আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বাধীনতা: 'বার্থ সার্টিফিকেটের' প্রমানে নিজের মাকে মা আর বাবাকে বাবা ডাকতে চায় কিছু কুলাঙ্গারের দল!

সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার

একটি শিশুকে জন্ম দিতে অসহনীয় কষ্টের মুখেমুখি হতে হয় প্রতিটি মা কে। মায়ের প্রতিটি যন্ত্রণা, প্রতিটি চিৎকারের মাঝে তার নবজাতক পৃথিবীর আলোবাতাসের কাছাকাছি এগিয়ে আসে। তারপর একসময় সুতীব্র চিৎকারের মাঝে শিশুটি তার অস্তিত্বের জানান দেয়। একটি দেশের জন্মা, পরাধীনতার কবল থেকে আরাধ্য মুক্তি তারচেয়ে আলাদা কিছু নয়। দীর্ঘ সংগ্রাম, যুদ্ধ, লাখো মানুষের রক্ত, মায়ের প্রসব বেদনার মতোই কষ্টকর।

জন্মের পর মায়ের কষ্ট যেমন তার স্বন্তানরা বুঝতে চায়না, আমদের পাশের কিছু মানুষও সে দেশের মুক্তির কাহিনীর পর তার আলোবাতাসে খেলা করেও সে সংগ্রামের কথা ভুলে যায়। সে দেশের জন্ম নিয়ে নিজের রাজনৈতিক, ধর্মীনৈতিক, অর্থনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে মনগড়া বক্তব্য তেরী করে সে দেশের জন্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। নিজের মায়ের মুখে কালিলেপনের এরচেয়ে বড় অপরাধ আর কি হতে পারে? আমাদের ব্লগে এমনি একজন ব্লগার জনাব আশরাফ রহমান তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে এই অপরাধের আলামত ছাড়িয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন। অনেকেই বলবেন, নামটি সরাসারি বলা ঠিক হলো কি? আমার বিশ্বাস হয় ঠিক হয়েছে। নিজের দেশমাতৃকাকে কে অপমান করায় প্রতিমুহুর্তে যে কুলাঙ্গার কখনোই পিছপা হয়না, তাকে সঠিক ভাবে চিহ্নিত করা অবশ্যই জরুরী।

ওনি কারো কারো বই, কোটেশন, পত্রিকা থেকে বিভিন্ন লাইন কেটে কেটে এমন সব লেখা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন, যা একমাত্র বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যই করা। কেউ কেউ এগুলোকে তথ্যসমৃদ্ধ পোষ্ট হিসেবে আখ্যা দিলেও এর ফাঁকিটাও ধরতে পারছেন অনেকেই। একটি স্বাধীনতা যুদ্ধে শত্রুর বিরুদ্ধে রণকৌশলে যাবার আগে সে যুদ্ধর পক্ষে আরেকটা বড় শক্তি তার পেছনে অনুপ্রেরণা। সে অনুপ্রেরণা শক্তির সর্বাগ্রে যে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, একথা কে অস্বীকার করতে পারবে? এ অনুপ্রেরণা একদিনে সঞ্চারিত হয়নি বাঙ্গালী মানসে, তা সঞ্চারিত হয়েছে পাকিস্তান গঠনের পর থেকেই। বাহান্নের একুশে ফেব্রয়ারী থেকে যে সংগ্রাম তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে, তারই পথ ধরে ধরে সাতাশে মার্চের ঐতিহাসিক বক্তৃতায় শেখ মুজিব বলেছিলেন, "এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারে সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

" এর পর কি আলাদা কোন ডাকের বা ঘোষনার প্রয়োজন ছিল? কিছু কুলাঙ্গার বাদে সমস্ত বাঙ্গালী ঝাপিয়ে পড়েছিল সে ডাকে। সে ডাকের কর্নধার শেখ মুজিবর রহমান ও তার আওয়ামী লীগ হলেও অন্যান্য রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষও সে ডাকে সাড়া দিয়েছিলো প্রানবত্তভাবে। এর মাঝে ছিলো গনতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক, এমনকি ধর্মীয় চিন্তার বাঙ্গালী মানস। একমাত্র যারা ধর্মান্ধ, তাদেরই একাংশ বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল নিজেদের জাতভাইএর সাথে। মেজর জিয়াও সে ডাকে সাড়া দিয়ে অস্ত্র হাতে নেতৃত্বের ভার নিয়েছিলেন।

তার নেতৃত্বেই ঝাপিয়ে গড়ে লাখো লাখো বাঙ্গালী মুক্তিসংগ্রামে। সেখানে শেখ মুজিবকে জাতির পিতা আর জিয়াউর রহমানকে জাতির বীর সৈনিক ভাবতে বাধা কোথায়? একবড় একটি মুক্তিসংগ্রাম, কী বিশাল তার পরিমন্ডল, কতো বিভিন্ন মতাদর্শের মিলন একসাথে, যদিও একই উদ্দেশ্য সবার মাঝে- দেশমাতৃকার স্বাধীনতা। তারপরও এর মাঝে স্বাভাবিকভাবেই মতাদর্শের অমিলের কারণে একই অভীষ্ট লক্ষ থাকলেও হয়তো একই পথে এগিয়ে যাননি সবাই। চিন্তার বিভেদ হয়তো অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্ফুটিত হয়েছে। তারই সুযোগ খুঁজে আজ স্বাধীনতার ৩৬ বছর পরও এ অর্জিত স্বাধীনতাকে পঙ্কিলময় করার পথ খুজছে কিছু কুলাঙ্গারের দল।

রাজাকার আর আলবদরের শক্তিতে ৩৬ বছর আগে যা পারেনি, তার প্রচেষ্টার তারা আজও ব্যস্ত। উদ্দেশ্যপনোদিতভাবে তারা জাতির পিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তারা প্রশ্ন তোলে, এ স্বাধীনতা সংগ্রাম ধর্মবিরোধী ছিল কি না। এ চিন্তা যে শুধুমাত্র পাপ নয়, নিজেদের জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা, এটা তারা এখনও বুঝে উঠতে পারে নি। এদেরকে দেশদ্রোহী আথ্যা দিলে কি ভুল হবে? নিজে মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি, বাবা মায়ের হাত ধরে পালিয়েছি শহর ছেড়ে গ্রামে গ্রামান্তরে। অনুভব করেছি এ মুক্তিযুদ্ধের প্রতি এ দেশের আপমর জনগনের অকুন্ঠ সমর্থন।

রাস্তাঘাটে পড়ে থাকতে, নদীতে নদীতে ভেসে পঁচতে দেখেছি এদেশের সংগ্রামী মানুষের লাশ, শুনেছি ছেলেহারা মায়ের অসহায় কান্না। কৃষকের পুড়ে ছাই হওয়া কুড়েঘর দেখেছি, দেখেছি সাধারণ এক দোকানীর ছাই হয়ে যাওয়া সম্বল। দেখেছি ধর্ষিতা মেয়েদের করুন চেহারা। এ দেখাকে, এই নিদারুণ অনুভবকে প্রশ্রবিদ্ধ করে এই কুলাঙ্গারের দল! অনেকেই বলেছেন, হয়তো যুক্তিসঙ্গত কারনেই এসব জীবকে পাত্তা না দিয়ে চুপচাপ থাকতে। কিন্তু আমার প্রতিবাদী মানস নীরব থাকতে পারে না।

স্বাধীনতার আগে কোন রাজৈতিক দলে যোগ দেবার বয়েস ছিল না। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড পছন্দ না হওয়ায় রাজনীতি থেকে দুরে রেখেছি নিজেকে। শেখ মুজিবের বাকশালকে ভালো মনে করতে পারিনি। কিন্তু শেখ মুজিব আওয়ামী, বাকশাল নেতা হিসেবে যতোটা পরিচিত, তার চেয়ে অনেক বেশী পরিচিত বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা হিসেবে। তাকে কিভাবে অস্বীকার করতে পারি? একই ভাবে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনীতিও অনেক নিরপরাধ সৈনিকের রক্তে রন্জিত।

তারপরও স্বাধীনতা সংগ্রামে তার অবদানের কথা কি ভুলে যেতে হবে? অনেক সময় বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা ঘোষনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এই সাধারণ ক্ষমা ছিল তাঁর মহানুভবতার পরিচয়। রাজনৈতিক চালের চুলচেরা বিশ্লেষনে হয়তো একে ভুল বলা যেতে পারে, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মানস ছিল এসবের উর্ধে। আমি সে মহানুভবতার মুল্যই দেই সর্বাগ্রে, কিন্তু এই কুলাঙ্গারের দল সে সুযোগ গ্রহন করে আজও এদেশেরই বিরোধিতায় সোচ্চার। এদের একজন নাকি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিল।

পরে ছেড়ে দিয়েছিল। স্বাধীনতা পূর্ব আওয়ামী লীগের প্রতি এতো যার অনীহা, যার কর্মকান্ডের প্রতি যা এতো তথাকথিত তথ্যসমৃদ্ধ সমালোচনা, তার স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগে যোগদান কি ভন্ডামোর চুড়ান্ত নয়? আমি মনে করি না, এ স্বাধীনতার মুল্যবোধ বিচাবে তথ্যের কোন প্রয়োজন রয়েছে, এর জন্যে দেশমাতৃকার জন্যে নিজের অনুভুতিই সবচেয়ে বড় প্রমান। তথ্যসমৃদ্ধ "বার্থ সার্টিফিকেট" হাতে নিয়ে নিশ্চয়ই এসব কুলাঙ্গারের দল তাদের মা কে মা আর বাবাকে বাবা ডাকতে শেখেনি। স্বাধীনতা পরবর্তী বাঙলাদেশের রাজনীতি যে কলুষিত, একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এটা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় দল সবার চেহারাই কলুষিত।

জামাতের কথা বলতে চাই না। এরা এখন বাংলাদেশের কথা বললেও চিন্তা চেতনায় তাদের ৩৬ বছর আগের রাজাকার, আল বদরের পরাজয়কে মনে করে আজও পাকিস্তানপন্থী। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও লাখে লাখো মুক্তিযোদ্ধা সহ বীরসৈনিক জিয়াউর রহমানকে কে যারা প্রশ্নবিদ্ধ করে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী না হয়ে থাকার ক্ষমতা আমার নেই।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.