আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম রায়

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় প্রথম রায় ঘোষণা করা হলো গতকাল সোমবার। এ রায়ে সাবেক জামাত নেতা আবুল কালাম আজাদ (বাচ্চু রাজাকার)-কে মৃত্যুদ- দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বলাই বাহুল্য এ রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে জাতির ইতিহাসে শুরু হলো এক নতুন অধ্যায়Ñ জাতির কলঙ্ক মোচন শুরুর পর্ব। চার দশক পর হলেও মুক্তিযুদ্ধের মানবতাবিরোধী অপরাধকারীদের বিচারের প্রথম রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দায়হীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটলো।

গোটা জাতির দীর্ঘদিনের দাবি একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচার। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যদিও দালাল আইনে কিছু লোকের বিচার হয়েছিল, কিন্তু পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর ওই আইন বাতিল করে সাজাপ্রাপ্ত ও কারাবন্দী দালালদের ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। প্রায় ২০ বছর আগে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ‘যুদ্ধাপরাধীদের’ বিচারের দাবিতে গঠিত হয় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। দ্রুতই সারা দেশে ঘাতক দালাল বিরোধী তুমুল নাগরিক আন্দোলন শুরু হয়। জাহানারা ইমাম, সুফিয়া কামালের মতো সে আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় অনেকেই আজ নেই।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের এই রায়ের মধ্য দিয়ে তাদের আন্দোলনের বিজয় সূচিত হয়েছে। এই ঐতিহাসিক দিনে আমরা তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। স্মরণ করছি এ আন্দোলনের সকল অকুতোভয় সৈনিকের অবদান। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী গঠন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচার কার্যক্রম।

চলতি বছরের ২২ মার্চ গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। বাচ্চু রাজাকারের মামলাটি দিয়েই শুরু হয় ট্রাইব্যুনাল-২-এর কার্যক্রম। গত বছর ৩ এপ্রিল বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর থেকে তিনি পলাতক। গত বছর ২৬ জুলাই তদন্ত সংস্থা বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেয়।

গত বছর ৯ সেপ্টেম্বর বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর ৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল বাচ্চু রাজাকারের অনুপস্থিতিতে বিচার শুরুর আদেশ দেন। গত ২৬ ডিসেম্বর বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে করা মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়। আজাদের বিরুদ্ধে আনা লুট, ধর্ষণ, হত্যা, গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনায় ৬ ধরনের অপরাধের আটটি অভিযোগের মধ্যে সাতটিতে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদ- কার্যকর করার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল প্রধান। এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে একাত্তরে জামাতে ইসলামীসহ রাজাকার, আলবদর, আলশামসরা একাত্তরে চূড়ান্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটিত করেছে।

শহীদ পরিবার তো বটেই গোটা জাতি দীর্ঘদিন প্রতীক্ষা করেছিলেন এমন একটি দিনের। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রথম রায়ে তাই আনন্দ ও উল্লাস প্রকাশ করছেন দেশের বিশিষ্টজনসহ সাধারণ মানুষ। তবে একই সঙ্গে বেদনা ও বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, বাচ্চু রাজাকারের মতো একজন ঘৃণ্য অপরাধী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যেতে পারলো। পলাতক এই মৃত্যুদ-প্রাপ্ত অপরাধীকে ধরে এনে রায় কার্যকর করা হলেই দায় মোচন পূর্ণ হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শীর্ষস্থানীয় ১৪ জন অপরাধীর বিচার চলছে।

আরো ১২ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। জাতির প্রত্যাশা, দ্রুতই তাদের বিচারের রায়ও ঘোষিত হবে এবং চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে একাত্তরের সকল যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার হবে। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.