আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাগদা তো-ভ রাশিয়া-২

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল! পুলিশ কিনা নিশ্চিত হবার জন্য এবার আমি সচক্ষে দেখতে গেলাম-করিডোরের আবছা আলোয বোঝা যাচ্ছেনা ঠিকমতো,তবে ওদের পরনে পুলিশের ইউনিফর্ম যে এটা নিশ্চিত হলাম। মনে হয় দুজনই হবে? একজন খাটোমত গোলগাল। আরেকজন যথেস্ট লম্বা সুসাস্থের অধিকারী বলেই মনে হচ্ছে। এরমাঝে ওরা আরো কবার বেল বেজেছে। ফিরে এসে আমরা আবার মিটিংয়ে বসলাম।

ওদের ঢুকতে দেয়া কি ঠিক হবে? পুলিশের ছদ্মবেশে যদি ডাকাত আসে ? হয়তো ওদের আশেপাশেই আরো ক‘জন লুকিয়ে আছে? সিদ্ধান্ত নিলাম দরজা না খোলার। যতটুকু জানি, রুশীয় পুলিশের অধিকার নাই এত রাতে রুম তল্লাশি করার বা বাসায় ঢুকে অপরাধী ধরার। -যেহেতু আমরা বিদেশী সেহেতু এ আইনটা আমাদের বেলায় বেশী খাটে । ওদিকে বেল বেজেই চলছে। আর আমাদের বুকের ভিতর কাপছে! আমরা সবাই প্রতিজ্ঞা বদ্ধ দরজা না খোলার পক্ষে ।

মিনিট দশেক বাদে কর্লং বেল বাজানো বন্ধ হল। ভাবলাম ওরা চলে গেছে আমাদের যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল! তবুও নিশিন্ত হওয়ার জন্য আবার গিয়ে দেখে আসলাম। নাঃ নেই ! ওফ কি টেনশনেই না ছিল সবাই! আড্ডার আমেজ নস্ট হয়েগেছে। জমানোর চেস্টা বৃথা! ঘন্টা খানেক গল্পগুজব করে ঘুমিয়ে পড়লাম। শরীরে ক্লান্তি আসলেও কানদুটো উৎকর্ন হয়েছিল -মাথার মধ্যে দুশ্চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।

ঘুম কি আর আসে! বন্ধুদের ডাকাডাকিতে হুড়মুড় করে উঠেবসলাম। চোখ মেলতে কস্ট হচ্ছিল মাথার মধ্যে চিনচিনে ব্যাথা । কন্ঠে উস্মা এনে বললাম, -কি ব্যাপার এত চেচাচ্ছিস কেন কি হয়েছে? আমরা চলে যাচ্ছি দরজা আটকে দে। এক চোখ চেপে রেখে অন্যটা দিয়ে পিট পিট করে অতিকস্টে চাইলাম দেয়াল ঘড়ির দিকে । বাপরে দশটা বাজে।

এলামেলো পায়ে হেটে গেলাম ওদের পিছু পিছু । শেষজন বের হওযার পরে ভাল করে দরজা আটকে আবার ফিরে এলাম আমার বিছানায়। এখন এ ডিভানে আমি একা। ই বাড়িতে শেষদিনটা আমি ইচ্ছেমত হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাতে পারব। ভাবতেই ঘুমটা আরো শক্ত করে জেঁকে ধরল আমাকে।

আবার সশব্দে ডোর বেলের আওয়াজ। ‘ওরা কি আবার ফিরে এল ? কিছু কি ফেলে গেছে?’ ভাবতে ভাবতে রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে আবার উঠে প্রথমে দেয়াল ঘড়িতে নজর দিলাম। এগারোটা বাজে। খটকা লাগল। ওরাতো গেছে ঘন্টা খানেক আগে ।

কিছু ফেলে গেলে তো ফোন করে জানাত। এতক্ষন পরেতো এভাবে আসার কথা না! ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গেলাম মুল ফটকের দিকে। পিপ হোলে চোখ রাখতেই শিউড়ে উঠলাম। দরজার ওপাশে দুজন পুলিশ দাড়িয়ে আছে। দেহের আকৃতি দেখে মনে হল কালকের দু’জনই।

কোন শব্দ না করে পা টিপে টিপে আমার রুমমেটের বিছানার কাছে গেলাম। ভেবেছিলাম সে সহজে জাগবে না। কিন্তু গায়ের উপর হাত রাখতেই সে চোখ মেলে তাকাল। আমি বাইরের দিকে ইশারা করে বললাম,- পুলিশ। শোনার সঙ্গে সঙ্গে স্বভাবতইঃ তার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল! আমি তাকে জিজ্ঞস করলাম, 'এখন আমাদের করনীয় সম্পর্কে।

' প্রতি উত্তরে সে বলল; তার নাকি সব আউলা ঝাউলা হয়ে গেছে মাথা কাজ করছে না! আমি যা ভাল বুঝি তাই যেন করি। উল্লেখ্য যে তার রুশ ভাষায় দক্ষতা বেশ খানিকটা কম। সেই সুবাদেই সে এই বিপদে সে আমাকেই এগিয়ে দিল। আমি আবার ফিরে দরজার কাছে গিয়ে বললাম,-কে?’ -দরজা খোল। আমরা মিলিশিয়া।

- কোন থানা থেকে এসছেন? প্রতিউত্তরে তারা স্থানীয় থানার নাম বলল। -কি ব্যাপার? ‘আমাদের কাছে তোমাদের নামে অভিযোগ আছে । নীচতলা থেকে তোমাদের প্রতিবেশী থানায় অভিযোগ করেছে যে, 'তোমাদের বাথরুম চুইয়ে নাকি নিচে পানি পড়ছে । ' তাই আমরা তদন্ত করতে এসেছি। ’ -কি বলছেন ? ঠিক আছে আমি দেখছি... বাথরুমে গিয়ে বাথটাবের চারপাশে উকি ঝুকি মেরে পানির পাইপগুলো পরীক্ষা করে দেখলাম।

নাঃ ঠিক আছে। ওরা মনে হয় ভুল ইনফর্মেশন পেয়েছে। ফিরে গিয়ে বলতেই ওরা বলল,'তারা নাকি ঠিক জায়গাতেই এসেছে। আমাদের কথা নাকি ওদের বিশ্বাস হচ্ছেনা। নিজেরা সচক্ষে দেখতে চায়।

' মহা ফ্যাসাদ । বন্ধুকে শুধালাম,-কি করব ? ও বলল দরজা খুলতে । অগত্যা দরজা খুলতেই হল। দুজনে একসঙ্গে হড়মুড় করে ঢুকে হাসি মুখে বলল,- ‘শুভ সকাল। ’ কি ভয় পেয়েছিলে নাকি ।

’ সহজ হবার চেস্টা করে আমতা আমতা করে বললাম,- ন-না ...। -দেখি তোমাদের বাথরুম? আমি সাথে করে তাদের বাথরুমে নিয়ে গেলাম। তারা গিয়ে অনেক্ষন ধরে খুটিয়ে খুটিয়ে পরীক্ষা করল। সাস্থ্যবান লম্বা লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে অমায়িক হেসে বলল , -না সব ঠিক আছে। আমিও হাসলাম সস্তির হাসি ।

যাক এবার আপদ বিদেয় হলে বাঁচি! এবার সে দুকদম এগিয়ে চারিদিকে ভালকরে চোখ বুলিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বেশ একটা ভাব নিয়ে বলল, -কিন্তু আমার কাছে আরেকটা ইনফর্মেশন আছে। আমি কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করলাম - কি ইনফর্মেশন? কঠিন মুখে ভয়ঙ্কর চাপা হাসি হেসে বলল- তোমাদের কাছে নাকি -'নারকোতিক’ আছে! আমার অন্তরাত্মা ভীষন ভাবে কেঁপে উঠল, -'নারকোতিক' মানে ড্রাগ ;তাহলে কি এরা ঠাউরেছে আমরা ড্রাগ বিজনেস করি? ২য় পর্ব শেষ আগের পর্বের লিঙ্ক; Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।