আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাশকতায় এবার জামায়াতের রিক্রুট পাকিস্তানি জঙ্গি!

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

ঢাকায় তিন পাকিস্তানি জঙ্গি গ্রেপ্তারের ঘটনাকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। রিমান্ডে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে তাদের জবানবন্দিতে জানা গেছে, ব্যাপক নাশকতার পরিকল্পনা ছিল তাদের। সে পরিকল্পনা যে এই তিনজনের গ্রেপ্তারের ভেতর দিয়ে নস্যাৎ করা গেছে, এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে না। কারণ এই তিনজনই শেষ জঙ্গি নয়।

তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে এটাও জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় বড় ধরনের গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিদের কাছে বোমা তৈরির ম্যানুয়াল ও সমরাস্ত্র প্রশিক্ষণের তথ্যসহ ল্যাপটপ পাওয়া গেছে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসব জঙ্গি যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে, তা সাম্প্রতিক পাকিস্তানের দিকে তাকালেই বোঝা যায়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে নস্যাৎ করার জন্য এবং একাত্তরে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর লক্ষ্যে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এ লক্ষ্যে তারা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় হওয়ার পর থেকে সারা দেশে চরম নৃশংসতা চালিয়ে অন্তত আড়াইশ’ মানুষকে হত্যা করেছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর লক্ষ্যে তারা সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনার ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছে। সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে-এ ধরনের অলিক প্রচারণা চালিয়ে গ্রামসুদ্ধ মানুষকে এক করে পুলিশের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। তাদের নাশকতায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১৫ পুলিশ সদস্য; আহত হয়েছে শতাধিক পুলিশ। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর অংশ হিসেবে জামায়াত-শিবির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুকৌশলে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নিতে না দিয়ে নির্বাচন প্রতিহতের মিছিলে সামিল করেছে।

আসলে নির্বাচন প্রতিহতের নামে কৌশলে তারা বিএনপিকে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর মিশনে নামিয়েছে। জামায়াতের মনে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর বিষয়টি থাকলেও তারা বিএনপিকে বুঝিয়েছে নির্বাচন প্রতিহতের জন্যই তারা নাশকতামূলক কর্মকা- চালাচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জামায়াত তারেক রহমানের নির্দেশে নির্বাচন প্রতিহত করতে না পারলেও নির্বাচন প্রতিহতের নামে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় অবরোধের নাম ভাঙিয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কে হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলেছে। অবরোধে যান চলাচলে বাধা দেওয়ার জন্য চলন্ত বাস-ট্রাকে পেট্রলবোমা ছুড়ে চালক ও যাত্রীদের হত্যা করেছে। তারা রেল লাইন উৎপাটন করে রেলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে।

রেলমন্ত্রীর হিসাব অনুযায়ী এই ক্ষতির পরিমাণ অন্তত অর্ধশত কোটি টাকা। জামায়াতের নৃশংসতায় রেলের এতো বেশি সিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে যে, যা এখনো ঠিক হয়নি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের আগে অবরোধের নামে জামায়াত-শিবির সারাদেশে অন্তত দেড়শ’ লোককে হত্যা করেছে। নির্বাচনের দিন সারাদেশে হত্যা করেছে ২২ জনকে। তবু তারা নির্বাচন প্রতিহত করতে না পেরে ভারত ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক খারাপ করার জন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন শুরু করে।

কিন্তু সরকার বিষয়টি খুব ভালোভাবে সামাল দিতে পারায় তাদের সব অপচেষ্টা ভেস্তে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে মনে হচ্ছে জামায়াতের এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের কারণে বিএনপিও তাদের জোটে রাখতে চাচ্ছে না। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় জামায়াত যে আগামীতে বিএনপিকে পাচ্ছে না এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় তারা এখন বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকা- অব্যাহত রাখার জন্য দ্বারস্ত হয়েছে আইএসআইয়ের। আর অভিযোগ রয়েছে, আইএসআই তাদের বাছাইকৃত পাকিস্তানি জঙ্গিদের দেদারছে বাংলাদেশ পাঠাচ্ছে বড় ধরনের নাশকতা পরিচালনা করার জন্য। একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার মতে, আত্মঘাতী হামলাকারী ছাড়াও অন্তত দুই শতাধিক পাকিস্তানি জঙ্গি বড় ধরনের নাশকতা চালানোর উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে অবস্থান করছে।

সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার আগাম সতর্কতার কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহ এক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থানে সক্রিয় রয়েছে।
এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, বাংলাদেশে নাশকতা চালানোর চেষ্টার অভিযোগে ৩ পাকিস্তানিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ মদদে তারা নাশকতার পরিকল্পনা করছিল বলে জানা গেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের পৃথক ২টি মামলায় ১৩ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। রিমান্ডে এসব বিষয় জানার চেষ্টা করছে গোয়েন্দারা।

পাশাপাশি তাদের সম্পর্কে তথ্য পেতে বাংলাদেশস্থ পাকিস্তান দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।
মাত্র দেড় মাস আগে কে বা কারা কী স্বার্থে দ্বিতীয় দফায় গ্রেপ্তারকৃতদের জামিনে মুক্ত করেছে এবং মুক্ত হওয়ার পর পাকিস্তানিরা নিজ দেশে না গিয়ে বাংলাদেশের কোথায় এবং কাদের আশ্রয়ে ছিল তা নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। গ্রেপ্তারকৃতরা আত্মঘাতী স্কোয়াডের কোনো সদস্য কি না সে বিষয়ে জানার চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তারকৃৃতরা হচ্ছে : মেহমুদ (২৬), পিতা আলী আহমদ, বাড়ি পাকিস্তানের মালির জেলায়। উসমান (২৩), পিতা হাশেম, বাড়ি পাকিস্তানের কৌরঙ্গি জেলায়।

অপরজন ফকরুল হাসান (৫০), পিতা দরবেশ আলী, বাড়ি পাকিস্তানের কৌরঙ্গি জেলায়।
বর্তমানে তারা পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান’র প্রশিক্ষিত সদস্য। তারা গাড়িবোমাসহ ১২ ধরনের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা তৈরিতে পারদর্শী। স্বাধীনতাবিরোধী কিছু গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ মদদ আর অর্থায়নে তারা বাংলাদেশে অবস্থান করে নাশকতার পরিকল্পনা করছিল।
গোয়েন্দারা জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে শুধু ফকরুলের কাছে একটি মেয়াদোত্তীর্ণ
পাকিস্তানি পাসপোর্ট পাওয়া গেছে।

অন্য দুজন পাসপোর্ট ছাড়া। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা ল্যাপটপে বোমা তৈরির ম্যানুয়ালসহ বোমা তৈরি, যুদ্ধের ও সমরাস্ত্রের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত বহু তথ্য রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা উর্দুভাষী হলেও উসমান ও ফকরুল কিছু কিছু বাংলা বলতে পারে।
গ্রেপ্তারকৃতরা দেড় বছর আগে বিদেশি নাগরিক হিসেবে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছিল। মাস দেড়েক আগে তারা জামিনে মুক্তি পেয়েই আত্মগোপনে চলে যায়।

জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে দ্বিতীয় দফায় গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী কয়েকটি গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় ছিল বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। গোষ্ঠীগুলো তাদের বাংলাদেশে থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে নানা ধরনের নাশকতামূলক কর্মকা- চালাতে আর্থিক সহায়তা করেছে। প্রশিক্ষিত পাকিস্তানি জঙ্গিদের দিয়ে গত ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নির্বাচনপরবর্তীতে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর চেষ্টা করেছিল আশ্রয়দাতা গোষ্ঠীগুলো।
গ্রেপ্তারকৃতরা পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানের সীমান্ত এলাকায় তেহরিক-ই-তালিবান’র কাছ থেকে শক্তিশালী ১২ ধরনের বোমা তৈরি, বোমা হামলা, একে-৪৭, এম-১৬ রাইফেলসহ বিভিন্ন প্রকার অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র, যুদ্ধের কৌশল সম্বন্ধে প্রশিক্ষণ নেন। তাদের এমন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেন পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনটির এক তরুণ নেতা।

এই তরুণ নেতাই গ্রেপ্তারকৃতদের বাংলাদেশে পাঠায়। এ নেতার সঙ্গে বাংলাদেশের বিশেষ গোষ্ঠীর যোগাযোগ রয়েছে।
২০ জানুয়ারি ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। তিনি আরও জানান, ১৯ জানুয়ারি রাত সাড়ে দশটায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির ফটক থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এই ৩ পাকিস্তানিকে।
তিনি গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা মূলত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা।

২০০০ সালে গ্রেপ্তারকৃতরা সপরিবারে পাকিস্তানে চলে যায়। পরে
পাকিস্তানের নাগরিকত্ব লাভ করে। পাকিস্তানে থেকেই তারা আফগানিস্তানের চলমান নানা সহিংসতায় অংশ নেয়। এরপর তারা আর মিয়ানমারে ফেরত যায়নি।
পরে ওই তরুণ নেতার পরামর্শেই গ্রেপ্তারকৃতরা মিয়ানমারভিত্তিক ‘তেহরিক-ই-আজাদী আরাকান’ নামক একটি সংগঠনের হয়ে যুদ্ধ করতে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

প্রবেশ করেই তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিশে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। কয়েক বছর ধরে তারা এমন চেষ্টাই চালিয়ে আসছিল। ফকরুলের মাধ্যমে এদের যোগাযোগ হয় বাংলাদেশের কিছু বিশেষ গোষ্ঠীর। তারা এদের বাংলাদেশে থাকা-খাওয়া ও অর্থায়নের ব্যবস্থা করে। এমন অপতৎপরতার কারণে দেড় বছর আগে তারা গ্রেপ্তার হয়।

মাস দেড়েক আগে তারা জামিনে মুক্ত হন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোন গোষ্ঠী এ ধরনের মারাত্মক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গিদের জামিনে মুক্ত করেছে, জামিন পাওয়ার পিছনে কারা কাজ করেছে, কী উদ্দেশ্যে তাদের জামিন করানো হয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে। তবে বড় ধরনের নাশকতা চালাতেই এদের জামিন করানো হয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
এদিকে সিএমএম আদালত থেকে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত তিন পাকিস্তানির বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা মডেল থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে পৃথক ২টি মামলা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম আসামিদের আদালতে হাজির করেন।

ডিবি কর্মকর্তা দুই মামলায় ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামিরা
পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবানের সদস্য। সরকারবিরোধী কর্মকা- পরিচালনার পরিকল্পনা নিয়ে তারা ঢাকায় অবস্থান নেয়। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকা-ে যুক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব আসামির সহযোগী কারা ও কেন তারা বাংলাদেশে এসেছিল সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য জানার জন্য তাদের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।

শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান আসামিদের দুই মামলায় ১৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.