আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিদেশ যাত্রা ১



ভিসা, টিকিট এবং জিএমজি কাহিনী অনেকদিন থেকে দেশের বাইরে যাবার পাঁয়তারা করছিলাম। অফিস থেকে সপ্তাহ খানেকের ছুটি ম্যানেজ করতে পারছিলাম না। আমার টার্গেট হচ্ছে মালয়েশিয়া আর সিঙ্গাপুর। এক টিকিটে দুই ছবির মতো। মালয়েশিয়া গিয়ে সেখান থেকে বাস বা ট্রেনে সিঙ্গাপুর এবং সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়া হয়ে ঢাকা।

তো গত মাসের প্রথম সপ্তাহে এমডি সাহেবের রুমে ডাক পড়লো। বললেন, তোমার পাসপোর্ট আছে ? আছে। এ মাসের শেষের দিকে মালয়েশিয়া যেতে হবে তোমাকে। কোনো অসুবিধা নেই তো ? না, স্যার ! যাও, একাউন্টস থেকে টাকা পয়সা আর কাজ বুঝে নাও। স্যারের রুম থেকে বেরিয়ে হাঁসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না।

শান্তনুকে ফোন করলাম। ও নিজেও যাচ্ছে এ মাসের শেষ দিকে। শান্তনু হচ্ছে আমার বন্ধু। চ্যানেল আইতে কাজ করে। আমি যাবো শুনে ও তো মহাখুশী।

ও যাচ্ছে শিশুদের অধিকার বিষয়ক একটা কর্মশালাতে। ওর বিমান টিকিট, হোটেল সব ফ্রি ! আমাকে বললো- ভিসা করতে পারলে বাকীটা তার দায়িত্ব। আমিতো বাকুম বাকুম ! নিজের সিটে ফিরে আসলাম। ড্রয়ার খুলে পাসপোর্ট বের করলাম। পাসপোর্ট খুলে দেখি...১৭ এপ্রিল নাগাদ পাসপোর্টের মেয়াদ আছে।

সব্বোনাশ! এখন কী করি ? শান্তনু কে ফোন করি। ও বললো, কালকেই যেনো পাসপোর্ট অফিসে যেয়ে পাসপোর্ট রিনিউ করে নেই। আমি পরদিন পাসপোর্ট অফিসে গেলাম। নগদ আড়াই হাজার টাকা দিয়ে এক ঘন্টার মধ্যে পাসপোর্ট রিনিউ করে তবেই অফিসে ফিরলাম। পরদিন আরেক বন্ধু শাহীনের ট্রাভেল এজেন্সিতে গেলাম টিকিট বুকিং দিতে।

বুকিং দিলাম জিএমজি এয়ার লাইন্সে। আমার বিদেশ যাত্রার প্রথম ভুল ছিলো সেটি...। ভিসা করতে কী কী লাগবে...শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। অফিশিয়াল চিঠি, ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটম্যান্ট, টিকিটের মূল কপি। সব ঠিকাছে।

টিকিট পাবো কোথায় ? জিএমজির টিকিট কিনে জমা দিতে পারি। সেখানেও ফ্যাকড়া আছে। কোনো কারণে যদি ভিসা না পাই, তবে জিএমজি টিকিট ফেরত নেবে না। ভাবছেন, এতো ঝামেলা করে কেনো জিএজিতে যেতে চাচ্ছি ? কারণ শান্তনু...ও যাচ্ছে জিএমজিতে। ট্রাভেল এজেন্সির বন্ধু শাহীনের পরামর্শ চাইলাম।

শাহীন বললো, জিএমজির টিকিট বুক করে রাখতে এবং মালয়েশিয়ান এয়ার লাইন্সের টিকিট কিনে সে টিকিটসহ পাসপোর্ট জমা দিতে। ভিসা পাবার পর সে টিকিট পাল্টিয়ে ফেলতে। এতে আমার অর্থনৈতিক ক্ষয় ক্ষতির পরিমান মাত্র ২ হাজার। আর জিএমজির টিকিট কেনা মানে হচ্ছে ভিসা না পেলে অর্থনৈতিক ক্ষয় ক্ষতি ১৮ হাজার ৫ শত টাকা। তো, বন্ধু শাহীনেরই জয় হলো।

সব কাগজ পত্র জমা দেবার পর ৪ দিনের মাথায় ভিসা পেয়ে গেলাম। আমার টিকিট হচ্ছে ২৫ এপ্রিল দুপুর ২.৫০ মিনিটে। ২০ তারিখ জিএমজি থেকে প্রথম ফোন পেলাম। ২.৫০ মিনিটের বদলে ৫ টার সময় বিমান যাবে। আমরা দুঃখিত স্যার ! ২১ তারিখ আবার ফোনে জানালো- আগের টাইমই ঠিকাছে অর্থাৎ ২.৫০ মিনিটেই যাবে।

২২ তারিখ আবার ফোন। ২৫ তারিখ ফ্লাইট যাবে কীনা, নিশ্চিত না। আমরা স্যার আপনাকে কালকে কনফার্ম করবো। ২৩ এবং ২৪ আর কোনো ফোন কল পাইনি। ২৫ তারিখ সকালে ফোনে জানালো, ফ্লাইট আজকে যাবে তবে ২.৫০ মিনিটের বদলে বিকেল ৫ টায়।

দুপুর আড়াইটায় শান্তনু আসলো গাড়ী নিয়ে। তিনটা নাগাদ এয়ারপোর্ট। সব কাজ কর্ম সেরে বসে আছি। অবশেষে জিএমজি যখন আকাশে উড়লো তখন সন্ধ্যা ৬ টা... জিএমজির সামনের ৪ সারি মানে ১৬ টা সিটে আমরা দুজন ছাড়া কোনো যাত্রী নেই। পেছনের দিকে ২০/২৫ জন যাত্রী আছে।

সবাই বসার পর বিমান রানওয়ে ধরে ছুটলো। যতোক্ষণ বিমান আকাশে না উঠলো, ততক্ষন বিমানের এসি আর ছাড়লো না। ভেতরে গরমে আমাদের অবস্থা কাহিল ! রীতিমত শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দিলো। অবশেষে আমরা ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে লাগলাম। এসিও কাজ করা শুরু করলো।

৩২ হাজার ফুট ওপর দিয়ে আমাদের বিমান ছুটে চললো কুয়ালা লামপুরের পথে...বিমান বালা চকলেট দিয়ে গেলো। ক্ষাণিক বাদে দিয়ে গেলো খাবার। রীতিমত দুপুরের লাঞ্চ (ওদের কী দোষ! বিমান তো ছাড়বার কথা ছিলো দুপুরে)। ফ্রাইড রাইস, ভেজিটেবল, চিকেন কারি, সফট ড্রিংস, পানির বোতল ইত্যাদি। সামান্য খেয়ে নিলাম।

কেএল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে বিমান যখন থামলো তখন আমাদের ঘড়িতে ১০.১৫ বাজলেও স্থানীয় সময় রাত ১২ টা বেজে ১৫ মিনিট। এয়ারপোটের্র কাজ সেরে আমরা যখোন কুয়ালা লামপুরের পথে টেক্সিতে উঠলাম, তখন ১ টা প্রায়। রাত ২ টার সামান্য আগে হোটেল আনকাসাতে পৌঁছলাম। রুমের চাবি বুঝে নিয়ে ৭১৬ নং রুমে গিয়ে উঠলাম। ১০ মিনিটের মধ্যে সামান্য হাত মুখ ধূয়ে বেরিয়ে পড়লাম খাবারের সন্ধানে।

রাতের শহর কুয়ালা লামপুর। সামান্য হাঁটতেই পেয়ে গেলাম কেএফসি। দুটো চিকেন বার্গার, ফ্র্যান্স ফ্রাই আর পেপসি দিয়ে রাতের খাবারটা সেরে নিলাম। আয়েশ করে সিগারেট ধরিয়ে হাঁটা শুরু করলাম হোটেলের পথে...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।