আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উপহাস

অন্যায়কে বিদূরিত করে সত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাই

চোরটি ধরা পড়েছে। কিছুক্ষন আগে প্রসাধন সামগ্রীর দোকানে চুরি করতে গিয়ে একেবারে হাতেনাতে। আশেপাশের জনতা উৎফুল্ল, উল্লসিত। আমিও একজন দর্শক হিসেবে যারপরনাই আনন্দিত। কোমরে রশি বেঁধে তাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় একটি খোলা জায়গায়।

সেখানে অসংখ্য লোক চোরটিকে একনজর দেখার জন্য ঘিরে ধরে। একজন অতি-উৎসাহী তাকে জিজ্ঞেস করে, ‘অই, নাম কি?’ চোরটি ভীত-সন্ত্রস্ত চোখে তাকিয়ে জবাব দেয়, ‘আবুল কাশেম। ‘ লোকটি এবার নাক সিঁটকে বলে ওঠে, ‘অ, কাশেইম্যা চোরা?’ সাথে সাথে উপস্থিত জনতার মাঝে হাসির ঢেউ খেলে যায়। চোরটি ভীত চোখে সবার কাছে করুণা ভিক্ষা চায়। বিড়বিড় করে কি আওড়ে চলে সে নিজেও জানেনা।

কয়েকটি লোক এগিয়ে এসে মোটা রশি দিয়ে চোরটির হাত-পা বেঁধে ফেলে। চারপাশের সব মানুষের উৎসুক দৃষ্টি তার দিকে। কারো কারো ঠোঁটে অবজ্ঞার হাসি। যুবকদের মধ্যে একজন এসে বলা নেই, কওয়া নেই, চোরটির মুখে বসিয়ে দেয় প্রচন্ড এক ঘুষি। চারদিকে হৈ হৈ হর্ষধ্বনি ওঠে।

ভিড়ের মধ্য থেকে মাঝবয়েসী একজন লোক বলে ওঠে, ‘এইভাবে হইবো না, হেরে ডান্ডা দিয়া পিটাইয়া হাড্ডিমাংস সব এক কইরা দেও। ‘ চোরটি অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকে। ঠোঁট ফেটে তার রক্ত গড়িয়ে পড়ে। তখনই বুকের কোথায় যেন চিনচিনে একটা ব্যথা অনুভব করি। আশপাশের মানুষগুলোর প্রতি তীব্র ঘৃণা জেগে ওঠে।

না, চোরটির প্রতি দয়াপরবশ হয়ে নয়। আমাদের দেশে পুকুর চুরি যারা করে, সেসব কালোবাজারী, ঋণখেলাপীদের সামনে নতজানু এসব মানুষের ন্যায়বিচারক সাজার নাটক দেখে ঘৃণায় চোখ-মুখ কুঁচকে আসে আমার। আমার একার মুখ খোলার উপায় নেই। খুললে আমাকেও চোরের সঙ্গী সাজানো হবে। তাই আমি চোরটির উপর আশপাশের মানুষগুলোর এলোপাতারি পিটুনি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি, দেখি মানবতার প্রতি চরম উপহাস।

একদিন মানবতাও কি এভাবে আমাদের প্রতি উপহাস ছুড়ে দেবে? লুপ্ত মানবতা কি দুর থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসবে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।