আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাশকতায় দুর্ধর্ষ 'থ্রি স্টার গ্রুপ' - নির্দেশনায় এ্যানী

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

রাজধানীতে পেট্রোল বোমা ও গাড়িতে আগুন দিয়ে একের পর এক মানুষ হত্যা করে আসছিল একটি গ্রুপ। তিন সদস্যের এ দলটি 'থ্রি স্টার' গ্রুপ নামে পরিচিত।

মাত্র ১২ দিনের ব্যবধানে রাজধানীর বাংলামটর, পরীবাগ ও পান্থপথে এ গ্রুপটি সশরীরে উপস্থিত থেকে পেট্রোল বোমা হামলা চালায়। এর মধ্যে বাংলামটর ও পরীবাগে পেট্রোল বোমা হামলায় পুলিশসহ মারা যায় তিনজন।


'থ্রি স্টার গ্রুপের' এই সদস্যরা হলেন:
মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম নয়ন (২৬)
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রদল কর্মী অনুপচন্দ্র রায় (২৪) ও
জোবায়ের হোসেন (২২)।
থ্রি স্টার গ্রুপের সদস্যরা কলাবাগান, পান্থপথ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, কারওয়ান বাজার, বাংলামটর ও শাহবাগ এলাকায় পেট্রোল বোমা ও হাতবোমা ছুড়ে নাশকতা চালিয়ে আসছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবন ঘিরে একটি বড় ধরনের নাশকতা
চালানোর টার্গেট ছিল এই গ্রুপের। এই লক্ষ্যে তারা গত ৩ জানুয়ারি হামলা চালাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ গত ৬ জানুয়ারি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের সামনে ককটেল নিক্ষেপের সময় হাতেনাতে গ্রেফতার হন থ্রি স্টার গ্রুপের তিন সদস্য।

এরপর বেরিয়ে আসে পেট্রোল বোমা হামলার এসব ভয়ঙ্কর তথ্য।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেন, এই তিনজনের দায়িত্ব ছিল সিরিজ নাশকতা চালানো।

বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী সহ দলটির দু'জন কেন্দ্রীয় নেতার নির্দেশে রাজধানীর বাংলামটরে পুলিশ সদস্য বহনকারী বাসে পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়। পুরো অপারেশনটি বিএনপি নেতার এক ভাই ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে 'তদারকি' করেন। পুলিশ হত্যাকাণ্ডের 'অপারেশন্স' সফল হওয়ার পর তারা ঘটনাটি 'বড় ভাইদের' অবহিত করেন।

ছাত্রদলের মোহাম্মদপুর থানার যুগ্ম আহ্বায়ক নয়ন, অনুপচন্দ্র রায় ও জোবায়ের হোসেন পুলিশের গাড়িতে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে। শুধু বাংলামটরে নয়, একই গ্রুপের সদস্যরা রাজধানীর পরীবাগে যাত্রীবাহী বাসেও পেট্রোল বোমা ছোড়েন। তৃতীয় দফায় পান্থপথে একটি বেসরকারি টেলিভিশন কার্যালয়ের পাশে পেট্রোল বোমা ছোড়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন নয়ন, অনুপ ও জোবায়ের। এরপর তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দা পুলিশ এসব তথ্য পায়। ছাত্রদলের ওই তিন নেতাকর্মীর তথ্যের পর পুলিশ প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ঘটনার দিন তাদের অবস্থান ও কথোপকথনে বিষয়টি নিশ্চিত হয় 'থ্রি স্টার' গ্রুপের তিন সদস্য সব হামলায় উপস্থিত থাকার চেষ্টা করেন।

বাহন হিসেবে তারা মোটরসাইকেল ব্যবহার করতেন।
পেট্রোল বোমা হামলাকারীদের সহায়তাকারী হিসেবে তদন্তে সাবেক এমপি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর নাম উঠে আসে। গতকাল রাতে এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে তার মোবাইল ফোনে একাধিক দফায় কল করেও পাওয়া যায়নি। তবে গোয়েন্দাদের দায়িত্বশীল সূত্র সমকালকে নিশ্চিত করে, বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক এ্যানীসহ ও অপর এক বিএনপি নেতার পরামর্শ ও আর্থিক সহায়তায় এ চক্রটি যাত্রীবাহী বাসে বোমা হামলা চালিয়ে আসছিল। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত অনেক তথ্য-প্রমাণ পুলিশের হাতে এসেছে।


ডিবির ডিসি (দক্ষিণ) কৃষ্ণপদ রায় সমকালকে বলেন, হামলায় জড়িত তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এসব যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অনুপ ও জোবায়েরকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলে ভালো পদ দেওয়ার আশ্বাসে তাদের দিয়ে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারাসহ বিভিন্ন ধরনের নাশকতার কাজ করানো হতো।
গতকাল দুপুরে ওই তিনজনকে গ্রেফতারের বিষয়টি অবহিত করতে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ওই নাশকতার ঘটনা দুটি থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ ছায়াতদন্ত শুরু করে।

প্রযুক্তিগত তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় বাংলামটরে পুলিশের ব্যবহৃত বাসে পেট্রোল বোমা হামলা ও পরীবাগে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা হামলায় একটি গ্রুপই জড়িত। গ্রেফতার নয়ন, অনুপ ও জুবায়েরকে আগের দুটির ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওই দুটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তিনজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা পেট্রোল বোমা হামলার নির্দেশদাতা ও অপারেশন পর্যবেক্ষণকারী নেতাদের নামও প্রকাশ করেন।
ডিবি পুলিশের হেফাজতে থাকা তিনজন জানান, ঘটনার রাতে বাংলামটরে তারা বিএনপির একজন তৎকালীন এমপির বাসায় বৈঠক করেন। ওই এমপি নিজ নিজ এলাকায় গাড়ি পোড়ানো অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন।

বিএনপির অপর এক নেতা তাদের ফোন দিয়ে জানান, বাংলামটরে পুলিশের রিকুইজিশন করা একটি বাস রয়েছে, সেটি জ্বালিয়ে দিতে হবে। নির্দেশ পেয়ে রাত সোয়া ১১টার দিকে তারা একটি লাল রঙের পালসার মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থলে যান। পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা রিকশাযোগে তাদের কাছে পেট্রোল বোমা পেঁৗছে দেন। ওই নেতা ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে পুরো অপারেশন পর্যবেক্ষণ করেন।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বাংলামটরে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়ার আগেই ছাত্রদলের ওই নেতা কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও পত্রিকার সাংবাদিকদের ঘটনাটি অবগত করেন।


নয়ন ও অনুপ গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাংলোয় পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করতে যান। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় 'হতাহতের' ঘটনা ঘটিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার নির্দেশ ছিল। নির্দেশ অনুযায়ী তারা ভিসির বাংলোর সামনে যান। তবে বাংলোর সামনেসহ আশপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান করায় তারা অপারেশনে ব্যর্থ হন। পরে তারা সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ওভারব্রিজের নিচ দিয়ে একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা ছোড়েন।


সু্ত্র

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.