আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শব্দের পোস্টমর্টেম -৪৪



'হাবভাব করে চলে এসে বলে আমি এই কারণে সুন্দর' Ñ--- এ বাক্যে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাবভাব বলতে পরিষ্কার ভাবে ছলাকলাই বুঝিয়েছেন এবং এককালে হাবভাবের অর্থ তা-ই ছিল। মানুষের মনের ভাব প্রকাশের সূত্রটি সব সময় ব্যাকরণ নির্ভর হয় না। হওয়া উচিতও নয়। ব্যাকরণ ভাঙা শব্দের মাঝে এক ধরনের রহস্য থাকে। এ রহস্যটা ভাষা সাগরের ব্যপ্তি বাড়ায়, কখনো ভাষাকে রহস্যের চাঁদরে ঢেকে দেয়।

বাংলা জোড়া শব্দগুলোকে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাকরণ নির্ভর হতে দেখা যায় না, বরং তা ভাব নির্ভর হয়ে উঠে। হাটবাজার, হাটাচলার হচ্ছে জোড়া লাগা। শব্দ হলেও এদের আলাদা আলাদা অর্থ আছে। কিন্তু ভাব প্রকাশে সমস্যা হয় না। শুধু তাই নয়, জোড়া লাগা শব্দের একটি অর্থযুক্ত আর বাকিটি অর্থহীন হলেও তা ভাব প্রকাশ করতে পারে।

কাজটাজ আর হাতটাত শব্দ দুটির প্রথমাংশের অর্থ থাকলেও শেষাংশের কোনো অর্থ নেই। বাংলা ভাষায় একটি রহস্যময় জোড়া শব্দ হলো হাবভাব। এখানে দুটি শব্দেরই আলাদা আলাদা অর্থ আছে। হাব শব্দের অর্থ হলো নারীর মনোহর, লাস্য বা বিলাসভঙ্গি আর ভাব শব্দের অর্থ অভিপ্রায়, অবস্থা, চিন্তা, ধরন, প্রণয়, আহবান ইত্যাদি। শব্দ দুটি জোড়া লেগে যাবার পর তার অর্থ দাঁড়ায় ছলাকলা, আকার-ইঙ্গিত, চালচলন ইত্যাদি।

অবশ্য এককালে হাবভাব শব্দটি ছিল নিরেট কামগন্ধী এবং তা কেবল নারীদের বেলায় ব্যবহৃত হতো। শব্দটি শুনলেই তখন পুরুষদের রোমাঞ্চ জাগতো। কিন্তু সময়ের পথ পরিক্রমায় হাবভাব শব্দটি আজ লিঙ্গনিরপেক্ষ শব্দে পরিণত হয়েছে। নারী-পুরুষ ছাড়াও তা এখন প্রাণীদের বেলায়ও প্রযোজ্য। এখন আর হাবভাব দিয়ে পুরোপুরি ছলাকলা বোঝায় না, বোঝায়Ñ চালচলন, রকম-সকম।

(চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।