আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাপানের ডায়েরি-1

প্রতিটি সর্যাস্তে বুক বাঁধি একটি অন্যদিনের সূর্যোদেয়র প্রত্যাশায়.......

10ই অক্টোবর, 2005। আজ রমজানের তৃতীয় দিন। প্রথম দুই রোজা রাখতে পারিনি। একেতো সব কিছুই নতুন, তার উপর খাবার এবং রান্নার কোন জিনিস পত্র মেনেজ করা হয়ে ওঠেনি। গতকাল ও খুব কষ্ট করে রান্না করতে হয়েছে।

তবে আজ মোটামুটি সবই মেনেজ করতে পেরেছি। গত পাঁচ দিনে আমি মোট পয়ত্রিশ হাজার ইয়েন খরচ করেছি জরুরি কিছু জিনিস পত্র কিনতে। এখানে জিনিস পত্রের দাম দেখে মাথা খারাপ হওয়ার জোগার। পাঁচ পিছ আলুর দাম একশত আশি ইয়েন (প্রায় একশত টাকা), ছয় পিছ কলা একশত চলি্লশ ইয়েন (প্রায় আশি টাকা), বড় সাইজের একটা মুলার দাম পড়ে একশত আশি ইয়েন এবং দশ কেজি চালের দাম দুই হাজার পাঁচ শত থেকে সারে তিন হাজার ইয়েন পর্যন্ত (প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা)। যদিও ল্যাব-এ কাছ শুরু করিনি, তবু প্রতিদিন যেতে হয়।

আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে ইউনি তে যেতে পঁচিশ মিনিটের পায়ে হাটা পথ। বাসে যেতে একশত সত্তুর ইয়েন (প্রায় একশত টাকা) ভাড়া লাগে। হেটে যেতে অবশ্য তেমন খারাপ লাগে না। ঠান্ডা বাতাস এবং রোদেলা আকাশ। কাছে যারা থাকে, তারা প্রায় সবাই সাইকেলে চড়ে ইউনি তে আসে।

তবে যারা একটু দূরের, তাদের প্রত্যেকেরই গাড়ি আছে। কিছু ছেলে-মেয়ে আছে যারা বাসে আসে। তবে তাদের সংখ্যা নিতান্তই অল্প। আমি আসার ঠিক আগের বছর আমার ল্যাব নতুন ক্যাম্পাসে সিফ্ট করেছে। পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে ছয়তলা সমান উচু আমাদের এই আধুনিক ফেকাল্টি।

আমার ল্যাব পাঁচ তলায়। আমার রুমটাতে বসে সামনের দিকে তাকালে দেখা যায় সারি সারি পাহাড়। পাহাড়গুলো সবুজ গাছে মোড়ানো। এখন অবশ্য গাছের পাতার রং ফিকে হতে শুরু করেছে। ঢেউ খেলানো পাহাড়গুলোতে কোথাও রং সবুজ, কোথাও হলদে আবার কোথাও লালচে।

শীতের আগমনের শুরুতে গাছের পাতার রং এমনই হয়ে যায়। তখন ভীষণ সুন্দর দেখায় দূর থেকে। পাহাড়গুলো থেকে বেশ কয়েকটা রাস্তা একে বেঁকে নেমে এসে উপত্যকার ঠিক মাঝখানটাতে যেখানে পরস্পরের সাথে মিশেছে, সেখানে আমাদের ইউনি। সেখান থেকে বড় রাস্তাটা সোজা চলে গেছে শহরের দিকে। বেশ প্রসস্ত রাস্তা।

দুই পাশে উচু পাহাড় এবং পায় চলার পথ। কোন ধুলো নেই রাস্তায়। সব যেন ছবির মত। আমি প্রায়ই জানালা দিয়ে দূরের সারি সারি পাহাড় গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি। কি শান্ত সুন্দর।

মন ভাল হয়ে যায়। এই সময়টাতে কানাজাওয়ার আবহাওয়া বড়ই বিচিত্র হয়ে ওঠে। একদিন বৃষ্টি তো পরের দু'দিন টানা রোদ। গতকাল খুব সুন্দর মিষ্টি রোদের দিন ছিল। আজ সেই সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে।

তাই লেপের উষ্ণতা ছেড়ে ওঠতে মন চাচ্ছিল না। উইক-এন্ডে আমি কখনোই ল্যাব-এ যাইনা। তাই আজো যাওয়া হলনা। সকাল তখন দশটা বাজে। ডঃ রমেশ আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুল্লেন।

গতকালেরই প্লান ছিল আজ মার্কেটে যাব কেনাকাটা করতে। আমাদের এপার্টমেন্টের পাশেই জাসকো। বিশাল মার্কেট। এমন কিছু নেই যা এখানে পাওয়া যায়না। কিন্তু আজ আমরা কেনাকাটা করতে যাব এখান থেকে একটু দুরে।

ছোট একটা দোকান আছে যেখানে খুব সস্তায় সবজি পাওয়া যায়। ওই দোকানে যেতে একটা পাহাড় ডিঙ্গিয়ে যেতে হয়। পঁচিশ থেকে ত্রিশ মিনিটের পায়ে হাটা পথ। হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল। তাই ছাতা নিয়ে বের হলাম।

যে পাহাড়টা পেড়িয়ে সেই দোকানে যেতে হবে, তার উপর অনেকগুলো বাড়ি আছে। সুন্দর রাস্তা। দুই পাশে সারি সারি ডুপ্লেঙ্ বাড়ি। প্রায়ই সবই কাঠের তৈরি। তবে নতুন যে বাড়িগুলো তৈরি হচ্ছে, তার সবই আধুনিক বিল্ডিং মেটারিয়েল্স-এর।

মাঝে মাঝে তিন বা চার তলা বাড়ি ও আছে। তবে তাদের সংখ্যা নিতান্তই হাতেগোনা। এথানে কিছু মার্কেট আছে যা "হিয়াকু ইয়েন সপ্" বলে। এখানে সব জিনিসের দামই একশত ইয়েন। সুঁই-সুতা থেকে শুরু করে হাড়িপাতিল সবই পাওয়া যায় এখানে।

জাপানের নিম্ন আয়ের মানুষরাই এসব দোকানের নিয়মিত গ্রাহক। কেনাকাটা সেরে রুমে ফিরতে ফিরতে দুইটা বেজে গেল। ওযু করে নামাজ পড়লাম। তারপর ঘুম। যখন ওালাম, তখন চারটা বেজে গেছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।