আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাগদা তো-ভ রাশিয়া-১১

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল! রাশিয়ার অবস্হা তখন দিন দিন খারাপ হচ্ছে! মাঝে মধ্যেই ছিনতাই কিংবা ডাকাতির কথা শোনা যায়। নিরীহ রুশীয়রা তাদের সমাজে একদম নুতুন এই উৎপাতের খবর শুনে হকচকিয়ে যায়। ছিনতাই, রাহাজানি ডাকাতি এই শব্দগুলো তারা ভুলেই গিয়েছিল-কেউ তাদের কাছে দূর্ঘটনার গল্প বললে তারা চোখ বড় বড় করে বলত, বানদিত-বানদিত? দস্যু নাকি- দস্যু? ভাবখানা এমন যে , সাইবেরিয়া থেকে কোন দস্যু দল বন্দুক হাতে ঘোড়া দাবড়িয়ে শহরে এসে সবকিছু লুটে নিয়ে যাচ্ছে! নিজেদের ভাই ভাতিজা প্রতিবেশী এটা করতে পারে সেটা তারা ভাবতেই পারে না। যাই হোক সেই 'বানদিত'দের সহজ টার্গেটতো আমরা মানে দক্ষিন এশীয়রা। তাই নিজের কাছে এতগুলো ডলার রাখ বোকামী।

আরিয়েখোবা হোস্টেলের সবচেয়ে জনপ্রিয় যে ছেলেটি আমারও অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল বিভিন্ন সমস্যা আর সুখে দুখে যার কাছে দৌড়ে যেতাম পরামর্শের জন্য সে আমাকে বলল, টাকাগুলো বড় ভাইয়ের কাছে রাখতে। বড় ভাইতো না আসলে সে সব'চে সিকিউরড ব্যাংক! তারপরেও সে একটুখানি দ্বীধা নিয়ে বলল, তুই যদি রাজী থাকিস তাহলে আমি বড়ভাইকে অনুরোধ করতে পারি। আগেই কিন্তু দোস্ত বলতে পারিনা উঁনি রাজী হবেন কিনা। সঙ্গে সঙ্গে আমি অনুরোধে গলা ভিজিয়ে বললাম, দেখনা দোস্ত উঁনারে বলে। ডলারগুলা নিয়ে আমি খুব বিপদে আছি-কখন কোন অঘটন ঘটে কে জানে।

দোস্ত শুধু আমার এহেন গুরুতর সমস্যার কথা ভেবে কথা দিল, বড় ভাইয়ের সাথে আলাপ করবে। আমি অবশ্য আগেই জেনেছিলাম বড় ভাই তার আত্মীয় কিন্তু বন্ধু আমার যে পরিমান ভক্তি শ্রদ্ধা করত তাকে- তাতে করে আত্মীয় কম বস মনে হত বেশী। আসলে ব্যাপারটা অঘটন নাকি পরিকল্পিত প্রতারনা তা আমি আজও বুঝে উঠতে পারিনি! আর সবার প্রিয় নিজের নাম ছাপিয়ে 'গুরু' নামে পরিচিত সেই ভদ্রলোক যিনি তার প্রভাব খাটিয়ে পাসপোর্টবিহীন আমাকে এই হোটেলে থাকার সু-ব্যাবস্থা করেছেন সেই সাথে এখানে অবস্থিত বাংলাদেশ দুতাবাস থেকে পাসপোর্ট পাবার ব্যাপারে সহোযোগীতা করেছেন -দুর্ভগ্য ক্রমে তিনিই ছিলেন এই অঘটনের মুল হোতা! শ্যামলা গড়ন ছোটখাট মাথাভর্তি আগোছালো কুঞ্চিত ঝাকড়া চুলের সেই মানুষটির বিস্ময়কর ক্ষমতা ছিল খুব সহজেই কারো হৃদয়ে আসন গেড়ে নেয়ার কিংবা কাউকে প্রভাবিত করার। তার ঠোটের কোনে সর্বদা ঝুলে থাকা একটুকরো হাসিতে তাকে বড় বেশী আপনজন মনে হোত । পরিচিত অপরিচিত যে কারো বিপদে আপদে তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে ধরতেন আর বন্ধুদের জন্য জান বাজি রাখতে পিছপা হতেন না ।

দু'হাতে টাকা উড়াতেন দেদারসে , তার দুরুমের বাসাটা যেন ছিল মিনি ক্লাবঘর। সারাদিন সেখানে চলত তাস খেলা মদ খাওয়া আড্ডা আর মুখরোচক খাবারের আয়োজন। কখনো তাকে দেখতাম তুখোর খেলুড়ে কখনও পাকা রাধুনী কখনো দিলখোলো উচ্ছল আড্ডাবাজ সেইসাথে মদ্যপ হিসেবেও তার সমান খ্যাতি ছিল, সারাক্ষন মদ খেলেও তাকে কখনও মাতাল হতে দেখিনি। এতগুলো গুন থাকার পরে উপরন্তু এমন প্রভাবশালী ব্যাক্তিত্বের সংস্পর্শে গেলে তার প্রভাব থেকে মুক্ত হবার উপায় নেই। মস্কোর নামীদামী এক ভার্সিটির স্কলারশিপ পাওয়া এই ভদ্রলোক পরাশুনার পাশাপাশি আদম ব্যাবসা করতেন।

তখন মস্কো কিংবা ইউক্রাইন থেকে একটু চেস্টা করলেই ছাত্র পরিচয় ধারী যে কারো জার্মান, ইতালীর ভিসা পেতে কস্ট হত না। এই সুযোগে আগেই বলেছি রুপক অর্থে ;বানের জলের মত ঢুকে পড়া একটু উন্নত জীবনের আশায় যাওয়া শিক্ষিত শহুরে থেকে শুরু করে মুর্খ্য গ্রাম্য বঙ ভারতীয় পাকি লংকানদের সেখানকার সদ্য আগাছার মত গজিয়ে উঠা যেন তেন ইনিস্টিটিউটে ভর্তি করে একটা ছাত্র নামধারী সার্টিফিকেট ঝুলিয়ে দিয়ে এ্যাম্বাসির চৌকাঠ তক পৌছে দিতে কঠোর সংগ্রামে ব্রতী হয়েছিল প্রবাসী কিছু পুরোনো ছাত্র। সেটা ছিল অর্থ আয়ের বেশ ভাল একটা মাধ্যম! তৃতিয়বিশ্বের তথাকতিথ এইসব জঞ্জালদের ঝেটিয়ে পাচার করতে তৎপর এইসব আদম ব্যাপারীদের এক অংশের গুরু ছিলেন সেই ভদ্রলোক! অবশ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অবিশ্বাসী ত্যাদড়(!) সেই আদমদের কাছ থেকে অগ্রিম কোন সালামী নিতেন না। সপ্নের দুয়ারে পৌছে দিয়ে তবেই সব পাওনা বুঝে নিতেন। সেবার একসাথে জনা ত্রিশেক আদমকে জার্মানীর ভিসা টিকিটের ব্যাবস্থা করতে গিয়ে টাকার প্রয়োজনে তাকে পরিচিত জনের কাছে হাত পাততে হোল।

আমার তথাকথিত সেই বড়ভাই যাকে নিজের আপন ভাই ভেবে নিজের শেষ কপর্দক গচ্ছিত রেখেছিলাম তিনি আমার টাকাকে নিজের টাকা ভেবে কোন পূর্ব অনুমতি না নিয়েই নিজেকে মহান সাজানোর বাসনায় পুরো টাকা সেই ভদ্রলোকের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সে অবশ্য ভেবেছিল আদমগুলো বিদেশের মাটি স্পর্শ করলেই তো সে লভ্যাংশ সহ সব টাকা ফেরৎ পাবেই সেই সাথে স্পেশাল বোনাস হিসেবে মিলবে গুরুর আপ্ত প্রশংসা! কিন্তু ততদিনে হয়তো জার্মানী কিংবা ইতালীর ধুরন্ধর ইমিগ্রেশন অফিসাররা বুঝে ফেলেছে কাতারে কাতারে দক্ষিন এশিয়ার হাড় জিড়জিড়ে রুখি সুকি ভদ্রলোকরা মোটেই তাদের দেশ দর্শনে আসছেননা। তিরিশজন বঙ সন্তানের বিশাল কাফেলার স-সম্মানে কিংবা ঘেটি ধরে ফিরতি বিমানে মস্কোতে পাঠিয়ে দিল। আর এদিকে গুরু মহাশয় লাখ ডলার লোকসানের ধাক্কা সামলাতে না পেরে স্বভাবতই তখন প্রায়! মাঝখানে আমি এই অভাগা কিছু ধরলাম না ছুইলাম না খাইলামনা আজাইরা ফকির হইলাম। ...১১ তম পর্ব শেষ।

আগের পর্বের জন্য; Click This Link প্রথম পর্বের জন্য; Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।