আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিজ্ঞানের বই/আবু সালেহ

বাংলাদেশের মানুষ এখনও তার সম্পূর্ণ অধিকার পাইনি। এই সংগ্রাম যতদিন চলবে ততদিন ছড়ার সংগ্রাম চলবে

“অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিজ্ঞানের বই” বিজ্ঞান গ্রন্থবর্ষ-২০০৫ উপলে সংস্কৃতি বিষয়ক মšণালয়ের তত্বাবধানে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র আয়োজিত আজকের এ সেমিনার অনুষ্ঠানের শ্রদ্ধেয় প্রধান অতিথি সংস্কৃতি বিষয়ক মšণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মাননীয় প্রতিমšী বেগম সেলিমা রহমান। অনুষ্ঠানের মাননীয় সভাপতি বাংলাদেশ ব্যাংক-এর গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, প্রবন্ধকার স্বনামধন্য প্রকাশক ও সংস্কৃতি কর্মী জনাব মফিদুল হক, বিজ্ঞ আলোচকবৃন্দ, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক এবঙ উপস্থিত সুধীমন্ডলী আস্সালামু আলাইকুম। জনাব মফিদুল হক-কে একটা চমৎকার প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য শুরু করছি। প্রবন্ধে শিাত্রে স¤পর্কে বেশকিছু তথ্য ও উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছে।

বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীর বিপুল সংখ্যা ও তাতে জেন্ডার সমতার েেত্র অর্জিত অগ্রগতির উল্লেখের পাশাপাশি বিদ্যালয় পর্যায় থেকে ঝরে পড়া ছাত্র-ছাত্রীর বিপুল হারের কথাও বলা হয়েছে। বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। বিএনপি সরকার এ বিষয়টির উপর সব সময়ই গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান-এর আমলেই সার্বজনীন প্রাথমিক শিা কর্মসচী গ্রহণ করা হয়। তাঁর উত্তরসুরী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সরকার কর্তৃক অবৈতনিক নারী শিা, শিার বিনিময়ে খাদ্য, শিা উপবৃত্তি প্রভৃতি কর্মসচী গ্রহণ এবং প্রাথমিক ও গণশিা বিভাগও পৃথক মšণালয় গঠন, বাজেটে শিা খাতে সর্বোচচ বরাদ্দ প্রদান প্রভৃতি প্রশংসনীয় কার্যক্রমে গ্রহণ করা হয়েছে।

দেশে শিার স¤প্রসারণ ও গুণগত মান উন্নয়নের মাধ্যমে মানব স¤পদ উন্নয়ন এবং এ েেত্র অন্যতম প্রধান দুটি হাতিয়ার ‘গ্রন্থ’ ও ‘গ্রন্থাগার’ এর ব্যাপক প্রসার ও উন্নয়নের উপরও মাননীয় প্রধানমšী বিশেষ জোর দিয়েছেন। তাঁর এ সদিচছার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই ২০০২ সালকে ‘জাতীয় গ্রন্থবর্ষ’, ২০০৩ সালকে ‘গ্রন্থাগারবর্ষ’, ২০০৪ সালকে ‘শিশু সাহিত্য বর্ষ’ এবং চলতি ২০০৫ সালকে ‘বিজ্ঞান গ্রন্থবর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা প্রদানের মধ্যে। একটা সমৃদ্ধ দেশ ও জাতিসত্বা গঠনে জাতিকে বিজ্ঞান মনস্ক করে এবং বিজ্ঞানের উপর ব্যাপক গবেষণা ও তার যথার্থ প্রয়েঅগ ছাড়া কোন গত্যšর নেই। বস্তুতপে আমাদের জীবন, প্রকৃতি, পারিপার্শিক অবস্থা সবকিছুর মধেই রয়েছে বিজ্ঞান। কিভাবে আমরা জন্ম নেই, আমাদের অস্থিমজ্জা, শরীর এবঙ ম¯িষ্কের বিকাশ ঘটে, প্রকৃতিতে অন্যান্য প্রাণের বিকাশ ইত্যাদি বিজ্ঞানেরই বিষয়।

আর বিজ্ঞানের গ্রন্থ ? আমি বলব আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ‘কোরআর’ হচেছ শ্রেষ্ঠতম বিজ্ঞান গ্রন্থ। বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডের যাবতয়ি ‘জ্ঞান ও বিজ্ঞান’ এ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে। আমাদের প্রয়োজন কোরআন এর উপর বস্তুনিষ্ঠ গবেষণা করা এবং তার ফলাফল সাধারণের বোধগম্যভাবে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করা। আমাদের ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন’, ‘বিজ্ঞান একাডেমী’, ‘বাংলা একাডেমী’ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এেেত্র বেসরকারী পর্যায়েও গবেষক এবঙ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমহের এগিয়ে আশা প্রয়োজন। আমাদের এ দেশের একজন জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য জগদীস চন্দ্র বসু যখন দেখলেন যে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় এবং তাঁর নিজেরও গবেষণার ফলাফল দেশের ব্যাপক জনগণের মধ্যে পৌছে দেয়া সম্ভব হচেছ না তখন তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংগে দেখা করে এেেত্র তাঁর হতাশার -২- কথা ব্যক্ত করেন।

রবীন্দ্রনাথ তাঁকে সাšনা দিয়ে বিজ্ঞাণকে জনবোধ্য করার জন্য বাংলা ভাষায় সর্ব প্রথম বিজ্ঞানের পরিভাষা কোষ রচনা করেন। তাঁর ‘বিশ্ব পরিচয়’ গ্রন্থও এ পর্যায়েরই ফসল। পরবর্তী সময়ে এ দেশে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করতে ড. আব্দুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দীন এর যে অবদান তার কোন তুলনা নেই। বলা হয়ে থাকে কাটতি নেই দেখে বিজ্ঞান গ্রন্থের প্রকাশনা কম। কিন্তু ড. মুতীর বইয়ের কাট্তির সমস্যা ছিল এ কথা কেউ বলবে বলে মনে হয় না।

প্রবন্ধে আরও অনেক লেখকের নাম বরা হয়েছে, তাঁদের অবদানও অনস্বীকার্য, তবে এেেত্র ড. মুতীর মত আরও লেখক এবং তাঁদের লেখা প্রকাশের জন্য প্রকাশকদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। আজকের প্রবন্ধের বিষয় ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিজ্ঞানের বই’। প্রবন্ধে এ দিকটি স¤পর্কে প্রত্যভাবে তেমন কোন আলোচনা করা হয়নি। আমি এ বিষয়ে দু’একটা কথা বলতে চাই। কৃষি বিজ্ঞান, মৎস, পশুপালন ইত্যাদি েেত্র আমাদের যে অগ্রগতি তা কিন্তু কম নয়।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমল থেকে দেশে এ ত্রেগুলোর উপর গবেষণা ও তার ফলাফল প্রয়োগের উপর যে অগ্রাধিকার ও গুরুত্ব আরোপ করা হয তার ফলশ্রুতিই দেশে কৃষি েেত্র বিল্পব এসেছে এবং দেশ খাদ্যে স্বয়ং স¤পর্ণতা অর্জন করেছে। এ সব েেত্র বাংলা ভাষায় মৌলিক কিছু পাঠ্য পু¯ক প্রকাশিত হলেও দেশের ব্যাপক জনগণকে এ েেত্র আগ্রহী করে তোলার মত প্রকাশনা তেমন একটা চোখে পড়েনা। অথচ কৃষি তথ্য সার্ভিস, কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর, মৎস গবেষণা কেন্দ্র ইত্যাদি থেকে প্রকাশিত পু¯িকা, সংবাদপত্রের বিজ্ঞান পাতা ইত্যাদিতে এ েেত্র চমৎকার সব তথ্য এবং কলা কৌশল তুলে ধরা হয়। এ ধরণের তথ্য, উপাত্ত ও কলা কৌশল নিয়ে ব্যাপকভাবে গ্রন্থ প্রকাশ ও সেগুলোকে ব্যাপক জনগণের নাগালে পৌঁছে দেয়া প্রয়োজন। কৃষি, মৎস ও পশু পালন ছাড়াও সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার, আবর্জনা থেকে সার উৎপাদন, গাছ গাছড়া থেকে ঔষধ তৈরী, ুদ্র শিল্প স্থাপন ইত্যাদির উপর বাংলা ভাষায় সহজ বোধ্যভাবে গ্রন্থ প্রকাশ ও গোটা দেশের ব্যাপক জনগণের নাগালে তা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

এর ফলে এসব বইয়ের সাহায্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন শ্রেণীর পেশাজীবীরা তাদের স্ব-স্ব পেশায় যেমন উৎকর্ষ অর্জন করতে পারবেন তেমনি দেশের বিপুল বেকার যুব সমাজ এ সব বইকে ম্যানুয়াল হিসেবে ব্যবহার করে দেশের ব্যাংকসমহ ও অন্যান্য ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে স্ব-কর্মসংস্থানে আÍনিয়োগ করতে পারবে। এ ভাবে বিজ্ঞান বিষয়ক প্রকাশনা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। পরিশেষে দেশের গণগ্রন্থাগার ব্যবস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে আমি এেেত্র দেশের গ্রন্থাগার ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়ে দু’একটা কথা বলব। প্রবন্ধে এ বিষয়ে বেশকিছু আলোকপাত করা হয়েছে। স্কুল পর্যায় থেকে শিার সর্বোচচ পর্যায় পর্যš কার্যকর গ্রন্থাগার সেবার কোন বিকল্প নেই।

পাশাপাশি দেশের গণগ্রন্থাগার ব্যবস্থারও ব্যাপক প্রসার ও উন্নয়ন অপরিহার্য। জনপ্রিয় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ বিষয়টি উপলব্দি করেই সেই সত্তরের -৩- দশকেই জাতীয়, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের পাশাপাশি দেশের প্রতিটি থানায় গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাঁর সে ঘোষণা বা¯বায়নের ল্েয ১৯৮০-৮১ সালে উন্নয়ন প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়েছিল। সরকার পরিবর্তনের পর সে প্রকল্প বন্ধ করে দেয়া হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য দেশের অধিকাংশ সেক্টরের কার্যক্রম উপজেলা পর্যায় পর্যš স¤প্রসারিত হলেও শহীদ জিয়ার থানা (বর্তমান উপজেলা) পর্যায়ে গণগ্রন্থাগার স্থাপনের স্বল্প অর্জনও বা¯বায়িত হয়নি।

অথচ ‘গ্রন্থাগার’ শিা, কৃষিসহ সকল সেক্টরের কার্যক্রমকে প্রত্য সহায়তা দিতে পারে। এ করণে ১৯৯৪ সালে গৃহীত জাতীয় ‘গ্রন্থনীতি’-তে পর্যায়ক্রমে দেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যš গণগ্রন্থাগার ব্যবস্থা স¤প্রসারণের সুপারিশ করা হয়েছে। বিশ্বের যে সব দেশ সমৃদ্ধি অর্জন করেছে তাদের সকলের গোটা দেশব্যাপী সমৃদ্ধ গন্থাগার নেটওয়ার্ক রয়েছে। তা ছাড়া তথ্য প্রযুক্তির েেত্র আজ বিশ্বব্যাপী যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তার প্রয়োগও আমাদের গ্রন্থাগার গুলোতে প্রয়োজন। তাই দেশের বৃহত্তর স্বার্থেই আজ দেশের গ্রন্থাগারগুলোর ব্যাপক উন্নয়ন এবং গণগ্রন্থাগার ব্যবস্থাকে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যš নিয়ে যাওয়া এবং এগুলোতে দেশের সর্ব¯রের জনগণকে স¤পৃক্ত করা প্রয়োজন।

এ ভাবে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়েই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হতে পারে। সর্বশেষে এ ধরণের একটা সময় উপযোগী ও চমৎকার সেমিনার আয়োজন ও সেখানে আমাকে দু’টো কথা বলতে দেয়ার জন্য জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি। আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।