আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রতি চারদিনে একজন বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ। গত ১০ বছরে স্বীকৃত হিসাব মতে এক হাজার বাংলাদেশীকে শহীদ করেছে বিএসএফ। কিন্তু এর শেষ কোথায়?



আর কতো বাংলাদেশী অকাতরে প্রাণ হারাবে? এই কী সৎ বন্ধুসুলভ প্রতিবেশির নমুনা? গত শুক্রবার ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ায় আটকে গিয়েছিলো বাংলাদেশী মেয়ে ১৫ বৎসরের ফেলানীর জামা। তা ছুটাতে চেয়েছিলো সে। কিন' ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফ-এর এক ঝাঁক গুলিতে গোটা জীবন থেকেই ছুটে গেলো সে। সাড়ে চার ঘণ্টা ঝুলন্ত ছিলো তার লাশ। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে বিএসএফ-এর গুলিতে নির্মমভাবে নিহত বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানীর লাশ অবশেষে গতকাল হস্তান্তর করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী (১৫) নিহত হওয়ার ঘটনায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী ও নাগেশ্বরী উপজেলায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে গত শনিবার হাজার হাজার মানুষ সীমান্তে বিক্ষোভ করে। ৩০ ঘণ্টা পর শনিবার বিএসএফ ফেলানীর লাশ ফেরত দিয়েছে। আইনি-প্রক্রিয়া শেষে গতকাল রোববার স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। পতাকা বৈঠকের পর বিএসএফ লাশ ফেরত দিয়েছে।

ফেলানী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অনাকাঙ্খিত ও মানবতাবিরোধী। গতপরশু ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে ফেলানীর লাশ দেখার জন্য তীব্র শীত উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ সেখানে সমবেত হয়েছে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে লাশ হস্তান্তরের সময় তাদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা সবাই বিএসএফ-এর এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন। সবাই অভিযোগ করেন, সীমান্তে প্রায়ই বিএসএফ বিনা উসকানিতে গুলি করে মানুষ মারে।

এটা মেনে নেয়া যায় না। উল্লেখ্য, বিএসএফ বাংলাদেশের ভূমি দখল করে বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা, নির্যাতন এবং অপহরণ-অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। দুটি দেশের দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সীমান্ত সমস্যার মধ্যেও বাংলাদেশ কয়েক দশক ধরে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করে আসছে। এদিকে ফেলানীর রক্তের দাগ না শুকাতেই গত পরশু শনিবার রাতে রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানা এলাকার খানপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। তবে বিএসএফ তাদের লাশ ফেরত দেয়নি।

প্রসঙ্গত গতকাল ‘দেনিক আল ইহসান’-এর শেষ পৃষ্ঠায় হেডিং হয়েছে, ‘২০১০ সালে ৭৪ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ। ’ খবরে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে বিএসএফ ৭৪ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। একই সময় তাদের হাতে ৭২ জন আহত এবং ৪৩ জন অপহৃত হয়েছে। ২০১০ সালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় বিএসএফ’র মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়, বিএসএফ গত এক বছরে ৭৪ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। এদের মধ্যে ৫০ জনকে গুলি করে, ২৪ জনকে নির্যাতনের মাধ্যমে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।

তাছাড়া আহত ৭২ জনের মধ্যে ৩২ জনকে নির্যাতন এবং ৪০ জনকে গুলিবিদ্ধ করে আহত করা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পাকিস্তান-আফগান সীমান্ত পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক সীমান্ত হলেও হত্যাকাণ্ডের হিসেবে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সবার শীর্ষে। ভারত ও বাংলাদেশ বন্ধুপ্রতীম দেশ বলে প্রচার করা হলেও গত ১০ বছরে প্রায় এক হাজার নিরীহ বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষি বাহিনী (বিএসএফ)। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের সঙ্গে অসংখ্যবার বৈঠক করলেও সীমান্ত হত্যা কমছে না। পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, ভারতের বড়ভাই সুলভ আচরণ ও ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির লঙ্ঘনের কারণেই সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বাড়ছে।

এছাড়া বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে এ হত্যাকাণ্ড বন্ধ হচ্ছে না বলে মনে করছেন তারা। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত বিরোধ দীর্ঘদিনের। তিনবিঘা, মুহুরির চর ও নিউ মুর আইল্যান্ডের বিষয়টি আজও অমীমাংসিত। সাড়ে ছয় কিলোমিটার সীমান্ত এখনও অচিহ্নিত রয়ে গেছে। বলাবাহুল্য, সীমান্তে নিরীহ মানুষ নিহত হওয়ার বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর।

সীমান্ত নিয়ে ভারতের একটি উদ্বেগের বিষয় হল. উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া। আগে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করা হতো। এখন বলা হচ্ছে, তেমন কেনো ঘটনা ঘটলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে সুস্পষ্ট আশ্বাস পেয়েছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে একটা পরিবর্তন এসেছে।

উল্লেখ্য, সীমান্ত রক্ষায় দু’দেশেরই সীমান্তরক্ষী বাহিনী রয়েছে। রয়েছে নির্দিষ্ট আইন। কিন্তু কোন অঘটনের ফলে যে সমস্যাগুলো সৃষ্টি হচ্ছে, তা সমাধানে আন্তর্জাতিক বিধানগুলো ঠিকমতো অনুসরণ করা হচ্ছে না। ভারত এক্ষেত্রে সংযম প্রদর্শন করছে না। অথচ অনেক দেশের ক্ষেত্রেই ভারত অনুরূপ পরিসি'তিতে সংযম প্রদর্শন করে থাকে।

সঙ্কটকালে কী করা হবে, সেই ব্যবস্থাপনাটায় ঘাটতি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সচিব, মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক করা ছাড়া কোনো কার্যকর বা স্থায়ী ব্যবস্থা চালু হয়নি। এ বৈঠকগুলোও নিয়মিত হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক বছরে দু’বার হওয়ার কথা- একবার বাংলাদেশে, আরেকবার ভারতে। কিন' তা হচ্ছে না।

বলার অপেক্ষা রাখে না, ভারত সব সময় বাংলাদেশর সাথে বড়ভাই সুলভ আচরণ করেন। তারা মুখে বাংলাদেশকে অন্যতম প্রতিবেশি হিসেবে স্বীকার করলেও বাস্তবে অবজ্ঞার চোখেই দেখেন। সে কারণে তাদের সীমান্ত বাহিনীর হাতে নিরীহ বাংলাদেশি প্রাণ দিচ্ছে। এটা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বিএসএফ-এর হাতে অকাতরে বাংলাদেশি জনগণ প্রাণ দিলেও কোনো সরকার এর বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করে না।

ফলে ভারত সরকার বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এদিকে বিএসএফ-এর হাতে নিরীহ বাংলাদেশি হত্যাকে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইন্দিরা চুক্তিতে বলা আছে, প্রতিবেশি দেশের কোনো নাগরিক যদি অবৈধভাবে সীমান্তে অনুপ্রবেশ করেন, তাহলে তার বিচার হবে ইমিগ্রেশন আইনে। সীমান্তে গুলি করে মানুষ হত্যা সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। এর জন্য দায়ী বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.