে থাকে ।
হ্যাঁ হ্যাঁ । ঠিক বলেছিস বুড়ি । তুমি অযথা ভেবো না তো । যাও যাও ব্যাগ গুছিয়ে নাও , তোমাকে দিয়ে আসি ।
বাবা মায়ের এই খুনসুটি দেখে অদিতা হেসে গড়ায় ।
ছোট্ট অদিতা যেদিন প্রথম বাবা ডাকলো সেদিন শাহেদ শায়লাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছিলো । শায়লাও কাঁদছিলো । কি যে এক আনন্দ এনে দিয়েছিলো মেয়েটা ! শায়লা আরও একটা বাচ্চা চেয়েছিল । শাহেদ রাজি হয়নি ।
বলে তাতে নাকি মেয়ের আদর কমে যাবে ।
বাবাকে রাতের ওষুধ খাইয়ে মায়ের কাছে আসে অদিতা ।
হেল্প লাগবে মা ?
এই বক্স দুইটা ফ্রিজে রেখে দে তো । তুই একটু তাড়াতাড়ি ঘুমোতে পারিস না ? এতো রাত জাগিস কেন ? আয়নায় দেখিস তো কেমন কালি পড়েছে চোখের নিচে ! দেখতে খারাপ লাগছে ।
কি যে বলো মা ! বন্ধুরা বলে এই জন্যই আমায় নাকি অনেক সুন্দর লাগে ।
একেবারে শাঁকচুন্নির মতো । হিহিহি ।
কোন বন্ধু রে ? আমার এতো সুন্দর মেয়েটাকে শাঁকচুন্নি বলে !শায়লা হেসে ফেলে ।
অদিতার বন্ধুদের ও ভীষণ পছন্দ করে । খুব হাসিখুশি ছেলেমেয়েগুলো ।
মাঝে মাঝে হৈ হৈ করতে করতে সব আসে । মনে হয় এক ঝাঁক চড়ুই । সারাক্ষণ কিচ কিচ ! চাঁদের হাট বসে যায় শায়লার ঘরে ।
একটু পর পর ডাকতে থাকে । মা চা দাও , কফিতে চিনি কম দিয়েছো কেন ? বাবাই চিনি কিনে নাই ।
অদিতার মতো ওরাও মা বাবা ডাকে । এতো ভালো লাগে শায়লার !
মা , সেই আচার কি শেষ ? আহা ! শাঁকচুন্নিটা সব শেষ করে ফেলেছে ! এই মা , রান্না ঘরে কি করো ? এসো আড্ডা দেই ।
শায়লা খুব ভালো লাগা নিয়ে ওদের বায়না মেটায়। অর্ণব বলে একটা ছেলে আসে । খুব শান্ত একটা ছেলে ।
কি গম্ভীর মুখ ! শায়লা খেয়াল করেছে অদিতার দিকে তাকালেই অর্ণব কেমন হয়ে যায় ! শায়লা বুঝতে পারে এই ছেলেটা অদিতাকে পছদ করে । বন্ধুর চেয়ে একটু বাড়তি পছন্দ । অদিতা কি করে ? ঠিক বোঝে না শায়লা । এক সময় মেয়েকে জিজ্ঞেস করতে হবে ।
বাবা মা শুয়ে পড়লে অদিতা বারান্দায় এসে দাঁড়ায় ।
ওর একটা নাইট কুইন গাছ আছে । বছরে নাকি একবার ফুল ফোটে । কিন্তু ওর গাছটাতে কেন যে ফুটছে না । গাছটার পাশে বসে অদিতা অনেকক্ষণ কাঁদে । এটা ওর রুটিন ।
প্রতিরাতে বসে কিছুক্ষণ কাঁদবে বারান্দায় বসে । তারপর সহজ ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়াবে যেন কিছুই হয়নি । আয়নায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নিজেকে দেখবে । আয়নার নিজেকে দেখে জোরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অদিতা হাসে । আয়নার মেয়েটা এতো সুন্দর কেন ! জোরে হেসে ওঠে অদিতা ।
হাসির দমকে কেঁপে ওঠে সে । অদ্ভুত ভাবে হাসতে থাকে অদিতা । মোড়ের পাগলিটা কি এমন হাসে ?
অদিতার প্রবলেমটা ও অল্প বয়সেই বুঝতে পেরেছিলো । বিদেশের অনেক ডাক্তার দেখেছে ওকে । সবাই এক কথাই বলেছে , কিচ্ছু নাকি করার নেই ।
আকাশের দিকে তাকিয়ে অদিতা প্রশ্ন করেছিলো , আমি কেন ? কি অন্যায় আমার ?
ওই একবারই । আর কোনোদিন ও কোন প্রশ্ন করেনি । কাউকে না । বাবা - মা কেও না । কি হবে জিজ্ঞেস করে ? ও জানে , মা-বাবা সারাক্ষণ সুখে থাকার অভিনয় করে যাচ্ছে যেন এই সংসারে কোন দুঃখ নেই ।
অদিতাও কি অভিনয় করে না ? সবাই কেমন নিজের সাথেই অভিনয় করছে ! ওর নিজের জন্য যতটা না কষ্ট তারচেয়েও মা বাবার জন্য বেশি কষ্ট পায় অদিতা । ওরা এক স্বপ্নহীন জগতে বাস করে । প্রতিদিনই গভীর রাতে শায়লা আর শাহেদ চুপ করে অদিতার ঘরে আসে ,মেয়ের দিকে গভীর মমতা নিয়ে তাকিয়ে থাকে আর নিঃশব্দে কাঁদে । ঘুমের ভান করা অদিতা অন্ধকারেও সব বুঝতে পারে । সে নিজেও তখন কাঁদতে থাকে খুব সাবধানে যাতে বাবা মা কিছু না বোঝে ।
অদিতার ক্ষমতা থাকলে ও বাবা মায়ের সব কষ্ট দূর করে দিতো । কিচ্ছু পারে না । মানুষের এতো সীমাবদ্ধতা ! বোকা বোকা লাগে !
অর্ণব ! প্রিয় নাম ! এই নামটাই বেশি দুর্বল করে দেয় অদিতাকে । অর্ণবের কথা ভাবলে খুব অসহায় হয়ে যায় অদিতা । অর্ণব ওকে ভালোবাসে এটা অদিতা খুব বোঝে ।
কিন্তু কোনোদিন অর্ণব জানবে না অদিতা নামের এই মেয়েটি ওর জন্য কেমন অস্থির । ওর খুব ইচ্ছে করে অর্ণবকে ' তুমি ' করে বলতে । ও যতক্ষণ অর্ণবের সাথে থাকে প্রতিটা নিঃশ্বাসের সাথে ও বলতে থাকে তুমি , তুমি , তুমি । এই মানুষটাকে কিভাবে ও কষ্ট দেবে ? কিন্তু আর সময় নেই । যেকোনো দিন অর্ণব ওকে প্রপোজ করবে ।
নাহ ! আজই বলতে হবে । মনকে শক্ত করে অদিতা । কাঁপা কাঁপা হাতে মোবাইলটা হাতে নেয় সে -
হ্যালো ।
হ্যাঁ , অদিতা বলো । এতো রাতে ? কোন প্রব না তো ? অর্ণবের কণ্ঠে উৎকণ্ঠা ।
অর্ণব , আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই ।
কেঁপে ওঠে অর্ণব । অদিতা ওকে তুমি ডাকছে ! এই শব্দটা শোনার জন্য কতো অপেক্ষা করেছে সে । অদিতা কি তাহলে ওকে ...
অর্ণব , তুমি আমার প্রিয় বন্ধু । তাই তোমাকেই প্রথম বলছি ।
আমি প্রেম এ পড়েছি অর্ণব । উপল , আমার কাজিন । আমাদের দুই ফ্যামিলি জানে বিষয়টা । কারো আপত্তি নেই । উপল জাপানে পি এইচ ডি করছে ।
এই ডিসেম্বরে আসছে । জানুয়ারিতেই বিয়ে । এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বললো অদিতা ।
ফোন এর ওপাশে অর্ণব শান্ত হয়ে গেলো । নাহ ! আজ আর চোখে পানি এলো না ।
কেমন এক শূন্যতা ! নিজেকে চট করে সামলে নিলো সে । অদিতার ভালো লাগার জন্য অর্ণব কতো কিছু করতে চেয়েছে ! আজও করবে সে ।
বাহ ! কংগ্রাচুলেশনস ! দাওয়াত দিও কিন্তু ।
অদিতা গম্ভীর ভাবে বললো , হুম । ওকে , আজ রাখছি ভালো থেকো ।
তুমিও ভালো থেকো ।
ফোনটা রেখে কান্নায় ভেঙে পড়লো অদিতা । এমন কান্না কোনোদিন কাঁদেনি ও । কি করবে অদিতা ? কি করার আছে ওর ? কেমন করে ও অর্ণবের হবে ? ভালোবাসার নদীতে ওর যে সংসার করা হবে না । কেমন করে ও অর্ণবকে বলবে ওর গোপন কষ্ট !
অদিতা ? না বৃহন্নলা ? কে সে ? বৃহন্নলা তো কাউকে ভালোবাসতে পারে না ।
প্রকৃতি তাকে ভালোবাসার ইচ্ছে দিলেও অধিকার দেয়নি । পৃথিবীর নিয়মে সে নারী বা পুরুষ কিছুই না , সে হিজড়া । হিজড়া ! কি অদ্ভুত একটা শব্দ !
১১। ১১। ২০১১ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।