আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নীলু



বাজারে মেলা বসেছে। বিশাল মেলা। মেলাতে সার্কাস পার্টিও এসেছে। সার্কাস পার্টিতে নাকি একটা ছেলে আছে যে শো এর সময় কিভাবে কিভাবে জানি মেয়ে হয়ে যায়! হি হি হি। নীলু মেলায় যায় নি।

সে এসব কথা শুনেছে তার ভাই নাবিলের কাছ থেকে। নীলুর খুব ইচ্ছা করছে মেলায় যেতে। মা যেতে দেবে বলে মনে হচ্ছে না। বাবা বাড়িতে থাকলে অবশ্য যাওয়া যেত। বাবার হাত ধরে চুলে ফিতা বেঁধে বেণী দুলিয়ে দুলিয়ে ঘোরা যেত।

নীলু এবার ক্লাস এইটে পড়ে, নাবিল সেভেনে। তাদের বাবা ঢাকায় থাকেন। বাড়িতে শুধু দুই ভাইবোন আর মা। নীলুর মা একটু রাগী ধরণের। রাগী না ভিতু সেটা নিয়ে অবশ্য নীলুর খানিকটা সন্দেহ আছে।

তার মায়ের শুধু একটাই ভয় - ‘লোকে কি বলবে?’ এখন যদি নীলু গিয়ে মেলায় যাওয়ার বায়না ধরে, মা নির্ঘাত বলবেন – এত বড় হয়েছ, মেলায় গিয়ে নাচানাচি করলে লোকে কি বলবে? এইতো সেদিন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামল। নীলু মায়ের কাছে গিয়ে বলল, মা, আমি আর নাবিল একটু বৃষ্টিতে ভিজি। মা মুখের উপর বলে বসলেন, তুমি কি বাচ্চা? বৃষ্টিতে লাফালাফি করলে লোকে কি বলবে? নীলু ভেবে পায় না – দুই ভাইবোন মিলেই তো একটু বৃষ্টিতে ভিজবে। লোকের কি এমন ক্ষতি তাতে? নাকি নীলু সত্যি সত্যিই অনেক বড় হয়ে গেছে। কত বড়? ক্লাস এইটেই তো উঠেছে মাত্র।

এইটও মনে হয় বড়দের ক্লাস। নাহলে ক্লাসে সবার ‘বয়ফ্রেন্ড’ আছে, কিন্তু তার কথা বলারও কেউ নেই শুনে তার বান্ধবিরা এরকম হা করে থাকবে কেন? ‘কথা বলার কেউ নেই’ কথাটা মনে হয় একটু ভুল বলা হল। নীলুর একটা খালাতো ভাই আছে, নিলয় নাম। ভাইয়ার সাথে তার ভালোই ভাব ছিল। কিন্তু ভাইয়াটা না ইদানিং বাজে বাজে কথা বলে।

অসভ্য! নীলু ঠিক করল সে মাকে না বলেই মেলায় যাবে। নাবিলটাকে নিতে পারলে আরো ভালো হত। কিন্তু সে চলে গেছে ফুটবল খেলতে। নাবিলটা সারাক্ষণ দৌড়াদৌড়ির উপর থাকে। তার মত হতে পারলে ভালোই হত।

নীলু খাটের নিচ থেকে তার মাটির ব্যাংকটা বের করল। হাতি আকৃতির এই ব্যাংকের সুবিধা হল এর পিঠ দিয়ে টাকা ঢুকানো লাগে আর দরকার পড়লে পেটের নিচ দিয়ে টাকা বের করা যায়। নিজের সাথে লুকোচুরি খেলার মত আরকি। দুপুর পেরুবার আগে আগেই মাকে ঘুমে রেখে নীলু বেরিয়ে পড়ল। দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমানো মায়ের অভ্যাস।

নীলুর একটু ভয় ভয় করছে। ফিরে আসলে মাকে কি বলবে। সে ঠিক করল, আসার সময় মায়ের জন্য সন্দেশ নিয়ে আসবে। মা সন্দেশ পছন্দ করেন। পছন্দের জিনিস পেলে হয়ত আর রাগারাগি করবে না মা।

বাজারে ঢুকেই নীলু অবাক হয়ে গেল। কত বড় গেট বানিয়েছে মেলার জন্য! চারিদিকে হাজারো মানুষ। এত মানুষের ভিড়ে তাকে দেখাই যায় না। নীলু ভিড় ঠেলে এগুতে লাগল। মেলায় অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে নীলু এখন সার্কাসের টিকেট কেনার লাইনে।

তার হাতে একটা প্যাকেটে এক বক্স কাঁচের চুড়ি, একটা শোপিচ – ডিমসহ পাখির বাসা, সন্দেশ, আর কয়েকটা রংবেরং এর ঘুড়ি। নীলু ঘুড়ি উড়াতে পারে না, ঘুড়িগুলো নাবিলের জন্য। সার্কাস দেখতে দেখতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। নীলুর মনে পড়লো বাড়ি যাওয়ার কথা। সার্কাসের মেয়েটা কিভাবে আবার ছেলে হয়ে যাবে, সেটা দেখার একটু ইচ্ছা ছিল।

জানতে পারলে স্কুলে গল্প করা যেত। নাহ, সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। নীলু বাড়ির দিকে পা ফেলল। বাড়ির বাইরের গেট আঁটকে ভিতরে ঢুকেই দেখতে পেল মা রনরঙ্গিণী মূর্তিতে বসে আছেন। নীলু কিছু বলার আগেই মা ঠাস করে তার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলেন।

মা এতটা রেগে যাবেন, নীলু ভাবতে পারে নি। নীলু নিজের ঘরের জানালার পাশে বসে আছে। তার গাল বেয়ে পানি পড়ছে আর ক্রমাগত হেঁচকি উঠছে। নীলু কি কাঁদছে। না, নীলু কাঁদছে না।

কাঁদছে কৈশোর। কৈশোরের কান্না দেখে লোকে কিছু বলে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।