আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গণতন্ত্র নিপাত যাক, সৈরাচার মুক্তি পাক!

সত্যানুসন্ধিৎসু
সরকারের ঘাড়ে এখন হাজার মন ওজনের ডিজিটাল ভূত, সেই ভূতের কারসাজিতে সরকার ধরাশায়ী হবার পথে। বিগত দেড় বছরে একটা ডিজিটাল সরকার জনগণকে কোনোকিছুই দিতে পারে নি। ভবিষ্যতের ডিজিটাল স্বপ্ন অনেকটাই ঝাপ্সা হয়ে এসেছে। প্রশাসনের অভ্যন্তরের দুস্কৃতিকারিদেরকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা সম্ভব হয়নি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের লাগামছাড়া দাম কমাতে মন্ত্রীদের লাফঝাঁপ থেমে গেছে। মার্কেটিং ও বাজারব্যবস্থাপনা থেকে সরকার পাততাড়ি গুটিয়ে সটকে পড়েছে।

শুধুমাত্র ভবিষ্যতের কথা ভেবে ‘অন্ন’ সংস্থানের পরিকল্পনা মাথায় রেখে বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেচের জমিতে। শহুরে লোকজনকে বিদ্যুৎবিহীন জীবন-যাপনে বাধ্য করা হচ্ছে এবং তারাও নতুন চাপিয়ে দেওয়া ব্যবস্থায় ৩/৪ বছরের মাথায় অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার রোগী হাসপাতাল ও ঢাকার বাসা-বাড়িতে বিনা-বাতাসে, দমবন্ধ হয়ে, রোগে-শোকে মরছে, স্কুল-কলেজের বিদ্যার্থীরা চরম কষ্টে লেখাপড়া চালিয়ে গেছে মোমবাতি কিংবা চাইনিজ রিচার্জেবল ব্যাটারীর অনুজ্জ্বল আলোয়। রাজধানীর কলকারখানা ব্যবসা-বাণিজ্য বলতে গেলে বন্ধ। মন্ত্রীমহোদয়দের ঝান্ডাওয়ালা গাড়ি রাস্তায় বেশি একটা দেখা যায় না এখন।

বৈদেশিক ইনভেস্টরদের মধ্যে যে আশার সঞ্চার হয়েছিল তাও ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে গ্যাস-বিদ্যুতের এই অবস্থার কারণে। তবে রাস্তায় দাঁড়ালে মন্ত্রীদের ঘুমের নাক ডাকা শব্দ শোনা যায়। বর্তমানের সমস্যাগুলো মিটাতে ব্যর্থ হয়ে তারা এখন ২০২১ সালের পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে। জাতির মেরুদণ্ড তৈরিতে শিক্ষামন্ত্রীকে যেভাবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি। অন্যদের ধমকানীর চোটে মন্ত্রী এখন সোজাপথে চলার চেষ্টা করছেন।

সিনিয়রদের সৎ পরামর্শের ঠেলায় অতীষ্ট প্রতিমন্ত্রী তাজ দেশ ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি দিয়েছেন। এখন আর তার খোঁজ কেউ রাখে না। একরোখা তাজেরও প্রতিজ্ঞা, দেশ জাহান্নামে যাক, তিনি দেশে ফিরবেন না। দুর্নীতিবাজ ও নব্য জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের লেখনীর বরকতে বাকস্বাধীনতা হরণের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। যমুনা টিভি, চ্যানেল ওয়ান টিভি, আমার দেশ বন্ধ হয়েছে।

তা হোক, তাতে দেশের মানুষের কোনোকিছু আসে যায় না। আগে যখন যমুনা টিভি, চ্যানেল ওয়ান টিভি, আমার দেশ ছিল না তখনও তো দেশ চলেছে। সামনের দিনগুলোতেও চলবে। যে দেশে দুর্নীতিবাজ ছাড়া দেশ শাসন করা যায় না, নীতিহীনতাই যেখানে নীতি সেই দেশে অদুর্নীতিবাজ মন্ত্রীদের নিয়োগ দিয়ে আবালের প্রশাসনে পরিণত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের বিবেচনায় পাশ সার্টিফিকেট মিলেছে, নির্বাচনে মানুষ ভোট দিয়ে জয়যুক্তও করেছে।

দুর্নীতি দমন ব্যুরোর মামলায় উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষতি হয়নি। হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্ট করে খালাস পাওয়া গেছে। এতোদিন দেশ চালিয়ে কিছু বদনাম তো হবেই। সবাই কি আর সমান বোঝে? এখানে আদর্শই আসল, আদর্শ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এই চেতনা ঠিক থাকলে টুকটাক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি কিছু না।

গ্রামের মানুষ, আত্মীয়-স্বজন, গরীব-দুখীকে তো ফেলে দেওয়া যায় না, তাদের নিয়ে রাজনীতি করতে হয়। তাই তাদের একটু অন্য চোখে দেখার দরকার আছে। এটা দেখতে না পারলে আর মন্ত্রী হয়ে লাভ কি? ছাত্রলীগের বাড় বেড়ছে, দল ক্ষমতায় গেলে ওরা তো একটু বাড়বেই। সেজন্য দলীয় পৃষ্ঠপোষক তো আগেই পদত্যাগ করেছেন। তিনি দেখাতে চেয়েছেন, ছাত্ররা নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখুক।

টেন্ডারবাজি এই দেশে কে না করেছে? তাছাড়া দলের হয়ে কাজ করতে গেলে তো টাকা লাগে, সেই টাকা ছাত্ররা কোথায় পাবে? ইডেন কলেজের নেতৃদের আগেই সাবধান করে দেয়া হয়েছিল, যা করবা, সাবধানে করবা, লোকে যেন না জানে, না বোঝে। কিন্তু ওরা কথা শোনে নি। কথা শুনলে আরও বহুদিন করে-কর্মা খেতে পারতো। হা বেচারিরা! নেতৃ বলেছেন, আগের সরকার পাঁচ বছরে যা করেনি আমরা তা দেড়বছরে করেছি। কি করেছেন তা উনিই ভাল জানেন।

দেশের মানুষের চোখে এখনো কিছু পড়েনি। বড় বড় কিছু প্লান-প্রোগ্রাম করা হচ্ছে যেগুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের চেহারাই পাল্টে যাবে! যেমন, পদ্মাসেতু, নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, পাতালরেল ইত্যাদি। তবে ঢাকাবাসীর বুকের ওপর থেকে সেনানীবাস আর দু’দুটো বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হবে কিনা তা জানা যায় নি। কারণ, আসল কাজই হবে কিনা তারই তো কোনো ঠিক নাই। ফিতা কাটার মওসুম এসেও যেন আসছে না।

রূপপুর পারমানবিক প্রকল্প নিয়ে কয়েকদিন তাফালিং করে এখন আর সেব্যাপারে কেউ কিছু বলছে না। তার মানে আগের মতই কি সব ফাইলপত্র পুরনো গুদামে স্থানান্তরিত হয়ে গেল নাকি, বোঝা যাচ্ছে না। বিরোধীদল বলেছে, আগামী ২৭ জুন থেকে দেশে আবার হরতাল শুরু করা হবে। সরকার কি করবেন? হরতাল ঠেকাবেন নাকি সবকিছু ডিজিটাল করবেন? আপনি বলেছিলেন, মন্ত্রীদের ছ’মাস সময় দিয়ে টেস্ট করবেন, তারপর প্রয়োজন হলে খেদাবেন বলেছিলেন। এখনো কি খেদানোর সময় হয় নি? দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, বৈদেশিকমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সবাই মহিলা, এতে করে বিদেশের কাছে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি নাকি হাজারগুণে বেড়ে গেছে।

আপনার মহিলামন্ত্রীরা জনগণের সমস্যা বুঝুক বা না বুঝুক, দেশে-বিদেশে সুনাম বা বদনাম হোক বা না হোক, ভাবমুর্তি দিয়ে আসলে কোনো কাজের কাজ হচ্ছে না, দরকার দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন। সেই কাজটার জন্য চল্লিশ বছর ধরে জাতি অপেক্ষা করছে। আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে? আপনার স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী বলেছিলেন, আপনি নাকি দিন-রাত জি-সিনেমা নিয়ে পড়ে থাকেন, আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে কী করবেন? আবার পত্রপত্রিকায় দেখা গেলো, আপনি বিশ্বকাপের সবগুলো খেলা দেখবেন - বিদ্যুৎ থাক বা না-ই থাক। এই খেলা দেখেই বা কী করবেন? আপনি তো প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাজ পড়ে আছে বিশ্বব্যাপী, কারণ আপনি আগামীদিনের ইতিহাসের অংশ। আপনাকে নিয়ে নতুন ইতিহাস লেখা হবে।

আর আপনি কিনা সব কাজ ফেলে টিভিতে মাসব্যাপী ফুটবল খেলা দেখবেন? এমন হয়তো পৃথিবীর কোনো ধনী দেশের সরকার প্রধানও দেখবেন না। কারণ তাদের মাথায় কাজের চিন্তা থাকবে। কাজ ফেলে রেখে প্রধানমন্ত্রী আবার ওইভাবে ঘরে বসে খেলা দেখে নাকি? আপনিই তো পত্রিকার সাংবাদিককে সাক্ষাতকার দিয়ে বলেছিলন, আপনি হচ্ছেন রাজকন্যা, যে রাজকন্যার খোঁজ কেউ রাখে না। বাংলাদেশের রাজকন্যা তো একজনই। জাতির প্রতি রাজকন্যার কি কোনো দায়িত্ববোধ নেই? নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, ১০টা কেজি দরে চাল খাওয়াবেন দেশের মানুষকে যদি তারা ভোট দেয়।

ভোট তো তারা মন খুলেই দিয়েছিল। কিন্তু চালের কেজি আর ১০টাকা হলো না। কেন হলো না? এখন আপনার মন্ত্রীরা বলে বেড়ায়, ওই কথা বলি নি। গরীব মানুষগুলো সাহায্যার্থে ভর্তুকিমূল্যে চাল বিক্রি চলছে। ওই ভর্তুকির টাকা তো জনগণেরই টাকা।

সেই টাকা ওভাবে ব্যায় না করে কি কোনো বিকল্প ব্যবস্থা করা যায়নি? জনগণকে নিয়ে কি কোনো রাজকন্যা ব্যবসা করেছে - এমন ইতিহাস দুনিয়ায় আছে? কেউ কেউ বলছে, এটা কানাকে রথ দেখানোর পলিসি। আসলেই কি তাই? আপনি নাকি অর্থনীতি বোঝেন না, লোকে বলে। মাথায় কোনো ক্রিয়েটিভ চিন্তাভাবনা নেই। ওইভাবে চিন্তা করার ক্ষমতাও নাকি আপনার নেই। প্রধানমন্ত্রী হতে গেলে তো এগুলো বেসিক নলেজের মধ্যে পড়ে।

বিরোধীদলীয় নেতার যোগ্যতার কথা বলবেন? হ্যা, উনি তো নাইন পাশ, প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন দুই টার্ম। তা থাককু, তাঁর সঙ্গে তো আর আপনার তুলনা করা চলে না। চলে? ভোট দিয়ে কথা। এর নামই গণতন্ত্র। যোগ্যতা থাক বা না-ই থাক, ভোটে জিতলেই হলো।

আস্তে আস্তে সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। পাঁচ বছরের মধ্যে আর মাত্র সাড়ে তিন বছর বাকি। এরমধ্যে আর কি-ই বা করতে পারবেন? আপনার পরামর্শকরা বলেন, জামাতের লোকেরা বিদ্যুতের মেসিনের নাট-বোল্ট নাকি খুলে রাখে, তাই ঠিকমত সরবরাহ হচ্ছে না। কারিগরী মারপ্যাঁচ দেখিয়ে লোডশেডিংয়ের কবলে রাজধানীবাসীকে কাঁচকলা দেখাচ্ছে। আপনি তো সেদিনও বলেছিলেন, যারা প্রশাসনের অভ্যন্তরে থেকে এই ধরনের অপকর্ম করবে তাদেরকে যেন সাথে সাথে চাকুরিচ্যুত করা হয়।

কিন্তু এযাবত তো এক জনেরও চাকুরচ্যুতি ঘটলো না। তাহলে কি কেউ আপনার কথা শুনছে না? প্রধানমন্ত্রীর কথার অবমাননা? এটা কি হয়? আমরা হতাশ! কী চেয়েছিলাম আর কীযে পেলাম। চট্টগ্রামের মানুষগুলোই বা কী দেখালো বিগত সিটিকর্পোরেশন নির্বাচনে? মাত্র দেড় বছর আপনারা ক্ষমতায় এসেছেন, দেশে তো এমন কোনো ক্রাইসিস দেখা দেয়নি যে, সরকার সমাধান দিতে পারেনি? চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস, খুন-খারাবিও আগের মত নাই। ভূখামিছিলও হচ্ছে না। বিরোধীদলের অনেক নেতাই এখন জেলে বন্দী।

সেসব দুর্নাম এখনও ঘোঁচেনি। সিনিয়র যুগ্মমহাসচীবও এখন পর্যন্ত দেশের বাইরে। তবু কেন এই ভরাডুবি? এখন দিনে-রাতে ৫০ থেকে ১০০ বার বিদ্যুৎ যায়-আসে। মানুষ ত্যাক্ত-বিরক্ত। অবশ্য মিছিল-মিটিং, প্রতিবাদ-সমাবেশ নেই।

এব্যাপারে একটি গাড়িও পোড়ানো হয়নি। তবু কেন চট্টগ্রামের নির্বাচনে হেরে গেলেন? একমাত্র বিদ্যুতের নাট-বোল্ট খুলেই জনগণকে বিভ্রান্ত করে ফেললো তারা? এইরকম চললে তো দেখি আগামীদিনের যে কোনো নির্বাচনেই আপনাকে হারতে হবে, মনে হচ্ছে এগুলো তারই আলামত। ঘটনা কি, কিছু বুঝতে পারছেন? আপনাদের কাজ-কর্মে সন্তুষ্ট হতে না পেরে এগুলো নীরব প্রতিবাদ নয় তো? আপনাদেরও তো সেরকম দিন আসছে বলেই আশংকা হচ্ছে। বিরোধীদলও এক সময় দুই-তৃতীয়াংশ সিট নিয়ে সংসদে গিয়েছিল, আজ তাদের মাত্র ৩০টি সিট নিয়ে সংসদে যেতে হয়। এটা আপনাদেরও তো মনে রাখা দরকার।

তাই না? ঘাড় থেকে ভূত তাড়াবার কি কোনও ব্যবস্থা নেই? নাকি শ্লোগান দিয়ে বলতে হবে, গণতন্ত্র নিপাত যাক, সৈরাচার মুক্তি পাক!
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.