আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানবতাবিরোধী বিচার কার্যক্রম কি মানবতাবিরোধী নয়?

একখানা মতামত দিয়েন কিন্তু!!!!!! ৭১ বছর বয়সী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বক্তা, ইসলামের সুমহান বাণী দেশে-বিদেশে যিনি প্রচারের জন্যে জীবনকে উৎসর্গ করেছেন তিনি আজ অন্ধকার কারাগারে বন্দী। যার সহজ-সরল তাফসীর ও ইসলামের শিক্ষা উপস্থাপনার ক্ষমতায় হাজার হাজার অমুসলিম ইসলামের সূধা পান করতে সৌভাগ্যবান হয়েছেন তিনি আজ কালের বিবর্তনে আর রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় রিমান্ডে নির্যাতিত হচ্ছেন শারীরিক এবং মানসিক ভাবে। শুধু তাই নয়, হার্টের ব্লক নিয়ে হুইল চেয়ারে বসে হাজিরা দিতে হচ্ছে কোর্টে। অবস্থা এতটাই করুন যে আদলতের সময়টুকুতেও অবস্থান করতে অপারগ এ বয়বৃদ্ধ ইসলামের খাদেম। তবুও যখন ৭টি যৌক্তিক শর্ত সাপেক্ষে জামিনের আবেদন করা হলো তখন বিজ্ঞ (!) বিচারক তা খারিজ করে দিলেন।

কিন্তু তার অপরাধ কি? এটা আমার মত হাজারো সাধারণ মানুষের জানার বাইরে। তাতো হবেই। আদার ব্যাপারী জাহাজের খবর জানবে কেন? তাছাড়া, এটাতো রাজনৈতিক ব্যাপার। এ ব্যাপারটা এতটা মিসিটেরিয়াস (Mysterious) যে সয়ং ... না থাক; বোধ হয় পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে তার গূঢ়তত্ত্ব জানে। আজকে যেটা অবৈধ, কাল সেটাই বৈধ; আবার কিছুদিন পরে এই বৈধটাই আবার অবৈধ।

জনগণ এই বৈধ-অবৈধ খেলা ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় উপভোগ করে। মুখরোচক গল্প হিসেবে অজোপাড়াগায়ের ছোট্ট চায়ের দোকান থেকে শুরু করে দেশের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান সংসদে তা উপভোগ্য হয়। হাজারো কষ্টের মাঝে কিছুটা হলেও শান্তি না হোক অট্টহাসির খোরাক যোগায়। কিন্তু এই বৈধ-অবৈধের রঙ্গমঞ্চ সাজায় কারা? কারাই বা এর অভিনেতা-অভিনেত্রী? আমরা সাধারণ মানুষরা যে একেবারেই জানি না তা নয়। তারা হচ্ছে সরকার।

যারা এই সাধারণ মানুষের শক্তি ও ক্ষমতা ভিক্ষা করে আজকের ক্ষমতার পতি। আমাদরেকেই সেবা করার সুমিষ্ট ধোঁকা দিয়ে আমাদেরকেই শাসন করে। দোষ কি? “শাসন করা তারই সাজে, সোহাগ করে যে। ” ভোটের আগে কতইনা সোহাগ করেছে আমাদের। এখনতো একটু শাসন করবেই।

এতো আমাদের ভালোর জন্যেই। বিনিময়ে আমরা নব্বই (৯০) টাকার চাল (যদি হাসিনার মহাজোট ক্ষমতায় না থেকে বি.এন.পি জোট ক্ষমতায় থাকত) এখন মাত্র(!) পঞ্চাশ (৫০) টাকায় কিনে খেতে পারি। হোকনা একটু মোটা, লালচে আর গোমট বাধা! তাতে কি এসে যায়? চাল তো চালই। তবুও এ রঙ্গমঞ্চের অভিনয় দেখে পেটের ক্ষুধা না হলেও হাসির ক্ষুধা নিবারণ করার চেষ্টা করি। কিন্তু সে চেষ্টায়ও একসময় বাধ সাজে কিছু কিছু মানবেতর ঘটনা।

তেমনই একটা ক্ষুদ্র অথচ কারো কাছে মহৎ ঘটনা মাওঃ সাঈদীর বন্দী ও নির্যাতিত বর্তমান জীবন। কেন তা এবার পর্যালোচনা করা যাক: ১. মাওঃ সাঈদীকে প্রথমে গ্রেফতার করা হলো ২৯ জুলাই ২০১০ সালে চাঁদপুরের বিশিষ্ট ইসলামভক্ত সাইয়্যেদ রিযাউল হক চাঁদপূরীর একই বছরের মার্চের ২১ তারিখে দায়ের কৃত মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনায় আঘাত হানা মামলায়। কি আশ্চার্যের বিষয় !!! যে ব্যক্তি তার পুরো জীবনকে উৎসর্গ করল ইসলামের বাণী প্রচার-প্রসারে তিনিই কিনা ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলে? সত্যিইতো এটা একটা গুরুতর অমার্জনীয় অপরাধ। বিজ্ঞ বিচারক (!) তাই সরকারের আদেশ পালনের সাথে সাথে ৯০ভাগ মুসলমানের ধর্মীয় মর্যাদা সমুন্নত করেছেন। ইহকালে ও পরকালে তিনি উত্তম প্রতিদান পাবেন আশা করি।

(পরকালের টা পাক না পাক, ইহকালেরটা বোধ হয় আগেই পেয়েছেন অথবা পাবেন বলে আশ্বস্ত হয়েছেন। ) ২. বন্দী এবং যথারীতি পরদিন কোর্টে হাজির করা হলো। শুধু একটা মাত্র রাত। সময় অনেক কম কিন্তু কাজ অনেক বেশী। আমাদের শ্রদ্ধেয় সোহাগ এবং শাসনকারীরা জানে এ যথসামান্য কেস দিয়ে ইসলামের এই ঘোরতর শত্রুকে (!) আটক রাখা যাবে না; তেমন আইন আমরা এখনও করতে পারিনি।

কি ব্যর্থতা, কতই না লজ্জা; ধিক নিজেদেরকে। আরো একবার নিজেদেরকে অযোগ্য, দূর্বল এবং অদূরদর্শী মনে করল। কোন মতেই ৯০ ভাগ মুসলমানের এ দেশের অভিভাবক হতে পারি না আমরা। তাই রাতারাতি আরো কয়েকটি কেস করা হলো মাওঃ সাঈদীসহ আটককৃত অন্যান্যদের বিরুদ্ধে। এবার যতদিন ইচ্ছে আটক রাখতে পারব ইসলামের এ চিরশত্রুদের (!)।

আহা! কি আরাম। কিছুটা স্বস্তি অনুভব করল। না আমরা পারি। জনগণের কাছে এবার অন্ততঃ জবাবদিহি করতে পারব। শেষে তবুও ভাবল: “ছি! ছি! কি লজ্জায় না পড়েছিলাম?” যাক এ যাত্রায় বাঁচা গেল।

ইসলামকে অবমাননা করবে আর তার উপযুক্ত শাস্তি দিতে পারব না? আমরা নিজেরাও তো এ ধর্মের গুণগ্রাহী। (দূঃখিত, সংগত কারণে অনুসারী বলতে পারলাম না। মার্জনীয় অপরাধ বৈকি। ) ৩. যথারীতি যে কেসে বন্দী করা হলো তা থেকে জামিন মিলল। কিন্ত আইনের ফাঁকে পড়ে বেরিয়ে যাবে আর ইসলামের নামে ব্যবসা করবে?; ৯০ ভাগ মুসলমানের এ পবিত্র ধর্মনিরপেক্ষ দেশে সংখ্যাগরিষ্টদের ধর্মীয় অনূভূতিতে আঘাত করবে? এতটা ধর্মবৈরাগী আর কৃতঙ্ঘ এখনও আমরা (সরকার) হয়নি।

তা প্রমাণ করে দিল। এবার শুধু বন্দী নয়; ফ্রি হিসেবে রিমান্ড। আল্লাহ যদি আখেরাতে বিচার না করে (নাউযুবিল্লাহ)? সুতরাং সে দায়িত্বটাও পালন করে বুঝিয়ে দিলেন তাদের শক্তির হাত। জনগণও গৌরবাণ্বিত হলো যে, তাদের দেয়া ভোট বৃথা যায়নি। ভোরের আলোয় কিংবা গোধুলি আভায় চিক, চিক করে উঠল লক্ষ-কোটি উজ্জ্বল মুখ; থুক্কু, সজল নয়ন।

তাতে কি? ৪. জেলে অন্ততঃ থাকা খাওয়ার সুবন্দোবস্ত তো হয়েছে। ডিভিশন দেয়া হয়েছে। হাজার হলেও প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে; সে যতই ঘৃণিত হোক। তাছাড়া এক মাঘে তো আর শীত যায় না-এমন একটা কথাও তো বাজারে প্রচলিত আছে। কি জানি কি হয়? সে চিন্তাটাও করতে হয়।

তবে মাঝে মাঝে জিজ্ঞাসার নামে (সুষ্ঠ তদন্তের সার্থে; বিশ্বাস করুন অন্য কোন স্বার্থেই নয়) বিশেষ বিশেষ স্থানে আনন্দ (!) ভ্রমন সম্পূর্ণ ফ্রিতে হচ্ছে। আহা কি আনন্দ আকাশে-বাতাসে!!! ৫. তদন্ত তো অনেকদিন হলো। এটা জনগণ আর উপভোগ্য মনে করছে না। একই খাবার সে যতই ভাল হোক দু’বেলার পর তিন বেলা খেতে ভাল লাগে না। আর এটা তো প্রায় এক বছর।

নাহ! জনগণ সত্যিই অতিষ্ঠ। দুঃখ কি? আমাদের অভিবাবকরা আছেন না? সবকাজে একটু ধৈর্য্য ধরতে হয়। “সবরে মেওয়া ফলে। ” সত্যিই তো। জনগণ আবারো অনেক খুশি হলো, চমৎকৃত হলো।

শুধু একজনের বিরুদ্ধে মাত্র চার হাজার চুয়াত্তর (৪,০৭৪) পৃষ্ঠার তদন্ত রিপোর্ট!!! খোঁজ-খবর নিয়ে চেষ্টা করলে গ্রিনেস বুকে নাম উঠতে পারে। বিশ্বের কাছে আরো একবার লাল-সবুজের পাতাকা পত-পত করে উড়ে বলবে আমরাই সেরা। অবশ্যই সুষ্ঠ তদন্তের এবং সত্য-সঠিক তথ্যসমৃদ্ধ এ রিপোর্ট। গাজাখোরি রিপোর্ট হলে এত দীর্ঘ হতো না কখনও? অল্প কথায় কাজ বেশী হয় সবসময়। তাই এ বিশাল রিপোর্ট কোন মতেই বানোয়াট বা মিথ্যা বলার অবকাশ নেই।

ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে মুখরোচক এ কাহিনী। যদিও জনগণ এখনও জানতে পারিনি কি আছে এর মধ্যে তবুও টুপ-টাপ বৃষ্টির দিনে খাঁটি সরিসার তেল, দেশী পেয়াঁজ, মচমচে মুড়ির সাথে প্রাণ চানাচুরের স্বাদ তো পাচ্ছেই। পাচ্ছেই বা বলি কেন? আমি নিজেও তো পাচ্ছি। সত্যিই এটা একেবারেই একনম্বর। কি স্বাধ! যেন অমৃত!!! ৬. ট্রাইবুনালের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী সুস্পষ্টভাবে জামিনের বিরুদ্ধে যুক্তিসংগতভাবে জানিয়ে দিলেন: “সাঈদীর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দখিল করা হয়েছে।

এ অবস্থায় জামিন দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাকে অন্তরীণ রেখেই আমরা সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করতে চাই। ” সুতরাং, ‘আম জনগণ! চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই। সুষ্ঠ তদন্তের সাথে সাথে ন্যায় বিচার অবশ্যই পাবেন তারা। ৭. বিজ্ঞ বিচারক ট্রাইবুনালের আইনজীবীর কাছে জানতে চাইলেন তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা ও যাচাইবাছাই করতে কতদিন লাগবে? উত্তরে আইনজীবীতো হতবাক।

এটা কি বলে? এই বিশাল তদন্ত রিপোর্ট যাচাইবাছাই করতে কতদিন লাগবে তা কি আমার পক্ষে বলা সম্ভব? বিজ্ঞ বিচারক অবশ্য ন্যায়সঙ্গত একটা সময় দিয়ে দিবেন এটাই তো স্বাভাবিক। তাই-ই বললেন। সম্মানিত বিচারক পড়লেন এবার বিপাকে। হয়ত মনে করেছিলেন সরকারী আইনজীবীর কাছ থেকেই একটা ক্লু পাবেন। কিন্তু তাকে হতাশ করে দিলেন।

কোথাও হয়ত একটা গ্যাপ রয়ে গেছে। নয়ত এমন হওয়ার তো কথা ছিলনা। ৮. আদালত অবশ্য ১১ জুলাই ২০১১ এর মধ্যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আবেদন জমা দেয়ার জন্য সরকার পক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশ দেন। এখন কথা হলো, যেখানে এখনো অভিযোগ গঠন হয়নি সেখানেই যেহেতু প্রায় এক বছর কারাবাস সাথে দীর্ঘদিন রিমান্ডের নির্যাতন ফ্রি তখন অভিযোগ গঠন করতে বা বিচারের রায় এবং তা কার্যকর হতে হয়ত সাঈদীর জীবন শেষ হয়ে যাবে; নয়ত সরকারের। অবশ্য বিশেষ কোন ঝড় যদি এর মাঝে না আসে।

সেই দোয়ায় সাধারণ মানুষ বোধ হয় করছে(!)। এখন কিছু প্রসঙ্গতঃ অন্যান্য বিষয়ের আলোকপাত করি। ১. প্রথম আলো পত্রিকাতে যখন মহানবী মুহাম্মদ (সা.) কে ব্যাঙ্গ করে কার্টুন ছাপানো হয় তখন সম্পাদক এসে বায়তুল মোকাররামের খতিবসহ অন্যান্যদের কাছে ক্ষমা চাইলেই ক্ষমা হয়ে যায়। তখন কোন ইসলামভক্ত মুসলমান তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় চেতনায় আঘাত হানার জন্যে কোটে কেস করে না। অন্যদিকে, কোন অমুসলিম (হিন্দু) যদি কোরআনের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোটে রিট করে তখন হাই কোটের সেই বিচারক ভুলে যান এটা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ।

সম্মানের সাথে বিষয়টা নথিভূক্ত করা হয়। কিছুদিন পর সাধারণ জনগনের আন্দোলনের মুখে তখন সেই কোর্ট-ই রিটকারীকে মস্তিস্ক বিকৃত বলে বিবেচনায় এনে নিশঃর্ত মুক্তি দেয়। সেই একই বিচার ব্যবস্থা মাওঃ সাঈদীসহ অন্যান্য বরেণ্য ইসলামী চিন্তাবিদদেরকে মুসলমানদের ধর্মীয় চেনতায় আঘাত হানার অপরাধে গ্রেফতার করে হাজতে পাঠায়। এর চেয়ে হাস্যকর আর কি হতে পারে? না এটা হাসির কোন বিষয় না। এখানে কিছু সিক্রেট (গোপন বিষয়) আছে যা জনগনের জানার দরকার কি? ২. কিছুদিন আগে মহামান্য রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের কলমের খোচায় ২০ জন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী কেবল প্রাণেই বেঁচে যায়নি বরং জেল জীবনের ইতি ঘটেছে।

তাছাড়া এর আগেও একই রাষ্ট্রপতি দূর্ণীতির মামলায় ১৩ বছর সাজাপ্রাপ্ত সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর পালাতক পুত্রকে মার্জনা করেছেন। (সূত্র: মাহমুদুর রহমান, আমার দেশ: ২৮ মে ২০১১) এতে চিন্তার কোন কারণ নেই। সন্ত্রাসী বা দূর্নীতী করলে মৃত্যদণ্ড থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে কিন্তু কথিত মুসলমানদের ধর্মীয় অনূভুতিতে আঘাত হানলে তার কোন মুক্তি নেই। সাথে ১৯৭১ সালের রহস্যময় মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ তো আছেই। যদিও এখনও তা প্রমাণ হয়নি।

তো কি হয়েছে? হবে, ইনশাআল্লাহ(!)। এখানে প্রসংগতঃ সুরন্জিত সেন গুপ্তের একটা কথাটা উল্লেখ করা আবশ্যক তাহলে জনগণের আর এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকবে না। উনি বলেনছেন: “বাঘে ধরলে বাঘে ছাড়ে কিন্তু আমাদের নেত্রী (শেখ হাসিনা) ধরলে ছাড়ে না। ” উক্তিটা বিশেষ অর্থপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ। ৩. এইতো কয়েকদিন আগে ৫১ বছর বয়সী ধনাঢ্য ব্যবসায়ী বয়বৃদ্ধতা এবং অসুস্থতার কারনে কোট থেকে জামিন নিয়েছেন।

ভাবছেন ৫১ বছর বয়সী ব্যবসায়ী বয়বৃদ্ধ ও অসুস্থতার কারণে জামিন পেল আর ৭১ বছর বয়সী মাওঃ সাঈদী কেন জামিন পেল না? এমন ভাবলে আপনি নিছৎ একজন বোকা বৈ কিছুই নয়। ৪. ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সংঘঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধ বিশেষ করে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ সহ ধ্বংযজ্ঞ সবধরণের কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করে। উল্লেখ্য যে, বিচার শুরু হয়েছিল “যুদ্ধাপরাধী” নামে পরবর্তীতে “মানবতাবিরোধী” নাম করণ ও তার সংগা নির্ণয় করা হয়েছে। হয়ত ভাবছেন বর্তমানেও তো এসব অপরাধগুলো হচ্ছে। তাহলে সেগুলোর কেন এ আইনের আওতায় বিচার হচ্ছে না।

যেমন, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬ রাজপথের হত্যার ঘটনা, পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে ধর্ষণ, লুণ্ঠন আর বিভিন্ন প্রকার ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা। কিন্তু এগুলো ঐ সংগার মধ্যে পড়ে না? হা পড়ে। আপনার আমার সাধারনের বিবেচনায় পড়ে। কিন্তু অসাধারণদের বিবেচনায় তা পড়ে না। কারণ এ আইন শুধু ৪০ বছরের আগের ঘটনাগুলোকে অন্তভূক্ত করে।

আগেই বলেছি এটা হচ্ছে বৈধ-অবৈধের খেলা। এখন এগুলো বৈধ বলে তখনকার গুলোও কি বৈধ হবে? অবশ্যই না। কারন, জনগণ তা চায় না(!)। সরকারদলীয় অংগসংগঠনের হাতে নিহত বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষবর্ষের ছাত্রের বৃদ্ধা মা, সরকারের মদদপুষ্ট বখাটে সন্ত্রাসীর কথিত প্রেমিকার হাতে নিহত বাবা-মায়ের একমাত্র কন্যা ও তার ছোট্ট ভাইটি কিংবা বিনা অপরাধে পা হারানো ছেলের গরীব দূঃখী বাবা-মা কিন্তু ৪০ বছর আগের ঐ বিচারটা চায়; বর্তমানের গুলো নয়। কেউ না চায়, আমাদের অভিবাবকরা চায়।

সুতরাং এটুকু আমাদের মানতেই হবে। প্রসংগতঃ একটা কথা না বললেই নয়। বিবেক বলে একটা জিনিস সব সময় থাকা দরকার। বিবেকহীন মানুষ পশুর চেয়েও অধম। বিদেশে থাকার কারণে সচারআচার কোন ঘটনা নিজ চোখে দেখার সুযোগ হয়ে উছে না।

কিন্তু পত্র-পত্রিকা খুললে আর মনে হয়না যে, এ দেশটা আর বসবাসের উপযোগী আছে। এমনিতেই পরিবেশ দূষণের কারনে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তারপরও চারিদিকে খুন-রাহাজানী, অন্যায়, অত্যাচার আর অবিচারে ভরে গেছে। খাদ্যসামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সেই সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এতকিছুর পরেও গণতন্ত্রের জন্যে আমরা যুদ্ধ করি কিন্তু ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হই না; পারিনা।

পারিনা স্কুলপড়ুয়া কন্যার বাবা-মাকে নিশ্চিন্ত করতে। নামকাওয়াস্তে মাঠে ময়দানে দু’একটা বক্তৃতা ছাড়া তেমন কোন গৃহীত কার্যক্রমের বাস্তবায়ন লক্ষ্য করা যায়না। এমন নির্বুদ্ধিতা থেকে উঠে না আসতে পারলে কখনওই দেশ ও জাতির উন্নতি করা সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত, ধর্মীয় কিংবা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে আমাদেরকে উঠে আসতে হবে। দেশকে ভালবেসে দেশের সেবা করার প্রত্যয় নিতে হবে।

একদিকে যেমন ক্ষমা করার মহৎ গুণ অর্জন করতে হবে অন্যদিকে সুশাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলেই জনগণের দেয়া আমানত রক্ষা হবে। সম্মানিত করা হবে এ ক্ষমতার উৎস এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে। পরিশেষে একটা কথা দৃঢ়চিত্তে বলতে চাই যে, মাওঃ সাঈদী ১৯৭১ সালে আর যাই করুক কাউকে হত্যা, ধর্ষণ, লুট কিংবা অগ্নি সংযোগের মত কোন কাজ নিজে করেছেন কিংবা অন্যকে করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন তা আমার মত অনেকের বিশ্বাসযোগ্য নয়। স্বাধীনতার ৪০ বছর পার হয়েছে।

এ দীর্ঘ সময়ে তার অগণিত তাফসীর মাহফিলে মুসলিম-অমুসলিম, দলমত ভুলে মানুষ দলে দলে যোগদান করেছে। আমরা স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্ম। যুদ্ধ দেখিনি কিন্তু মাওঃ সাঈদীকে দেখেছি তার মাহফিল শুনেছি কয়েকবার। কখনও মনে হয়নি এ মানুষটি কথিত এসব যঘন্য অপরাধ করতে পারে। কেউ কখনও অভিযোগও করেনি।

আর আজ তার এহেন পরিস্থিতি? একথা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট যে, মাওঃ সাঈদী অন্যায়, অবিচার আর নির্যাতনের স্বীকার। প্রত্যেক মু’মিন-মুসলিম এরকম জুলুমের শিকার হবে এটাই ঈমানের পরীক্ষা। কিন্তু যারা নির্যাতন কারী বা নির্যাতনের সাথে সংশ্লিষ্ট তাদেরও একটা পরিণাম আছে তা নিশ্চিত। অন্য সকলের মত আমিও চাই কোরআনের এ মহান প্রচারক সুষ্ঠ, শান্তি ও নিরাপত্তার মাঝে বাকি জীবন যেন দ্বীন ইসলামের খেদমত করে যেতে পারেন। সরকারের উচিৎ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কোরআনের এই প্রচারককে সম্মান জানানো।

তাহলেই কোটি-কোটি জনগণের প্রতি সম্মান জানানো হবে। নিজেরাও সম্মানিত হবেন। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সত্য-সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.