আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্যয় বাড়ানোর চাপে বড় বাজেট

A National Weekly Newspaper নিজস্ব প্রতিবেদক আগামী ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্নুনয়নসহ অন্যান্য খাতে মোট বরাদ্ধ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। আর এডিপি হচ্ছে ৬৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট এক লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা থেকে আগামী অর্থবছরে ৩০ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা বেশি। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মা’ল আব্দুল মুহিত এ বাজেট উপস্থাপন করছেন।

বিকেল সোয়া ৩টায় শুরু হওয়া সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ বাজেট বক্তৃতা চলছিল। অর্থনীতি এমনিতে আছে চাপের মধ্যে। বর্তমান সরকারের প্রথম তিন বছরে অর্থনীতিতে যেসব উদ্যোগ, উদ্দীপনা ও প্রবৃদ্ধির গতি ছিল, শেষ ১৮ মাসে তা স্তিমিত হয়ে গেছে। যদিও নিম্নপর্যায়ের স্থিমিত অর্থনীতির মধ্যেও একধরনের ভারসাম্য বজায় রয়েছে। তবে তা চাহিদা ও সম্ভাবনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

নেই অর্থনীতির তেজ। অপরদিকে, সরকারের শেষ বছর। নির্বাচন সামনে রেখে আছে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের চাপ। আমন্ত্রণ করে ডেকে আনা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ’র কাছে দেওয়া রয়েছে প্রতিশ্রুতি। রাজনৈতিক সহিংসতায় যেন নাকাল অর্থনীতি।

রাজনৈতিক ইস্যুতে বড় দুই রাজনৈতিক দলে টানাপোড়েন দূর হচ্ছে না কোনোভাবেই। এমন অবস্থায় রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক চাপের মুখে অর্থমন্ত্রী। তারপরও ভোটের রাজনীতি বিবেচনায় চাপ সামলে জনতুষ্টির নির্বাচনী বাজেট দিলেন অর্থমন্ত্রী। মহাসেনের মতো ঝড়। জনতুষ্টি।

জাতীয় নির্বাচনে অর্থমন্ত্রীকে ‘নৌকা’ নিয়ে পার হতে হবে। তবে নির্বাচনী ইশতেহার ও প্রতিশ্রুতির পূরণের হিসাব মেলাতে হবে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, মেলানোর সেই সংগতি তিনি কতখানি দেখাতে পারলেন বাজেটে? মহাজোট সরকারের শেষ বাজেট দিলেন অর্থমন্ত্রী। শেষ সময়ে ব্যয় বাড়ানোর নানা চাপ ছিলো অর্থমন্ত্রীর ওপর। ফলে বিশাল আকারের বাজেট দিতে হলো তাকে।

তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বিশাল আকারের এই বাজেটের অবশ্য বড় অংশই বাস্তবায়ন করতে হবে নতুন সরকারকে। অর্থমন্ত্রীর বাজেটে অতীতের অনেক গুণগান আছে। থাকতে হবেই। কিন্তু ব্যর্থতার তেমন কিছু জানাননি মুহিত। এই বাজেট দিয়ে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন আর মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখাই হবে অর্থমন্ত্রীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

অর্থমন্ত্রী তাঁর দীর্ঘ বাজেট বক্তৃতার নাম দিয়েছেন ‘উন্নয়নের চার বছর: স্বপ্ন পূরণের পথে বাংলাদেশ’। ১৯৭ পৃষ্ঠার পুরো বাজেট-বক্তৃতায় গত চার বছরের উন্নয়নের লম্বা ফিরিস্তি আছে। অর্থমন্ত্রীর আশা, গত চার বছরের খতিয়ানই আগামীর পথ রচনা করবে। এ জন্য অর্থমন্ত্রীর বড় ভরসা, ‘অনুমান করা হয়েছে, ২০১২ সালে বিশ্ব-অর্থনীতি, বিশেষ করে ইউরোপে মন্দার যে পুনরাবির্ভাব ঘটে, ২০১৩ সালে বিশ্ব-অর্থনীতি তা থেকে বেরিয়ে আসবে। ’ অর্থমন্ত্রীর কাছে সম্ভবত আরেক ভরসার নাম রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি।

পুরো অর্থবছরটি সাধারণ মানুষের কেটেছে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে। মূল্যস্ফীতি বেশি থাকলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) খানিকটা সুবিধা হয় রাজস্ব বাড়াতে। কারণ, কর ধার্য হয় মূল্যের ওপর। মূল্যস্ফীতিকে তাত্ত্বিকভাবেই বলা হয় এমন একটি বৈষম্যমূলক কর, যা কেবল দরিদ্র মানুষেরই দিতে হয়। সংকট আরও তীব্র হয় যখন প্রতিমাসেই মূল্যস্ফীতি ও করের পরিমাণ বাড়তে থাকে।

শেষ দুই মাস বাদ দিলে বিদায়ী পুরো অর্থবছরের পরিস্থিতি এখন এ রকমই। মূল্যস্ফীতিই হচ্ছে গরীব মানুষের জীবনযাপনের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শত্রু। নতুন যে বাজেট বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী দিলেন, তাতে মূল্যস্ফীতি কমানোর আশাবাদ আছে, নির্ভর করার মতো পদক্ষেপ নেই। আয় ব্যয়ের খতিয়ান: আগামীবারের জন্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ধরা হয়েছে ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, আর জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ আবার অর্জন করতে চান তিনি। আর মূল্যস্ফীতি নামিয়ে আনার ঘোষণা দিলেন সাত শতাংশে।

এদিকে, অনুদান বাদে সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি ধরা হচ্ছে জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থাৎ ৫৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা। তবে অনুদানসহ হিসাব করলে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৮ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে অনুদানসহ রাজস্ব পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৭৪ হাজার ১২৯ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১৪ দশমিক ১ শতাংশ।

এর মধ্যে এক লাখ ৬৭ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়া এবং বিদেশি অনুদান ছয় হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রীর আশা, চলতি অর্থবছরের বাজেটে অনুদানসহ রাজস্ব পাবেন এক লাখ ৪৫ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা ধরা হয়েছিল। আগামীবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত করব্যবস্থা থেকে এক লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি টাকা, এনবিআর-বহির্ভূত করব্যবস্থা থেকে পাঁচ হাজার ১২৯ কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত পাওয়া বাবদ ২৬ হাজার ২৪০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আগামী বাজেটে অনুন্নয়নমূলক ব্যয় ধরা হচ্ছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে আগামী অর্থবছরে সরকারকে ৩৩ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নিতে হবে।

ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ২৫ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা এবং ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে সরকারের সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সাত হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে চার হাজার ৯৭১ কোটি টাকার পাশাপাশি অন্যান্য উৎস থেকে আরও তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে সরকারের। অন্যদিকে আগামী অর্থবছরে ২১ হাজার ৬৮ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে খানিকটা স্বস্তি দিতে অর্থমন্ত্রীর কাছে থাকা অন্যতম বড় উপকরণ হচ্ছে ব্যক্তিশ্রেণীর করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে দেওয়া। ব্যক্তিখাতে করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে।

আর মহিলা ও ৬৫ বছরের উর্ধ্বে নাগরিকের জন্য আড়াই লাখ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সংশোধিত বাজেট: অর্থমন্ত্রী সংসদে ২০১২-১৩ অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেট পেশ করেন সংসদে। যার পরিমাণ ১ লাখ ৮৯ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। এডিপি দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। অস্তস্তিতে ব্যবসায়ীরা: বিদায়ী অর্থবছরে রপ্তানী প্রবৃদ্ধি প্রায় ১১ শতাংশ।

রপ্তানি বাজার ধরে রাখতে রপ্তানিকারকদের দাবি ছিল নানা ধরনের প্রণোদনা। তবে বাজেট রপ্তানিকারকদের অনেকটা হতাশই করছে। তবে ব্যবসায়ীদের বড় আশঙ্কা বাজেট ঘাটতি নিয়ে। অর্থমন্ত্রী এমনিতেই আইএমএফের ফর্মুলা মেনে মুদ্রা সরবরাহ কমাবেন বলে জানিয়েছেন। বাড়বে জ্বালানির দাম।

ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের ভাগ কমে যাবে। বাড়বে সুদহার। আবারও কালোটাকা: অতীত ইতিহাস মেনে মেয়াদের শেষ সময়ে এসে অর্থমন্ত্রীও দিলেন কালোটাকা সাদা করার সুযোগ। বাজেটের সবচেয়ে বড় দিক হলো বিনা প্রশ্নে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হতে পারে। জমি, প্লট ও ফ্ল্যাট কিনতে এই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

হস্তান্তরের বা চুক্তিমূল্যের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিলেই অবৈধ অর্থে জমি বা প্লট কেনা যাবে। সর্বশেষ ২০০৭-০৮ অর্থবছরে জমি বা প্লট কেনার সময় সাড়ে ৭ শতাংশ হারে কর দিয়ে এই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে শেয়ারবাজারে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ আরও এক বছরের জন্য রাখা হচ্ছে। আর অপ্রদর্শিত বৈধ আয় প্রদর্শনের সুযোগেও কোনো পরিবর্তন আসছে না। শেয়ার বাজার: শেয়ার বাজার আয়ের ১০ হাজার টাকা করমুক্ত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন মুহিত।

ব্যর্থতার স্বীকারোক্তি: বাজেট-বক্তৃতায় ব্যর্থতার স্বীকারোক্তি খুব একটা পাওয়া যায় না। তবে এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী সেই ব্যতিক্রমী কাজটি করেছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েও তিনি অনেক কিছু কেন করতে পারেননি, তার ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বলেছেন, তার আন্তরিকতার ঘাটতি ছিলো না। এডিপি: রেকর্ড ৬৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বাড়িয়ে সম্ভবত রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের হাতে অর্থ পৌঁছানোর চেষ্টা চালাবেন।

জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী বাজেট-বক্তৃতা শুরু করেন বেলা সোয়া তিনটার কিছু পরে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনি সংসদ অধিবেশনকক্ষে প্রবেশ করেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এ সময় সংসদে উপস্থিত ছিল না। সরকারদলীয় সাংসদেরা টেবিল চাপড়ে অর্থমন্ত্রীকে উৎসাহ দেন। রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ সংসদের নির্দিষ্ট আসনে বসে বাজেট উপস্থাপন প্রত্যক্ষ করেন।

সরকারের উচ্চপদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, বিশিষ্ট নাগরিক, ব্যবসায়ী নেতা ও বিদেশি মিশনের কূটনীতিকেরা সংসদের ভিআইপি গ্যালারিতে বসে বাজেট-বক্তৃতা শোনেন। এর আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংসদে উপস্থাপনের জন্য নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুমোদিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে রাষ্ট্রপতি বাজেট প্রস্তাবে তাঁর সম্মতি দেন। করপোরেট কর: করপোরেট করের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন হতে পারে।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত মুঠোফোন কোম্পানির ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ কর আরোপ রয়েছে। যা চলতি অর্থ বছরের ৩৫ শতাংশ। অন্য সব করপোরেট কর আগের মতোই রেখেছেন তিনি। পদ্মা সেতু: পদ্মা সেতু সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। এর নির্মাণ ভোটের রাজনীতির বড় হাতিয়ার হিসেবেই দেখছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা।

অর্থমন্ত্রী পদ্মা সেতুর জন্য ৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছেন। বিদ্যুৎ-জ্বালানি পরিস্থিতি: ২০১৩-১৪ অর্থ বছরেরর বাজেটে বিদ্যুৎ খাত নিয়ে মহা অর্জন ও পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছেন তিনি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়নে পথনকশা: অগ্রগতির ধারা নিয়ে একটি আলাদা সংকলন করেছে সরকার। এবারই এটি প্রথম বারের মতো বের করা হয়েছে। যাতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ নিয়ে মহা পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.