আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রার্থনায় কোন সীমারেখা নেই

"অবশ্যই আমার নামাজ আমার এবাদাত আমার জীবন আমার মৃত্যু সবকিছুই সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহর জন্যে। "

- হারুন ইয়াহিয়া অনুমোদনযোগ্যতার আওতায় হালাল বলে বিবেচিত যে কোন বস্তুর জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা যায়। এর কারণ, আল্লাহই হচ্ছেন সমগ্র বিশ্বব্রহ্মান্ডের একমাত্র মালিক ও শাসক; তিনি ইচ্ছে করলে, মানুষ যা চায় তা-ই দিতে পারেন। আল্লাহর মুখাপেক্ষী হয়ে তাঁর কাছে প্রার্থনা করার সময় প্রত্যেকেরই উচিত আল্লাহর যদৃচ্ছা কর্মশক্তিকে সমীহ করা এবং প্রিয়নবী মুস্তফা (সঃ) যেমন বলেছেন, "আত্মনিবেদনে দৃঢ় হওয়া"। প্রত্যেকের জানা উচিত যে আল্লাহর জন্যে মানুষের যেকোন ইচ্ছা বা কামনা পূরণ করা অতি সহজ কাজ এবং তার প্রার্থনার মধ্যে তার জন্যে কল্যাণকর যদি কিছু থাকে আল্লাহ অবশ্যই তা মঞ্জুর করবেন।

নবীদের ও প্রকৃত ঈমানদার ব্যক্তিদের যে সব প্রার্থনার কথা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোকে আল্লাহর কাছে মানুষ কি কি বিষয়ে প্রার্থনা করতে পারে তার উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। তেমনি একটি উদাহরণঃ আল্লাহর কাছে নবী যাকারিয়া (আঃ) একটি মনোতোষ উত্তরাধিকারী প্রার্থনা করেন এবং আল্লাহ তাঁর প্রার্থনা মঞ্জুর করেন, তাঁর স্ত্রীর বন্ধাত্ব সত্ত্বেওঃ "যখন সে একান্ত নীরবে তার মালিককে ডাকছিলো। সে বলেছিলো, হে আমার মালিক, আমার (শরীরের) হাড় দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং (আমার) মাথা শুভ্রোজ্জ্বল হয়ে গেছে (তুমি আমার দোয়া কবুল করো), হে আমার মালিক, আমি তো কখনো তোমাকে ডেকে ব্যর্থ হইনি ! আমার (মৃত্যুর পর) আমি আমার পেছনে পড়ে থাকা আমার ভাই বন্ধুদের (দ্বীনের ব্যাপারে) আশংকা করছি, (অপরদিকে) আমার স্ত্রীও হচ্ছে বন্ধ্যা, (সন্তান ধারণে সে সক্ষম নয়, তাই) তুমি একান্ত তোমার কাছ থেকে আমাকে একজন উত্তরাধিকারী দান করো, যে আমার উত্তরাধিকারীত্ব করবে - উত্তরাধিকারীত্ব করবে ইয়াকুবের বংশের, হে (আমার) মালিক, তুমি তাকে একজন সন্তোষভাজন ব্যক্তি বানাও। " (সূরা মারইয়ামঃ আয়াত ৩-৬) আল্লাহ নবী যাকারিয়ার প্রার্থনা মঞ্জুর করেন এবং তাঁকে জানান নবী জন (ইয়াহইয়া)-এর শুভ সংবাদ; পুত্র সন্তান লাভের সুসংবাদে চমকিত হন নবী যাকারিয়া, কেননা তাঁর স্ত্রী ছিলেন বন্ধ্যা। নবী যাকারিয়ার প্রশ্নের যে জবাব আল্লাহ দিয়েছিলেন তাতে যে রহস্যের উম্মোচন হয় তা বিশ্বাসীদের জন্য সর্বক্ষণ স্মরণযোগ্য।

যাকারিয়া বললেন, "হে আমার মালিক, আমার ছেলে হবে কিভাবে, আমার স্ত্রী তো বন্ধ্যা এবং আমি নিজেও (এখন) বার্ধক্যের শেষ সীমানায় এসে উপনীত হয়েছি। আল্লাহ তায়ালা বললেন (হ্যাঁ), এটা এভাবেই (হবে), তোমার মালিক বলছেন, এটা আমার জন্যে নিতান্ত সহজ কাজ, আমি তো এর আগে তোমাকেও সৃষ্টি করেছিলাম - যখন তুমি কিছুই ছিলে না !" (সূরা মারইয়ামঃ আয়াত ৮-৯) কুরআনে আরো অনেক নবীর নামোল্লেখ করা হয়েছে যাদের প্রার্থনা মঞ্জুর করা হয়েছিল। দৃষ্টান্তস্বরূপ, নবী নূহ (আঃ) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন তাঁর কওমের ওপর গজব নাজিল করতে, কেননা তাদের সত্পথে চালাবার জন্য তাঁর প্রাণান্ত প্রয়াস ব্যর্থ করে তারা বিপথগামী হয়েছিলো। প্রার্থনা মঞ্জুর করে আল্লাহ তাদের (নূহের কওমের) ওপর যে ভয়াবহ গজব নাজিল করেছিলেন তা ইতিহাসবিশ্রুত হয়ে আছে। নবী আইউব (আঃ) একটি যাতনার কারণে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন এই বলেঃ "... (হে আল্লাহ), আমাকে এক কঠিন অসুখে পেয়ে বসেছে, (আমায় তুমি) নিরাময় করো, (কেননা) তুমিই হচ্ছো দয়ালুদের সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু," (সূরা আল আম্বিয়াঃ আয়াত ৮৩) তাঁর প্রার্থনায় সাড়া দেবার কথা বলা হয়েছে এভাবেঃ "অতঃপর আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম, তার যে কষ্ট ছিলো তা আমি দূর করে দিলাম, তাকে (যে শুধু) তার পরিবার পরিজনই ফিরিয়ে দিলাম (তা নয়); বরং তাদের (সবাইকে) আমার কাছ থেকে বিশেষ দয়া এবং আমার বান্দাদের জন্যে উপদেশ হিসেবে আরো সমপরিমাণ (অনুগ্রহ) দান করলাম।

" (সূরা আল আম্বিয়াঃ আয়াত ৮৪) আল্লাহ তায়ালা নবী সুলাইমান (আঃ)-এর প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। কুরআনে বর্ণিত আছে, নবী সুলাইমান (আঃ) প্রার্থনা করেনঃ "হে আমার মালিক, (যদি আমি কোনো ভুল করি) তুমি আমাকে ক্ষমা করো, তুমি আমাকে এমন এক সাম্রাজ্য দান করো, যা আমার পরে আর কেউ কোনোদিন পাবে না, তুমি নিশ্চয়ই মহাদাতা। " (সূরা সোয়াদঃ আয়াত ৩৫) আল্লাহ তাঁকে প্রবল পরাক্রম ও প্রভূত সম্পদ দান করেন। যারা প্রার্থনা করে তাদের মনে রাখতে হবে এই আয়াতটিঃ "তিনি যখন কিছু একটা (সৃষ্টি) করতে ইচ্ছা করেন তখন কেবল এটুকুই বলেন 'হও' " (সূরা ইয়াসিনঃ আয়াত ৮২) সবকিছুই সহজ আল্লাহর কাছে; তিনি শোনেন ও জ্ঞাত হন প্রতিটি প্রার্থনা। যারা ইহকালে সুখ সম্পদ চায় সে সব তাদের দান করেন আল্লাহ কিন্তু পরকালে তারা বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

যাদের হৃদয় আল্লাহ-ভীরুতায় দৃঢ়বদ্ধ নয় এবং পরকালে যাদের প্রগাঢ় বিশ্বাস নেই তাদের বাসনা-কামনা হয় ইহজাগতিক। তারা কেবল এই দুনিয়ার ধনদৌলত ও মান-মর্যাদা কামনা করে। আল্লাহ বলেছেনঃ যারা কেবল এই দুনিয়া চায় আখেরাত তারা পাবে না। অপরপক্ষে, বিশ্বাসীরা কেবল ইহ-সংসারের জন্যে নয় পরকালের জন্যেও আল্লাহর আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন কেননা তাঁরা বিশ্বাস করেন ইহজীবনের মতোই নিশ্চিত ও নিকটবর্তী পরকালের জীবন। এই প্রসঙ্গে কুরআনে আল্লাহ বলেছেনঃ "মানুষদের ভেতর থেকে একদল লোক বলে, হে আমাদের মালিক, (সব) ভালো জিনিস তুমি আমাদের এ দুনিয়াতেই দিয়ে দাও, বস্তুত (যারা এ ধরনের কথা বলে) তাদের জন্যে পরকালে আর কোন পাওনাই বাকি থাকে না।

(আবার) এ মানুষদেরই আরেক দল বলে, হে আমাদের প্রতিপালক, এ দুনিয়ায়ও তুমি আমাদের কল্যাণ দান করো, পরকালেও তুমি আমাদের কল্যাণ দাও; (সর্বোপরি) তুমি আমাদের আগুনের আযাব থেকে নিস্কৃতি দাও। এ ধরনের লোকদের তাদের নিজ নিজ উপার্জন মোতাবেক তাদের যথার্থ হিস্যা রয়েছে, আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। " (সূরা আল বাকারাঃ আয়াত ২০০-২০২) ঈমানদার ব্যক্তিগণও সুস্বাস্থ্য, সম্পদ, জ্ঞান ও আশীর্বাদের জন্যে প্রার্থনা করেন কিন্তু তাঁদের সকল প্রার্থনার মধ্যেই আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধান ও ধর্ম (দ্বীন)-এর কল্যাণে কিছু করার অভিপ্রায় থাকে। যেমন, তাঁরা সম্পদ চান আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার জন্যে। এ প্রসঙ্গে কুরআনে বর্ণিত নবী সুলাইমান (আঃ)-এর দৃষ্টান্তটি প্রণিধানযোগ্য।

নবী সুলাইমান (আঃ) আল্লাহর কাছে অভূতপূর্ব রাজ্য ও সম্পদ চেয়েছিলেন কোন জাগতিক লোভ বা মোহ চরিতার্থ করার জন্যে নয় বরং সবকিছুই আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার মহান উদ্দেশ্যে, মানুষকে আল্লাহর দ্বীনে দাওয়াত করার জন্যে এবং নিজেকে আল্লাহর ধ্যানে মশগুল রাখার সামর্থ্য লাভের জন্যে। আল্লাহ সুলাইমান (আঃ)-এর প্রার্থনা মঞ্জুর করেন, ইহকালে অপার বৈভব ও পরকালে অশেষ নিয়ামত দান করেন তাঁকে। পক্ষান্তরে, যারা কেবল এই জীবনের বাসনা কামনায় মত্ত আল্লাহ তাদের ইচ্ছাও পূরণ করেন কিন্তু পরকালে তাদের জন্যে কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে। এই জীবনে যে নিয়ামত তারা লাভ করেছে পরকালে তা পাবে না তারা। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিই কুরআনে বর্ণিত হয়েছে এভাবেঃ "যে ব্যক্তি পরকালের (কল্যাণের) ফসল কামনা করে আমি তার জন্যে তা বাড়িয়ে দেই, আর যে ব্যক্তি (শুধু) দুনিয়ার জীবনের ফসল কামনা করে আমি তাকে (অবশ্য দুনিয়ায়) তার কিছু অংশ দান করি, কিন্তু পরকালে তার জন্যে (সে ফসলের) কোনো অংশই বাকী থাকে না।

" (সূরা আশ শূরাঃ আয়াত ২০) এই ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্বই যাদের কাম্য তাদের উদ্দেশ্যে বলছিঃ "কোনো ব্যক্তি দ্রুত (দুনিয়ার সুখ সম্ভোগ) পেতে চাইলে আমি তাকে এখানে তার জন্যে যতোটুকু দিতে চাই তা সত্বর দিয়ে দেই, (কিন্তু) পরিশেষে তার জন্যে জাহান্নামই নির্ধারণ করে রাখি, যেখানে সে প্রবেশ করবে একান্ত নিন্দিত, অপমানিত ও বিতাড়িত অবস্থায়। " (সূরা বনী ইসরাঈলঃ আয়াত ১৮) অনুবাদ করেছেনঃ আবুল বাশার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.