আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চিঠির অপেক্ষা

মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা একজন মানুষ


“বসে আছি নির্জন একটা জায়গায় । সাধারণত এটাকে কবরস্থান বলা হয়ে থাকে । বিকেল বেলায় অফিস শেষে বনানী ধরে এলোমেলোভাবে হাঁটছিলাম। এই জায়গাটায় কেন যেন মন স্থির হয়ে গেলো । খোলা ফটক ধরে হাটতে থাকলাম।

বেশ কিছুটা ভেতরের দিকে গিয়ে একটা শিউলি গাছের পাশে বসলাম । ক্লান্ত ছিলাম অথবা অবসন্ন ছিলাম হয়তো। লক্ষ্য করলাম আশেপাশে বেশ কিছু ফুল পড়ে আছে । সবুজের মাঝে সাদা-কমলার রঙের একটা অদ্ভুত সৌন্দর্য আছে। এখান থেকে সরাসরি মেইন ফটক দেখা যাচ্ছে ।

তেমন মানুষের সমাগম অবশ্য নেই । কবরস্থান কারো ভালো লাগার জায়গা হতে পারে না । তবে প্রকৃতির এমন নিস্তব্ধতা আমার ভালো লাগে। মৃত্যু চিন্তা আমাকে অবসন্ন করে নি । আমাকে অবসন্ন করেছে তোমার লেখা গল্প ।

যখনি পড়ি মনেহয় আমাকে নিয়েই লিখেছ । একমাত্র তুমিই আমাকে নিয়ে লিখতে । এখন আর লিখো না । তোমার কবিতার সাথে কিছু লাইন যোগ করার অধিকার হয়তো তুমি আমাকে দিবে না কিন্তু তা আমার মাঝে ধারণ করার অধিকার আছে । তোমাকে বলতে ইচ্ছে করছে,

তুমি পাশে নেই বলেই
ভালোবাসার চাদরে মুড়ে আছে অপেক্ষা !
শুধু তোমাকে জানাতে, এখনও সে ভালবাসে তোমাকে !
তুমি পাশে থাকবে না জানি,
তবুও ভোরের বিন্দু বিন্দু কুয়াশায় ভালোবাসা নেমে আসবে
শুধু তোমার জন্য।



তোমাকে বলার অধিকার হয়তো নেই কিন্তু ভালোবাসার অধিকার কাছে । তোমাকে চিঠি পাঠানোর অধিকার হয়তো নেই কিন্তু চিঠি লিখার অধিকার আছে আমার । তোমাকে একটু দেখার অধিকার হয়তো নেই কিন্তু তোমাকে কল্পনা করার অধিকার আছে । আমি প্রায়ই আমার পাশে তোমাকে কল্পনা করি । এই মুহূর্তে তুমি থাকলে নিশ্চয়ই আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করতে ।

আমি ভূতের ভয় পাই বলে রেডিওর ভূত এফ এম রাতের বেলায় না শুনে দিনের বেলায় রেকর্ডেড ভার্শন শুনি । এটা জানার পর সে কি হাসি তোমার, আমার তো পিত্তিটাই জ্বলে গিয়েছিল। আজকে এমন কিছু করতে নিশ্চয়ই । আমি অবশ্য তোমার জন্য মালা গাঁথছি । অদৃশ্য মালা ।

হাতে কিছু ফুল নিয়ে এক সারি করে সাজাচ্ছি আর একটা একটা ফুলকে তোমার কথা বলছি । তোমার সাথে কাটানো আমার স্মৃতিগুলো যেন এই ফুল গুলোও মনে রাখে । শুধু তুমি ভুলে যেও অথবা ভুলে গেছো হয়তো এতদিনে । ভুলে যাওয়াই স্বাভাবিক । মনে রাখার মত আমার মধ্যে তেমন কিছুই নেই ।

মনে রাখার মত করে তোমাকে ভালোবাসা দেখাতে পারি না । বাস্তবে জীবন যুদ্ধে ক্লান্ত আমি শুধু কল্পনায় তোমাকে ভালোবেসেছি । তালাকপ্রাপ্ত জীবনে এত কলুষিত হয়েছি যে ভালোবাসা প্রকাশ করার সাহস পাই নি। তোমার অবজ্ঞা আর করুণা দৃষ্টি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছি। তারপরও তোমার ভালো থাকার সাথে আমাকে মনে রাখার কোন সম্পর্ক না থাকলেও আমার ভালো থাকার মাঝে তুমিই প্রায় সবটুকু ।

নিজের কথা ভাবলে তোমার কথা মনে পড়বেই । তোমার সাথে অনেক স্বপ্ন আমার আছে যা আর কখনো পূর্ণ হবে না । তুমি কখনো জানবে না আমার এই অপেক্ষার কথা । তোমাকে আমি কখনোই জানাবো না ভালোবাসার কথা । এই পৃথিবীর প্রতিটা মুহূর্ত তোমাকে না পাওয়ার অনুভূতি শুধু আমিই জানি।

তোমার যোগ্য হই নি বলেই আফসোস থাকবে সারাজীবন । আমার কবরে তোমার এক মুঠো মাটির আকাঙ্ক্ষা নিয়েই আমি কবরে হাহাকার করবো । কবরেও নিশ্চয়ই এই মুহূর্তের মত অন্ধকার থাকবে । আমি থাকবো, তোমার অনুভূতি থাকবে কিন্তু তোমার স্পর্শ থাকবে না । আমাকে ছাড়া নিশ্চয়ই তুমি ভালো আছ এবং থাকবে ।




এই পর্যন্তই ছিল চিঠিটা । আজ বিকেলেই চিঠিটা পেয়েছে ইরশাদ । গুটি গুটি হাতে লেখা চিঠি । কোন সম্বোধন ছাড়াই লিখা হয়েছে । চিঠির প্রেরকের ঠিকানায় কারও নাম বা ঠিকানা পাওয়া যায় নি ।

তবুও ইরশাদ কি চিঠির প্রেরককে চিনতে পেরেছিল ?? সে খবর আমি আর রাখি নি ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।