বিশ্ববিখ্যাত যতগুলো জাহাজ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে তার মধ্য টাইটানিক, কার্নিভাল ডেস্টিনি, দ্যা ওসান লাইনার, দ্যা ব্রিটানিয়া ইত্যাদি উল্লখযোগ্য। এছাড়াও বর্তামানে রয়েছে কুইন মেরি টু। তবে এ সমস্ত জাহাজ থেকে সম্পূর্ণ স্বতত্র্য বৈশিষ্ট্যের জাহাজ হচ্ছে টাইটানিক। আজ থেকে ১০০ বছর আগে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে সলিল সমাধি হয়ে যাওয়া এ জাহাজকে বিশ্ববাসী আজও তাদের স্মৃতির মণিকোঠায় স্থান দিয়েছে। আকৃতিতে, প্রযুক্তিতে, সাজসজ্জায় সব দিক থেকেই টাইটানিক ছিল বিস্ময়।
চিরচেনা এই জাহাজ এখনও আমাদের অজানায় আছে। এখানে আমি আপনাদের কিছু তথ্য দেবার চেষ্টা করছি।
দ্যা আন্সিঙ্কবল শিপ-
টাইটানিকের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আমেরিকান শিপিং কোম্পানি “হোয়াইট স্টার লাইন” এর নাম দিয়েছিলেন “দ্যা আন্সিঙ্কবল শিপ”। এটি ছিল শতাব্দীর সর্বাপেক্ষা বিলাশবহুল জাহাজ। নির্মাতারা দাবি করেছিলেন যে, None or nothing could make it sink. It was definitely unsinkable. কিন্তু তাদের সেই অবিশ্বাস্য চ্যলেঞ্জকে মিথ্যা প্রমানিত করে ডুবে যাবে সমুদ্রপৃষ্টের ১২ হাজার ফুট পানির নিচে, এটা কেউ কি ভেবেছিল।
তাই ইতিহাসের পাতায় আজও সযত্নে লালিত টাইটানিকের নানা তথ্য।
নির্মাতাগণ পরীক্ষা করে দেখেছিলেন কোন প্রকার অস্ত্র দিয়ে এর গায়ে ফাটল ধারানো যাবে না। বন্দুকের গুলি, বোমা, কামানের গোলা পর্যন্তও টাইটানিকের গায়ে কোন প্রকার আঁচর কাটতে পারেনি। এমনকি ঘণ্টায় ৪০ নটিক্যাল মাইল বেগে চলমান টরনেডোও এর ক্ষতি করতে পারে নি। তাই এর নাম দেওয়া হয়েছিল আন্সিঙ্কবল শিপ, যা কখনো ডোবে না।
টাইটানিকের আকৃতি এবং ওজন-
লম্বায় প্রায় ৮৮৩ ফিট ৯ ইঞ্চি এবং চওড়ায় প্রায় ৯৩ ফিট এই জাহাজ। অনেকে একে তুলনা করতে গিয়ে বলেছেন ৬টি স্ট্যাচু অফ লিবার্টির সমান। এর ওজন ৪৬,০০০ টন।
আধুনিকতা ও সৌন্দর্য-
সৌন্দর্য কিংবা আধুনিকতায় দু ক্ষেত্রেই টাইটানিক ছিল অতুলনীয়। টাইটানিকে সংযুক্ত ওয়্যালেস প্রযুক্তি ওই সময়ের বিশ্ময় ছিল।
সেই প্রযুক্তির মাধ্যমে দু’শত পঞ্চাশ মাইল পর্যন্ত বার্তা আদান প্রদান করা যেত। চোখ ধাঁধানো স্হাপত্যশৈলী, দেওয়ালে কাঠের ডিজাইন, ঝারবাতির আলক সজ্জা আর নজরকারা আসবাবপত্রের সমাহারের কারনে টাইটানিকের খ্যাতি আজো বিদ্যমান। ১১তলা জাহাজে ওঠানামা করার জন্য ছিল ৩টি লিফট। ৫০০ জন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ডাইনিং, জিমনেশিয়াম ও বিলাসবহুল প্রমোদ কক্ষের কথা ভাষায় বর্ণনা করা সত্যিই কঠিন।
সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ভাড়া-
টাইটানিক জাহাজে প্রথম শ্রেণীর ভাড়া ছিল ৩১ হাজার ডলার এবং তৃতীয় শ্রেণির ভাড়া ছিল ৩২ ডলার।
যাত্রার শুরু, শেষ এবং পরিণতি-
ইংল্যান্ডের সউদাম্পটান বন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ১০ এপ্রিল ১৯৯২ তে যাত্রা শুরু করে টাইটানিক। নির্ধারিত ৬ দিনের যাত্রাকে সামনে রেখে সবাই চলছিল নিয়মমতো আনন্দ মুখরিত পরিবেশে। তবে এত সব আয়জন যে, মুহূর্তই মিলিয়ে যাবে তা ছিল ভাবনার অতীত। জাহাজের ক্যাপ্টেন স্মিথ ছিলেন জাহাজ পরিচালনায় বিশেষ পারদর্শী। আর সে কারনেই তাকে টাইটানিক জাহাজ পরিচালনার দায়িত্ব দেন।
যাত্রার পঞ্চম দিন মধ্য রাতের কিছু আগে। সবাই যখন রাতের সমুদ্রের বুকে নিস্তিব্ধতার সাথী, ঠিক তখন বার্তা কক্ষে যে-ম্যাসেজটি সতর্কবাণী প্রচার করছিল তা হলঃ সামনের বৃহদাকার হিমশৈল টাইটানিকের চলার পথে বাঁধা হতে পারে। কুয়াশাছন্ন সমুদ্রপথে টাইটানিকের গতিপথ পরিবর্তনে ক্যাপ্টেন স্মিথ তখনও কোন সিদ্ধান্ত নেননি। অবশেষে রাত পৌনে ১২ টার সময় টাইটানিক যখন উত্তর আটলান্টিক নিউ ফাউল্যান্ড এর কাছে পৌছায়, তখন থেকে কর্মরত ক’জন জাহাজকর্মীর চোখে বৃহদাকার হিমশৈল ধরা পরে। তাৎক্ষনিক সতর্ক ঘণ্টা বাজানো হয়।
এরপর খবর ব্রিজ রুম হয়ে পৌছায় বয়লার রুমে। বন্ধ করে দেওয়া হয় টাইটানিকের সকল ইঞ্জিন। ঘণ্টায় ২৩ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলমান টাইটানিক তখন শব্দহীন হয়ে পরে। শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তে অতিক্রম করতে থাকে সবাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গতিহীন টাইটানিকের শেষাংশ ধাক্কা খায় সেই হিমশৈল এর সাথে।
এক মুহূর্তের জন্য অনুভূত হয় ভুমিকম্প। হিমশৈল জাহাজের পাশে একটি বিশাল ছিদ্র সৃষ্টি করে। নিরাপরতার জন্য ১২টি গেট থাকা সত্বও ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এমন জায়গায় জাহাজটির ধাক্কা লাগে যে, সবগুলো গেট এরই পানি প্রতিরোধ বিকল হয়ে পরে। ক্যাপ্টেন স্মিথ সহ জাহাজ চালনায় দায়িত্তপ্রাপ্ত সবাই বুঝতে পারে যে, টাইটানিকে আর বাঁচানও যাবে না। ফলে শুরু হয় টাইটানিকের ডুবে যাওয়া।
এই হৃদয়বিদারক ডুবে যাওয়া জলযানটির সবার মনে ছিল, আছে এবং থাকবে। প্রত্যেক যাত্রীই আপন প্রান বাঁচানোর জন্য লাইফ বোটে উঠতে যায়। কিন্তু লাইফ বোট ছিল মাত্র ১৬টি। তাই ক্যাপ্টেন নির্দেশ দিলেন- মহিলা ও শিশুদের আগে নামতে দিন। ক্যাপ্টেনের নির্দেশে শুরু হয় যাত্রীদের লাইফ বোটে স্তানান্তরের কাজ।
বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের আগে লাইফ বোটে তোলার নির্দেশ দেন ক্যাপ্টেন। লাইোটেরটে ওঠা নিয়ে শুরু হয় এক বিশৃঙ্খল অবস্থা। টাইটানিকের ঘড়িতে তখন রাত ১২টা ৩০মিনিট। লাইফবোটের বেশির ভাগই ছিল শিশু ও মহিলা। এটা একটা ভয়ংকর দৃশ্য।
মহিলারা অপেক্ষা করছিল কারণ তারা তাদের প্রিয়জনকে ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছিল। শিশুরা কাঁদছিল কারণ তারা তাকে বিদায় জানাচ্ছিল। পুরুষরা বিদ্ধস্ত জাহাজে রইল। টাইটানিক সংকেত প্রদান করল সাহায্যের জন্য কিন্তু কোন প্রকার সাহায্য আসলো না। কিন্তু ঘটনাস্থল থেকে মাত্র বিশ মাইল দূরে ক্যালিফোনিয়ান নামক একটি জাহাজ ছিল।
কিন্তু তার রেডিও অপারেটর ঘুমন্ত থাকায় সে টাইটানিকের বেদনাদায়ক সংকেত শুনতে পেল না। রাত ১২টা ৩০ মিনিটে জাহাজের সম্মুখ ভাগ বাঁকা হয়ে সমুদ্রগর্ভে ডুবে যেতে থাকে। জাহাজ ডুবে যাবার বিশ মিনিট পর আরেকটি জাহজা দি কারপাথি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং জীবিতদের উদ্ধার করে যারা সংখ্যায় ছিল খুব নগণ্য। মোট ২২২৪ জন যাত্রীর মধ্য উদ্ধার করা হয় মাত্র ৭০০ জানকে। বাকী ১৫২৪ জন যাত্রীসহ সলিল সমাধি হয় বিশ্ববিখ্যাত জাহাজ টাইটানিক এর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।