আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার বাবা ও একটি শুয়োরের কথোপকথন ।

চরম ইন্ট্রোভার্ট আচ্ছা বাবার ভালোবাসা বা আদর ক্যামন হয় ? মায়ের ভালোবাসা পেয়েছি। অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই পেয়েছি। তবে বাবার টা জানা নেই । হুমায়ুন আহমেদ তার মেয়ের প্রশ্নের জবাবে একবার বলেছিল, পৃথিবীতে খারাপ মানুষ থাক্লেও একটিও খারাপ বাবা নেই। কথাটা ভুল সম্পূর্ণ ভুল ।

আমি জানি পৃথিবীতে খারাপ বাবা আছে । ভয়াবহ রকমের খারাপ । শুয়োরের বাচ্চা কালকে যা করলো । নিজের বাবাকে শুয়োরের বাচ্চা সম্বোধন সবার কাছে বেমানান হলেও আমার কাছে এর চেয়ে ভাল বাংলা শব্দ খুজে পেলাম না । যখন ছোট ছিলাম তখন বুঝিনি ভাবতাম সব বাবারাই হয়তো মা’দের মারধোর করে।

একটু একটু যখন বুঝতে শিখলাম তখন জানলাম , না আমার বাবাই এইরকম । আমার মা বড় বাড়ির মেয়ে ছিল। নানা’র টাকা পয়সার কোন অভাব ছিলনা । কেন যে এই শুয়োরটার সাথে বিয়ে দিয়েছিল ! সারাটা জীবন মা শুধু কষ্টই করে গেল। গতকাল আপা কথাটা বলল, যে পাপ করে সে পাপের শুখ উপভোগ করে যায় ।

আর তার পরবর্তী জেনারেশন সেই পাপের প্রায়শ্চিত্য ভোগ করে । কথাটা হয়তো সঠিক । না হলে আমার মা কেন সারাটা জীবন এতো কষ্ট পাবে? সে তো উল্লেখ করার মত কোন পাপ করেনি । মাঝে মাঝে অবাক লাগে সৃষ্টিকর্তার পাগলামি দেখে । সমাজে ভালো মানুষ গুলো কত কষ্ট করছে আর অপেক্ষাকৃত খারাপ মানুষ গুলো কত ভালো আছে ।

শুয়োরটা শেষ পর্যন্ত বাড়ী চলে গেছে । হাস্পাতালে নিতে চাইছিলাম যাবেনা। প্রথমদিকে ভেবেছিলাম হয়তো সিজনফ্রনিয়ার প্রবলেম । কিন্তু পরে ভেবেদেখলাম যে শুয়োরটার এই প্রবলেম আজকালকের না। এর ব্লাডেই প্রবলেম আছে।

হেন কোন অপকর্ম নেই যে সে করেনি । চিটারি, বাটপারি থেকে শুরু করে মাগিবাযি সবই করেছে । মেয়েলি স্কান্ডাল ছিল এই প্রথম জানলাম। আর তখন থেকেই শুয়োরটার সর্বশেষ যে শ্রদ্ধা ছিল তাও শেষ হয়ে যায়। কালকে বাড্ডা থেকে আসার সময় একবার মনে হল পা থেকে জুতা খুলে কয়েকটা বারি দিয়ে আসি।

আর কিছু না হোক মানুষিক শান্তি পেতাম। আচ্ছা নিজের বাবার সম্পর্কে এই সব কথা লিখতে খারাপ লাগার কথা কিন্তু কেন যেন একটুও খারাপ লাগতেছেনা সারাটা জীবন চিটারি ছাড়া আর কি করেছে সে , মেঝ চাচা সিলেট চাকরি নিয়ে দিল সেখানে গিয়েও সে একই কাজ শুরু করেছিল। লোকজনের কাছ থেকে চাকরির নাম করে টাকা নিবে, টাকা ধার করবে , লোণ করবে, সেই টাকা আমাদের দিতে হবে। কি আজিব দুনিয়াই বসবাস করি । এতো কষ্ট করে দেশের সেরা ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম , হলে চলার জন্য টাকা নাই শেষ পর্যন্ত বহু কাঠ খর পুরিয়ে টিউশনি ম্যানেজ করলাম ।

সেই টিউশনির টাকা দিয়ে নাকি শুয়োরের পাগলামি থামাতে হবে। কে যেন সেদিন বলছিল ঢাবিতে চান্স পাওয়ার চাইতে টিউশনি পাওয়া অনেক বেশী কষ্টকর। পরা শোনা করলে চান্স পাওয়া সম্ভব, কিন্তু টিউশনি ! সবচেয়ে খারাপ লাগে ছোটবোনটার জন্য। বোনটা অনেক সুন্দর ছিল এই শুয়োরের চিন্তায় চিন্তায় দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। বিয়েটা দিয়ে দিতে পারলেই বেচে যাই।

প্রাইমারীতে আপ্লিকেশন করতে বলছি । দেখা যাক উপ্রিওয়ালা যদি মুখ তুলে তাকান তাহলে হয়তো কোন মামু-খালু ছাড়াই চাকরিটা পেয়ে যাবে। অনার্স জানুয়ারিতে শেষ হচ্ছে। এরপর যে কি করবো আর কি হবে ! মাঝে মাঝে মাথা জ্যাম হয়ে যায়। কাজ করেনা ঠিক মত।

সেদিন বাপ্পি বলতেছে দোস্ত তুই আগের মত নেই, দিন দিন ক্যামন যেন হয়ে জাচ্ছিস । কিচ্ছু বললাম না । বলার মত কিছু ছিলও না । নিজের বাবার সম্পর্কে এই সব কথাবার্তা কি কাউকে বলা যায়? পুলিশ নাকি রাস্তাঘাটে লোক জন পাইলে ধরে থানায় নিয়ে যাচ্ছে আর জামাত শিবির কেসে দিয়ে দিচ্ছে। ভাব্লাম থানার ওসিকে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে জামাতিদের কেসে জেলে ঢুকিয়ে দেই ।

কিন্তু না, মেঝ ভাই রাজি হল না । এতদিন জানতাম ছেলে-মেয়ে খারাপ হলে বাবা-মা টেনশন করে, তাদের অশান্তির শেষ নেই। কিন্তু আমরা! বাবার অপকর্ম ক্যাম্নে সমাজের আড়ালে রাখবো সেই চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে। আজকাল পড়াশোনায় ও মন বসছেনা। মাঝে মাঝে সৃষ্টিকর্তাকে প্রশ্ন করতে মন চায়, কি পাপ করছিলাম???? ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.