আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিদেশ যাত্রা ৬



Click This Link বিদায় রজনী এপ্রিলের শেষ দিনে আমার কাজ শেষ। পরদিন অর্থাৎ ১ মে রিটার্ন টিকিট করা আছে। আজ শান্তনুরও ট্রেনিং ক্লাস শেষ হয়েছে। শান্তনু আরেকদিন বেশি থেকে ২ তারিখে রওয়ানা হবে। আমাকেও পটানোর চেষ্টা করেছে, আরেকদিন থেকে যাবার জন্য।

আমার সে সুযোগ ছিলো না। ২ তারিখে অফিসে থাকতেই হবে। খুব জরুরি একটা মিটিং আছে। তাছাড়া যতই ঘুরাঘুরি করি না কেনো, সত্যি বলতে কী আমি যথেষ্ঠ হোম সিক একটা মানুষ। কাজের বাইরে এমনি এমনি বেশি সময় বাইরে কাটাতে আমার ভাল্লাগেনা।

বাড়ির জন্য মন পোড়ে। আমাকে এক দিন বেশি থাকতে রাজী করাতে না পেরে শান্তনু প্রস্তাব করলো- বেড়াতে যাবার জন্য। শর্ত দিলো হোটেল থেকে বেরুনোর পর আজকে যত খরচ হবে, তার সবটাই আমার অনারে সে বহন করবে। উত্তম প্রস্তাব...। আমার কুয়ালা লামপুরে অদ্য বিদায় রজনী।

আবার কবে আসবো কে জানে ? মনে মনে আমি বাকুম বাকুম ! তখনও যদি জানতাম...??? সন্ধ্যায় দুই বন্ধু মিলে ঘুরতে বের হলাম। এদিক সেদিক ঘুরে ক্লান্ত হলাম দুজনেই। রাত নয়টা নাগাদ চায়না টাউনের পাশের গলিতে একটা আলো আঁধারি দোকানে ঢুকলাম। প্রথম রুমটা দারুন ! ১০/১২ জনের বসার ব্যবস্থা। এসিটা বেশ বাড়ানো, ঠান্ডা।

ভেতরের রুমে ঢুকতেই ...সিগারেটের ধূঁয়া...নারী পুরুষের চিৎকার ...বিকট সাউন্ডে বাজানো ইংরেজি গানের সাথে নাচা নাচি...উৎকট মদের গন্ধ...জড়াজড়ি...ঢলাঢলি...!!! এ কোথায় এলামরে বন্ধু ? শান্তনুর কানের কাছে মুখ নিয়ে জানতে চাইলাম। পাশের টেবিলে বসা দুই বিদেশি বালক বালিকা সন্দেহজনকভাবে আমাদের দিকে তাকালো...একটু হেসে ওরাও নিজেদের সাথে কানে মুখে কথা না বলে ঠোঁটে ঠোঁটে হৃদয়ের কথা বললো বা অন্য কিছু করলো...সেটা তাদের ব্যাপার ! এক পাশে ছোট একটা টেবিলে আমরা দু বন্ধু বসলাম। কী খাবে, জানতে চাইলো শান্তনু। তুমি কী খাবে, পাল্টা প্রশ্ন আমার। খাস বাংলায় অসম্ভব একটা অশ্লীল গালি দিয়ে বললো, ওই ব্যাটা- হোস্ট কে ? আমি না তুই ?? রেগে গেলে সচরাচর বেয়াদবটা আমাকে তুই করে বলে।

ওর সাথে আমার বোঝাপড়াটা একটু অন্য রকোম। আমাদের সম্পর্কের গোড়াপত্তনটাও বেশ চমকপ্রদ। সে এক ইতিহাস ! সুযোগ পেলে বলবো অন্য আরেকদিন। ওর আরো গালি থেকে বাঁচার জন্য তাড়াতাড়ি বল্লাম, দোস্ত তুমি যা খাওয়াতে চাও...। এবার মনে হলো, সে সামান্য খুশি হয়েছে।

দুই জনের জন্য দুই পেগ করে চার পেগের অর্ডার করলো। ওর গ্লাসে কী জানিনা, আর আমারটা কী, সেটা বলবো না...। খাবো কী, চারদিকে যা দেখছি ! কে যে কার সাথে খাচ্ছে-নাচছে-হেলছে-দুলছে......! বুঝতে পারছিলাম না, আমার চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হচ্ছে না সিগারেটের ধোঁয়ার কারনে...! সবাই জোড়ায় জোড়ায় বসে খাচ্ছে (!), আমরাও জোড়া...তবে তা ? ঝিম মেরে বসে আছি। সামনের গ্লাস খালী হয়ে গেছে- সেও অনেকক্ষণ। একটার পর একটা সিগারেট খাচ্ছি।

বেরুতে মন চাইছে না। ইনফ্যাক্ট, নড়তেই ইচ্ছে করছে না। একটার দিকে শান্তনু মনে করিয়ে দিলো, সকাল ৪ টার সময় টেক্সি আসবে। আমাদের হোটেলে ফেরা দরকার। হোটেলে ফেরার জন্য শান্তনু যখোন টানাটানি করছিলো- তখন মনে হচ্ছিলো, পৃথিবীতে আমার সবচেয়ে বড়ো শত্র“ হচ্ছে সে।

যাই হোক, আমরা অনেক কষ্টে হোটেলে ফিরে এলাম। রিসেপশনে বলে রাখলাম, আমাকে যেনো সকাল ৪টার সময় কল দেয়। ৫ টার মধ্যে এয়ারপোর্টে পৌঁছতে হবে। হোটেলে কাজ করে বাংলাদেশের ছেলে কামরুলকে আগেই বলে রেখেছিলাম, টেক্সির জন্য। রুমে ঢুকে আবোল তাবোল বকা শুরু হলো দুজনের।

টিভি ছেড়ে দিলাম। তোমার কালকে যাবার দরকার কী ? একসাথে আসছি, একসাথে যামু...এই আমার শেষ কথা ! রীতিমতো চিল্লাচ্ছে শান্তনু। আমি তার চেয়ে বেশি জোরে বল্লাম, আমি এখনই যাবো, আমার ইচ্ছা...তোমার কী ? আসলে দুজনের কেউ কারো কথা শুনছি না, দুজনেই বলছি। আর একর পর এক সিগারেট টানছি। স্টার মুভিতে ফাটাফাটি একটা সিনেমা হচ্ছে।

আমি দেখছি। শান্তনু বললো চ্যানেল পাল্টাতে। কোনো পাল্টাবো, আমি দেখবো। আমি দেখবো না। না দেখলে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকো।

হঠাৎ বেরসিকের মতো রুমের ফোন বেজে উঠলো। রিসিপশন থেকে জানালো, আমার ফ্লাইটের সময় হয়েছে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি, ভোর চারটা বাজে। এবার হুশ হলো। তাড়াতাড়ি করে বাথরুমের কাজ কর্ম সেরে ১৫ মিনিটের মাথায় ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম রুম থেকে।

পেছনে পেছনে বেরিয়ে এলো শান্তনু। ওর ভাব দেখে মনে হচ্ছে, এতোক্ষণ রুমে কিছুই হয়নি। আসলেই তো, কিছু কি হয়েছে ? হোটেলের বাইরে টেক্সি ড্রাইভার দাঁড়িয়ে আছে। শান্তনুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম আমি। অল দ্য বেস্ট... আস্তে করে বললো শান্তনু।

টেক্সি ছুটে চললো বিমানবন্দরের দিকে...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।