আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসঃ নাৎসিদের উত্থান(৩য় পর্ব) The NAZI party

Youth cannot know how age thinks and feels. But old men are guilty if they forget what it was to be young. ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর, অসংখ্য রাজনৈতিক দল জার্মানিতে আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করে। জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি(DAP) তাদের মধ্যে অন্যতম। অন্য দলগুলো কালের অতলে হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু, মানুষ আজও জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টির কথা মনে রেখেছে। কারণ, নাৎসি পার্টি হল এই ছোট রাজনৈতিক দলেরই বিবর্তনের ফসল।

জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টিতে হিটলারের মেম্বারশীপ কার্ড। জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টিতে হিটলারের যোগদানের ঘটনাটি, অত্যন্ত আকস্মিকভাবে ঘটে যায়। প্রস্তাব পাওয়ার পরে তিনি ভাবনায় পড়ে যান। সারারাত তিনি ঘুমোতে পারেননি। তিনি নিজে একটি রাজনৈতিক দল গড়তে চেয়েছিলেন।

কিন্তু জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টিতে যোগদান করলে সেই আশা পূরণ হবে না। তার উপর, রাজনৈতিক দলটি একেবারে আনাড়ি। সেখানে যোগ দিলে, সবকিছু একেবারে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। কিন্তু বড় সুবিধাটি হচ্ছে, নতুন গঠিত এই রাজনৈতিক দলে, তিনি অনায়াসে একটি বড় পদ পেয়ে যেতে পারেন। এছাড়া, মিউনিখে তার কোন পরিচিত লোক নেই।

পরিচিতির অভাবে তিনি রাজনৈতিক জীবন শুরুই করতে পারছিলেন না। জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টিতে যোগদান করলে, অন্তত এক প্রকার ভিত্তি তো পাওয়া যাবে। এসব ভাবতে ভাবতে তিনি রাত পার করে দেন। সকালে তার নামে একটি চিঠি আসে। তিনি অবাক হয়ে দেখেন যে, চিঠিটি পাঠিয়েছেন পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অ্যান্টন ড্রেক্সলার।

ওই দিন বিকালে, পার্টির একটি বৈঠক আছে। হিটলার যদি আনুষ্ঠানিকভাবে পার্টিতে যোগদান করতে চান, তবে তাকে অবশ্যই উক্ত সভায় উপস্থিত থাকতে হবে। উত্তেজনায় সারা দুপুর হিটলার কিছু খেতে পারেননি। পার্টিতে যোগ দেওয়াটা কি ঠিক হবে? অবশেষে, নিয়তিই তাকে পার্টির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে বাধ্য করে। *** সেদিনের সেই বৈঠকে, তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধন করানো হয়।

বৈঠকে পার্টির অন্যান্য সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ফেদার, আর্ন্‌স্ট রোম(ernst rohm), ডাইট্রিচ এখার্ট(deitrich ekhart). ফেদার ছিলেন একজন বিত্তবান ব্যক্তি। সমাজের প্রভাবশালীদের সাথে তার যোগাযোগ ছিল। অপর দিকে ডাইট্রিচ এখার্ট ছিলেন একাধারে একজন কবি, লেখক এবং সাংবাদিক। মদের প্রতি তার তীব্র আকর্ষণ ছিল।

তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন আর্ন্‌স্ট রোম। আর্ন্‌স্ট রোম(ernst rohm) আর্ন্‌স্ট রোম ছিলেম ১ম বিশ্বযুদ্ধ ফেরত একজন পোড় খাওয়া সৈনিক। যুদ্ধের পর, তিনি ক্যাপ্টেন হিসেবে মিউনিখের আর্মি ডিসট্রিক্টে কর্মরত ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সমকামী। এই লোকগুলোকে নিয়েই, হিটলার তার কিছুটা পথ পাড়ি দিবেন।

**** হিটলার পার্টিতে যোগ দেওয়ার কয়েকদিন আগে। ফেদার বললেন, "টাকা নিয়ে কোন চিন্তা কর না। ওসব আমি দেখব। তবে আমার মতে, আমাদের এমন একজনকে দরকার, যিনি জনসাধারণকে চুম্বকের মত টানবে......। " ড্রেক্সলার তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, "আপনি কি বুঝতে পারছেন না? এমন লোক পাওয়া সহজ নয়।

আর তাছাড়া সে ব্যক্তিই তো কয়েকদিন পর পার্টির নেতা হয়ে যাবে। সে বিষয়টা কি আপনারা মেনে নিতে পারবেন?" "অবশ্যই, দেশের জন্যে যা যা করা লাগে সব করা হবে। আমি অর্থের ব্যপারটা দেখব। আর রোম তো আছেই। আর্মির দিকটা সেই সামলাবে।

এখন এমন একজনকে দরকার যে তার কথার মাধ্যমে জনগণকে আমাদের কথা জানাতে পারবে। তাকে হতে হবে ব্যচেলর, তাহলে নারী সমাজও পিছিয়ে থাকবে না। কি বল হে???" "হা হা হা। অবশ্যই অবশ্যই। " কয়েকদিন পরেই, জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টিতে যোগদান করে হিটলার সেই শুন্যস্থান পুরণ করেন।

**** হিটলার পার্টিতে যোগদানের পর, পার্টির ভাগ্য রাতারাতি খুলে যায়। হিটলারের বাগ্মিতা চুম্বকের মত মানুষ টানতে থাকে। তবে অগ্রগতি ছিল সামান্যই। ১৯২০ সালে হিটলার পার্টির প্রোপাগান্ডার দায়িত্ব নেন। এরপর তাকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি।

**** প্রোপাগান্ডার দায়িত্ব নেওয়ার কয়েকদিন পর, হিটলার একটি উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ নেন। তিনি একটি বিশাল জনসভার পরিকল্পনা করেন। এতদিন পার্টির কার্যক্রম চলত নিতান্তই ছোট পরিসরে। আর বিশাল জনসভার আয়োজন করার কথা তো ছোট রাজনৈতিক দলগুলো ভাবতেই পারত না। হিটলার চেয়েছিলেন সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে।

তিনি এক্ষেত্রে সফলও হন। হিটলার নিজ হাতে আমন্ত্রণপত্রের খসড়া তৈরি করেন। স্বভাবতই সেখানে কঠোর ও আবেগী ভাষার সংমিশ্রণ ছিল। **** সেই জনসভায় ২০০০ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এটি এক বিরাট সাফল্য।

সভা ২ ঘন্টা স্থায়ী হয়। তার মাঝে হিটলার নিজেই এক ঘন্টা বক্তৃতা দেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই সভা ছিল পার্টির জন্যে একটি বিরাট অগ্রগতি। **** ১৯২০ সালে হিটলার পার্টিতে কিছু পরিবর্তন আনেন। তিনি পার্টির নাম পরিবর্তন করে ন্যাশনাল সোশিয়ালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি, সংক্ষেপে NSDAP, রাখার মত প্রকাশ করেন।

ন্যাশনাল সোশিয়ালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টির জার্মান নাম হল, National Sozialistische Deutsche Arbeiter Partei. হিটলার আরও বলেন যে, পার্টির সংক্ষিপ্ত নাম হবে নাৎসি(nazi). National এর NA আর Sozialistische এর ZI থেকে NAZI নামটি এসেছে। নামটা শুনলেই যেন মানুষের মনে শিহরণ জাগে, হিটলার এমনটা চেয়েছিলেন। এখানেই শেষ নয়। নাম পরিবর্তনের পর হিটলার পার্টির অবিসংবাদিত নেতা হওয়ার দাবি তুলেন। তিনি দাবি করেন যে, তাকে নেতা বানানো হলে এবং সকলের সহায়তা পেলে, তিনি জার্মানির হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করে ছাড়বেন।

নেতার পদ না দেওয়া হলে তিনি পদত্যাগ করার হুমকি দেন। অবশেষে হিটলারের এই ইচ্ছাটাও পুরণ করা হয়। **** পার্টির নেতা বনে যাওয়ার পর হিটলার বসে থাকেননি। সমগ্র দেশ জুড়ে সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর জন্যে তিনি ব্যপক প্রচারণা চালানো শুরু করেন। এরই মাঝে নাৎসি পার্টির সিকিউরিটি শাখা গঠিত হয়।

এর নাম দেওয়া হয়, sturm abteilung(storm trooper). সংক্ষেপে একে S.A বলা হত। S.A এর কাজ ছিল নাৎসি নেতাদের নিরাপত্তা প্রদান করা, বিভিন্ন রাজনৈতিক সভায়, নাৎসিদের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকা। তবে S.A কে মাঝে মাঝে বিশেষ কাজে পাঠানো হত। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের উত্থান ঠেকানো, তাদের সভা পন্ড করে দেওয়া, লোকজনকে অনান্য রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করা, এই বিশেষ কাজের অন্তর্ভুক্ত ছিল। একজন S.A একবার S.A এর দাঙ্গা হাঙ্গামার অপরাধে, পুলিশ হিটলারকে গ্রেফতার করে।

তার তিন মাসের জেল হয়। হিটলার জেল থেকে বের হয়ে খেয়াল করেন যে তার জনপ্রিয়তা আরও কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। S.Aর প্রতীক। **** ১৯২০ সালের গ্রীষ্মে, হিটলার তার সৃজনশীলতার চরম প্রকাশ ঘটান। "প্রচারেই প্রসার", এই নীতি বাক্য তিনি তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই বিশ্বাস করতেন।

আর ১৯২০ সালে এসে, তিনি এক মারাত্মক পরিকল্পনা করেন। হিটলার খেয়াল করে দেখলেন যে, পার্টির নির্দিষ্ট কোন প্রতীক নেই, কোন পতাকা নেই। অথচ একটি প্রতীক যে কত বেশী গুরুত্বপূর্ণ তা তিনি ঠিকই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। হিটলারের মতে, জনগণকে আকৃষ্ট করার জন্যে, একটি প্রতীক অতি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। প্রতীকটিতে অবশ্যই দলের মূলনীতির প্রতিফলন ঘটাতে হবে।

আর, প্রতীকটি হতে হবে এমন, যেন মিত্ররা তা দেখা মাত্রই উত্তেজিত হয়ে উঠে এবং আবেগের জোয়ারে ভেসে যায়। আর শত্রুরা যেন ভয়ে লেজ তুলে পালায়। এসব শর্ত পুরণ করে হিটলার নিজেই একটি পতাকা তৈরি করে ফেলেন। প্রস্তাবিতও অন্যান্য পতাকার মধ্যে তার পতাকাই শ্রেষ্ঠ ছিল। পতাকাটিতে ছিল লাল পটভূমিতে একটি সাদা বৃত্ত।

বৃত্তের উপর একটি কালো বাকানো স্বস্তিকা। নাৎসি পতাকা। পতাকার লাল অংশ, নাৎসি পার্টির সংগ্রামের সামাজিক বিস্তৃতির দিকটি ইঙ্গিত করে। অর্থাৎ, একজন খাটি জার্মান, তার সামজিক অবস্থা যাই হোক না কেন, তিনি নাৎসিদের সংগ্রামের অংশ হতে পারবেন। সাদা অংশ পার্টির জাতীয়তাবাদী আদর্শকে তুলে ধরে।

আর কালো স্বস্তিকা, সমগ্র বিশ্বের সকল জাতির উপর আর্য জাতির শ্রেষ্ঠত্বকে তুলে ধরে। নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, হিটলার তার এই কাজে পুরোপুরি সফল ছিলেন। কেননা, আর উনিশটা বছর পর, হিটলারের নেতৃত্বে, এই পতাকাতলে দাড়িয়ে, পুরো জার্মান জাতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। (চলবে) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে আমার লেখার লিঙ্ক ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.