আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেষের পাতা - ১২

আমি বড়ই ভীতু মানুষ ।

এতদিন পর হঠাৎ সাগরের নামটা শুনে মনে হল যেন কত যুগ পর বুক ভাঙ্গা এক রাশ সাগরের স্রোত আমার দুচোখের দিকে তেড়ে আসছে। জানি না এই দুদিনের স্বল্প পরিচিত মানুষটির সামনে কাঠিন্যের শাসনে সেটাকে বাধ মানাতে পারবো কিনা। নাকি অবশিষ্ট আত্মসম্মানটুকু ধুয়ে মুছে একাকার করে সব ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। সাগরের নাম শুনে রাসেল ভাইয়ের চোখের দিকে একবার তাকিয়েই সাথে সাথে চোখটি সরিয়ে নিয়েছি।

আমাকে চমকে দেয়ার কৌতুকপূর্ণ হাসিটায় উনার চেহারাটা অসহ্য লাগছে। আমার একান্ত ব্যক্তিগত এই অনুভূতিগুলোকে কেউ এভাবে হাসির খোরাক বানাবে, সেটা আমি হতে দিব না। চোখের জল শাসন মেনেছে দেখে দুজনের মাঝে নিরবতার পরিধিকে আর বাড়তে দিলাম না। জিজ্ঞাসা করলাম, “সাগর?” নামটা বলেই অবাক বিস্ময়ে কৃতজ্ঞতা জানালাম ভাগ্যদেবীকে। সে আমাকে এহেন রূঢ়তার শিক্ষা না দিলে অন্তরে সবচেয়ে উষ্ণ নামটা এমন নির্লিপ্ত ঠান্ডা কন্ঠে উচ্চারণ করতে পারতাম না।

আবারও সেই একইভাবে জিজ্ঞাসা করলাম “সাগরকে আপনে চেনেন?” লক্ষ্য করলাম রাসেল ভাইয়ের হাসিটা মিলিয়ে গিয়ে তার বদলে স্থান করে নিয়েছে রাজ্যের বিভ্রান্তি। “চিনি” বলে কথা আর এগোলেন না। অবাক দৃষ্টিতে আমার মনের অভেদ্য প্রাচীরটা ভেদ করার চেষ্টা করলেন। “কিভাবে চেনেন?” “আমরা ডি এম সি-তে একই ব্যাচে, হোস্টেলের রুমও তো এক” একটুও ইতস্তত না করে ঠান্ডা গলায় প্রশ্ন করলাম, “আমার ছবি কোথায় দেখেছেন আপনি?” কিন্তু এই প্রশ্নে যেন উনার বাধ ভেঙ্গে গেল। মুখ দিয়ে কথার ফুলঝুরি ছুটতে লাগলো।

“ওর খাতাপত্রে সবখানেই তো তোমার ছবি। বোরিং ক্লাসগুলোর পিছনে বসে তোমার ছবি আঁকতো। আড্ডা মারার সময়ও তোমার কথা মনে হলেই শুরু করতো ছবি আকা। আমরা প্রথম প্রথম প্রচুর উল্টা পাল্টা কমেন্ট করতাম। ও’ আমাদের সাথে মিশাই বন্ধ করে দিল, অ্যাভয়েড করে চলতো।

তখন বুঝতে পারলাম যে ব্যাপারটা রিয়েলি সিরিয়াস। পরে মাফটাফ চেয়ে আমরা সামলে নিলাম। আমদের কলেজের অনেকেই কিন্তু সাগরের এই ব্যাপারটা জানে” কথাগুলো একনাগাড়ে বলে একটু থামলেন। স্মৃতির পাতা উল্টোতে উল্টোতে হঠাৎ হেসে বললেন, “জানো সোহানা, কলেজের অনেক মেয়ে কিন্তু সাগরকে পছন্দ করে। অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছে সত্যিই কেউ আছে নাকি মন থেকে আঁকে।

আমরাও কনফিউসড ছিলাম। তোমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে কিছুই বলতো না। কত মেয়ে বলেছে তাদের ছবি একে দিতে। কিন্তু সাগর আঁকেনি। হেসে খুব ভদ্রভাবে অ্যাভয়েড করতো।

আর মেয়েগুলো আরো পাগল হয়ে যেত” কথাটা বলে আমার দিকে এক গাল হেসে তাকাতেই, আমার চেহারা দেখে হাসিটা আবার মিলিয়ে গেল। আমি বললাম, “মেয়েদের প্রতি আপনার সম্মানের কিছু ঘাটতি আছে রাসেল ভাই। অনেক রাত হয়েছে আজ আর পড়ব না” “ও হ্যা হ্যা আচ্ছা ঠিক আছে” বলে উনি একটু হন্তদন্ত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। রাতের খাবারটা সেরে চারতলায় এসে আপুকে ফোন করলাম। “আপু?” “কিরে সোহু তুই?” “আপু তুমি টিউটর হিসাবে রাসেল ভাইকে কেন পাঠালে?” “রাসেল? দাড়া, আমি তো পাঠাইনি, সোয়েব পাঠিয়েছে, ওকে জিজ্ঞাসা করি।

কেন কি হয়েছে?” “তুমি দুলাভাইকে ফোনটা দেও” “আচ্ছা দাড়া” সোয়েব সোয়েব করে দুলাভাইকে দুতিনবার ডাকার পর এসে উনি ফোনটা ধরলেন। “কি খবর সোহানা, কেমন আছ?” “ভাল। আপনে কেমন আছেন দুলাভাই?” “ইন্টার্নি করতে করতে মারা যাচ্ছিরে ভাই। তোমার আপুরটাও মাঝেমাঝে করে দিতে হয়” বলতেই ফোনের ওপাশ থেকে আপুর কিচিরমিচির গলা আওয়াজ পেলাম। দুলাভাইকে কি যেন বলছে বুঝতে পারলাম না।

দুলাভাই বললেন, “দেখ দেখি সোহানা আমি বলে এই কথাটা দুনিয়ার সবাইকে বলে বেরাচ্ছি। তো তুমি বলে রাসেলের ব্যাপারে কি বলবে?” “দুলাভাই, টিউটর হিসাবে রাসেল ভাইকে কেন আপনে পাঠালেন?” “আমি তো রাসেলকে পাঠাইনি। সাগরকে বলেছিলাম তোমাকে পড়াতে। সাগর না গিয়ে বোকার মত রাসেলকে পাঠালো” আমি চিৎকার করে উঠলাম, “দুলাভাই আপনে কি পাগল??” “পাগল নারে, পাগল না। পাগল ছেলেটার মাথা ঠিক করার চেষ্টা করছি” “দুলাভাই রাখছি” “আরে শোনো শোনো।

রাগ করো না। ফোন রেখো না, আমার কথাটা একটু শোনো” “দুলাভাই আমার ভাল লাগছে না। আমি ফোন রাখব” ওপার থেকে আবার আপুর কিচিরমিচির শোনা গেল। দুলাভাই বললেন, “আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি। ঠিক আছে আজকে রাখি।

তোমার সাথে একদিন আমি আর তোমার আপু বসে পুরা ব্যাপারটা খুলে বলব” বুঝলাম না দুলাভাই আবার নতুন করে কি শুরু করল, সত্যি কথা বলতে বুঝার ইচ্ছাও করছিল না। আমি যে কি ধরনের অস্বাভাবিক এক বাস্তবতার মুখোমুখি তা শুধু আমিই জানি! বাইরের জগতের সুখি মানুষগুলোর মত অলিক চিন্তা করার বিলাসিতায় যদি নিজেকে এক মুহূর্তের জন্যও সপে দেই তাহলেই আমি মুখ থুবড়ে পড়বো আর উঠতে পারব না। পুরনো কাসুন্দি ঘেটে আর লাভ কি, চলুক না জীবনটা জীবনের মত। ফোনটা রেখে কিছুক্ষণ সোফায় চুপচাপ বসে থাকলাম। হাতে আমার ফোন নাম্বারের ছোট ডাইরিটা।

আমার পার্সটার মধ্যে থাকে, আপুকে ফোন করার জন্য বের করে নিয়ে এসেছিলাম। আস্তে করে মাঝের পাতাটা উল্টাতেই ছোট্ট একটি স্মৃতির টুকরো টুপ করে মেঝেতে পড়ে গেল। আলতো করে হাতে তুলে দেখি সাদাটাকে মুছে বাদামি রংটা পুরোটাই তাকে গ্রাস করে নিয়েছে। বেলির সেই সুঘ্রানটিও বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট নেই। বাইরের অবয়বেই শুধু তাকে চেনা যাচ্ছে, ভিতরে সে সম্পূর্ণ মৃত।

মৃত একটি স্মৃতি। ইচ্ছা করলেই হাতের চাপে গুড়িয়ে নিঃশেষ করে দেয়া যায়। অভিমান ভরে ফেলে দিতে গিয়েও কেন জানি ফেলতে পারলাম না। সযত্নে ডাইরির পাতার ভাজে আবার রেখে দিলাম। রাসেল ভাই সপ্তাহে তিনদিন করে আমাকে পড়াতে আসতেন।

সেদিনের পর থেকে দুদিন করে পড়াতে বললাম। কিন্তু উনি যে কদিন আসতেন প্রতিদিনই আটিসের প্রসঙ্গ তুলতেন আর আমি খুব ঠান্ডাভাবে যথাসম্ভব এড়িয়ে যেতাম। আমার নির্লিপ্ত প্রতিক্রিয়া উনাকে দিন দিন কেমন যেন ক্ষেপিয়ে তুলতে লাগলো। একদিন বললেন, “সোহানা তোমার কি সাগরের জন্য বিন্দুমাত্র ফিলিংস নাই?” উনার অনধিকার চর্চাটা নিঃসন্দেহে সেদিন সীমাটা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই প্রসঙ্গে কখনই যখন আমি আমার ভদ্রতার গন্ডির বাইরে যাইনি সেদিনও তার ব্যাতিক্রম হল না।

বললাম, “রাসেল ভাই একজন বিবাহিত মেয়েকে আপনার একথা জিজ্ঞাসা করা কি ঠিক হচ্ছে?” “বিবাহিত? কিসের বিবাহিত? ঐ রাজিব যে কি চিয আমি জানি না? আমি কেন, সবাই জানে। তোমার এই রাবিশ বিয়েটার পর সবই ফাস হয়ে গেছে” “ভাইয়া উনি আমার হাসবেন্ড! এভাবে কথা বলা ঠিক হচ্ছে না আপনার” “হাসবেন্ড? ঐ হোমো তোমার হাসবেন্ড? এত বেশি পতিভক্তি দেখায়ও না। আমার তো মনে হচ্ছে সাগর তোমাকে ভালবেসে খুব ভুল করেছে। তুমি তো মনে হয় ওকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছ আর টাকার জন্য এখানে বিয়ে করেছ” রাসেল ভাইয়ের কথাগুলো আমার মনে বিন্দুমাত্র রেখাপাত করল না বললে ভুল হবে। কিন্তু কিছু বললাম না।

কথাগুলো বলে উনি কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন, “সরি সোহানা, আমার এভাবে বলা উচিৎ হয়নি” আমি একটু হেসে বললাম, “আপনার মনের কথাগুলোই বলেছেন রাসেল ভাই, আমার সম্বন্ধে সবারই তো একটি ব্যক্তিগত মতামত থাকতে পারে, ওতে আমি কিছু মনে করিনি” “না আমি খুব সরি সোহানা, আজ উঠি” রাসেল ভাই সেদিন চলে যাওয়ার পর আর এলেন না, কোনো খবরও দিলেন না। আমিও চুপচাপ রয়ে গেলাম। পড়াশনার বেহাল অবস্থাটা নিজে নিজে সামলিয়ে উঠতে আরো ছয় সাত মাস মত পার হয়ে গেল। ক্লাসের সবাই গ্রুপ স্টাডি করতো। প্রথম কদিন আমিও একটি গ্রুপে পড়েছিলাম কিন্তু দেখলাম পড়ার চেয়ে গল্পে গল্পেই সময়টা কাটে বেশি।

আর ঐ গল্পগুলোর মাঝেও আমি জুতসইভাবে অংশগ্রহন করতে পারতাম না। এখন অবশ্য বাসায় একা একা পড়ে ভালোই এগিয়ে গেছি, আর এতে রাসেল ভাইয়ের অবদানটা অস্বীকার করা যায় না। তবে প্রতিদিন সে একই রুটিন, একই পড়া, একই অভিনয়, জীবম্মৃত অবস্থাতেও হাপিয়ে উঠেছিলাম। যাকে বলে একেবারে নাভিশ্বাস উঠে যাওয়া। সেকেন্ড ইয়ারে উঠার ঠিক এক মাস পর বেমক্কা পাঁচদিনের একটানা একটা ছুটি পাওয়া গেল।

শুক্রবারের সাথে পর পর চারদিনের সরকারি ছুটি একসাথে পরে গিয়েছিল। ছুটির দুদিন আগে থেকেই কলেজে যেন উৎসব লেগে গেল। উৎসবের আমেজে আমারও মনে হতে লাগলো চার দেয়ালের এই বদ্ধ জেলখানা থেকে কোথাও বের হই। কিন্তু অমন মুক্তখোলা বুক ভরে বাতাস নেয়ার মত কোথায় যাবো। নিজের বাপের বাসা ছাড়া আর গতি নেই।

অগত্যা কলেজ থেকে বাসায় ফিরে আব্বাকেই ফোন করলাম, “হ্যালো আব্বা কেমন আছেন?” আব্বাকে উত্তরের সুযোগ না দিয়েই বললাম, “আগামীকাল রাতে বাসায় যাব। পাচদিন থাকব” “রাজিবও আসবে নাকি?” মনে মনে হাসলাম, আব্বা কি সত্যিই আমার পরিস্থিতিটা জানেন না, নাকি না জানার ভান করছেন। বললাম, “না শুধু আমি” “তাহলে ঠিক আছে। আমি দেশে যাচ্ছি রকুর মাকেও ছুটি দিয়েছি। রাজিব আসলে সমস্যা হত” “আব্বা রকুর মা থাকবে না?? আমি তো রাধতে পারি না!!” আঁতকে উঠলাম।

“তোর জন্য কিছু রেধে রেখে যেতে বলব” আমার শ্বশুরমশাইয়ের অনুমতি ছাড়াই কথাটা বলেছিলাম। দৃঢ় বিশ্বাস ছিল এতদিনের বাধ্যতার পুরস্কার স্বরূপ অনুমতি পাবো। অনুমান ভুল হল না। আজ অনেকদিন পর মনে হল আমার এই দ্বিতীয় পরিবারটা তাদের হুকুম তামিলের সাপেক্ষে মোটামুটি ভালই আদর করেন। গোছানোর তেমন কিছু ছিল না, বিয়ের সময় বাসার কাপড় কিছুই সাথে নিয়ে আসিনি।

তাই শুধু পার্সটা নিয়ে পরেরদিন একাই গাড়িতে করে বাসায় চলে এলাম। রাতে গিয়ে দেখি রকুর মা ইতিমধ্যে রকুর কাছে ময়মনসিংহে চলে গেছে। রকনুদ্দিন ওরফে রকু ময়মনসিংহ টাউনে এক বেসরকারি অফিসে পিওনের চাকরি করে চার জন সদস্যের পরিবার নিয়ে মোটামুটি দিন পার করে দেয়। মা থাকলেই পরিবারের অনটনটা আরো প্রকট হয়ে বুঝা যায়, বউ আর শ্বাশুড়ীতে সারাক্ষন লেগে থাকে ঝগড়া। তাই আমাদের বাসায় থেকে খেয়ে কাজ করে বছরে যে দু-একবার ছেলের পরিবারের সাথে হাতে উপহারের পোটলা নিয়ে দেখা করে আসে সে ব্যবস্থাটাই রকুর মাকে মেনে নিতে হয়েছে।

কথাটা মনে হতেই কেমন যেন একটা কষ্ট হল। এতদিনের এই জানা ঘটনাটা মনে করে আজ হঠাৎ করে কেন মনটা এমন করে উঠলো বুঝলাম না। প্রতিটি মেয়েকেই কি এত বেশি কম্প্রোমাইজ করতে হয়। গরীব মধ্যবিত্ত ধনীতে কি এই কম্প্রোমাইজের কোনো পার্থক্য নেই। হঠাৎ মনে হল আটিসের সাথে বিয়ে হলে আমার বুঝি কি কম্প্রোমাইজ করতে হত, ভালোবাসাটাই হয়তো মরে যেত, অভাব খুব বাজে একটা জিনিস।

তারচেয়ে এই ভাল, ওকে ভালোবাসা, ওর সাথে সংসার করা, একসাথে হাত ধরে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে বুড়ো হয়ে যাওয়ার সপ্নগুলো বাস্তবতার সত্যতার সাথে কম্প্রোমাইজ করতে হল না। আব্বা ভোরের গাড়ি ধরবেন। আমাকে দরজা খুলে দিয়ে, চুলোর পানিটা ফুটলে নিভিয়ে দিতে বলে শুয়ে পড়লেন। রকুর মা আমার জন্য আমার প্রিয় চ্যাপা শুঁটকির ভর্তা করে রেখেছিলো। ভাত খেয়ে কতদিন পর আমার ঘরটাতে গেলাম।

খুব মুক্ত মুক্ত লাগলো নিজেকে। সেই পুরানো খাট টেবিল আর সেই জানালাটা। আস্তে করে জানালাটার কাছে গিয়ে দাড়ালাম। আটিসের ঘরের বাতি নেভানো, জানালার কাঠের কপাট দুটো বন্ধ। তার মানে ঘরে নেই।

হয়তো হোস্টেলে। ভালই হল, নাহলে হয়তো চাপা পড়া প্রায় ভুলে যাওয়া অনুভূতিগুলো আমাকে পাগল করে তুলতো। এই পাঁচটা দিন শান্তিতেই কাটবে। শান্তি যে আমার কপালে সয় না সে কথাটা কোন কুক্ষণে যে ভুলে গিয়েছিলাম! আধা ঘন্টা পর কারেন্ট চলে যাওয়াতে চার্জার লাইটের আলোতে গরম পানির চুলাটা নিভাতে গিয়েই বিপত্তি। বাম হাতে ফুটন্ত গরম পানি পরে কিছুটা অংশ লাল হয়ে প্রচণ্ড জ্বালা করতে লাগলো।

ফ্রিজের ডিপ চেম্বারটা খুলে বরফ নিতে গিয়ে গা’টা গুলিয়ে উঠলো। স্বচ্ছ প্যাকেটের মধ্যে কিছু কাটা মাংসের টুকরো। কলেজের লাশগুলোর কথা মনে পড়লো। বরফের বদলে কল ছেড়ে হাতটা পানির নীচে ধরতে ধরতে পানি চলে গেল। কারেন্টও নেই যে পানি তুলবো।

ঘন্টা দেড়েক পর কলে পানি আসলেও ততক্ষণে হাতের দফারফা হয়ে গেছে। সারা রাত যন্ত্রণায় ঘুম এল না। ভোরে আব্বা চলে যাওয়ার সময় উঠে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে আবার শুয়ে পড়লাম। ফোসকা পড়ে ভিতরে পানি জমতে জমতে সন্ধ্যা নাগাদ ফুলে ঢাউস হয়ে গেল আর যন্ত্রনার শেষ সীমায় পৌছালো। আমি আর না পেরে সেপ্টিপিন দিয়ে ফুটো করে দিলাম।

ব্যাথাটা কমে এল। সারাদিন অল্প অল্প করে ভাত আর চ্যাপা শুটকির ভর্তাটা খেয়ে রাতে একেবারে সব চেটে পুটে শেষ করে ঘুম দিলাম। সকালে উঠে দেখি জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে। ঘরে প্যারাসেটামল কেন কোনো ওষুধই নাই। আব্বা বোধ হয় সব সাথে নিয়ে গেছে।

জ্বর বাড়তে থাকলো। কোনো উপায় না দেখে আপুকে ফোন করে বললাম। আপু বললেন ওষুধ কিনে দুলাভাইয়ের হাতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কতক্ষণ পর ঠিক খেয়াল নেই, বাইরের দরজার বেলটা বাজলো। উঠতে গিয়ে দেখি মাথা ঘুরছে।

কোনো মতে টলতে টলতে উঠে চেয়ার টেবিল দরজা সব ধরে ধরে ঘোরের মধ্যে চলতে লাগলাম। মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী আমার চারদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। একটু থেমে চোখ বন্ধ রেখে আবার একটু এগিয়ে, এভাবে যেতে বেশ সময় লাগছিল, জ্বরের জন্য মাথাটা এত ঘুরছিল যে সামনে এগোতেই পারছিলাম না। এদিকে দুলাভাই সমানে বেল দিয়ে যাচ্ছেন। অনেক কষ্টে দরজার কাছে পৌছে মাথা উচু করে উপরের ছিটকিনিটার দিকে তাকাতে পারলাম না।

মাথাটা নিচে ঝুকিয়ে হাতরে হাতরে কোনো মতে ছিটকিনিটা খুলে দরজাটা খুললাম। “সোহানা???” চমকে হঠাৎ উপরে তাকালাম। পরক্ষনেই মাথাটা ঘুরে গিয়ে চারদিক অন্ধকার হয়ে এল। শুধু এক পলকের জন্য দেখলাম আটিসকে। পড়ে যেতে যেতে অনুভব করলাম দুটো হাত আমাকে চট করে ধরে ফেলল।

কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, “সোহানা একি হাল করেছো তোমার??.........” আরো কি যেন বলছিলো ও’। কিন্তু তারপর আর কিছু মনে নেই। ............চলবে ১ম পর্ব ২য় পর্ব ৩য় পর্ব ৪র্থ পর্ব ৫ম পর্ব ৬ষ্ঠ পর্ব ৭ম পর্ব ৮ম পর্ব ৯ম পর্ব ১০ম পর্ব ১১তম পর্ব


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।