আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হরতালে ভয়তাল



হরতাল নিয়ে সাধারন মানুষের কথা লেখাটি সম্পূর্ণ সাধারন মানুষের কথা। এটি পড়ে কেউ আমাকে রাজনিতিবিধ ভাববেন না। আমি সাধারণত সন্ধ্যার পর তেমন ডিটি রোডে যাইনা। একমাস আগে আমি একটি নতুন টিউশন পাই। তা আমাদের বাড়ী থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূর লালবেগ এলাকায়।

তো আমি প্রতিদিন হেঁটে বা গাড়ীতে করে যায়। প্রতিদিনের মত গত ২৭শে অক্টোবর টিউশনে গিয়ে ছিলাম। আসার সময় দেখি অনেক পুরুষ ও মহিলা লাইন ধরে হেঁটে যাচ্ছিল তাদের কর্মস্থলে। উৎসুক হয়ে দেখলাম এত নারী-পুরুষ কই যাই? এবং তাদেরকে দেখে খুবই ক্লান্ত ক্লান্ত লাগছিল। একটু জানার জন্য উৎসাহী হলাম এবং জিজ্ঞেসা করলাম এক লোক থেকে আপনারা কোথায় চাকরি করেন কোত্থকে আসতেছেন? ১মে হা করে তাকিয়ে বললেন আপনাকে বলে লাভ? আমি বললাম লাভ তেমন না হলেও ক্ষতি তেমন হবেনা।

লোকটির আগে আরেকজন বলে উটল ভাই আমার কথা বাদ দেন এই মহিলারা সেই কুমিরা থেকে কাজ করার জন্য এতোটুকু হেঁটে আসলো এটাকি সম্ভব? আরেকজন বলে ভাই তারা(সরকার ও সরকার বিরোধিরা) বলে আমাদের জন্যে মানে সাহারন জনগনের জন্যেই হরতাল? এখন আপনিই বলেন আমরা যে আজ গাড়ী না পেয়ে দীর্ঘ ৭-৮ মাইল পায়ে হেঁটে চাকরি স্থলে আসলাম এতে জনগনের কি লাভ হল? জবাব দিতেই না দিতে আমি তাদের অফিসের গেইটে পৌঁছে গেলাম। উত্তর দিতে পারলাম না তারা কর্ম স্থলে ঢুকে গেল। চিন্তা করলাম সাধারন মানুষটির কথাতে যুক্তিগত। তারপর রওনা দিলাম বাড়ীর উদ্দ্যেশে। কিন্তু ঘরে গেলাম না চিশতী ভাইয়ার ফর্মুলাটা ইউজ করলাম।

আরো সাধারন মানুষের খুঁজে আমাদের জাহাজ ঘাটার দোকানে গেলাম। সেইখানে কিছু লোক বর্তমান দেশের হালচাল ও হরতাল নিয়ে আলোচনা করছিলো। তাদের একেকজনের একেক মন্তব্য। কেউ বলে হরতাল দেওয়া মানে সাধারন মানুষের ক্ষতি করা। এরাতো আমাদের জন্যে হরতাল দেইনা।

হরতাল দেয় নিজেদের জন্য। একটু আগ বাড়িয়ে বললাম নেত্রীতো বলল দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, দশের স্বার্থে এই হরতাল! আরেকজন বলতে লাগল যদি এই হরতাল দেশের, জনগনের, ও দশের স্বার্থে হত তাহলে ১মে বলতো নিত্য প্রয়োজনীয় দামের মূল্য হ্রাস, শ্রমিকদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি, সাধারন মানুষের জান মালের নিরাপত্তা ইত্যাদি। আরেকজন যোগ দিয়ে বলল এখন হরতাল মানে ভয়তাল। মানুষ মারা, গাড়ি পোড়ানো, ইটপাটকেল, ভাংচুর, লুটপাট এইগুলো হল হরতাল। এই আলাপগুলো শুনছিলাম আর চিন্তা করছিলাম।

এই করতে করতে পার করলাম হরতালের ১ম দিন। হরতালের ২য় দিন আরো কিছু তথ্য যোগাড়ের জন্য বের হলাম সকাল ১০ টার দিকে। রাস্তায় উটে দেখি হরতাল পক্ষের একটি লম্বা মিছিল। আমার বুদ্ধি হওয়ার বয়সে আমাদের সীতাকুণ্ড থানার ভাটিয়ারী ইউনিয়নে দা, ছুরি, লোহার রড, হকি স্টিক লাটিসোটার মিছিল কখনো দেখিনি। আমি তাজ্জব হলাম যে ভাটিয়ারী ইউনিয়ন শান্তির জায়গা ছিল তাতেও এই হায়েনারা আশ্রয় নিল? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম আর উত্তর খুঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম।

তবে কি শান্তিপূর্ণ হরতালের নামে এই ভয়তাল হচ্ছে? যাত্রীবাহী গারিতে অগ্নিসংযোগ, মানুষ পোড়ানো, জনমনে আতংক সৃষ্টি করা এই কি বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ হরতালের কর্মসূচী? সর্বশেষ বিএনপি জামায়াত তথা ১৮ দলের হরতালের ১ম দিন ছিল জে এস সি ও জে ডি সির ফাইনাল পরীক্ষা। যে ছাত্র-ছাত্রীদের দেশের ভবিষ্যত বলে গলা ফাটিয়ে ফেলে তাদের পরীক্ষার সময় হরতাল দেওয়া মানে তাদেরকে পিছনে ফেলে দেয়া। আর হরতালের ২য় দিন ছিল মুসলিমদের হিজরি নববর্ষ। এটি যদি ১লা বৈশাখ, ৩১ নাইট তাহলে দেখা যেত এই হরতাল প্রত্যাহারের জন্য এই দেশে আবার শাহাবাগের কর্মীরা জেগে ওটত। আর বিরোধী দলের নেতা কর্মীরা বলেন যে দেশে ৯০% মুসলিমের দেশ।

আমার প্রশ্ন ১৮ দলের কাছে আপনারা কি মাহে মহরম বা হিজরি নববর্ষের দিনটির কথা মাথায় ছিলনা? নাকি মনে রাখার মত কোন তারিখই মনে করেন নি? পরিশেষে একটি গল্প বলে শেষ করছি- গ্রামের এক লোক তার স্ত্রীকে প্রায় সময় কারনে অকারনে মারপিট করত। মহিলাটি প্রতিদিন মূখ বুঝে সহ্য করত। আরেকদিন মারপিটের মাত্রা এতো বেড়ে গেল যে মহিলাটি আর সহ্য করতে না পেরে স্বামীর লাটি দিয়ে স্বামীকে মার দেওয়া আরম্ভ করল। এই মাইর খেয়ে স্বামী একেবারে নাক সোজা হয়ে গেল। এই বাংলার জনগন এইদেশকে যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছিল, ৮৯ তে সরকার বিরোধী আন্দোলন করে এরশাদ সরকারের পতন ঘটিয়েছিল।

অতীত থেকে শিক্ষা নিন। জনগনের মাথায় লবন রেখে বরই খাওয়ার চেষ্টা করবেন না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।