আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্রহের ফের ছোট গল্প

( এক ) এতো কোন ব্যাধির আক্রমণ নয়?----- এযে ব্যাধির শিকার। আক্রমণ কারীও কিছু কেড়ে, কিছু রেখে যায়। কিন্তু এ যে সকলকে ছিঁড়ে খাবে। এতদিন আমাদের জানাওনি কেন?--------------- "কি জানাব? আমরা যে কিছুই বুঝতে পারিনি, ঠাকুরপো?-" -"বুঝতে পারিনি, বললেই হোল? তুমি মা, তুমি ওর ভাবগতিক দেখে কি এতদিন কিছুই বুঝতে পারনি? এ আমি বিশ্বাস করি না। -" -"আমি জানি, সন্তানের সকল দোষের জন্য তার মা-ই দায়ী।

এ তুমি আজ আমায় আর নতুন কি বলবে? এতো সর্বজন-বিদিত, সর্বজন-স্বীকৃত। তবুও ঠাকুরপো, আমি তোমার হাত দুটি ধরে সত্যি বলছি, এ আমি বুঝিনি, বুঝতে শিখিনি। তুমি একজন ডাক্তার, এ সময় তুমি যদি আমাদের পাশে না দাঁড়াও তাহলে আমরা কোথায় যাব?-" -"দেখা যাক, কি ব্যবস্থা করতে পারি। -" ( দুই ) বহু পুরুষ ধরে এ বংশে কোন কন্যা সন্তান জন্মায়নি। ফলে বংশ-লতিকার ন্যায় শুধু বংশই বৃদ্ধি পেয়েছে।

কোন পিতা দেখেনি একটি মাতৃসমা কন্যার মুখ, কোন মা পায়নি তার হৃদয়ের গ্রন্ধি উন্মোচনের মত একটি নরম কোমল মন। এ যে শরীরের রক্ত দিয়ে গড়া কামনার বীজ, যা নিজেকেই চিনিয়ে দেয়। ছেলেরা যতই বড় হয় ক্রমশ দূর থেকে দূরেই চলে যায়। আর মেয়েরা? ঠিক তার বিপরীত। যত দিন যায়, ততই আঁকড়ে ধরে তার শিকড়কে।

তাই দশ বছর ব্যাধানে, দুই ছেলের পর যখন মেয়ে হোল, তখন এ বাড়ী হয়ে উঠল উৎসব মুখর। সকলে আনন্দে একেবারে দিশেহারা। এতদিন পর বাড়ীতে যেন কোন আলোকিত বস্তুর সন্ধান পাওয়া গেছে। সারা বাড়ী মিলে সাত-ভাই, নাম করণ করল চম্পা। সাত-ভাই চম্পা।

মেয়ের বিশেষ পরিচর্য্যার জন্য আয়া রাখা হোল। কিজানি যদি কোন অযত্ন হয়? সারাক্ষন সকলেই ওই পুচকে মেয়ের চিন্তাতেই ব্যাস্ত। সাথে সাথে বাড়ীতে আমার খাতিরও বেড়ে যায়। যেন আমি তাদের কি এক বিশেষ উপহার এনে দিয়েছি। বাবা, কাকা, জ্যাঠা, ঠাকুমা, দাদু কারুর যত্নের কোন ত্রুটি নেই।

এরকমই চূড়ান্ত আদরে, যত্নে আমার চম্পা শিশুকাল পার করে দিল। ছোটর থেকেই ওর স্বভাবটাও ছিল ভারী সুন্দর। শান্ত, ভদ্র, নম্র, সদা স্তব্ধ প্রকৃতির, যেন সংযমী কোন সাধিকা। প্রতিটি বিষয়েই অত্যন্ত মনোযোগী ও মেধাবী। অবশ্য এ বংশে এ জিনিষের অভাব এখনও কারুর চোখে পড়েনি।

আর চম্পা? সত্যি বলতে গেলে দাদাদের চাইতেও একটু বেশীই ভাল। স্কুলের শেষ পরীক্ষায় তার প্রমানও পাওয়া গেল। ভাল কলেজে পড়বার সুযোগও পেল। সু-প্রতষ্ঠিত বাবা, উপযুক্ত দুই দাদা কোন দিকে কোন অভাব নেই। যেন সু-পরিকল্পিত, সাজান-গোছান ঝকঝকে সোনার সংসার।

মেয়েরতো কোন তুলনাই নেই। স্বভাবে, শিক্ষায়, রুচিতে সবার মন কাড়ার মত মেয়ে। এক কথায় সবার চোখের মনি। সূর্যের সৌরভের মতই চারদিক আলো করে চম্পা বেড়ে উঠল। আমাদের সহজ, সরল বিশ্বাসে তার কোন ত্রুটিই চোখে পড়েনা।

আশাতিরিক্ত না হলেও, মোটামুটি সুনামে, সুযশে কলেজ পর্বও সমাধান হয়। ( তিন ) কিন্তু মায়ের মনতো, অকারণেও আশঙ্কা জাগে। ইদানিং আমার যেন কেমন ওকে একটু অন্য রকম মনে হচ্ছে। কারুর সাথে কথা বলেনা। একটু বেশি চুপচাপ।

ঠিক একাকী নয়, তবে নিজেকে সব সময় কেমন যেন একটু গুটিয়ে রাখতে চায়। কেন?------- আমি বুঝতে চাই, কিন্তু ঠিক বুঝতে পারিনা। ওর বাবাকে বললে ও হেসেই উড়িয়ে দেয়। আরো বলে কিনা, -" আচ্ছা, ও কি চিরদিন তোমার ছোট্টটিই থাকবে?-" আর চম্পা? ওকে কিছু জিজ্ঞেস করলেই, এমনভাবে খেঁকিয়ে ওঠে যেন পালাতে পারলে বাঁচি। কিন্তু এরকম স্বভাবেরতো ও ছিলনা? তবে কি হোল? কি এক অজানা সণ্কেত আমায় ভারাক্রান্ত করে তোলে।

সকলে মিলে আলাপ আলোচনা করে, পরবর্তী শিক্ষার জন্য নানান জায়গায় চেষ্টা চলছে। অবশেষে পছন্দ মত জায়গা থেকে ডাকও পেল। চম্পার এই বিরাট সাফল্যে সকলেই খুব খুশি। তবে মেয়ে দূরে চলে যাবে ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে যায়, আবার গর্ব্বওতো কম নয়। মোটামুটি যাওয়ার দিনও ঠিক হয়ে গেল।

কেউ না বুঝলেও আমি কিন্তু গভীর অন্তদৃষ্টি দিয়ে যেন দেখতে পেলাম, আমার চম্পা নীরবে আমার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চাইছে। যাওয়ার সময় আমি শুধু ওর মুখটা তুলে ধরে বলেছিলাম, -"চম্পা, তুই ধনীর দুলালী, তার ওপর সুন্দরী, দেখিস কোন রকম প্রলোভনে যেন ভুলিসনা। -" আমার দিকে তাকাতেও পারলনা। কেবল চোখের কোল বেয়ে দু-ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। তারপর এক ঝটকা মেরে আমার হাত ছাড়িয়ে, জিনিস নিয়ে বাবার সাথে বেরিয়ে পড়ল।

( চার ) আমি একেবারে অসহায় হয়ে পড়লাম কেন? কেন ও এভাবে চলে গেল? তবে কি আমার চম্পা আর আগের মত নেই? দুদিন পর, ওর বাবা, মেয়েকে রেখে ফিরে এল। সহস্র প্রশ্ন চোখে নিয়ে, তার পানে চেয়ে রইলাম, কিছুই জানা হোল না। ও আমার অবস্থাটা বুঝতে পেরে, ওখানকার ব্যবস্থাপনা যে কত ভাল, পড়া, খাওয়া, থাকা সবই নাকি বাড়ীর থেকেও অনেক অনেক গুন বেশি ভাল। এসব নানান কথা বলে, আমায় খুশি করতে চাইল। আমার মন বলল ভাল, ভাল হলেই ভাল।

বছর ঘুরতে না ঘুরতেই, কর্তৃ-পক্ষের এক চিঠি পেলাম। যার মূল বিষয় বস্তু,-------------------- "আপনাদের অসুস্থ মেয়ে, এখানে থাকার পক্ষে অযোগ্য। সুতরাং উপযুক্ত ব্যবস্থা মত তাকে বাড়ীতে পাঠান হচ্ছে। ভবিষ্যতে প্রকৃত সুস্থ প্রমানিত হলে, তবেই এ জায়গার কথা চিন্তা করবেন। -" চিঠি পাওয়ার দুদিন পর, হস্টেল মেট্রনের সাথে, শুকনো, উসকো-খুসকো, নোংড়া, উদভ্রান্তের মত চেহারা নিয়ে চম্পা আমার বুকে আছড়ে পড়ল।

----"মা, আমি আর ভাল নেই, আমাকে নিয়ে তোমরা এখন কি করবে?-" ( পাঁচ ) সেই থেকে আমাদের এই জীবন যুদ্ধ শুরু। উঃ, এ কোন নিষ্ঠুর দেবতা, যে অমন ফলে-ফুলে সাজান বাগানকেও পারে মূহূর্তে ধূলিসাৎ করে দিতে? পারে জননীর আকাঙ্খাকে নয়, আশঙ্কাকে বাস্তবায়িত করতে? তবু, তবু, তুমিই দেবতা? ভালবাসার নয় ভয়ের, ভয়ের, ভয়ের-------------- তিরতির করে চোখের পাতা দুটো কেঁপে উঠতেই ভয় হয়, এই বুঝি উঠে পড়ল। ঘুম ভেঙ্গে গেলেই যদি আমি আর ওকে ধরে রাখতে না পারি? যদি বেরিয়ে যায়? একেক সময় মনে হয়, হে ভগবান, ওকে চির নিদ্রায় আচ্ছন্ন করে রাখ। ভাবতেই বুকটা ধড়ফড় করে ওঠে। এ আমি কি ভাবছি? কি করব? আমি যে আর পারছিনা।

আমার যে আর সইবার ক্ষমতা নেই। এ এমন ব্যাথা, যা কারুককে বলে বোঝানও যায়না। কেউ শুনতেও চায় না। যে বাড়ীর সাথে মেশবার জন্যে একদিন যারা উদগ্রীব হয়ে থাকত, আজ তাদেরই ছোঁওয়া বাচাতে, সকলে ব্যাস্ত। আমরাতো গৃহবন্দী হয়েই আছি।

সর্বদা ভয়ে, লজ্জায় নিজেদের গুটিয়ে রেখেছি। আবার মনে হয় নড়ে উঠল? বোধহয় পাশ ফিরবে। ওর পায়ের পাতায় হাত বুলোতে বুলোতে মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকি। কি সুন্দর ফুলের মত মুখ ছিল। আমার সেই চম্পা, আজ এ কি হয়ে ফিরে এল? শুকিয়ে কাঠির মত, কুঁজো হয়ে গেছে।

কালিমাখা মুখ, চোখ দুটো কোটরে, খাড়া নাক আরও খাড়া হয়ে গেছে। এখন ঘুমিয়ে আছে। ওর ঘুমেই আমার বিশ্রাম। নাহয় সারাক্ষন আমাদের ওপর অত্যাচার আর জুলুম। পা দুটোতে হাত বুলোই, আর চেয়ে থাকি।

হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গেই এক বিকট চীৎকার দিয়ে ওঠে। -"এ কি ? তুমি? তুমি এখানে বসে আছ কেন? তুমি কি ঠিক করেছ, সব সময় আমায় পাহারা দিয়ে রাখবে?-" -"না, না তা নয়। তুই ছটফট করছিলি তাই একটু হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম। -" -"সর। সর বলছি, আমি এক্ষুনি বেরোব।

-" -" মা আমার, সোনা আমার, ডাক্তার তোকে কটা দিন বেরোতে বারণ করেছে, বেরোস না সোনা। -" -"চুপ কর। তোমার কথা মত আমায় চলতে হবে নাকি? আমাকে এখন বেরোতেই হবে। -" -"কেন? কেন তুই কোথায় যাবি বল, তোর সাথে আমিও যাব। -" -"তুমি? পারবে? পারবে তুমি?-" -"হ্যাঁ পারব।

এতদিন পারিনি কিন্তু আজ আমায় পারতেই হবে। আর দেখার সময় নেই । আজ আমরা জীবনের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছি। -" হঠাৎ প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে, কেমন ঝিমিয়ে টলে পড়ে। সাথে সাথে ডাক্তারের নির্দেশ মত ওষুধ দিয়ে যাই।

ওর বাবা জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে শিশুর মত দুহাতে শিক আঁকড়ে ধরে ফ্যালফ্যাল করে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। দিনের পর দিন না খেয়ে, না ঘুমিয়ে, দমবন্ধ করে মা-বাবা হওয়ার প্রায়শ্চিত্ত করে চলেছি। কখনও ভালভাবে বোঝাতে গেছি, আরও রেগে গেছে। -"আচ্ছা চম্পা, তুই এরকম করছিস কেন? আমরা কি এমন অপরাধ কোরলাম যে, তুই আমাদের কোন কথাই শুনতে পারছিস না? ক্রুদ্ধ দৃষ্টি নিয়ে এমন বিকৃতভাবে বলে ওঠে------------ "অপরাধ?-- ওর সমস্ত মুখভঙ্গি যেন আমায় বুঝিয়ে দিতে চায়, তোমরা সব চাইতে বড় অপরাধ করেছ সেদিনই, যেদিন আমায় এ পৃথিবীতে এনেছ। ভয়ে লজ্জায় আর কথা বাড়াই না, আস্তে আস্তে সরে পড়ি।

এ পৃথিবীতে বোধহয় চরম লজ্জা হয় সেদিনই, যেদিন সন্তানের ভয়েও বাবা-মাকে লুকাতে হয়। ( ছয় ) ওর বাবা নিয়ম মত ডাক্তারকে রিপোর্ট করে চলেছেন। উনি শুধু আমাদের আশাই দিয়ে যাচ্ছেন। --"আর কটা দিন, আর কটা দিন কষ্ট করুন। -"-------------------------- এতো জীবন যন্ত্রণা নয়, এ যে নরক যন্ত্রণারও অধিক।

কেবলই দিন গুনি, আর আর কত বাকি? মাঝে মাঝে মনে হয় একটু বুঝি আয়ত্তে এসেছে। বেরোবার জন্যে ছটফট করে, তবে আমরা দুজন সতর্ক প্রহরীর মত কাজ করে চলেছি। কারণে অকারণে উল্টো-পাল্টা কথা বলে আমাদের জব্দ করতে চায়। মাথাটাও মনে হয় ঠিক নেই। হঠাৎ একদিন প্রশ্ন করে,----"আচ্ছা, তোমরা আমায় এরকম আষ্ঠে-পৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছ কেন বলতো? আমি তোমাদের কে?-" ওর প্রশ্ন আমার ঠিক বোধগম্য হয়না।

আমি অবাক হয়ে বলি, -"সে কি? তুই এটা কি প্রশ্ন করছিস?-" -"ভনিতা কোরনা। আমার প্রশ্নের জবাব দাও। -"----- ওর রকম সকম আমার ঠিক ভাল ঠেকেনা। দুহাতে বুকে টেনে নিয়ে বলি, -"তুই? তুই আমাদের একমাত্র চম্পাকলি, চম্পা। -" _নাঃ, আমি কখনই তোমাদের মেয়ে হতে পারিনা।

তোমরা এত ভাল, আমার দাদারা সব এত ভাল, তাহলে আমি এত খারাপ কেন? তোমাদের মেয়ের আকাঙ্ক্ষা ছিল, তাই তোমরা নিশ্চয়ই অন্য কারুর কাছ থেকে আমায় এনেছ। -" এতক্ষনে বুঝতে পারি, আসলে ওর কষ্টটা কোথায়? পাশে গিয়ে বসি। ভাবলেশ-হীন মুখে শূন্যে চেয়ে থাকে। কোথায় তুই খারাপ? তোর মত এরকম ভাল কজন হয়? জীবনে ফাস্ট ছাড়া কোনদিন সেকেন্ড হসনি। নিজের গুনে অত ভাল জায়গায় পড়তে গেলি।

তাতে কি হয়েছে? আবার হবে। চেষ্টা থাকলে কি না হয়? তোর শরীর ঠিক হয়ে গেলেই দেখবি আবার সব ঠিক হয়ে যাবে। ( সাত ) আজ পাঁচ পাঁচটা বছর ধরে, তুষের আগুনের মত ধিকিধিকি করে জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে গেলাম। মাঝে মাঝেই যখন আর পারিনা, শরীর আর চলেনা, তখন কদিন নার্সিং-হোমে রেখে চিকিৎসা করিয়ে আনি। শরীর, মন, অর্থ সব শেষ করেও কোন কিনারা খুঁজে পাইনা।

সর্ব্বক্ষন যেন চোরের মত আতিপাতি করে খুঁজে বেড়াচ্ছি। হে ভগবান, মা হওয়া কি এতই অন্যায়? দিনকে দিন, ও যতই কাহিল হয়ে যাচ্ছে, আমি যেন ততই একটা দানবের মত শক্তিশালী হয়ে উঠছি। জানিনা, এত শক্তি আমায় কে জোগায়? ওর জন্য বাড়ীতে কোন কাজের লোকও রাখিনা। ছায়ার মত রাত-দিন ওর পেছনেই পড়ে আছি। ওর বাবার দিকেও তাকাবার সময় পাইনা।

দেখি, সারাদিন পাগলের মত এ ঘর , ও ঘর ঘুরে বেড়ায়। ভাবি কি নিদারুণ পরিনতি। লজ্জায়, সংকোচে কেউ কারুর দিকে তাকাতেও পারিনা। উভয়েরই নিজেকে দোষী মনে হয়। -"আচ্ছা চম্পা, তোর জন্য আমরা সবাইকে ত্যাগ করলাম, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী-পরিজন কারুর সাথেই সম্পর্ক রাখিনা, অথচ তোকেও বুঝি আর পেলাম না।

-" -"কেন? কেন? কি দরকার ছিল আমার জন্য এত বাড়াবাড়ি করার?-" -"হ্যাঁ, এ কথাটা তুই একদম ঠিক বলেছিস। এ পৃথিবীতে বোধহয়, সন্তানকে সুখী করা সব চাইতে কঠিন। তুমি বেশী কর বলবে, বাড়াবাড়ি কোরনা ----- কম কর বলবে, কিছুইতো করনি ------ মাঝামাঝি কর বলবে, কি আর এমন করেছ?-" বলতে বলতে আমার গলাটা ধরে আসে, ও বুঝতে পারে, মা কথাটাতে খুব ব্যাথা পেয়েছে। সাথে সাথে জড়িয়ে ধরে আদরে আদরে সব ভুলিয়ে দেয়। আমরা যে মায়ের জাত , তাই সহজেই একটু মিষ্টি কথা অনেক ব্যাথা ভুলিয়ে দেয়।

আমি বুঝতে পারি, ওর এখন এক এক করে সব মনে পড়ে আর অনুশোচনা হয়। -"মা, দাদারা আর এ বাড়ীতে আসবে না?-" -"কেন, আসবেনা? পরিস্থিতিই সব পাল্টে দিল। একে একে সকলেই কাজের অজুহাতে বাইরে চলে গেল। তুই ডাকলেই ওরা ফিরে আসবে। জানিসই তো, ওরা তোকে কত ভাকবাসে।

সব সময় চিঠিতে, ফোনে তোর খবর নেয়। -" -"আমিতো এখন ভালই হয়ে গেছি কি বল মা? দেখবে এবার আমি সবাইকে ফিরিয়ে আনব। -" -"মা, বাবা আর অফিস যায় না কেন? আমার সাথে সেই আগের মত আর কথাও বলেনা। আমিতো খারাপ, তাই না?-" -"কেন এরকম করে বলছিস? এসবই আমাদের গ্রহের ফের। তুমি একটা কুসঙ্গে পড়ে গেছিলে, তারই খেসারত দিতে হোল সকলকে ( আট ) যেদিন থেকে তোর এই অবস্থা হোল, তার কিছুদিন পরই, তোর বাবা চাকরী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে নিল।

এত সন্মানী মানুষ ছিল যে, লোক লজ্জার ভয়ে, সবার চোখের আড়ালে চলে গেল । সেই থেকেই একদম চুপ হয়ে গেছে। কারুর সাথেই কথা বলে না। একা একা কি যে ভাবে সব সময়। আমিতো ওর মত চুপ করে থাকতে পারিনা।

কখনও কাঁদি, কখনও বকবক করি। তখন শুধু কপালে হাত দেখিয়ে বলে,-----ভাগ্য, ভাগ্য, সবই ভাগ্য। -----" -" তুই যা, বাবার পাশটিতে গিয়ে বোস, কথা বল। -" -"হ্যাঁ মা, আমিতো এখন ভালই হয়ে গেছি। এখন আমাদের আর কিসের চিন্তা? কদিন আগেও আমার বন্ধুরা, আমায় দেখলে এড়িয়ে যেত।

এখন আবার সবাই আমায় ডাকে। পুপু আর মিলিও সেদিন বলছিল,------- "তোর মায়ের জন্যই তুই জীবন ফিরে পেলি। -" দীর্ঘ পরিশ্রমে ক্লান্ত, অবসন্ন, শীর্ণকণ্ঠ শূন্য ঘরে হাওয়ায় দুলে দুলে যেন আকুতি জানায়,-------------------------------------------------------না, না, তা নয়, তা নয়, ------------আমারই রক্তের উত্তাপ, ---------তোমায় জীবন পথে দিগ্-ভ্রান্ত করেছিল, ---------আজ, আমারই ভালবাসার উত্তাপ, -------তোমায় সুস্থ, সুন্দর জীবন ফিরিয়ে দিক। ----------- ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।