আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভূতের ভয় আর বাঁশের সাঁকো



মার বড় জ্যাঠামশাই এর দুই বিয়ে। প্রথম পক্ষের ছেলে আমাদের বড় মামা। বড় মামা ছিলেন ডাক্তার। তিনি মুঙ্গেরে থাকতেন। মামা ছিলেন খুব ভাল মানুষ।

তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। সেইজন্যেই বোধ হয় বড়মামা আমাদের খুব ভালবাসতেন। মার জ্যাঠামশাই এর দ্বিতীয় পক্ষের এক ছেলে,এক মেয়ে। মেয়েটা বয়সে আমার থেকে ছোট। রেখা মাসী।

তার সাথে আমার খুব ভাব ছিল। মায়ের মেজ জ্যাঠামশাই খুব অল্প বয়সেই মারা যান। তাঁকে আমরা দেখিনি। মামাদের জমিতে ছিল মটরশুঁটি ক্ষেত। সেই ক্ষেতে রেখা মাসির সাথে মটরশুঁটি তুলতে যেতাম।

একদিন দুপুরবেলা, সেখানে ক্ষেতের পাশে একটা গাছে দেখলাম একটা বউ লালপেড়ে শাড়ী,কপালে সিঁদুরের টিপ পরা. গাছের একটা ডালে পা ঝুলিয়ে বসে আছে। বেশ মজা লাগল গাছে চড়া বউ দেখে, আর কিছু ভাবিনি। বাড়ী এসে মাকে গল্প করলাম। মা ভয় পেয়ে গেলেন,বললেন খবরদার আর ওদিকে যাবিনা। মামাবাড়ীতে থাকাকালীন আমার এক ভাই হল।

মা সেইজন্য বাপের বাড়ী এসেছিলেন, সকলে খুব খুশী। মার জ্যাঠতুতো বোনেদের কোলে করে সবসময় ভাই ঘুরতে লাগল। মাত্র কয়েক মাস বয়স,একদিন এক মাসির কোলে ভাই কেঁদে উঠে নীল হয়ে গেল। বাড়ীর সবাই খুব ভয় পেয়ে গেল। মা কাঁদতে লাগলেন।

সকলে নিশ্চিত হল ভাইকে ভূতে ধরেছে। ওঝা ডাকা হল। ওঝা এসেই আমাকে আর আমার পরের ভাই কে দূরে সরিয়ে রাখতে বলল। তারপর ওইটুকু ছোটভাইকে ঝাঁটা দিয়ে পেটাতে লাগল। পেটাতে পেটাতে বলল, বল তুই কে? এই টুকু ছেলে কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমি ধোপার ছেলে।

ওঝা রেগে মেগে বলল, তুই ওকে ধরেছিস কেন? ভাই কেঁদে কেঁদে বলল ,আমার ওর মাকে খুব পছন্দ, মাকে না পেয়ে ওর ছেলেকে ধরেছি। ওঝা বলল ,তুই চলে যা,আর যাওয়ার সময় চিহ্ন ফেলে যা। ধোপার ছেলে বলল, আমি চলে গেলে নিমগাছের ডালটা ভেঙ্গে যাবে। কথা বলার সাথে সাথে নিমগাছের ডালটা ভেঙ্গে পড়ল। ভাই সুস্থ হয়ে গেল।

এর কিছুদিন পরে আমরা বাড়ী ফিরে যাব, কিন্তু বাশেঁর সাঁকো পেরতে গিয়ে ভয়ে মরি। কিছুতেই আর সাঁকো পার হওয়া হল না, ফিরে এলাম। এদিকে দাদু তো পড়লেন মহামুশকিলে। বাড়ী না ফিরলে বাবা রাগ করবেন। দাদু তখন ক্যাতরা বলে এক প্রজাকে ডাকলেন।

তার মাথার ঝাঁকায় চেপে সাঁকো পার হলাম। সেই থেকে মামারবাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা আর হয়নি। একে ভূতের ভয় তার ওপর বাঁশের সাঁকো পেরোনো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।