আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রসগোল্লা মন্ত্রীসভা!!!


গত বছর জানুয়ারী মাসের কথা। নির্বাচনে জয়লাভ করে শেখ হাসিনার আচরণ তখন উচ্ছল তরুণীর মতো। মন্ত্রিসভার আকার এবং সম্ভাব্য সদস্যদের নিয়ে গণমাধ্যমে প্রবল আগ্রহ। শেখ হাসিনার কাছে মন্ত্রিসভার আকার প্রসঙ্গে এক সাংবাদিক জানতে চাইলে তিনি চপলকণ্ঠে জবাব দিয়েছিলেন, মন্ত্রিসভার আকার হবে রসগোল্লার মতো। কী ভেবে শেখ হাসিনা সম্ভাব্য মন্ত্রিসভাকে রসগোল্লার সাথে তুলনা করেছিলেন তা তিনিই ভালো জানেন।

তবে তার ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাওয়ার জন্য সেই দূরদৃষ্টির প্রশংসা না করে পারছি না। রসগোল্লা বাংলাদেশের এক অতি বিখ্যাত ও সুস্বাদু মিষ্টান্ন; তাতে কোনো সন্দেহ না থাকলেও আমাদের বাল্যকালে সাধারণত পরীক্ষায় কম নম্বর প্রাপ্তির সাথেই বেচারা রসগোল্লাকে অপমানজনকভাবে টেনে আনা হতো। মধ্যবিত্ত পরিবারের বালকদের মন দিয়ে লেখাপড়াই আখেরের একমাত্র ভরসা। বাল্য ও কৈশোরের চঞ্চলতায় সেই লেখাপড়ায় প্রায়ই গাফিলতি হয়ে যেত। আর সে রকমটি হলেই নানীর অবধারিত বকাবকির ভাষা হতো, লেখাপড়া না করে রাতদিন খেলে বেড়ালে শেষে পরীক্ষায় তো রসগোল্লা পাবে।

গত পনেরো মাসে বেশির ভাগ মন্ত্রী-উপদেষ্টার বচনামৃত রসগোল্লার মতো মিষ্টি না লেগে জনগণের কাছে চিরতার মতো তেঁতো লাগলেও তাদের কাজের মূল্যায়নে আমার মরহুম নানীর অতি পছন্দের রসগোল্লার তুলনা আসতে বাধ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার প্রমাণ এখানেই। কলম বìধ করে দীর্ঘক্ষণ একেবারে নির্মোহভাবে একটি অন্তত সফল মন্ত্রণালয় খুঁজে বের করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উচ্চমূল্য দেখতে পাচ্ছি আজকাল জনগণের বেশ গা সওয়া হয়ে গেছে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে মসুরের ডালের দাম রমজান মাসে কেজিপ্রতি ৬০ টাকায় ওঠায় ক্রেতাদের সরকারের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করতে শুনেছি।

আর এখন ১২০ টাকা থেকে কেজিপ্রতি মাত্র পাঁচ টাকা দাম কমলে সরকার সমর্থক গণমাধ্যমে দাম কমেছে, দাম কমেছে বলে রীতিমতো আনন্দ-উৎসব শুরু হয়ে যায়। বাজারে উচ্চ দ্রব্যমূল্য নিয়ে কথিত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ জানানোর জন্য জনগণকে ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর দেয়ার নাটক করে বাণিজ্যমন্ত্রী ক’দিন আওয়ামী সংবাদমাধ্যমের বাহবা কুড়িয়েছিলেন। মনে হয়েছিল যেন রাজা-বাদশাহ্র যুগে ফেরত গেছি। রাজবাড়ীর সিংহদরজার বাইরে ঝোলানো নালিশের ঘন্টা বাজালেই কেল্লা ফতে। রাজার অমাত্যবর্গ ছুটে এসে প্রজার দু:খ লাঘবের ব্যবস্খা করে দেবে।

কিন্তু মোবাইল ফোন আর আদিকালের ঘন্টার মধ্যে অনেক ফারাক। এ যুগের ডিজিটাল যন্ত্রটিকে ইচ্ছে করলেই যে বìধ করে রাখা যায় সেটি বোধ হয় মিডিয়ার কর্মী কিংবা অসহায় ক্রেতা কেউই বুঝতে পারেননি। কয়েকবার চেষ্টা করেও বাণিজ্যমন্ত্রীপ্রদত্ত মোবাইল নম্বর বìধ পেয়ে সবাই শেষ পর্যন্ত রণে ভঙ্গ দিয়েছে। শোনা যায়, ওপরের নির্দেশে মন্ত্রী মহোদয় এখন গণমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়াই কমিয়ে দিয়েছেন। অবশ্য, মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর থেকে জনাব ফারুক খান তার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখভাল করার পরিবর্তে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ যেমন- বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে ইসলামি জঙ্গি খোঁজা, বাংলাদেশের নাগরিকদের কাছে শত মুখে ভারতের টিপাইমুখ বাঁধের গুণকীর্তন, বাংলাদেশের রাস্তাঘাট ও নৌবন্দর থেকে সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত ভারতের হাতে চিরস্খায়ীভাবে তুলে দেয়ার ত্বরিত ব্যবস্খা ইত্যাদিতেই অধিকতর ব্যস্ত যে ছিলেন­ এটাও বাস্তবতা।

নির্বাচন-পূর্ব প্রচারাভিযানকালে শেখ হাসিনা গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সমস্যা সমাধানকল্পে যেভাবে এন্তার সব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মোহাবিষ্ট করেছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল তার হাতে নিশ্চয়ই লুকানো আলাদিনের চেরাগ-টেরাগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর দেখা গেল জনগণের সমস্যা আর তার অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই। গত পনেরো মাসে কেবল বিচার, মামলা, ভারতের এজেন্ডা পূরণ এবং নামবদল সংক্রান্ত কাজকর্ম সরকারকে এতটাই ব্যস্ত রেখেছে যে দেশের পনেরো কোটি জনগণের জীবনধারণ সংক্রান্ত কোনো সমস্যাই তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়নি। জনগণকে ধৈর্যের শেষ সীমায় ঠেলে দেয়ার পর এখন তারা সরকারি নিয়ম-কানুন গোল্লায় দিয়ে দুর্নীতির ডিজিটাল ফর্মুলা প্রয়োগে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যা সমাধানের ঘোষণা দিয়েছেন। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংক্রান্ত সব প্রকল্প এখন থেকে নাকি বিনা দরপত্রেই অনুমোদন করা হবে।

সরকারের চরম ব্যর্থতায় জনগণ এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছে যে, সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় টিভি তারকা এক আইনের অধ্যাপককে পর্যন্ত বিনা টেন্ডারে কাজকর্ম দেয়ার উদ্যোগকে প্রকারান্তরে সমর্থনই করতে শুনলাম। এক-এগারোর পর এই অধ্যাপককেই রাজনৈতিক সরকারের দুর্নীতি নিয়ে সমালোচনায় মুখর থাকতে দেখেছি। বিনা টেন্ডারে কাজ দেয়ার এই উদ্যোগ দুর্নীতিকে যে সর্বগ্রাসী করে তুলবে এটা একজন আইনের অধ্যাপক হয়ে তিনি বোঝেন না মনে করার কোনো কারণ নেই। আসল কথা অধ্যাপক মহোদয় নিত্যদিনের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির এই দুর্ভিক্ষ থেকে যেকোনো মূল্যে মুক্তি চাইছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুশীল (?) অধ্যাপক যদি এতটা মরিয়া হয়ে থাকেন তাহলে সাধারণ জনগণের অবস্খা সহজেই অনুমেয়।

আমার প্রশ্ন হলো, দীর্ঘ পনেরো মাস কি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র কিংবা গ্যাসকূপ খননের প্রয়োজনীয় দরপত্র আহ্বান, যাচাই-বাছাই ও কার্যাদেশ প্রদানের জন্য যথেষ্ট সময় ছিল না ? জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা কি অপেক্ষা করছিলেন যাতে পরিস্খিতির এতটাই অবনতি ঘটে যখন সমাজের শিক্ষিত শ্রেণী পর্যন্ত দুর্নীতির বিষয়গুলো উপেক্ষা করে সমস্যার সমাধান দেখতে চাইবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপকের বক্তব্য শোনার পর মনে হচ্ছে সরকারের উদ্দেশ্য শত ভাগ সফল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধারে যিনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ইতোমধ্যে ঘোষণা করেই দিয়েছেন যে, বিনা দরপত্রেই ১৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কেনা হবে। বর্তমান সরকার তরুণ প্রজন্মকে শিখিয়ে যাচ্ছে কী কী পন্থায় দুর্নীতি করেও চমৎকারভাবে সমালোচনার ঊর্ধ্বে থাকা যায়। আর যারা এর পরও সমালোচনা করবে তাদের শায়েস্তার জন্য হাতুড়ি, চাকু, মামলা, ডিজিএফআই ও স্বাধীন দুদক তো আছেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে কাকে বাদ দিয়ে কার তারিফ করব সেটা সাব্যস্ত করাই তো এক বিষম দায়।

বিডিআর বিদ্রোহকালীন নারকীয় হত্যাযজ্ঞে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের ভূমিকা অদ্যাবধি রহস্যাবৃত হয়ে রয়েছে। বিদ্রোহের প্রথম রাতে বিদ্রোহীদের অস্ত্রত্যাগের নাটকে তিনি যখন মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করছিলেন, সেই একই সময়ে তার অবস্খানের একটু দূরেই গণকবরে নিহত সামরিক কর্মকর্তাদের লাশ মাটি চাপা দেয়ার পাশাপাশি নারী নির্যাতনের মতো ঘৃণ্য, কুৎসিত বর্বরতা চলছিল। রাতের আঁধারে নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিডিআর বধ্যভূমি থেকে বন্দী, অসহায় নারী, শিশুদের উদ্ধার না করেই নিরাপদে একাই সে রাতে ফিরে এসেছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সেই অসাধারণ দায়িত্ববোধ ও বীরত্বগাথা ভুলি কী করে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবুবকর হত্যা নিয়ে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনার’ তত্ত্ব তো তাকে প্রায় অমরত্ব দান করেছে। দেশে খুন হওয়া লাশের পাহাড়ের উচ্চতা প্রতিদিন বাড়ছে আর তিনি প্রায় রোবটের নির্লিপ্ততা নিয়ে বলেই চলেছেন, আইনশৃঙ্খলা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় ভালো এবং দিন দিন আরো ভালো হচ্ছে।

একই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তার দলের ছাত্র নিহত হওয়ার পর সারা দেশে অবশ্য তাৎক্ষণিক চিরুনি অভিযানের নির্দেশ দিতে বিলম্ব করেননি। সেই অভিযানকালে পুলিশ চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিশুতি রাতে এক বাড়িতে ঢুকে গলায় বন্দুকের নল ঠেকিয়ে গুলি করে নির্মমভাবে বিরোধী মতাবলম্বী ছাত্রকে হত্যা করেছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবার সহজ-সরল মানুষ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার পর কালবিলম্ব না করে সরকারি হেলিকপ্টারে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির হয়ে অকুস্খল থেকেই চিরুনি অভিযানের দিকনির্দেশনা দিয়ে এসেছেন। অথচ সচিবালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হাঁটা পথে দশ মিনিটের দূরত্বে হলেও তার দলেরই ছাত্রসংগঠনের অন্তর্কলহে নিহত অরাজনৈতিক ছাত্র আবুবকরকে দেখতে যাওয়ার সময় করে উঠতে পারেননি।

নিজের ছেলে আর পরের ছেলের মধ্যে পার্থক্য করা হবে না­ এমন কোনো শপথবাক্য পাঠ করে তো তিনি নিশ্চয়ই মন্ত্রী হননি। আর যাবেনই বা কেন? স্মরণে আছে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সম্পর্কে আমার দেশ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশের জের ধরে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে একবার আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, শুধু আমার গলার আওয়াজ চিনে রাখার জন্যই নাকি তার এই ফোন করার কষ্ট। যা-ই হোক, বর্তমানে পুরো এবং আধা­ উভয় মন্ত্রী অতিশয় ব্যস্ত রয়েছেন তাদের বিবেচনায় মানবতাবিরোধী অপরাধীদের দেশময় তাড়া করে বেড়ানো, তাদের বিদেশযাত্রা থেকে বিরত করা এবং প্রয়োজনে তাদের প্রত্যেকের বসতবাড়ির চার দিকে পুলিশ দিয়ে গৃহবন্দী করে রাখার কাজে। এতএব, সাধারণ অপরাধীদের পোয়াবারো। যেসব সমাজবিরোধী খুন, ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই ইত্যাদি করতে সিদ্ধহস্ত তাদের জন্য সাহারা খাতুনের বাংলাদেশ নি:সন্দেহে এক অভয়ারণ্য।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমণি ১৫ মাসে যত বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে পত্রিকার শিরোনাম হয়েছেন সেগুলো একত্র করে আধুনিক ‘বাণী চিরন্তনী’র ডিজিটাল সংস্করণ ছাপানো যেতে পারে। করিৎকর্মা, চৌকস এই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিদেশভ্রমণের রেকর্ডও বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। এত ঘোরাঘুরি করে বাংলাদেশের নিট লাভ কী হয়েছে এবার তার হিসাব কষার সময় এসেছে। মালয়েশিয়ায় সত্তর হাজার বাংলাদেশী শ্রমিকের ভিসা বাতিল ঠেকানো যায়নি, সৌদি আরবে আকামা সমস্যায় এখনো জর্জরিত হচ্ছে লাখ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশী, প্রধানমন্ত্রীর কুয়েত সফরের পরও সে দেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের কোনো সমস্যারই সমাধান হয়নি। এ দিকে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে কুয়েত ও চীন মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পর এ দেশের জনগণের স্বপ্নের সেতু নির্মাণই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

সৌদি আরবের বিরুদ্ধে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শিষ্টাচারবহির্ভূত ও অকূটনৈতিক বক্তব্য দেয়ার পর ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (ওউই) কাছে অর্থের জন্য ধরনা দেয়ার সুযোগও আমার ক্ষুদ্র বিবেচনায় কমে এসেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ভারতকেন্দ্রিক হওয়ার অবধারিত নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের মৌখিক সমর্থন ব্যতীত এই সরকারের বìধু বলতে অবশিষ্ট রয়েছে সবেধন নীলমণি সেই ভারতই। দেখা যাক, বিপদগ্রস্ত বìধুর সহায়তাকল্পে পদ্মা সেতু নির্মাণে চীন ও কুয়েতের পরিবর্তে বিশাল হৃদয়ের ভারত অর্থভা নিয়ে এগিয়ে আসে কি না। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার আগ পর্যন্ত যেকোনো উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও অর্থ মন্ত্রণালয়কেই সবচেয়ে কর্মব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হতো। মহাজোট সরকারের দেশ পরিচালনার নমুনা দেখে মনে হচ্ছে দেশে দুধ আর মধুর নহর বয়ে যাচ্ছে।

রফতানি কমছে, বিনিয়োগ নেই তাই নতুন কর্মসংস্খান হচ্ছে না, বিদেশে শ্রমিক রফতানির অবস্খা ভয়াবহ, প্রকৃতির বৈরী আচরণে কৃষির অবস্খাও আশানুরূপ নয়, দ্রব্যমূল্য ক্রমেই জরুরি সরকারের জামানাকে স্পর্শ করতে চলেছে, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ সব অবকাঠামো ভেঙে পড়ছে, একমাত্র বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বৃদ্ধি ব্যতীত অর্থনীতির কোথাও কোনো সুসংবাদ নেই। তারপরও প্রধানমন্ত্রী কিংবা অর্থমন্ত্রীর বাহ্যিক আচরণে দুশ্চিন্তার লেশমাত্র নেই। সরকারের সর্বত্র কেমন যেন গাছাড়া ভাব। শুধু লক্ষ কোটি টাকার বিশাল বাজেটের আর পাঁচ বছরের মধ্যে দারিদ্র্যবিমোচনের বড় বড় তাত্ত্বিক গাল-গল্প। টেলিভিশনের পর্দায় সজ্জন অর্থমন্ত্রীকে দেখলে মনে হয় তিনি যেন কেবল তার হাস্যরস দিয়েই দেশের পর্বতপ্রমাণ সমস্যার সমাধান করে ফেলবেন।

আইন মন্ত্রণালয় নিয়ে আলোচনা ব্যতিরেকে দিন বদলের মন্ত্রিসভার মূল্যায়ন সমাপ্ত করা সম্ভব নয়। দেশের মাদ্রাসার জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র নির্মূল এবং বাংলাদেশের সংবিধান থেকে ইসলামের সব সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রকাশ্য ঘোষণা দানকারী আইনমন্ত্রী শেখ মুজিব হত্যা মামলার বিচার সাঙ্গ করে এখন মানবতাবিরোধীদের বিচার নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ইতোমধ্যে উচ্চ আদালতে বিশেষ দলীয় মতাদর্শে বিশ্বাসী বিচারকরা স্বউদ্যোগে স্বাধীনতার ইতিহাস রচনার কাজে হাত দিয়ে বিচারব্যবস্খার প্রতি জনগণের সব আস্খা সাফল্যের সাথে বিনষ্ট করতে সক্ষম হয়েছেন। খুনের মামলার আসামি, প্রধান বিচারপতির কার্যালয় ভাঙচুরে নেতৃত্ব দানকারী ব্যক্তিসহ অন্যান্য বিতর্কিত ব্যক্তিরা উচ্চ আদালতের বিচারক পদে একের পর এক নিয়োগ পেয়ে চলেছেন। বিচার ব্যবস্খায় যে চরম আস্খার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে তার দায়-দায়িত্ব রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং অ্যাটর্নি জেনারেলকে অবশ্যই নিতে হবে।

প্রতিমন্ত্রী মহোদয় প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দায়ের করা হাজার হাজার মামলা নির্বিচারে কেবল তুলে নেয়ার সুপারিশই করছেন না , বিরোধী দলের কোনো মামলা তুলে নেয়ার জন্য তিনি মন্ত্রীর চেয়ারে বসেননি­ প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য করে শপথভঙ্গ করতেও দ্বিধা করছেন না। এসব মামলা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও উথাপিত হয়েছে। আর অ্যাটর্নি জেনারেল সম্পর্কে শ্রেষ্ঠ উক্তি করেছেন দেশের একজন প্রবীণ, সর্বজনশ্রদ্ধেয় আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আল্লাহ্র পরই অ্যাটর্নি জেনারেলের স্খান। সম্প্রতি সুিপ্রম কোর্ট বার কাউন্সিলের নির্বাচনে সরকারপন্থীদের ভরাডুবির জন্য আওয়ামী আইনজীবীরা অ্যাটর্নি জেনারেলের আচরণকেই বহুলাংশে দায়ী করেছেন।

মন্ত্রীরা জনগণের আশা-আকাáক্ষা মেটাতে না পারলেও বিভিন্ন বিলাসব্যসন বিশেষত গাড়িবিলাস তাদের পেয়ে বসেছে। একমাত্র এলজিইডি থেকেই বিভিন্ন প্রকল্পের শতাধিক গাড়ি আইনবহির্ভূতভাবে তারা নিয়েছেন নিজের, পরিবারের ও সাঙ্গ-পাঙ্গদের ব্যবহারের জন্য। গাড়িবিলাসীদের মধ্যে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত একজন আওয়ামী বুদ্ধিজীবীর নাম দেখে সমাজে সার্বিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের নমুনায় ব্যথিত না হয়ে পারিনি। কোনো কোনো অজ্ঞাতকুলশীল মন্ত্রী সম্ভবত মিডিয়ায় তাদের নাম জাহির করার জন্যই গানম্যান পাঠিয়ে বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্খাপনা পরিচালককে অপহরণের অপচেষ্টা করে সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছেন। এ দিকে সরকারদলীয় এমপি এবং সংসদীয় কমিটির সদস্যরা মন্ত্রীদের চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ ইত্যাদি বিশেষণে প্রকাশ্যেই ডাকতে শুরু করেছেন।

বিগত দুই দশকে মহাজোট জনগণের ভোটে নির্বাচিত চতুর্থ সরকার। শেখ হাসিনা নিজেও আগে একবার পাঁচ বছর মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু মাত্র পনেরো মাসের মধ্যে কোনো সরকারের মন্ত্রিসভাই জনগণকে অধিক শোকে পাথর করে দেয়ার মতো এমন চমকপ্রদ কর্মনৈপুণ্য দেখাতে সক্ষম হয়নি। তাই বলছিলাম, শেখ হাসিনা তার অসাধারণ প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার বলেই মন্ত্রীদের কীর্তিকলাপ মন্ত্রিসভা গঠনের আগেই আগাম বুঝতে পেরেছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি দেশবাসীকে যথার্থই রসগোল্লার মতো মন্ত্রিসভাই উপহার দিয়েছেন।

জয়তু, মহাজোট নেত্রী।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.