ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ধূমপান ছাড়তে বিশ্বের অনেকেই ই-সিগারেটের দ্বারস্থ হন। বিতর্ক আছে ই-সিগারেট নিয়ে। কেননা, এতেও রয়েছে নিকোটিন। কিন্তু এক খবরে বিবিসি জানিয়েছে, ধূমপানের ক্ষতি এড়াতে যুক্তরাজ্যে ই-সিগারেট ওষুধের সমমর্যাদা পেতে চলেছে।
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুক্তি হচ্ছে, মাদকমুক্ত জীবন দিতে ই-সিগারেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অবশ্য যুক্তরাজ্যে একে ওষুধের মর্যাদা দেওয়ার কথা ভাবা হলেও কানাডাসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশেই এই ই-সিগারেট নিষিদ্ধ।
প্রকাশ্যে তামাকজাতীয় ধূমপান অনেক দেশে নিষিদ্ধ হওয়ার পরও ই-সিগারেটের ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে। ই-সিগারেট সেবনের পক্ষে গবেষকদের যুক্তি হচ্ছে, এই সিগারেটে নিকোটিন থাকলেও এতে নেই সাধারণ সিগারেটের মতো অন্যান্য জীবনঘাতী ক্ষতিকর উপাদান। এ সিগারেটে টার পোড়ানো ধোঁয়া বের হয় না, শুধু বাষ্প হিসেবে বের হয় নিকোটিন, যার ফলে ব্যবহারকারী পান সিগারেট সেবনের অনুভূতি।
তাই স্বাস্থ্যের তেমন কোনো ক্ষতি ছাড়াই সিগারেট না পুড়িয়েও ই-সিগারেটে আগের মতোই অনুভূতি পাবেন ধূমপায়ী। এর ফলে একপর্যায়ে তার পক্ষে সিগারেট ছেড়ে দেওয়াও সম্ভব হবে।
যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা জানিয়েছেন, ইলেকট্রনিক সিগারেট মূলত ধূমপায়ীদের ধূমপানের নেশা কমানোর ব্যবস্থা৷ এটা ব্যাটারিচালিত এমন একটা ডিভাইস, যা দেখতে সিগারেটের মতো। এতে রয়েছে একাধিক চেম্বার। একটা চেম্বারে নিকোটিনের দ্রবণ, যাকে গরম করে তোলে অন্য চেম্বারে থাকা একটি ব্যাটারি।
ব্যাটারি থেকে নির্গত বিদ্যুত্-তরঙ্গের স্পর্শে নিকোটিন-দ্রবণ ফুটতে শুরু করে। যে ধোঁয়া বের হয়, তাতে থাকে নিকোটিন, যা মস্তিষ্কে ধূমপানের অনুভূতি জাগায়।
আসল সিগারেটের সঙ্গে ই-সিগারেটের পার্থক্য বোঝাতে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তামাক দিয়ে তৈরি সিগারেট পুড়লে ধোঁয়ার সঙ্গে যে হাইড্রোকার্বন ও রাসায়নিক মেশে, তা বিপজ্জনক। এমনকি তা থেকে ক্যানসারও হতে পারে। সিগারেট থেকে নির্গত কার্বন-মনোক্সাইড ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর।
কিন্তু ই-সিগারেটে সহনীয় নিকোটিন শরীরে কম ক্ষতি করে। যদিও এখনো পর্যন্ত এ নিয়ে গবেষকদের গবেষণা চূড়ান্ত মতামত দেয়ার জায়গায় পৌঁছেনি।
ই-সিগারেট: প্রযুক্তির মোড়কে লুকোনো বিষ!
অনেক দেশে নিষিদ্ধ হলেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশেই ই-সিগারেট একটি চলতি বিষয়। যুক্তরাজ্যে ই-সিগারেট বিক্রি শুরু হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা৷ অনেকেরই ধারণা, কোনো কোনো ই-সিগারেটে নাকি বেশ ভালো পরিমাণেই নিকোটিন দেওয়া হয়, ফলে ধূমপানের ক্ষতি এড়ানোর বদলে নতুনভাবে ক্ষতিকর এ নেশার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে মানুষ৷ তাই ই-সিগারেট নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার৷ নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, ই-সিগারেট ওষুধের দোকানে বিক্রি হবে, তবে কোনো ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই তা কেনা যাবে।
ই-সিগারেটের মান নিয়ন্ত্রণ, অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি না করা এবং নিকোটিনের অতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাজ্য।
২০১৬ সাল নাগাদ ই-সিগারেট ওষুধের মর্যাদা দিয়ে শুধু ওষুধের দোকানে বিক্রির অনুমতি দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের৷
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ইম্পেরিয়াল টোব্যাকো, রেনল্ডসসহ অনেক বিখ্যাত টোব্যাকো কোম্পানিই এখন তাই ই-সিগারেট তৈরি করে
ই-সিগারেট নিয়ে বিতর্ক
ই-সিগারেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এর গুণগান গাইলেও এখনো এর ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক কম নয়। গবেষকেরা এখনো ই-সিগারেট সেবনের কুফল নিয়ে গবেষণা অপ্রতুল বলেই মনে করেন। জার্মানির একদল গবেষকের মতে, নিরাপদ নয় ই-সিগারেটও। ফ্রানহোফার ইনস্টিটিউটের গবেষকদের দাবি, প্রচলিত তামাকের সিগারেটের বিকল্প হিসেবে যে ই-সিগারেট গ্রহণ করা হয়, তাতে উদ্দীপনা ছাড়া আর কোনো তফাত নেই। ই-সিগারেটের বাষ্পও বাতাসে অ্যারোসলের মতো আলট্রাফিন ছড়ায়, যা ফুসফুসে প্রবেশ করে একটি আবহ তৈরি করে এবং সেখান থেকে বের হতে সময় নেয়।
ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক গবেষণার পর জানিয়েছে, ই-সিগারেট উপকারী নয়। তরুণেরা এটি ফ্যাশনের জন্য ব্যবহার করলেও এ থেকে অধূমপায়ী ব্যক্তিদের ধূমপানের অভ্যাস গড়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া এ ধরনের সিগারেটে স্বল্প পরিমাণে হলেও নিকোটিন থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
ধূমপানে বিষপান
ধূমপানে বিষপান। ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
কিন্তু ধূমপান ছাড়তে আবারও ধূমপানের দ্বারস্থ হওয়ার লাভ-ক্ষতি নিয়ে গবেষকেরা এখনো গবেষণা করে যাচ্ছেন। তবে ধূমপান ত্যাগেই যে সব সমস্যার সমাধান, তা সবাই হয়তো মানবেন।
ধূমপান ছাড়ার সাত উপায়
বিশ্বে প্রতিবছর লাখো মানুষ ধূমপান ছাড়তে চাইলেও শেষমেশ বেশির ভাগই ব্যর্থ হন। আর এর অন্যতম কারণ হলো মানসিক দৃঢ়তার অভাব। অনেক চেষ্টা করেও যখন ধূমপান ছাড়া সম্ভব হয় না, তখন এই মানসিক যন্ত্রণায় হতাশ হয়ে পড়েন অনেকে।
যাঁরা অনেক চেষ্টা করেও ধূমপান ছাড়তে পারছেন না, তাঁদের জন্য এবার সাতটি উপায় বা পথ খুঁজে বের করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এসব পথ অনুসরণ করলে আর মানসিক দৃঢ়তা থাকলে হয়তো ধূমপান ত্যাগ করার বিষয়টা খুব সহজ হয়ে যাবে ধূমপায়ীদের জন্য।
পরিবার ও বন্ধুদের সমর্থন
নিকোটিনে আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে প্রথমেই পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে উত্সাহ প্রয়োজন।
নিয়মিত ব্যায়াম
এই আসক্তি থেকে নিজেকে ভুলিয়ে রাখার জন্য অন্যদিকে মনোযোগ দিন। আর এর একটি ভালো উপায় হলো নিয়মিত ব্যায়াম করা।
গভীর শ্বাস
সফলভাবে ধূমপান ছাড়ার একটি উপায় হলো গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া। মনকে শান্ত করতে এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে গভীরভাবে শ্বাস নেওয়ার পদ্ধতিকে অনেক বিশেষজ্ঞই শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।
প্রচুর পানি পান
প্রচুর পরিমাণ পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কেননা, পানি আপনার শরীরের নিকোটিন ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ বের করতে সহায়তা করে।
সরিয়ে ফেলুন ধূমপানসংশ্লিষ্ট জিনিসপত্র
আপনার আশপাশে ধূমপানসংশ্লিষ্ট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জিনিস, যা আপনাকে আবারও ধূমপানে উত্সাহী করে তোলে, সে সব জিনিস সরিয়ে রাখুন।
যেমন: লাইটার, ছাইদানি (অ্যাশট্রে), সিগারেটের পুরোনো প্যাকেট প্রভৃতি।
ডায়েরিতে লিখে রাখুন
ধূমপান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরপরই যত দ্রুত সম্ভব, তা আপনার ডায়েরি বা অন্য কোথাও লিখে রাখুন। এতে আপনি আপনার কাছেই লিখিতভাবে দায়বদ্ধ থাকবেন। আর এটি আপনাকে সব সময় আপনার প্রতিজ্ঞা সম্পর্কে মনে করিয়ে দেবে।
ইতিবাচক মনোভাব
সর্বশেষ যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে তা হলো, আত্মনিয়ন্ত্রণ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।